Sunday, August 3, 2025


 

রহস্যের অন্তরালে 

শুভেন্দু নন্দী


অর্কর মনে শ্যামল কাকুর ঝড়-জল রাতে আগমনের ব্যাপারটা যেন স্বপ্নের মত মনে হয় এখনও। অথচ তাঁর জীবন-মরন বা অস্তিত্ব এখন  এক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার বাড়িতে।  ভাবলেই কেন যেন বেশ আশ্চর্য লাগছে। অর্ক যেটা কল্পনাই করতে পারছেনা। বাড়ির সবার চোখেমুখে দুর্ভাবনা ও দুশ্চিন্তার এক কালো ছায়া ।  

" খোকা তবে কাকে দেখলো?" বাবার এই প্রশ্ন  রীতিমতন আতঙ্কে ফেলে দিয়েছে অর্ককে। জটিল প্রশ্ন সন্দেহ নাই।  দূর্যোগের সেই রাতে নিজের চোখে যাঁকে দেখেছে ও বাড়িতে যিনি এক রাত্রির জন্য halt করেছেন- তাঁকে কেমন করে অস্বীকার করবে অর্ক। আর সেই প্রশ্নে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে অর্কর সারা দেহ- মন-প্রান । ভেবেও কোনও কূলকিনারা পাচ্ছেনা। আসলে "পেপারে" একাউন্টারে কাকুর "শেষ হয়ে" যাবার খবরটা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে মিলিটারী ডিপার্টমেন্টের সংবাদের ভিত্তিতে যে সেটাকে উড়িয়েও দেওয়া যাচ্ছেনা।  

যুদ্ধে  সংজ্ঞাহীন ও কোমায় চলে যাওয়া একমাত্র বাঙালী ভদ্রলোক - দীর্ঘ তিন মাস পরে আবার জীবন  ফিরে পেয়েছেন এবং প্রেস মিডিয়াকে তিনি তাঁদের একাধিক জেরায় জানিয়েছেন যে শ্যামল তাঁর সহকর্মী এবং উঁচু পাহাড় থেকে নীচে তাঁর পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। সুতরাং তাঁর জীবনাবসানের খবরটা হাইপোথেটিকাল। শত্রুপক্ষের গুলি বিনিময়ের প্রাক মুহুর্তে শরীরের ভারসাম্য বজায় না থাকার কারণে গড়িয়ে পড়ে যান নীচে তিনি। তবে প্রাণ রক্ষা হয়েছিলো কিনা শেষ পর্যন্ত, ঈশ্বরই তা বলতে পারবেন। একশো ভাগ নিশ্চিত হয়েই তাঁর একথা ব্যক্ত করা, সমবেত প্রেস মিডিয়াকে। 

...তবে একটা ব্যাপারে বাবার সাথে তাঁর সহমত পোষণ করে অর্ক। আর তা হোলো নিজের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও এ বাড়িতেই আশ্রয় গ্রহন আর পরের দিনই ভোরে চলে যাওয়ার তাঁর যে এই decision মন থেকে একেবারেই মেনে নিতে পারছেনা সে। এক দূর সম্পর্কের পিসির স্নেহ, আদর, যত্নেই তাঁর বড়ো হয়ে ওঠা ছেলেবেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে। আর্থিক দৌর্বল্যের কারনে স্কুলের গন্ডী পেরিয়েই তাঁর এ চাকরী গ্রহন। ব্যাপারটা পিসি অন্তর থেকে মেনে নিতে পারেননি। বাবার কাছ থেকেই এসব জেনেছে অর্ক। সবচেয়ে অবাক লাগে তার এত বড়ো একটা বিভ্রান্তিকর ঘটনার বিন্দুমাত্র আঁচ পায়নি সে। 

আসলে বাবা-মা এ ঘটনার কথা জানিয়ে তাকে বিব্রত করতে চাননি। যেটা সে আজ বেশ বুঝতে পারছে। স্নেহ-অন্ত প্রাণ পিসির কাছে আদৌ গিয়েছিলেন কিনা তিনি- সেটা confirmed হবার জন্য তাগিদ অনুভব করলো সে। এ ব্যাপারে জয়ন্তর কাছে suggestion নেওয়া জরুরী বলে মনে করলো। পুরো ঘটনাটা জয়ন্তকে সে অবহিত করেছিলো। জয়ন্ত একজন বিচক্ষন ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিও বটে। বেশ অনুসন্ধানী চোখ। রহস্য- তা যে ধরনেরই হোক- তা উদ্ঘাটনের জন্য আগ্রহ তার যথেষ্ট। যুক্তিবাদী মন তার। তাই ঘটে যাওয়া এই ঘটনা সে বিনা বাক্যব্যয়ে বিশ্বাস করেছিলো। যা অর্কর পরিবারকে unnerved করে দিয়েছিলো ঘটনার সত্যাসত্য যাচাই না করেই।  অবশ্য তার জন্য প্রচার বা অপপ্রচার(?) ভীষণভাবে দায়ী। 

"আমি এ রহস্যের সমাধান সূত্র খোলার জন্য চেষ্টার ত্রুটি করবো না। তোকে কথা দিচ্ছি।" জয়ন্ত  আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে কথাগুলো বললো। ছেলেবেলা থেকেই সে ডানপিটে। সাহসী ও জেদী মনোভাবে গড়া।  বাবা একটা অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারীং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে মেকানিকের  কাজ করে। স্বল্প বেতন। তাই তাঁকে কিছুটা আর্থিক সাপোর্ট দেবার জন্য গৃহশিক্ষকতার কাজ করে সে। কলেজে তার আর পড়া হয়ে ওঠেনি।  ভাইকে মনের মত মানুষ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সে। তা হোলে কাকুর বেঁচে থাকার সম্ভাবনার একটা ক্ষীণ আশার আলো দেখতে পেলো অর্ক। -" হে ভগবান! তাই  যেন হয় " মনে মনে সে প্রার্থনা করতে লাগলো ঈশ্বরের কাছে। তা ছাড়া "রাখে হরি মারে কে? 

সব প্রশ্নের সমাধান করতে পারতেন একমাত্র কাকু, অবশ্য তিনি যদি সত্যি সত্যিই ফিরে আসতেন"।একথা বলার অর্থ তার চাক্ষুষ দেখার প্রমান পরিবারের কারোর কাছে গ্রহনযোগ্য নয় এই মুহূর্তে। সশরীরে আবার সবার কাছে ফিরে এলে তবেই হবে বিশ্বাসযোগ্যতার অকাট্য প্রমান। তারই ভরষায় অর্ক ও তার পরিবার দিনাতিপাত করতে লাগলো। ভাবছে সে ও জয়ন্ত দিনদুয়েকের মধ্যে শ্যামলকাকুর বাড়িতে খবর নেবে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ঐ দূর্যোগের রাতে কেউ এসেছিলেন কিনা ? জয়ন্তের ওপর তার দারুন আস্থা। বাবার কাছে শুনেছে এই পাড়ার পুরণো ভাড়া বাড়ি ছেড়ে ঠিক এই পাড়ার সংলগ্ন হালদার পাড়ায় নতুন একতলা বাড়িতে চলে গেছেন তার শ্যামলকাকু পিসিকে নিয়ে। তার জন্য তাঁকে প্রচুর ঋণও করতে হয়েছিলো। একান্ত ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় কাকু বাবাকে বলেছিলেন একথা ঘনিষ্ট সম্পর্কের সুত্রে। যাই হোক, জয়ন্তের সহযোগিতায় এ রহস্যের যবনিকাপাত অবশ্যই হবে যথাসময়,তারই আশায় বাড়ির সবাই প্রহর গুনতে লাগলো। 

No comments:

Post a Comment