বিতর্ক–আন্দোলন হয়, প্রতিবাদ হয়
তবু বিচার অন্ধকারেই রয়...
রুদ্র
পক্ষে
গত বছর আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া সেই নারকীয় ঘটনাটি আজও আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়ে যায়। একটি কিশোরী, যাকে সমাজ রক্ষা করতে পারেনি, আইনের হাতে যার প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করা যায়নি—তার রক্ত যেন এখনও রক্তাক্ত করে রেখেছে আমাদের নৈতিক অবস্থানকে।
ঘটনার পরপরই দেশের নানা প্রান্তে প্রতিবাদ শুরু হয়—সড়ক অবরোধ, মোমবাতি মিছিল, সামাজিক মাধ্যমে ঝড়। তরুণ সমাজ, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষার্থী—সবার কণ্ঠে একটি দাবি: বিচার চাই। কিছুদিনের জন্য প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। তদন্তের আশ্বাস আসে। মিডিয়া একে "ব্রেকিং নিউজ" করে তোলে। কিছুদিন পর—অন্য আরেকটি ঘটনা, নতুন এক বিতর্ক, এবং পুরনো ঘটনাটি চাপা পড়ে যায় কাগজের নিচে।
এই চক্রটাই সবচেয়ে ভয়ংকর। যে সমাজে একের পর এক বর্বরতা ঘটে, সেই সমাজ প্রতিবাদে সাময়িক উত্তেজিত হয়, কিন্তু অপরাধের মূল শিকড় উপড়ে ফেলতে সাহস পায় না। এ যেন একটা অভ্যস্ত চেতনার মিছিল—আন্দোলন হবে, পোস্টার উঠবে, স্লোগান উঠবে, তারপর আবার নীরবতা।
প্রতিটি ভয়ংকর ঘটনার পর একটা অদৃশ্য দেওয়াল দাঁড় করিয়ে ফেলা হয়—“তদন্ত চলছে,” “আদালতের নির্দেশের অপেক্ষা,” “সঠিক প্রমাণ নেই”—এইসব কথার আড়ালে বিচারপ্রক্রিয়া লুকিয়ে পড়ে বছরের পর বছর। আমরা দেখতে পাই, যাদের হাতে দায়িত্ব, তাদের মুখে ভাষা থাকে, কিন্তু হৃদয়ে দায় থাকে না।
এখানেই আসে প্রশ্ন—আমরা কি কেবল প্রতিবাদ করেই দায়িত্ব শেষ করি? নাকি আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কাঠামোতে এমন পরিবর্তন আনতে হবে, যেখানে অপরাধীর চেয়ে অপরাধহীনদের নিরাপত্তা বড় হয়ে ওঠে?
বিচারপ্রক্রিয়ায় বিলম্ব মানে অপরাধীকে সময় দেওয়া, আবারও সাহস জোগানো। এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে প্রতিদিন মৃত্যু ও লজ্জার মধ্যে বেঁচে থাকার শাস্তি দেওয়া। একেকটি বিচারহীনতা একেকটি নতুন অপরাধের জন্ম দেয়।
তাই আমি বলি, বিতর্ক জরুরি, প্রতিবাদ অপরিহার্য, কিন্তু তার চেয়েও বেশি দরকার নির্ভরযোগ্য বিচারব্যবস্থা। আমরা চাই—শুধু আন্দোলনের উত্তাপ নয়, চাই সুবিচারের আলো।
একটি সমাজ তখনই সভ্য হয়, যখন সেখানে বিচার হয় সময়মতো, প্রকাশ্যে, এবং সঠিকভাবে। যদি তা না হয়, তবে আমরা কেবল নতুন নতুন “আগস্টের ঘটনা” লিখে যাব ইতিহাসের অন্ধকার পাতায়।
No comments:
Post a Comment