Thursday, May 31, 2018






সম্পাদকের কথা

প্রখর গ্রীষ্ম। গ্রীষ্মের কোপে ফুটিফাটা হয় যেমন মাঠঘাট তেমনি দহন যেন নেমে আসে ব্যক্তি জীবনেও। কিন্তু আবহাওয়াতে এক অদ্ভুত পরিবর্তন। কখনও প্রবল ঝড় ধ্বংস লীলায় মেতে উঠছে আবার পরক্ষণেই তাপপ্রবাহে ঝলসে যাচ্ছে চারদিক। কোথাও গ্রীষ্মকালের কোন চিহ্ন না রেখে বৃষ্টি গ্রাস করছে পথঘাট। 
এ কি কোন অশনি সংকেত? জলবায়ু পরিবর্তনের ঈঙ্গিত? আমাদের প্রিয় নীল গ্রহটিতে আসছে কোন বিরাট পরিবর্তন? 
উত্তর সময় দেবে। জানবে ভাবীকাল। তবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় ক্রমাগত প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে বিনাশ করে আমরা নিজেদের হঠকারিতায় ঠেলে দিচ্ছি নিজেদেরকেই এক নষ্টভূমির দিকে।
হয়তো সেদিন আর দূরে নেই যেদিন কোন নবজাতকের কান্নায় মুখরিত হবে না মধু বাতাস। অন্তরীক্ষ থেকে পুষ্পবৃষ্টি করবে না কেউ আর মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে।
হয়তো বেঁচে থাকবে কেবল স্যালামান্ডারের মতো আগুনজয়ী কিছু প্রাণী। 
চিরস্থায়ী এক গ্রীষ্ম বিরাজ করবে এই বসন্ত গ্রহে।
একই ভাবে বলা যায় দাবদাহ যেন সমাজ জীবনেও। যে হিংসা আমরা সদ্য লক্ষ্য করলাম তা আমাদের  দিয়ে দেখালো অসম্প্রীতির, ঘৃণার, বিশ্বাসভঙ্গের, লোভের, ক্ষমতার গ্রীষ্ম গ্রাস করেছে আমাদের সমাজজীবন। 
যদি না থামি আমরা এই প্রচন্ড গ্রীষ্ম আমাদের দাঁড় করবে এক নষ্ট সমাজে যেখানে থাকবে না কোনো সৃজন, কোনো ভালোবাসা।
থাকবে কেবল মুখ ঢাকা এক বিকৃত মানুষরুপী প্রাণী যে শত আঘাতেও জাগবে না কোনোদিন।     



এই সংখ্যায় লিখেছেন যাঁরা -

কুমকুম ঘোষ, যাজ্ঞসেনী, প্রসূন সমাজদ্বার, বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য, কণিকা দাস,  সুদীপ ব্যানার্জী, অর্ণব দেবনাথ, মন্দিরা ঘোষ, রীনা মজুমদার, সঞ্চিতা দাস, শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস, মৌসুমী চৌধুরী, গায়েত্রী দেবনাথ, আগন্তুক,  বেলা দে, রৈবতী বন্দোপাধ্যায় (চক্রবর্তী), শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী,  অন্বেষিকা দাস, সুব্রত নন্দী, দীপশিখা চক্রবর্তী,  সপ্তক, সুপ্রীতি বর্মন, অভিজিৎ মান্না, মৌসুমী ভৌমিক, রিয়া ভট্টাচার্য, মহাজিস মন্ডল, সংকলিতা সান্যাল, অনিমেষ সরকার, সুকান্ত পাল, পায়েল, সায়ন তরফদার, উমা বসু, মাম্পি রায়, পাপিয়া চক্রবর্তী, অঙ্কনা সাহা



সম্পাদনা, অলংকরণ  ও বিন্যাস  - শৌভিক রায়
প্রকাশক - রীনা সাহা  




শ্রদ্ধাঞ্জলি







প্রবন্ধ


বাউল রূপে কবি রবি
অন্বেষিকা দাস


বাউল একটি বিশেষ লোকাচার ও ধর্মমত। এই মতের সৃষ্টি হয়েছে বাংলার মাটিতে। বাউল শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। আনুমানিক সপ্তদশ শতক থেকে বাউল নাম –এর ব্যবহার ছিল বলে জানা যায়। চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থের মহাপ্রভু, রামানন্দ রায় ও সনাতন গোস্বামীর নিকট কৃষ্ণ বিরহ বিধুর নিজেকে ‘মহাবাউল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সেই থেকে অনুমান করা হয় বাউল শব্দের উৎপত্তির কথা। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ সৃজনশীল সাধকদের মধ্যে বাউল সম্প্রদায় অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। এই সম্প্রদায় মূলত দেহ সাধনা করেন এবং গানের মাধ্যমেই সেই দেহ সাধনার কথা প্রকাশ ও প্রচার করেন। বাউলদের রচিত গানের গভীরতা, সুরের মাধুর্য, বাণীর সর্বজনীন মানবিক আবেদন গ্রাম ছেড়ে শহর পেড়িয়ে বিশ্ববাসীকে করেছে বিমোহিত। বাউলরা সাধারণত তাদের গানের মাধ্যমেই প্রকাশ করেন তাদের দর্শন ও মতামত। জাত-পাত, ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষকে ভালবাসার মন্ত্রই হল বাউলদর্শন। এই দর্শন সকল রকমের ভাবাবেগ ও কূপমন্ডুকতার ঊর্ধ্বে। কোনো প্রকার কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা বাউলদের স্পর্শ করে না। বাউল সাধক দুদ্দু শাহ কর্তৃক বাউল মত তথা বাউলতত্ত্বের মূল কথাটা অত্যন্ত সহজ সরলভাবে প্রকাশ পেয়েছে –
‘যে খুঁজে মানুষে খুদা
সেই তো বাউল
বস্তুতে ঈশ্বর খুঁজে
পাই তার উল’।
আর এই বাউল গান সর্বসাধরণের কাছে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাউল সাধকদের মহাগুরু বাউল সম্রাট লালন –এর মাধ্যমে। এই মানব সাধক লালনের সাথে এবং মানবতাবাদী দর্শনের সাথে এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। মূলত তাঁর হাত ধরেই লালন গান প্রবেশ করেছিল তাঁর অঙ্গনে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাউলগানের দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে তিনি নিজেকে ‘রবীন্দ্র বাউল’ বলে পরিচয় দিতেন।
১৮৯০ খ্রীঃ শেষভাগে রবীন্দ্রনাথ জমিদারি দেখাশোনার জন্য আসেন শিলাইদহে। সেইসময় তিনি কুষ্ঠিয়া অঞ্চলের বাউল ফকিরদের সাধন সংগীত শুনে চমকিত হন। তাঁর সাথে বাউলদের গড়ে ওঠে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। ‘পত্রপুট’ –এর ১৫ সংখ্যক কবিতায় তিনি বলেছেন –
‘কতদিন দেখেছি ওদের সাধককে
একলা প্রভাতের রৌদ্র সেই পদ্মানদীর ধারে’।
বাউল গানের প্রতি অসীম মোহের টানে তিনি অনেক বাউল গান সংগ্রহ ও বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপার ব্যবস্থা করেন। ১৩১৪ সালের ভাদ্র সংখ্যাতে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায়, ‘জীবনস্মৃতি’ গান সম্পর্কিত প্রবন্ধে, ১৯২৫ খ্রীঃ ভারতীয় দর্শন মহাসভার অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে, এমনকি ১৩৪১ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত ‘ছন্দের প্রকৃতি’ শিরোনামের প্রবন্ধে তিনি লালন গানের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালিদের জীবন সম্পর্কে গভীর অনুরাগী ছিলেন। সেই কারণেই তিনি করেছেন বাঙালি মননের সন্ধান। সেই সন্ধান করতে গিয়েই তিনি সন্ধান পেয়েছেন বাউলদের জীবন ও সাধনার। বাউলদের গানের সুর তাকে করেছিল বিমোহিত যা তাঁর কথায় আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে –
“বাউলএর গান শিলাইদহে খাঁটি বাউলের মুখে শুনেছি ও তাদের পুরাতন খাতা দেখেছি। নিঃসংশয়ে জানি বাউলগানে একটা অকৃত্রিম বিশিষ্টতা আছে, যা চিরকেলে আধুনিক। ...... আমার অনেক গান বাউল ছাঁচের, কিন্তু জাল করতে চেষ্টা করিনি, সেগুলো স্পষ্টত রবীন্দ্র বাউলের রচনা”।                         (হারামণি গ্রন্থের ভূমিকা)
এমনই একটি বাউল সুরে রবীন্দ্রসংগীত হল –
“আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে
তাই হেরি তায় সকল খানে।
আমি তার মুখের মথা
শুনব বলে গেলেম কোথা
শোনা হল না, শোনা হল না”।
এখান থেকে বোঝা যায়, তাঁর উপর বাউল প্রভাব সত্যি বাইরের ঋণের মতো নয়, সে প্রভাবকে স্বীকরণ করে, তিনি আপনার মতো করে প্রকাশ করেছিলেন। বাউলদের বিশিষ্টার্থক শব্দাবলী এবং সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে তিনি বাউল পরিবেশকে প্রগাঢ়তা এবং তাঁর বক্তব্যকে অপূর্ব ব্যঞ্জনা দান করেন। এসব ক্ষেত্রে তিনি যথার্থই রবীন্দ্র-বাউল হয়ে উঠেছেন। এটা লক্ষ্য করে শশিভূষণ দাশগুপ্ত তাঁকে ‘The greatest Bauls of Bengal’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
শুধু তাই নয় বাউল তাঁর আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠেছিল। সেজন্যই তাঁর সাহিত্যকর্মের যত্রতত্র বাউলের উপস্থিতি চোখে পড়ে। ‘গোরা’ উপন্যাসে দেখা যায় – ‘কাজের শহর কঠিন হৃদয়’ – কোলকাতার রাস্তার ধারে আলখাল্লী পরা বাউল উপস্থিত। তাঁর কন্ঠে অন্তর ব্যাকুল করা গান বেজে ওঠে –
“খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়।
ধরতে পারলে মনোবেড়ি দিতেম পাখির পায়”।
‘প্রায়শ্চিত্ত’ নাটকের ধনঞ্জয় বৈরাগী এবং ‘ফাল্গুনী’র অন্ধবাউলও আমাদের দৃষ্টি এড়ায় না। রবীন্দ্রনাথ ধনঞ্জয় বৈরাগী ও অন্ধবাউলের নৃত্যের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তাদের জীবনের আনন্দের স্বাদ পেতে চেয়েছিলেন। এছাড়া পরিত্রাণ, অচলায়তন, শারোদ্যোৎসব, রাজা, ঋণশোধ প্রভৃতি নাটকে কোথাও বাউল বৈরাগী, ঠাকুরদাদা বা দাদাঠাকুরের বেশে আবির্ভূত, কোথাও বা পুরোপুরি বাউলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
পরিশেষে বলতে পারি, রবীন্দ্রমানস এবং রবীন্দ্ররচনায় বাউলের ভূমিকা যেমন ব্যাপক তেমনি গভীর। সম্ভবত উপনিষদ ব্যতীত অন্য কোনো দর্শন কবির মননে ও রচনায় এমন দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। আরও একটু অতিশয়োক্তি করলে বলা যায়, পরিণতিতে কবির একটি প্রাতিম্বিক দর্শন যখন ঔপনিষদ দর্শণ থেকে তাঁকে মুক্তি দেয়, তখন তিনি বাউলের মন্ত্রহীন সহজ আনন্দ ও মুক্তি দিয়ে বিশ্বকে প্রত্যক্ষ করতে চেয়েছেন।

কবিতা

প্রণম্য বিশ্বকবি 
সুব্রত নন্দী 

এসো হে বৈশাখ,পঁচিশে বৈশাখ মননে,
শত কোটি পূজার্ঘ্য সাজাই তোমার চরণে।
বিশ্বময় মুগ্ধ, অনিন্দ্য সুন্দর লেখনীতে,
রিদ্ধ ধরণী তোমার  চিরস্মরণীয় কীর্তিতে।
হৃদয়ে তুমি,জীবনে তুমি,স্বপনে তুমি,
তুমিই আপামর বাঙালির নয়নের মনি।
দিনেরাতে সমৃদ্ধ হই তোমার কবিতায় ভর করে,
আজো বাঁচি উচ্চাসনে অনন্য সৃষ্টির হাত ধরে।
লেখনীর শোণিত ধারায় ভরিয়েছ সাহিত্যসম্ভার,
অবিস্মরণীয় সৃষ্টির নেই কোনো পারাপার।
সঙ্গীত মূর্ছনায় রেখেছ প্রাণছোঁয়া স্বাক্ষর,
সাহিত্যের আসরে আজও তুমি সমান ভাস্বর।
বসন্ত উৎসবে জাগিয়েছিলে মনের বসন্তকে,
রাখী বন্ধন বেঁধেছিলে সমগ্র দেশটাকে।















মুক্তগদ্য


আমি ও আমার আত্মা

      কুমকুম ঘোষ


লড়াই লক্ষ্যহীন নয়-তবু, আমি জলের পাশে বসি ;খুঁজে বেড়াই ইতিউতি,দু-চারটে ভেসে যাওয়া শ্যাওলা , পোড়া কাঠে জলপিপির লাফালাফি ; কিংবা ঘাইমারা নীল-ছায়া শরীরের:  দ্বিধাহীন আঁশটে মাতামাতি ।।

লড়াই লক্ষ্যহীন নয়--তবু আমি ,ধুলো-মাখা পায়েই উঠে পড়ি , দেখি --হেঁটে যায় আমি ও আমার আত্মা : থমকে দাঁড়ায় , স্থির,  ভাঙ্গা টালির নীচে ; হাহাকারের ভাত নিয়ত যেখানে ফোটে ; তথাপি দুমুঠো বাড়ন্ত চাল লুকানো , ভাঁড়ারে!!

লড়াই লক্ষ্যহীন নয়--দেখি , হীনতার স্পর্ধিত মুখগুলো অবিরত, এঁটো কাঁটা চোষে চাটে, লাল চোখে ; দেখি, সেসব উপেক্ষা করে , কয়েকটা মুঠো ভরা হাত, আকাশের দিকে ফোটে।।


লড়াই লক্ষ্যহীন নয়--আমি ও আমার আত্মা পাশাপাশি হাঁটি : জানু পেতে বসি অবশেষে, রক্ত মাখা ঘাসে ; মাটিতে বিছিয়ে দিই প্রাণ ; গভীর, আরো আরো গভীরে, কান পেতে শুনি--বীজের বিজয়ধ্বনি ।।

আমি ও আমার আত্মা-----

লড়াই লক্ষ্যহীন নয়
এই শুধু জানি।।




 ফুলকারি পাড়ের শাড়ি
    শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস


বিপুলা পৃথিবী সোজা হয়ে চলতে চলতে মেরুদন্ডকে কাঠবিড়ালি বানিয়ে ফেলেছে।গাছ আর জন্তুজানোয়ারের ভাষা বুঝতে পারতো ব্রতকথার এক রমণী। তার মুখেই কোন এক পবিত্র উঠোনে দুঃখী রাজা আর শিয়ালের গল্পে উঠে এসেছিলো সুখের ক্ষণস্থায়ীত্বের কথা। তুলশী গাছ এসব গায়ে মাখেনা বলে কুকুরের পেচ্ছাপ আমাদের পবিত্রতাকে বারবার ধ্বংস করে। শিয়াল আরো বলেছিলো! বলেছিলো- শিয়ালনী, আমি তো আর ওই রাজার মত বোকা নই যে, বউ'র কথায় সাক্ষাৎ মৃত্যু জেনেও খরস্রোতা নদীতে নেমে মড়দেহ তুলে আনতে যাবো তোর খিদে মেটাতে ! এসব কথা ঝোপের আড়ালে থেকে কাঠবিড়ালি  শুনেছিলো। তাই এই ভূবনের নিভৃতি ভেঙে পাতার শব্দ হয় খস্ খস্! ওমনি আহ্নিকগতি থেকে বার্ষিকগতির দিকে যেতে যেতে সচকিত আমাদের ভূবলয়ের পৃষ্ঠদেশের গাছে জাতীয়ফলের মুকুল ধরে। পাতায় পাতায় ফুলভারে গাছ নুইয়ে পরে মাটিতে। মাটিও নবমী নিশি শেষে জলপাত্রে নিজের প্রতিবিম্ব রেখে কাঠবিড়ালির প্রতীকরূপে যাত্রা করে শিবালয়ে। নীলকন্ঠপাখির কুজনে দেবাদিদেব বুঝে নেন, মর্তভূমি'র পটকা সকল মাকে বিদায় দিয়েছে।
                                         এরপর দু'একটি তদন্তকমিশন ডুমুরের ফুলের পোষ্টবক্সে ড্রপ করে দিয়ে যায় রমণীর চিঠিভর্তি এনভেলপ। কেবলমাত্র সুখী রাজা ও রানি, সুখী শিয়াল ও শিয়ালনীর গল্পে অধরা কাঠবিড়ালির চলার পথের ছাপ লেগে থাকে বনাঞ্চলের ঘনজমি ও পাড়ের শাড়ী'র ফুলকারি কাজে।
















গল্প


সংলাপ কাল্পনিক
সপ্তক

- কোথায় যাবে?
- বাড়ি ফিরছি।
- এত রাতে?
- হ্যাঁ, কাজ সারতে এত দেরী হবে ভাবতে পারিনি।
- লাস্ট বাসটা আজ আসবে বলে তো মনে হচ্ছে না। ন'টা তো বাজতে চলল, সঙ্গে কেউ আছে?
- কেন বলুন তো?
- না, বাস না পেলে একা মেয়ে এই রাত্তিরে কোথায় যাবে?
- আপনিও তো বাসের জন্যই দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তা আপনি কি করবেন বাস না পেলে?
- হাসালে! আমি তো যে কোনোভাবে রাত কাটিয়ে দিতে পারবো।
- কিন্তু আপনাকে দেখে তো মনে হয়না যে কোনোভাবে আপনি রাত কাটাতে পারেন! এই বাসস্ট্যান্ডে মশার কামড় খেয়ে রাত কাটাতে পারবেন?
- তা কেন হবে? চেনা কাউকে বলব গাড়ি পাঠিয়ে দিতে নয়তো রাতটা কোনো হোটেলে কাটিয়ে দেবো!
- এই একই ব্যাবস্থা যে আমিও করতে পারবো না তা আপনাকে কে বলল?
- ও, তোমার ছেলেবন্ধু আছে? সে বুঝি গাড়ি নিয়ে আসবে?
- বন্ধুত্বের আবার ছেলে না মেয়ে!! আমার বন্ধুদের মধ্যে একজনের গাড়ি আছে। বাস পাইনি শুনলে সে কিছু ব্যবস্থা করবে নিশ্চয়ই, কিন্তু এই শীতের রাতে তাকে বিরক্ত করতে চাই না, বাস না এলে হোটেলেই থাকব।
- ও, তোমাকে আমি অন্যরকম ভেবেছিলাম!
- কিরকম?
-মেয়েদের মধ্যে দুটো রকম আছে, একদল বাবা-মায়ের বাধ্য, এরা একা বাইরে বেরোয় না, বাড়ির কেউ সঙ্গে থাকে অথবা নির্দিষ্ট কাজ শেষ হলে বাড়ির লোক এসে নিয়ে যায়। কোনো ছেলে ছোকরা চট করে এদের সঙ্গে ঘেঁষতে সাহস পায় না। আরেকদল উচ্ছৃঙ্খল!  যেখানেই যায়, সঙ্গে ছেলেবন্ধু থাকে। এরা রাত করে বাড়ি ফেরে, বাড়িতে মিথ্যা কথা বলে, গুরুজনদের রেয়াত করে না, পার্কে, পার্টিতে, জলসায়, মেলায় সবজায়গায় এদের দেখা যায়। ওই ছেলেবন্ধুর সাহায্য ছাড়া ওরা এক পা চলতে পারে না কিন্তু ভাবখানা এমন যেন বিশ্ব জয় করেছে।
- একটু ভুল করলেন, আরো একটা রকম আছে। এরা একাই পথ চলতে জানে, হোঁচট খেলে উঠে দাঁড়াতে জানে,  অন্যের ভরসার অপেক্ষা করে না, বরং নিজের ভরসার হাতটুকু অন্যের দিকে বাড়িয়ে খুশী থাকে এরা।
- তোমার কথাগুলো শুনতে ভালো, কিন্তু অকেজো। এই যে এখনো একা বাড়ির বাইরে রয়েছো, দেখছো তো মেয়েদের সঙ্গে কত কি ঘটছে! ইজ্জত যাবার ভয় নেই?
–ইজ্জত যায় না তো! অন্তত যতক্ষণ আমি তাকে নীচে না নামাচ্ছি। 
– ও, তুমি ভয় পাও না বলছো? আবার অবাস্তব কথা।
– হ্যাঁ, ভয় পাই, আপনারই মতো একা রাতে দুষ্কৃতীদের কবলে পড়ার ভয় পাই, তার থেকেও বেশি ভয় পাই আপনাদের বেঁধে দেওয়া ইজ্জতের সংজ্ঞাকে।  ধরুন একদল লোক কোনো এক ছেলের সর্বস্ব এমনকি তার পরনের পোশাকটাও যদি ছিনতাই করে নিয়ে নেয় তাহলে সেটা একটা খবর হবে। কিন্তু ঐ ঘটনার অর্ধেকটুকুও যদি কোনো মেয়ের সঙ্গে ঘটে তাহলে ঘটনার পরবর্তী জল্পনা এবং ঘটনার পূর্বে ও পরে মেয়েটির গতিবিধি সংক্রান্ত ব্যাখ্যা এতটাই তুঙ্গে উঠবে যে মেয়েটির আত্মবিশ্বাস নামক বস্তুটি আর মাথা তোলার অবকাশ পাবে না।
– তোমাকে দেখে তো ভদ্র মেয়ে ভেবেছিলাম।
– আমি তো আপনার সঙ্গে ভদ্রতা, অভদ্রতা কোনোটাই করলাম না!
– না, ভেবেছিলাম একা মেয়ে রাতে বাড়ি ফিরতে না পারার ভয়ে মুষড়ে পড়েছ। আর সেখানে তুমি ঐ যে কি যেন বলে নারীবাদী  বুলি কপচাচ্ছ, আবার বলছ কিনা হোটেলে থাকবে! কোনো একা মেয়ে যদি হোটেলে রাত কাটানোর কথা বলে তাকে ভদ্র বলি কি করে!
- আচ্ছা, আপনার বাড়িতে মেয়ে আছে?
- হ্যাঁ, ভগবানের কৃপায় আমার এক মেয়ে, এক ছেলে।
- কি করে ওরা?
- মেয়ে বড়, এবার ফিজিক্সে বিএসসি ফাইনাল দেবে, পড়াশুনায় খুব ভালো জানো তো! ওর খুব ইচ্ছে ছিল জার্নালিজম নিয়ে পড়ার, কিন্তু আমার ইচ্ছে ও শিক্ষকতা করুক। 
- কেন?
- মেয়েদের জন্য শিক্ষকতাই উপযুক্ত পেশা, মানে নিরাপদ আর কি! কোনো বাড়তি ঝুঁকি নেই, অসময়ে কাজে বেরোনো নেই, একগাদা পুরুষ কর্মীর সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিযোগিতায় নামতে হয় না, তাই বিয়ের বাজারে শিক্ষিকা পাত্রীর দর বেশী।
- মেয়ের বিয়ের ভাবনাও ভেবে ফেলেছেন!
- তা তো ভাবতেই হবে, আজকাল সব পাত্রপক্ষই চাকুরীরতা মেয়ে চায় কিনা! না হলে ওর উপার্জনের দরকার কি?  মেয়ে কে তো নিজের উপার্জনে খেতে হবে না, বাবার সেটুকু ক্ষমতা আছে।  ওকে এমন কোনো ঘরে তো আর বিয়ে দেব না যে খাওয়া পড়ার অভাব হবে।
 –ধরুন আপনার মেয়ে বিয়ের পরে বিধবা হয়ে গেল, সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির দায়িত্ব ঘাড়ে এসে পড়ল, তখন?
- তুমি তো খুব ঠোঁটকাটা মেয়ে! সেরকম হলে বাপের বাড়ি চলে আসবে! আমার মেয়ে কেন দায়িত্ব নিতে যাবে?
- আচ্ছা বেশ, ধরা গেল আপনার মেয়ে বহাল তবিয়তে সুখে সংসার করছে, কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হয়ে আপনি পথে বসলেন, কিংবা দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে গেলেন, তখন ?
– তোমার মুখে কিছুই আটকায় না। সেরম হলে ছেলে দেখবে, বিবাহিত মেয়ের দয়ায় বাঁচলে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে আমার মান থাকবে? মেয়ের মাথাও তো হেঁট হয়ে যাবে!
– তাহলে মেয়ের কর্তব্য করার দরকার নেই বলছেন?
–তা কেন? কর্তব্য করবে, মাঝে মাঝে জামাইকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের দেখে যাবে, একটু যত্নআত্তি করবে। ছেলে যদি সময় না পায়, তখন জামাই নিয়ে যাবে ডাক্তারের কাছে।
– বাঃ! অপূর্ব!!!
– তবে কি জানো আমার মেয়ে বড়ই হয়েছে শুধু, বাচ্চামো এখনো যায়নি। সকালে এখনো ঘুম থেকে ডেকে তুলে ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে দিতে হয়, একদিন আমিষ না হলে তুলকালাম করে। নিজের কাজটুকু নিজে এখনো করতে শিখলো না, কন্যাশ্রীর ফর্মে কলেজের প্রিন্সিপালের সই লাগবে, সেটা আমাকেই করে আনতে হল। তাই ভাবি, মেয়ে ভবিষ্যতে আমাদের যত্ন আত্তি করতে পারবে তো? সংসার ঠিকঠাক সামলাতে পারবে তো?
–  মেয়ের বডিগার্ড না হয়ে বা তার অযথা খেয়াল খুশীকে এত তোয়াজ না করে ওকে হাঁটতে দিন একা। পৃথিবীটাকে নিজেকেই বুঝে নিতে দিন, কঠিন পাথরে ধাক্কা খেয়ে যদি পরে যায় একাই উঠতে দিন, ওকে বুঝতে দিন, এই পৃথিবীতে উপলব্ধ প্রতিটি যন্ত্রনা জীবনে উত্তরণের এক অমৃতময় পথ, সেই পথ মাড়িয়ে সে যখন আপনার সামনে এসে দাঁড়াবে দেখবেন, অপূর্ব আত্মবিশ্বাসে আপন পরিচয়ে, আপন অধিকারে বাঁচার উপলব্ধিতে ওর মাথা আপনিই উঁচু হয়ে গেছে। আপনার চিন্তা নয়, আপনার আত্মবিশ্বাসের কারন হতে দিন ওকে।
– অবাস্তব, ভীষন অবাস্তব!
– তাহলে একটু অবাস্তব হয়েই দেখুন না, দেখবেন বাস্তবটা অনেক সহজ হয়ে গেছে।



মুক্ত বিহঙ্গের নীড়ের উষ্ণতা
    সুপ্রীতি বর্মন


নতুন জামাই ঘর আসবে আমাদের মেয়েকে নিয়ে।ঐ দেখ এলো বোধহয়।মা ঠাকুরন এসে গেছো জিনিসপত্রগুলো কোথায় রাখি।আ গেলো যা আমার মাথায় রাখ।বলছি যে ঘরে ওরা থাকবে সেখানে দিয়ে আয়।মা কেমন আছো বলেই ঢুক করে প্রনাম মেয়ে জামাইয়ের বুকটা ভরে গেলো।মা গদগদ হয়ে চোখের জলে ভেসে আমার মেয়ে ভালো আছে সুখে আছে।জানো বাবা কেমন যেন একটা অশান্তি মনে দানা বেঁধেছিল যে ঐরকম ব্যবসা চালাতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যা করেছে তাই ভয় হয়।

             কদিন বেশ শ্বাশুড়ীর আদরে পাখার হাওয়ায় চর্ব্য, চুষ্য খেয়ে আর বৌ এর সাথে একান্তে প্রেমালাপে জামাই খুব খুশী।শহরে গেলেই আবার সেই আর্থিক নিষ্পেষনের যাঁতাকল আর কলকারখানার ধোঁয়ায় কলুষিত আকাশ বাতাস আর দমবন্ধ কাজের চাপ।একটু প্রানভরে নিঃশ্বাস নেবার সময় নেই।ওদিকে আরতি চান সেরে ঘরে ঢোকে ভিজে গামছা গায়ে আর জামাই তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।মেয়ে বলে ছাড়ো মা এসে যাবে।কিন্তু কে আর কার কথা শোনে সব জল যেন শুকিয়ে যেতে থাকে নিঃশ্বাসের উষ্ণতায়।আলিঙ্গনের স্রোতের এই প্রশান্তি আরতি এর আগে কোনদিন পায়নি।পাবেই বা কি করে অফিসের ও কর্নধার রাতবিরিতে ঘরে ফেরে।ভাবতে না ভাবতেই গামছা লুটিয়ে পড়ে পায়ের তলায়।সৌম্য এতটাই ডুবে যায় আরতির হৃদয় সরসী ছলকায় আর তাকে ভিজাতে থাকে।যেন কোন মধুচন্দ্রিমায় দরজা সকালেই আবার কপাট দিয়ে দেয়।সৌম্য দেখে স্বপ্নের বকুলের কুঁড়ি ধীরে ধীরে প্রস্ফুটিত হতে লেগেছে তার স্তনবৃন্ত কে আঁকড়ে ধরে।তারপর রগড়ারগড়ি পরাগরেনুর গোলাপের পাপড়ির মলাটে চুম্বন সিক্ত প্রনয় ঋন যা আজ সৌম্য পেয়েছে খুব কাছে তোমাকে আপন করে।

                  এবার যে ফিরতে হবে।মা বলে সে কি বাবা চলে যাবে আরো কদিন থেকে যেতে পারতে।সৌম্য বলে না মা এবার আর দেরী করলে সত্যিই ক্ষতি হয়ে যাবে।পরের দিন ঘোড়ার গাড়ি দরজায় হাজির প্যাঁ প্যাঁ হর্ন বাজাচ্ছে।চল চল মা তাহালে আসি।এসো বাবা বলে ঢুক করে চুমু।পরে স্বামী স্ত্রী গাড়িতে চড়ে আর মায়ের চোখের জল বাঁধ মানেনা।পরে গাড়িটা যাত্রা শুরু করে অদৃশ্য হয়ে গেলো।

                 বেশ যাচ্ছিলো গাড়ি হঠাৎ রাস্তার একটা বাঁক ঘুরতে গিয়ে একেবারে পালটি খেলো দুবার দিয়ে আছড়ে একপাশে।সৌম্য এতটাই অনিশ্চয়তায় চোখের সামনে সব শেষ হয়ে যাবার অন্ধকার দেখতে পেয়ে আঁকড়ে ধরে বাক্সকে যাতে আরতিকে আগলে রাখা যায়।নিজের সবটুকু শক্তি উজাগর করে আরতির যাতে কোন আঘাত না লাগে সেদিকেই তার সব খেয়াল।

               গাড়ির চালক ভয়ে গাড়ি ফেলে আহত হয়ে ছোটে ঘরের দিকে।বলে মা মা গো ভয়ংকর দূর্ঘটনা।মা ঠাকুরন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে যায় আর জামাই ও মেয়েকে ঘরে নিয়ে আসে।তারপরেই বৈদ্য বলে দেখে যে হাতের কব্জীর হাড় ফ্র্যাকচার হয়েছে তাই বেশ কিছুদিন বিশ্রাম দরকার।সৌম্য মুখ তো যন্ত্রনায় কোঁচকানো কিন্তু কিঞ্চিত হাস্যময় দীপ্তি চোখে মুখে।আরতি সেটা লক্ষ্য করে কিন্তু উদভ্রান্ত।

                পরিশেষে আরতি শুতে গেলে দরজায় কপাট দিয়ে বলে তোমার খুব যন্ত্রনা হচ্ছে তোমার কষ্ট আমি দেখতে পারছিনা।চল কালকেই ফিরে যাই কলকাতায়।সৌম্য বলে এই পাগলী তাকাও আমার দিকে আমি ভালো আছি।ঈশ্বরের অশেষ কৃপা তোমার বুকে ঘা লাগেনি আমি তোমাকে রক্ষা করতে পেরেছি।আর এখানে মায়ের চোখের জলে অনিচ্ছায় বিদায় নিয়েছি তাই অভিশাপ।

              শোনো লক্ষ্মীটি আরো কিছুদিন আমি তোমাকে কাছে পেতে চাই।উপলব্ধি করতে চাই মধুচন্দ্রিমার স্বর্গসুখ।আর তোমার কোলে মাথা রেখে পেতে চাই মুক্ত বিহঙ্গের নীড়ের উষ্ণতা।





















কবিতা



কিশোরী বেলা
 বেলা দে



বৃষ্টিভেজা রাতের অবাধ্য সময়
নষ্টালজিক কিশোরীবেলা ছুঁয়ে যায়                                                           প্রেমডোরে বাধা সম্পর্কেরা
সূত্র ছিঁড়ে ছুটে গেছে বহুদূর
বাতাসি সুরে আজও
স্বজনের আবদারি সম্বোহন
ঘুরে ফিরে মায়ের আবহ                                                           
প্রত্যয়ী  সে হাত ছুঁয়ে
মাটিতে এক পা দু পা
কিশোরীকালের নিগুঢ় তথ্য
ঢাকনা সরিয়ে প্রথম জীবনপাঠ
হিসেবী প্রকৃতির নারী করে দেওয়া
সেও মায়ের কাছে
প্রতিক্রিয়ায় বুঝেছি মায়ের মুক্তকন্ঠ বাৎসল্য
মেয়েরা প্রকৃতিতে বড় হয় মাতৃমমতায় নয়।



পাগলি      
        যাজ্ঞসেনী  
       
আবার কেন পাগলি
হৃদ পুকুরের মধ্যিখানে
ভুল,  তুই আঁকলি?

আবার কেন পাগলি
মুঠোয় ভরা বাতাসকে
নিজের বলে ভাবলি?

আবার কেন পাগলি
মরীচিকার বিন্দু জল
পদ্ম পাতায়  রাখলি?

আবার কেন পাগলি
পাপড়ি ছেঁড়া গোলাপকে
মা,  তুই ডাকলি?

আবার কেন পাগলি
তর্জনীর ওই তরবারিতে
দুর্গা হয়ে থাকলি?


                                                    
মায়ের শোক
প্রসূন সমাজদ্বার
জলছড়ার একটা নূপুর
শিড়শিড়ানির আলতো
দুপুর।
কেউবা ডাকে
কেউবা ঝিমোয়

বোঁচকা কাঁখে মনা বেলি
জলচ্ছবির কথাকলি
অলস ডলস
দিনঝাড়িতে
হাড় মজ্জা হারিয়ে যায়।

একটু শোকে একটু শকে
মোমবাতিরা দাঁড়িয়ে থাকে
গলায় দড়ি
প্রশ্ন করি
সে মায়ের কেমন কাটে?


পুরোটা পোড়ার আগে

সুদীপ ব্যানার্জী


বুকে আধপোড়া চিতার কাঠ
সাবেকি ডানা হাওয়ায়
জটায়ুর আঘাত মাপছে
অতিক্রান্ত কবেকার চেনা চৌহদ্দিও
সহ্যের সীমানা খাঁজে  খাঁজে
চুপচাপ


এ মওকায় ফিরে পেতে বিশ্বাস
মুচকে তাকায় ডবকা চাহিদা

সাময়িক এসব টানাপোড়েন
আমার মেগাকল্পনা

আস্তরণে লুটোয় লাবণ্য
আলোছায়ায় শেষ রূপটান

তবু চেকনাই নামে বাতিল বন্দরে
খোলা উরু,মৃত চুল,উল্কার শ্বাস

নাভির গভীরে তলিয়ে হাঁটুভেজা নদীজল

পারাপার ডুব গালে দাউদাউ এ প্রহর থামিয়ে                                                       



  লাল আভায়
 গায়েত্রী দেবনাথ



জৈববিশ্বে অপঘাত,আদি অন্তহীন
হৃদস্পন্দনে আনাগোনা
বিস্তীর্ণ  মরীচিকা
কুহক মানি না
গনতন্ত্র আজ
অসার মৃত্যুভয়ে ঘেরা
স্তব্ধদিঘির বিনিদ্র তারা
মেঘনার স্রোতে,তেপান্তরের তৃষ্ণা
তোমাদের পৌরুষ বর্বর ক্ষুধায়
আমাদের মৃত কনকচাপা
মৃত নদীর যৌবন প্রায়
অতন্দ্র প্রতীক্ষারত
কৃষ্ণপক্ষশেষে ঊষসী ঊষায়
আশ্চর্য প্রভাত
লাল আভায়


অগোপনীয়
আগন্তুক 
নদী জানে সব -
কার চোখে চোরাবালি,
কার চোখে কি ভীষন ক্ষত ;
পাখি জানে সব -
আকাশেতে ঘর বাঁধা
জীবনের মিথ্যে শপথ ।
মন জানে সব -
কার বুকে ভালোবাসা ,
কার বুকে শুধুই পাঁজড় ;                                                                                      

ফুল জানে সব -
কার নখে কতখানি
ধারালো বাঘের আঁচড় ।
পথ জানে সব -
কার আছে কতটুকু
ফেলে আসা পিছনের মায়া ,
এবার ফিরতে হবে ঘরে -
নইলে দীর্ঘ হবে ছায়া ॥


ধারাপাত
রৈবতী বন্দোপাধ্যায় (চক্রবর্তী)

সোনালী বিকেলে আলোকিত ছিলে তুমি,
ডেকেছিলাম আকুল হৃদয়ে ,
নির্বাচিত কলমের মতো চলেছি
জীবনের ধাপে ধাপে ,
সময়ের তরণী বেয়ে বদলেছে সবকিছু,
পালতোলা নৌকায় যাত্রীরা ওঠানামা করে,
এক সফল নাবিককে খুঁজে নেব আমি,
হাতে নিশান কুয়াশার চাদর ভেদ করে।


আবহমান
বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য


দিন বয়ে যায় তোমার পথেই চোখ রেখে
ভীষন রকম হারিয়ে গেছো চুপ থেকে।

আমার সময় খুব অসময় নষ্ট দিন
মনের ভেতর অপেক্ষারা দ্বন্দ্ব হীন।

পলাশ আমার একলা আবার শূন্য মন
এ মন শুধু চিলে কোঠায় বকবকম।

ভুল ঠিকানায় ট্রেন ছুটে যায় নিরুদ্দেশ
কথাগুলোর রাত্রি জাগার বদভ‍্যেস।

আমার তারার নীল পরীরা আশংকায়
মেঘ জমেছে ঐ যে দূরের আকাশটায়।

কোন মন্ত্রে ঘুম পাড়ানি গান রাখো
বন্ধ ডানায় মনের গোপন রাত ঢাকো।

ডুবছি আমি কূল হারানো জলতলে
কেমন করে ফিরতে পারা দাও বলে।                                                           


   নৈঃশব্দ্যে পদচারণ
    কণিকা দাস

সারারাত ধরে নগ্ন চোখে শূন্যতার আলপনা
অন্ধকারে আতিপাতি স্মৃতির জানালা
খুব কি বেশি চাওয়া হয়ে গিয়েছিল
নাকি নিখাদ কল্পনার মায়াজাল বোনা!

সারারাত ধরে শুধু দুঃস্বপ্নরা ভিড় করে
দু'চোখের পাতায় জোড়া শালিক
তবু কোন ভালো সময় খুঁজে পাইনা
রাত জানে অসহায় প্রত্যাশার ব্যর্থ দীর্ঘশ্বাস

জীবনভর দিয়েই গেলাম দুহাত ঢেলে
আশাহত মুসাফির এক পথে পথে যাপন
কত রাত নগ্ন চোখে, বৃষ্টিরাও তখন ব্রাত্য
কত রাত নিঃশব্দ ঝর্ণাধারা দু'চোখে নিয়ত।

ঘুমবিহীন রাত পাথরের বুকে স্বপ্নে লিখি নাম
তুমি আমি নাকি অন্য কেউ-- হিসেব অমিল
গড়পড়তা হিসেবের খাতায় তুমিই লাভবান
গোজামিলে মেলানো আমার সকাল থেকে রাত।

কথা দিয়ে কে রাখেনি কথা সে দায় কি আমার?
মিলাতে পারিনা জীবনের অঙ্ক বিষাদ করে ভিড়
তবু বারবার মন ছুটে যায় না পাওয়া সময়ের কাছে
প্রত্যাঘাতে ফিরে আসে রাত জাগা খবর নিয়ে।


  অসমাপ্ত
            অণর্ব দেবনাথ

আসলে মনে হয়
জীবনের একটা সময় পরে আমাদের কাছের
দুরের সব মানুষগুলোই
                              শুধু মুখ হয়ে যায়...
ক্রোধের
অভিমানের
অপ্রাপ্তির
উপক্ষার, একঘেয়েমির.....হতাশার
                      অথবা ক্ষয়িষ্ঞু ভালোবাসার।

একট সময় পার করলে
আমরা কেউ কারোর কোনো কথাই শুনতে চাইনা
মানতেও চাইনা...

শুধু ইগো আর লজিক এর  কাটা-গোল্লা 
বসিয়ে চালিয়ে যাই অমিমাংসিত
কাটা-গোল্লা খেলা,

জিততে পারিনা কেউ ই
শুধু হেরে যাওয়াটাকে আটকে  রাখছি প্রাণপণ। 



পরবর্তী  ধাপ

মন্দিরা ঘোষ


দগ্ধ দুপুরের ভাঁজগুলিতে
মেঘলা বিষণ্ণতা
চাপা অসুখচিহ্ন ঝুঁকে থাকে
সমীকরণের দিকে
টেলিপ্যাথিক ভঙ্গিমায়
জড়তার লজিক
চেয়ে থাকা সময়ের বিমূর্ততায়
ঘরময় ছড়ানো থাকে
মনস্তাত্ত্বিক মুখোস
উদাসীন চোখ মেপে রাখে
পরবর্তী ধাপের ঘর গুলি


কবিতা  আজ...                                             
মৌসুমী চৌধুরী


প্রেমের কবিতগুচ্ছ চাপা পড়েছে হৃদয় কফিনে। 
লিখতে গেলেই ভিজে যাচ্ছে কলম।
ট্রেন লাইন থেকে উঠে আসছে গণতন্ত্রের তিন টুকরো  লাশ...

প্রেমের কবিতাগুচ্ছ পুড়ে যাচ্ছে দাউ দাউ চিতায়। 
প্রেম-বিলাসী কলমটি কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম উল্লাসে
খুঁজে পাচ্ছে হিমোগ্লোবিনের অকাল অপচয় আর 
সিঁথি থেকে গলে পড়া সিঁদূরের কান্না... 

প্রেমের কবিতাগুলো স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সজনে ডালে মাথা দোলানো কচি কচি সবুজ পাতায় 
কলমটি আমার খুঁজে পাচ্ছে 
পিচ-রাস্তায় ঝরে পড়া উন্মত্ত আবীর উল্লাস...

প্রেমের কবিতা আজ নয়,
কবিতা আজ হোক দানবদলনী...

বুকের কোটরে ছাই হয়েছে থৈ থৈ প্রমের কবিতা!


মনখারাপের জ্বর
দীপশিখা চক্রবর্তী

শরীরের ভেতর অন্য শরীর-
নিবিড়,নিষিক্ত!

ব্যর্থ প্রেমের শরীরে তখন একশ দুই বা চার;
অসাড়ে বাড়ে রাত...

অঝোর বৃষ্টিতে ভেজে মনখারাপের হাওয়া;
উন্মুখ চাতক কণ্ঠ পেতে শুষে নিই বৃষ্টিজলের আত্মসুখ!

মনের গভীরে শুয়ে থাকা অসুখ
খোঁজে ঘুম-একলা বিছানায়!
রাত জেগে ছুঁয়ে চলা কবিতার চলন্তিকা..

হঠাৎ তপ্ত কপালে আঁকা আদরের চুম্বন,
বুকের ভেতর ছটফটানি সুখ-পাখিদের আনাগোনা ;

তোমার বুকের আলতো স্পর্শে
শরীরে আহ্লাদের কুসুমগন্ধ!
শিরায় শিরায় মিলনের সুর-তাল-ছন্দ;
নিবিষ্ট চোখে খোঁজ-
ভালবাসার!!


 কেন ?
অভিজিৎ মান্না 

আকাশটা সরে যায় কেন ?
কেনই বা সব আশা ?
এত চাওয়া শেষে
ছাই ওড়াও পরের পর ।
আমি নীরবে  মাখি অবজ্ঞা ।
তেতো দীর্ঘশ্বাস কারন খোঁজে ।
অভিসন্ধিহীন আমার করতল
লাল গোলাপ নিরূত্তর ।

                                                                                             

অভিমান
মৌসুমী ভৌমিক 

নীরবতার অভিমানে 
জমে জমে ওঠে মেঘ। 
পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি । 
দরবারি কানাড়া তোলে না ঢেউ। 

আমার মধ্যে অবশিষ্ট নেই
কোনো ঝর্ণা  বা পাহাড়ি নদী।
ক্ষয়িত নুড়ির মতো পড়ে থাকি
শুকিয়ে যাওয়া নদীর গায়ে। 

কোনো সবুজতা নেই
নেই প্রাঞ্জলতা। 
শুষ্ক কাঠের মতো পড়ে থাকি
জনহীন প্রান্তরে। 

কোনো দ্বিধা বা প্রতিবাদও নেই
সংশয়ে থাকি, বেঁচে আছি তো? 
জীবন হতে নিঃশ্বাসটুকু মুছে গেলে
জানিনা, অভিমান কোথায় নাম লেখাবে !


সন্ধ্যা তারা
রীনা মজুমদার 

   নক্ষত্র সূর্যের দেশে
       অসীম শূন্য আকাশে
  তারাদল ভেসে ভেসে যায়
  অন্ধকার হতে অন্ধকারে
 অন্বেষণ করে, কাহার অভিসারে?
 ক্লান্তিহীন সুরে অশান্ত গতিতে
শ্রান্তিহীন ভেসে চলা, কাহার অন্তর খুঁজিতে !
ইতস্তত চোখ , একাকী ছুটেছো নক্ষত্র !
তব কেন ফিরে ফিরে চাও
অনন্ত ইচ্ছের স্তূপ জাগাও..
কালের শতবাঁধা অনতিদূরে
   পূণ্যময় সম্ভোগের দ্বারে, 

   তুলসি তলায় অভিলাষে প্রতীক্ষা
 আছি হাতে নিয়ে সান্ধ্য প্রদীপ শিখা...


পাল্টে গেল
সঞ্চিতা দাস                                          


ছোটখাট বাগান ছিল বৃক্ষ ছিল বেশী,
ঝোপঝাড় আর গুল্মগুলো দেশী বিদেশী
ফুলে ফলে সময় হলেই ভরত গাছের ডাল,
ওৎ পেতে সব চোখ রাখত কচি কাঁচার পাল
শীতলতার আরাম নিতে আসত লোকজন
হাওয়ার দোলায় গাছগুলো সব করত আলিঙ্গণ
মাঝে মধ্যেই ক্লান্ত পথিক বসত গাছের ছাওয়ায়,
ক্লান্তি তার সরত দূরে শান্ত স্নিগ্ধ হাওয়ায়
সন্ধ্যে হতেই জোনাক আলোয় বাগান মনোরম-
গভীর রাতের অন্ধকারে করত গা ছম্ ছম্
সকাল বেলায় সজনে ফুলে পথটি যেত ভরে,
দোদুল হাওয়ায় খেলার নেশায় পড়ত ওরা ঝরে
লম্বা গোল পেয়ারা গুলো ঝুলত কেমন গাছে,
যেতে আসতে সবার চোখে দৃশ্য গুলো নাচে
হঠাৎ সবই মুড়িয়ে দিয়ে শূণ্য হল মাঠ,
আলো বাতাস হারিয়ে গেল উঠল নতুন ফ্ল্যাট


বারুদঘর
রিয়া ভট্টাচার্য 

জানলার কার্নিশ বেয়ে ঝুলে থাকে-----
কিছু বিধিবদ্ধ পুরাতনী নীলখাম,
চিঠি নেই তাতে.......
দূর সে মুলুকে,
আলগোছে শুয়ে থাকে কিছু ব্যার্থ মনঃষ্কাম।
জটিলতার বিছানায় দ্বিধাহীন আদরে;
কোঁচকানো চাদরের ন্যায় জড়িয়ে থাকে ভালোবাসা,
বাস্তব খাঁচায় গুমরে মরে রুদ্ধশোক.....
গতানুগতিকতার আঁচে সেঁকে----
পোড়া রুটিসম জীবন তুলে দেয়;
ক্ষুধার্ত নিয়তির মুখে।
চিরন্তন কিছু খেয়ালী রঙমশাল......
বারুদঘর হয়ে জমায় শোক,
শেষ হয়না; জ্বলন্তঅক্ষর'
বাড়িয়ে ডাইরির বুকের রোগ----
কুয়াশা ডিঙিয়ে মিশে যায় ছায়াপথে;
এই নির্বাক জোছনাতে।।
   মেরা ভারত
        শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী

  হায়নার চোখ
   লোলুপ দৃষ্টি,
    হিংস্র থাবা
    পাজরে আঁচড়,
    লকলকে জিভ
    নরখাদক নয়
    এরা নারীখাদক ।                                                   

    ভোটের রাজনীতি
    ব্যালট বক্সে দুর্নীতি,
    দখলদারীর কায়দাবাজী
    তীক্ষ্ণ বুদ্ধিজীবি,,,
    ধূর্ত চাহনির বেড়াজাল
    প্রতিশ্রুতির অপপ্রচার !
     পাল্টে ফেলার বুলি
      পাল্টাচ্ছে ওদের ভাঁড়ার ।

       রেস্তোরাঁয় ভোজনবিলাসী
       ভোগের উল্লাস,
       ভাগাড়ের মাংসে তৃপ্তি
        চেটেপুটে সাবার ,
      ভেজালের রমরমা
      খাদ্যগুণে ফরমালিন,
     মেরা ভারত মহান !!??



   বনসাই
 মহাজিস মণ্ডল

শিকড়ের ব্যথা কে আর বোঝে
কে আর খোঁজে তার দুঃখ কোথায়
কোন গভীরে প্রতিত হয় তার অশ্রুপাত
সমস্ত দহন, সমস্ত জ্বালা
কোন অন্তর্লীন শরীরে জমা হয়
প্রতিদিন কাঁটে তার কোন দুঃসহ শোকে
শীতল বাতাসের স্পর্শ নেই ওদের বুকে
নেই অন্তহীন হাসির ফোয়ারা
ওরা শুধু বনসাই হয়ে থেকে যায় এ সমাজে....




কাগজের নৌকা
সংকলিতা সান্যাল

বৃষ্টির জলে অভিমানী কাগজের নৌকো
নদীর অভিসারে মেতে ওঠে
খরস্রোতার শক্তি তার অজানা, কিন্তু
স্বপ্নের দেশের ঠিকানা গুপ্তধনের চেয়েও মুল্যবান।
নির্বাসিতদের সেখানে মায়ার চাদর উপহার দেওয়া হয়
প্রতিদিন চলে নিত্যনতুন মূর্তির বোধন
দিনের শুরু রাতের আতঙ্ক দিয়ে,
অস্তাচলের বড়ই তাড়া,ফুল সেখানে ফুটতে পারে না
তাদের ভয় দেখিয়ে ফোটানো হয়।
তাই তো সুরের হাওয়া বইলেই
আজও কাঁটায় গেঁথে মৃত্যু আসে





নামহীন
অনিমেষ সরকার


সমতলে তখন ঝড় এলো-
প্রশ্নের মুখে ঘায়েল তর্জমা;
দরজা আগলে দাঁড়ানো অর্বাচীন বোবা মেয়েটি!

অভিমানে ভারী হওয়া বালি রাশি,
পায়ের থেকে কেড়ে নেয়
অপেক্ষারত শুষ্কতায় ছিন্নখন্ড আভা...                                                   


গোলাকার হয়ে চারপাশ,
শ্রেষ্ঠত্বের অহং,
নির্বাচিত একাদশী,
আমার স্তুপাকৃত আর একাকী রাত৷






লাশকাটা গণতন্ত্র!
সুকান্ত পাল
.
আমি লুণ্ঠিত সমাজতন্ত্রের মারপ্যাঁচে গনতন্ত্রের বুকে দেখেছি ধনতন্ত্রের অদম্য অধিকার!
তারপর এক এক করে রঙিন বইয়ের পাতা উল্টে দেখেছি কবিতার সাথে কবিদের ব্যাভিচার!
এরপর দাস্তিকের আস্ফোটে আরোও কতবার, না জানি শুনেছি সাম্যের সূর!
আর অনন্ত পথের পথিক হয়ে উন্নয়নের পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়ে ফিরেছি বহুদূর!
কিন্তু বিশ্বাস করো আমি কোথাও মানবতন্ত্রের পদচিহ্ন খুঁজে পাইনি!
কাউকে তো নৈরাশ্য, নৈরাজ্যের হাহাকার থেকে মুক্তির দাবীতে প্রতিবাদ জানাতে দেখিনি!
কেউ তো মুঠোভরা জোনাকি লাগা শাশ্বত প্রেম নিবেদন করে বলেনি,
" চল তবে ভালোবাসা দিয়ে গড়ি আমাদের নতুন ভুবন " -- কারো মুখে তো শুনিনি,,,
' বাগিচায় ফোটা সদ্য রক্ত গোলাপটি আসলেই অকালে ঝরে যাওয়া আমার ভারতবাসী, -- আমার সহোদর ভাই!
আসলে আমরা তো পরিবর্তনের নামে বেশকিছুটা তাজা রক্তে সিক্ত মা, মাটি, মানুষ চাই!"
হরদম শুধু মিথ্যে প্রতিবন্ধকতার দাবিতে রাত-বি-রেতে দলে দলে হামবড়া দিয়ে যায় হামাগুড়ি!
রাজপথ থেকে কানাগলি, এমনকি মনের অলিগলি ছুঁয়ে, মনুষ্যত্বে দিয়ে যায় মায়াবী সুড়সুড়ি!
তারপর যা হয়! -- ভিক্ষা, দীক্ষা, নয়তো উচিত শিক্ষায় কেড়ে নেওয় হয় গণতন্ত্রের অধিকার!
যদিও আস্ফালকের চিৎকার জানান দেয় এ রাজ্যে ভোট হয় বারবার!
আচ্ছা ভেবেছো কি কখনো যেখানে মানুষ-ই মানুষ কাটার যন্ত্র! 
সেখানে কোথায় গণতন্ত্র ? -- এতো জনগণতন্ত্র নয়! - এতো লাশকাটা গণতন্ত্র!




মন বসন্ত
পায়েল

টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ
সেতারের রিমঝিম-
প্রত্যাশার স্বপ্নে বাস্তবতার মায়াজাল,
মনগহনে ঘুড়ি ওড়ে।
মিছে সংসার-সমাজ মিছে।
রাত ভেজা বালিশে চাঁদ হাসে-
তবু তো বসন্ত আসে আরেক বসন্ত নিয়ে।


বঙ্গভূমি
সায়ন তরফদার

কুসুম ধরিয়াছে গাছের ডালে
পক্ষী বসিয়া কিচির-মিচির করে।
মম হৃদয় তোমার রূপ দেখিয়াছে
হৃদয়ের অন্তরের হৃদয়কে তোমারে সপিয়াছে।
বঙ্গকন্যা চলিছে জল লইবার তরে
ভাসিছে তরীখান নদীর গভীরে।
ভাসিছে তোমার তরীখান মোর হৃদয়ের স্রোতের টানে
মম হৃদয় উচ্ছসিয়া ওঠে মোর আপন প্রাঙ্গনে।
তোমার চরণতলে সপেছি মোর প্রাণ
এ বাংলা ছাড়া তো সারা বিশ্ব ম্লান।
হে প্রভু, এইটুকু দাও মোরে
যেন ফিরিতে পারি এই বঙ্গেই মরিবার পরে।



ভেবে অবাক হই 
                                                            
    উমা বসু 


অবাক করা ভাবনা কত মাথায় করে ভীড় 
কোনটা বাঁকা, কোনটা সোজা, কোনটা বা অস্থির ।

মানুষ হলেই হয়না মানুষ, 'মানুষ 'হতে হয়, 
গরুকে কিন্তু কেউ বলেনা, ভালো গরু হও।

যত্নে ফোঁটা নামজাদা ফুল লাগেনা পূজোর কাজে, 
পাঁকের মাঝে ফুটেও পদ্ম দেব চরণে রাজে।

জ্ঞানী যাঁর পায়না নাগাল পুঁথি-পত্রের মাঝে, 
কর্মী মানুষ তাঁকেই দেখেন, জগৎ সভার কাজে ।

যে গড়ে রোজ অট্টালিকা, বসায় রেলের পাত, 
বৃষ্টি এসে দেয় ভিজিয়ে তারই থালার ভাত ।

ভুখারাই শুধু ভিখারী নয় আজ কঠিন পেটের দায়ে, 
রাজার প্রসাদ পাবার আশায় ধনীরাও পড়ে পায়ে ।

ধর্মের কাজ ধারন করা, মানুষকে ভালোবাসা 
তাকে নিয়ে বিভেদ খেলায়, সাজায় সবাই পাশা।

যা দেখি সব চোখের সামনে, সেটাই কি সঠিক 
মিথ্যে মায়া পথ ভুলিয়ে দেখায় উল্টো দিক ।



মনের মাঝে মেঘ জমেছে
        মাম্পি রায়
    

  দেয়ালে দেয়ালে সাদা পাতা জুড়ে
      চোখের কালিতে যে আগুন পোড়ে;
         সাদাচোখ দিয়ে যায়না তারে ধরা,
            রাতের জোনাকি সে যে বিষধর।

  বটঝুড়ি শব্দকোষ গুলো
       আজও নিস্তব্ধ নিরাকার, 
             মনেরআগুন নেভেনি আজও
                 চতুর্দিক হাহাকার।।

    বেলাশেষ তবু নির্জন মরুতে
         বাতিল হওয়া লাল শাড়িতে
            নিহত কাব্য, বাক্যবাণ যত,
              ঝরে পড়েছে পথের মেঝেতে।।



সময়ের অলিন্দ
পাপিয়া চক্রবর্তী


এ সময়ের অলিন্দ জুড়ে শুধুই দূষণ
অধৈর্যর উত্তরণ লোভের লালা
দিক ভ্রষ্ট বোধ
ক্লান্ত দর্শক চোখে বুকে কষ্ট আঁচড়
এ খোলস জীবন আর মৌন সম্মতি
দুমড়ে মুচড়ে দেয় মান হুঁশ শব্দের শ্লাঘা !



আঙুলে আঙুন দাও ,নগ্ন করো ভয়
     হে অদৃশ‍্য শক্তিময়
জিভে দাও তির আর চিৎকারের অধিকার
কিছু অন্ধ আবর্জনা যেন ভেদ হয়
আর তা যদি না হয় তবে
উগ্ৰ পাষাণ করো , অহল‍্যা শিলা
নয়তো পাতাল প্রবেশ বৈদেহী মতো !

                                                                                                                                          
তুমি
অঙ্কনা সাহা

যখন ছিল কালবৈশাখীর তীব্র তান্ডব
পাহাড়ি হাওয়া কাটিয়ে দিল মেঘ
মেঘ হয়ে তুমি এনেছিলে এক ভোর
চিলতে রোদ ঢুকেছিল সেদিন জীবনে।
এ ছিল এক ভিন্ন ভোর নতুন আলাপনে,
হেসে ফেলল মন আবার।
সেদিন থেকে মন আকাশে সূর্য হয়ে ওঠো
প্রতিদিন তুমি,
কিন্তু তুমি তো মেঘ
হাত বাড়িয়েও পাব না তোমায় জানি
তাই বৃষ্টি হয়ে যখন তুমি ঝরো
যেটুকু ক্ষণ থাকো
সেটুকুই তো বড়!




অনলাইন মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা, জৈষ্ঠ্য সংখ্যা , ১৪২৫