Sunday, August 3, 2025


 


লটারি 
চিত্রা পাল 

এপ্রিল ফুল করা রতন বাবুর পুরনো অভ্যেস। চেনাশোনা অনেকেই এই দিনটা তাঁকে এড়িয়ে চলে। তাই তাঁর ফোনটাকে পাত্তাই দিলো না সঞ্জয়। কেননা কে যে কখন ওনার টার্গেট হয়ে ফেঁসে যাবে তা আগে থেকে বোঝা যায় না। রতন বাবু বাবার বন্ধু,আমরা মানে আমার বন্ধুরা সকলে রতন কাকুই বলি।রতন কাকুর এই এপ্রিল ফুল করার ব্যাপারটা আজকের নয়,আগে থেকেই আছে। তাতে ছোট বড় কেউই বাদ যায় না। বাবার মুখে শুনেছি, অনেকদিন আগে এখানে সুবল্ রায় বলে একজন চৌধুরিদের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। কিন্তু পাড়ার সকলের সঙ্গে এতো ভাব হয়ে গিয়েছিলো যে ওনারা এখানে ভাড়াটে হয়ে আছেন,তাই সকলে ভুলে গিয়েছিলো। সুবল কাকু আর কাকিমার খুব শখ সিনেমা দেখার। তো রতন কাকু একদিন সুবল কাকুকে বললেন, আজ রূপশ্রী তে বই দেখতে যাবেন? দাদা বৌদিও যাবে তাহলে। সুবল কাকু বললেন, আজ ছুটির দিন গেলেই হয়,কিন্তু টিকিট পাওয়া যাবে কি? শুনেছি হলে খুব ভীড় হচ্ছে। রতন কাকু বললেন,কিচ্ছু চিন্তা করবেন না, আমি আগে গিয়ে চারটে টিকিট করে হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো। ছটায় শো শুরু,আপনারা পাঁচটা নাগাদ চারজনে বেরিয়ে পড়বেন, দাদাকেও বলে দিচ্ছি। কাকিমা দুবেলার রান্না সেরে বেশ ফুরফুরে মেজাজে সাজগোজ করছেন,কাকুও তৈরি হচ্ছেন, হলটা একটু দূরে, রিক্সা নিয়ে যেতে হবে। পাঁচটার একটু আগেই বেরোবেন। ঠিক বেরোবার আগেই বাড়ির গেটে একটা শব্দ হলো। একেবারে তৈরি হয়ে সুবল কাকুএকবার বাইরে বেরিয়ে দেখতে এলেন, ক্যানো, শব্দোটা হলো। ওমা, বাইরে বেরিয়ে এসে দ্যাখেন, এত্ত বড় বড় করে লেখা এপ্রিল ফুল। কাকু প্রথমে বুঝতে পারেননি, পরে তারিখটা খেয়াল হতে হো হো করে হেসে উঠলেন। আর কাকিমা একেবারে রেগেমেগে শয্যা নিলেন।

  আজ সকালে সঞ্জয়ের ফোনটা বেজে উঠতে,সঞ্জয় দ্যাখে ওটা রতনবাবুর ফোন। ফোনটা ধরার সময় হঠাত্‌, চোখ চলে যায় সামনের ক্যালেন্ডারে, দেখে সেখানেজ্বলজ্বল করছে১লা এপ্রিল। ওরে বাবা,১লা এপ্রিল, তার সঙ্গে রতনকাকুর ফোন।তাই আর কোন কথা না বলে,ওটাকে পাত্তা না দিয়ে ও নিজের কাজে মন দিলো। আসলে ও আজ ঘর পরিষ্কার করতে শুরু করেছে। যত রাশি রাশি পুরনো কাগজ বাতিল ম্যাগাজিন সব বিদায় করবে আজ। সামনে আসছে ১লা বৈশাখ, তার আগে এবারে ঘরটাকে বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ফেলবে। প্রথমে আলনার নীচের র‍্যাক থেকে সব খবরের কাগজের স্তূপ বাইরে রেখে এলো। এবার ড্রয়ারে হাত লাগালো। ড্রয়ারটায় যে কত্ত বাজে কাগজ রয়েছে তার ঠিক নেই। পুরনো কাগজের কাটিং,নেমন্তন্নর চিঠি,লটারির বাতিল হওয়া টিকিট সব। লটারির টিকিট কাটা ওর শখ। পায়না কখনো,তবু ওই মনে আশা। এখনো সেই আশার মরুভূমিতে হাঁটে মরীচিকার খোঁজে। এবারও বসন্ত উত্‌সব নামে লাষ্ট লটারির টকিট কিনে ফেলে রেখেছে এই ড্রয়ারে অবহেলায়। ঠিক করেছে আর লটারির টিকিট কিনবে না। এবার ড্রয়ার থেকে বার করে সব পুড়িয়ে ফেলবে, তাতে কাগজ গুলো সব এদিক সেদিক উড়ে যাবে না। 

      সবে আগুনটা ধরিয়েছে,এমন সময়ে আবার রতন কাকুর ফোনফোনটা ধরেই সঞ্জয় বলে, কি, এপ্রিল ফুল হবার জন্যে? ওদিক থেকে তড়িঘড়ি রতনকাকু ওকে বলেন, নারে, তুইতো লটারির টিকিট কিনিস,এদিক থেকে সঞ্জয় বলে , হ্যাঁ তা কি হয়েছে? আরে আজ লটারির রেজাল্ট বেরিয়েছে,তুই শিগগির লটারির টিকিট খানা নিয়ে চলে আয়, বাজারের কাউন্টারে। ওদিকে আগুন ধরে গেছে, ওখানটায় জল পড়ে ছিলো বলে ততটা ধরেনি। তাড়াতাড়ি খানিকটা জল ঢেলে আগুন নিভিয়ে দেয়। তারপরে লটারির টিকিটগুলো একধারে করে খুঁজে বের করে টিকিটখানা। ওটার কোনটা পুড়েছে, কিন্তু নম্বরটা আছে। তাড়াতাড়ি তাই নিয়েই ছুটলো, লটারি সেন্টারে। 

   বেশ ঝামেলা ঝঞ্ঝাটের পরে যেদিন লটারির টাকাটা হাতে এলো, সঞ্জয় জড়িয়ে ধরলো রতন কাকুকে। আজ ওনার জন্যেই টাকাটা পেলো, না হলে সবই পুড়ে যেতো। বুঝতে পারলো সঞ্জয়, রতনকাকু এপ্রিল ফুল করে মজা করলেও মনটা খাঁটি সোনা, সেখানে কোন খাদ নেই। লটারির সঙ্গে এটাও ওর বড় প্রাপ্তি।।   

No comments:

Post a Comment