Sunday, August 3, 2025



বিজ্ঞান, গনিত ও চিকিৎসা বিদ্যা চর্চায় ভারতীয় সনাতন সংস্কৃতির প্রাসঙ্গিকতা ও আজকের ভাবনা

সঞ্জয় সাহা 


     
ভারতীয় মাত্রই আপন সনাতন সংস্কৃতি সম্পর্কে গর্বিত। কিন্তু খুব কমজনই আছেন যাঁরা জানেন ভারতীয় সংস্কৃতি বলতে শুধুমাত্র সাহিত্য, সংগীত,নৃত্যকলা বা ভাস্কর্য বোঝায় না। বিজ্ঞান, গনিত ও চিকিৎসা বিদ্যার চর্চাও ভারতীয় সনাতন সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্রাচীন ভারত পাটিগণিত ও জ্যামিতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। শূন্যের ধারণা,দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি এবং বিভিন্ন গাণিতিক সূত্র ও পদ্ধতির উদ্ভাবন ভারতে হয়েছে। আর্যভট্ট, ব্রহ্মগুপ্ত, দ্বিতীয় ভাস্কর প্রমুখ গণিতবিদরা এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। পরবর্তীকালে শ্রীনিবাস রামানুজন,শকুন্তলা দেবী প্রমুখ গণিতবিদরাও বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালযের ছাত্র প্রাচীন ভারতের বিখ্যাত জ্যোতিবিজ্ঞানী আর্যভট্টকে ভারতীয় গণিতের জনক বলা হয়। তিনি π (পাই) এর একটি আনুমানিক মান নির্ণয় করেন। যা গণিত ও জ্যামিতিতে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে আজও ব্যবহৃত হয়। তিনিই শূন্যকে একটা সংখ্যা হিসেবে ব্যবহার করেন। এছাড়াও দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি, বীজগণিত ও ত্রিকোণমিতিতে তাঁর অবদান গণিতকে আরো সহজ করে তোলে।

প্রাচীন ভারতের যে গণিতজ্ঞ শূন্যের ব্যবহারের নিয়ম তৈরি করেন, তিনি হলেন ব্রহ্মগুপ্ত। এছাড়া তিনি ঋণাত্মক সংখ্যা নিয়ে গাণিতিক গণনা করার নিয়মাবলী ও চক্রাকার চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় প্রভৃতি বিষয়ে অবদান রেখেছেন। তিনি তাঁর "ব্রহ্মস্ফুতসিদ্ধান্ত" গ্রন্থে জ্যোতিবিজ্ঞানের পাশাপাশি পাটিগণিত ও বীজগণিতের উপর বিশেষ অধ্যায় রচনা করেন। এই বই গণিতের অনেক সমস্যা সমাধানের সাহায্য করে।

বিখ্যাত ভারতীয় গণিতবিদ ও জ্যোতিবিজ্ঞানী দ্বিতীয় ভাস্কর ভাস্করাচার্য নামেও পরিচিত। দ্বিতীয় ভাস্কর গণিত শাস্ত্রের বিষয়ে "সিদ্ধান্তশিরোমণি" নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যা খুবই মূল্যবান। এই গ্রন্থেরই একটি অধ্যায় তিনি তার মেয়ে লীলাবতীর নামে নামকরণ করেন "লীলাবতী"। তিনি ক্যালকুলাসের প্রাথমিক ধারণা দেন। তাছাড়া π এর মান বের করা ও অন্যান্য গাণিতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

শ্রীনিবাস রামানুজন বিংশ শতাব্দীর একজন প্রভাবশালী ভারতীয় গণিতবিদ ছিলেন। অসামান্য প্রতিভাবান এই গণিতবিদ খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিজের অবদান রেখে গেছেন। প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও নিজের প্রচেষ্টায় তিনি গণিতের বিভিন্ন শাখায়, বিশেষ করে সংখ্যাতত্ত্ব,অসীম ধারা, আবৃত্ত ভগ্নাংশ ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেগেছেন। পরবর্তীকালে তার রেখে যাওয়া নোটবুক বা ডায়েরি থেকে অনেক নতুন নতুন সমাধান পাওয়া গেছে, যা গণিত চর্চাকে সহজতর করে দেয়। 

বিংশ শতাব্দীর অপর একজন বিখ্যাত ভারতীয় গণিতবিদ ছিলেন শকুন্তলাদেবী। তাঁর অসাধারণ গণনা দক্ষতার জন্য তাকে "মানব কম্পিউটার" বলা হয়। তিনি দুটি ১৩ অঙ্কের সংখ্যাকে গুণ করে মাত্র ২৮ সেকেন্ডে সঠিক উত্তর দেন। যেকোনো তারিখের সপ্তাহের দিন তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারতেন। তাঁর এই দ্রুত ও নির্ভুলভাবে গাণিতিক গণনা করার দক্ষতা তাকে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি এনে দিয়েছিল। তিনি গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়ে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেন।

No comments:

Post a Comment