Thursday, March 26, 2020
Thursday, March 5, 2020
সম্পাদকের কথা
সব ফাল্গুন চেনা বসন্ত নিয়ে আসে না। কিছুদিন আগে দেশের রাজধানীতে ঘটে যাওয়া তান্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে বসন্ত নিয়ে উৎসবে মেতে উঠতে মন সায় দেয় না। আধুনিক এই সময়ে দাঁড়িয়েও যেভাবে এখনও জাতপাত-ধর্মের ভিত্তিতে দেশকে বা দেশের নাগরিকদেরকে ভাগ করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। কোনো সভ্য সমাজে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে ভাবতেই বিস্মিত হতে হয়। আমরা যদি এখনও শিক্ষা না নিই এসব থেকে, তবে আগামীদিন অত্যন্ত কঠিন হবে আমাদের সকলের জন্য।
এই বসন্তে তাই উৎসব হোক মানবতার যেখানে শুধু মানুষ থাকবে, ধর্ম নয়, কোনো বিভাজন নয়। প্রেমের ও ভালোবাসার আবির লাগুক সবার গায়ে, এটিই একমাত্র প্রার্থনা ঐতিহ্যময় উৎসবের আগে।
মুজনাই অনলাইন ফাল্গুন সংখ্যা ১৪২৬
মুজনাই অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা
মুজনাই সাহিত্য সংস্থার একটি প্রয়াস
রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020
ঠিকানা- হসপিটাল রোড, কোচবিহার, ৭৩৬১০১, প ব
ইমেল ঠিকানা- mujnaisahityopotrika@gmail.com
প্রকাশক- রীনা সাহা
সম্পাদনা, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়
মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন ফাল্গুন সংখ্যা ১৪২৬
এই সংখ্যায় আছেন যাঁরা
কুমকুম ঘোষ, রাহুল গাঙ্গুলী, নির্মাল্য ঘোষ, বাণীপ্রসাদ নাগ, রুদ্র সান্যাল, রুনা দত্ত, অনিমেষ, শেখ এ কে এম জাকারিয়া,
মৌসুমী চৌধুরী, সত্তাপ্রিয় বর্মন,
মৌসুমী চৌধুরী, সত্তাপ্রিয় বর্মন,
শম্পা সামন্ত, ডঃ সঞ্জয় কুমার মল্লিক, সুস্মিতা পাল কুন্ডু, রীনা মজুমদার, মাথুর দাস, প্রতিভা পাল সেন, ফিরোজ হক, রীতা মোদক, রূপক রায়, বিজয় বর্মন, মাম্পী রায়, বটু কৃষ্ণ হালদার
প্রচ্ছদ ও অন্যান্য ছবি- শৌভিক রায়
বসন্ত কবিতা, কবিতায় বসন্ত
জন্ম নেবো বর্ণমালায়
কুমকুম ঘোষ
তবু তর্জনী ছুঁয়ে ছিল ভোর
তুঙ্গস্পর্শী ছিল বৃষ্টির শব্দ।
যাবতীয় জাগতীক আলোড়ন আর প্রত্যাশী হৃদয়ে
অনিবার্য আগমনের আকাঙ্ক্ষা ছিল স্তব্ধ;
শুকতারা সেইদিন উঁকি দিয়েছিল
ছায়া মেঘের ভেতর থেকে;
দুরন্ত দিবাকর ধরা দিল তোমার তর্জনীতে;
টিপ পরালে আমার কপালে।
জরায়ুর আঁধার কেটে চোখ মেললাম আলোয়।
দেখলাম তোমায় -- মা।
দেখলাম তোমায়--বর্ণমালায়।
দেখলাম তোমায়-- ঘাসের আগায় শিশির কণায়।
হাতটা আরো একবার ধরো -- মা
আর একবার প্রবিষ্ট হই অন্ধকারে,
জরায়ুর মধুগন্ধী যন্ত্রণা র ভেতরে।
হাতটা আরো একবার, আরো একবার ছুঁয়ে রাখো কপালে,
আরো একবার তোমার আঁচলের আড়ালে মুখ লুকাই;
হলুদ গন্ধে হৃদয় জুড়াই।
আরো একবার জন্ম নিই যাবতীয় মেঠো ওম গায়ে মেখে,
দুর্নিবার বিশ্বসে ভালোবাসার কাহিনী হয়ে।
নদী
শব্দরূপ : রাহুল গাঙ্গুলী
তুমি পথ হারাইতেছো বারেবার
হারাবার মতোনই
জানি না
কেবল
হেরে গেলে ~ কপালে বাসন্তীকা
সেও তো অনেক কিছুই
প্রচুর আলো
অন্ধকার
এগিয়ে দিচ্ছি
কপাল ~ হাতড়ে।খুঁড়ে
আগুন
তারও পলাশ
পুড়ছে
পুড়ছে
বারেবার ~ হারাইতেছো পথ
|| অন্তর্যামী ||
শিল্প
নির্মাল্য ঘোষ
আমি মুহূর্তগুলো দিয়ে তোমার মেয়েলিপনাকে বাঁধি...
আমার গুটিয়ে রাখা কথা গুলো শুধু টান দেয়...
আমি অবশিষ্ট এনার্জিটুকু শুধুমাত্র তোমাকেই দেই...
যেটুকু হাতে তুলে দাও চুপচাপ নিয়ে বসে থাকি...
কাপড় দিয়ে প্রকৃতিকে ঢাকা যায় না কিম্বা লুকোনো
ওখানে গভীরতা লুকোনো আছে লুণ্ঠনের অপেক্ষায়...
সবটাই আসলে নিখুঁত শূন্য..
ফাঁকে ফাঁকে রঙ ভরাটাই শিল্প..
ঝরনার ধারে
বাণী প্রসাদ নাগ
জল মেঘে ছাওয়া, ক্লান্তি ভরা সন্ধ্যার শুভক্ষণে
এসেছিলে সবকিছু ভুলে জানাতে গোপন ব্যথা
করুণার খনি বিধাতার নিদারূণ অভিশাপে
হলো না বলা যা ছিল গাঁথা দুজনের মনে মনে।
হয়েছিল দেখা পাহাড়ের কোলে ঝরনার ধারে
হয়েছিল চোখে চোখে কথা বলিনি মুখে দুজনে
ছিল সাক্ষী গাছপালা আর জলের কলকল রব
দেখিনি ফারাক জাত বেজাত আর ভগবানে।
তবু বেসেছি ভালো, শুধু দুঃখ রয়ে গেল মনে
সমাজের লক্ষ্মণ রেখা হলো না পার হওয়া
পাওয়া না পাওয়ার মাঝে আনন্দটুকু মনে রেখে
দেব দেখা ঝরনার ধারে কলকল শব্দের টানে।
আশা
রুদ্র সান্যাল
কেউ কথা রাখে, কেউ কথা রাখে না।
ঝরা পাতা ভেসে চলে, সময়ের স্রোতে।
তবুও মিথ্যে আশা নিয়ে, বেঁচে আছি আজো!
জীবনের ধারাপাত বন্ধ হয় না।
কেউ কেউ চেষ্টা করে।
অনেক চেষ্টা!
তাও ঝরে যাওয়া সময়,
আর ফেরে না।
অনেকেই কথা রাখে,
কেউ কেউ কথা রাখে না।
রাখতে চায় না!
তবুও বেঁচে থাকি, সুদিনের আশায়...!
দুটি কবিতা
রুনা দত্ত
ঝরা পাতার কবিতা
ঝরা পাতার হলুদেও তো
বসন্ত বাসা বাঁধে।
ঝরা পাতাও তো কবিতা
হওয়ার সাহস রাখে।
ঝরা পাতাও তো
অধরে অধর রাখে।
প্রেমকে ছুঁয়ে দেখে
উষ্ণতায় মেদুর হয়।
জীবনের ধূসরতায়
ভালোবাসার ছবি আঁকে।
আমার বাংলাভাষা
হাজার হাজার ভাষার মাঝে সে যে আমার
মায়ের ভাষা,
বাংলা আমার গর্ব, অহংকার আর ভালোবাসা ।
আধো বুলি শিশুর মুখে,
প্রথম কাঁদা মায়ের বুকে,
যতো বোধ অনুভব আর অনুভূতি
সুখ- দুঃখ হাসি-কান্না, অভিব্যক্তি
এই ভাষাতেই পূর্ণ হলাম, মিটিয়ে নিলাম জ্ঞান-তৃষা
বাংলা আমার ‘সঞ্চয়িতা’, ‘গীতবিতান’, আর মনের ভাষা ।
বাংলা আমার লালন ফকীর, মসজিদ আর মন্দির
বাংলা আমার তুলসী মঞ্চ,পুষ্প পূজার বেদীর
বাংলা আমার গীতি পদাবলী,
রামচরিত মানস আর জপ কীর্তন
এই ভাষাতেই কবিগুরুর
বিশ্বজয়ী “গীতাঞ্জলী”,
বাংলা আমার ভাটিয়ালী গান, কল্লোলিনী নদীর ঘাট,
বাংলা আমার মাতৃ-গর্ভ, শিশুর প্রথম “সহজ পাঠ”।
বাংলা আমার বাউল গান কবিতা জীবনানন্দর ,
বাংলা আমার প্রিয় শামসুর আর নজরুলের,
বাংলা আমার এপার বাংলার তিস্তার অনেক আশা
বাংলা আমার ওপার বাংলার তোর্সার ভালোবাসা
এপার বাংলা ওপার বাংলা আজও যে সীমানা ছাড়িয়ে
ভালোবাসায় হাতে হাত ধরে আছে যে দাঁড়িয়ে।
মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন ফাল্গুন সংখ্যা ১৪২৬
বসন্তের বিশেষ গদ্য
আইডি- আইডেন্টিটি ওয়্যারলেশ পোস্ট ;
আইডেন্টিটি ডিস-অর্ডার মুলক গদ্য
অনিমেষ
**"যে যেভাবে নিতে পারেন আর কী" ***
শহরের গলিতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকার পর উঠে যেতে হয়েছে। এখানো কোনো নতুন মানুষের খোঁজ পাওয়া যায়নি।যারা অন্তত রাস্তা দেখাবে একা একা চলার চেয়ে সঙ্গী জুটে গেলে হয়ে যেত। গ্রীন সিম্বল প্রতিটি মানুষের আইডির উপর অর্থাৎ তারা জেগে আছেন। জেগে থেকে কিছু করছেন।এরমধ্যে কিছু প্রজাতি এমন আছে যারা অনলাইন আছেন অথচ দেখতে পাচ্ছেন না আপনি।বয়সের সাথে সাথে ডেফিনেশন , চরিত্রের খোলসা করে বলা ভাষা আর মুখ ঢেকে কাজ করে যাওয়া। ধরে নিন আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কিছু মানুষ আপনার জন্য খুলে দিলেন দর্জা । আপনি চড়লেন কিন্তু স্পেসিফায়েড স্টপেজে দাঁড়ালো না। অথচ আপনি চাইলেই নেমে যেতে পারতেন। তারজন্য কী করতে হতো ! যিনি লিফ্ট দিয়েছেন তার পায়ের জায়গায় নিজের পা দিয়ে ব্রেক কষে দিতেন। এই ব্রেক কষা থেকে এলো ব্রেকাপ ! সম্পর্ক ছিন্ন অথচ অফলাইন থেকে আপনাকে নোটিশ করে যাওয়া। এই ব্রেকাপ আবার চলে এলো কিছু জিনিসের মূল্য ।ধরে নিন চাল,ডাল,আলু,পেঁয়াজ, মিলিয়ে ৫০০ এবার এতটুকু ঠিক। আপনি চাইলেন প্রতিটি জিনিসের আলাদা আলাদা রেট.Human nature always demanding more and separately.
১/ প্রমথ বাবুর স্ত্রীয়ের সাথে ডিভোর্সের পর তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক দিন পর অ্যাকটিভ এলেন।তার স্ত্রী সবুজ বাতি নিভিয়ে অবজার্ভ করে যাচ্ছেন স্বামীর কান্ড। ( human's motive)
২/ দত্তবাবুদের এবার ট্যুর ঠিক হয়েছে ইউনাইটেড আরব এমিরেটস ঘুরতে যাবেন পুরো পরিবার সুদ্ধ। সমস্ত খরচ মিলিয়ে লাখ টাকা। অথচ তিনি ঘুরে আসার পর যখন দেখলেন যদি তিনি ট্যুরটা ভাগ ভাগে করতেন তাহলে আরও সস্তায় হতো। সবুজ বাতির এই বিষয়টি রিকুয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করার পর থেকে কাজ করে।
৩/ সুদেবের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অনেক অনেক লোক তার বাড়িতে আসতো দিনরাত ভীড় লেগে থাকতো। মৃত্যুর পর না তার বাড়িতে লোক দেখা যায়নি কারণ আর দরকার নেই। উপর মহলের এই লোকটি আর জীবিত নেই।
৪/ সরকার আপনার জন্য প্রকল্প চালু করেছেন। আগামী মাসে ভোট। এই প্রকল্পে আর কিছু না হোক অন্তত আপনার বাড়িতে পরিবারের ভালো থাকার রসদ জুটছে। ভোট দিলেন । এবার ব্লাইন্ড ফোল্ড করে আপনার জন্য রাখা হলো সরকার নির্ধারিত প্রোডাক্ট ।।কী বাছবেন!খাওয়ার ,অন্য, বাসস্থান। এরপর দাঙ্গা হলো আপনার জন্য সরকার আর কোনো প্রকল্প দিলেন না। সবুজ বাতি এবার পুরোপুরি বন্ধ তারপর!
টুইটার এ আসুন আইডির পাশে জ্বলজ্বল করছে "ব্লু টিক" অথবা "নীল রঙের সঠিক চিহ্ন √" Your id Verification has been complete after few minute's"
anxiety includes Identity ! Identity crisis and Active button always proceed to be an Active Work .
চরিত্র হননের দেশ পেরিয়ে আসুন কবিতা উৎসব,মিছিল , এইসবে যাই।
"√ "
চিহ্নে ভোট দিন
ভাষা আন্দোলনে নারীর ভূমিকা
শেখ একেএম জাকারিয়া
১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে প্রাক্তন পূর্ববঙ্গকে নিয়ে গঠিত স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশে নারীর সমাজস্বীকৃত সম্মান একদিনে আসেনি। যে সম্মান পুরুষের সহযোগী হয়ে, পুরুষকে পাশাপাশি রেখে বহু বছরের যুদ্ধ ও সাধনার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। ১৯৫২ সালে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এমন দাবির বিক্ষোভে সহসৈনিক হিসেবে পুরুষ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন নারী শিক্ষার্থীরা। পাকিস্তানের সামরিকবাহিনী ও পুলিশের নিশানা লাগানো বন্দুকের নলকে অগ্রাহ্য করে ঢাকার রাজপথে 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' দাবির মিছিলগুলোতে নারীরা ছিলেন সম্মুখসারিতে। ভাষা আন্দোলন চলাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা গোপনে ভাষার অধিকার আদায়ের বিভিন্ন স্লোগান সংযোজিত পোস্টার এঁকেছেন এবং রাতের বেলা সে পোস্টার ছাত্রদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের অফিস-আদালত ও বাসাবাড়ির দেওয়ালগুলোতে লাগিয়েছেন জনমনে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। ৩১ জানুয়ারি ১৯৪৮ সাল। ঢাকার বার লাইব্রেরিতে সর্বদলীয় সভায় ছাত্রীদের পক্ষ থেকে ইডেন কলেজের ছাত্রী মাহবুবা খাতুন বলেন, ‘বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি স্বীকার করিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন হলে মেয়েরা তাদের রক্ত বিসর্জন দেবে।’বিক্ষুভের শুরুর দিকে একজন ছাত্রীর মুখে এমন ভয়হীন উচ্চারণ সহযোগীদের মনে উৎসাহ জোগাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অতঃপর আসে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। পাকিস্তানি পুলিশের সঙ্গে নারীরাই ঠ্যালাঠেলি করে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙেন। সেসময় পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার কাজটা করেন সিলেটের রওশন আরা বাচ্চুসহ আরও কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী। পুলিশের সঙ্গে ঠ্যালাঠেলি করার সময় পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেলে অনেক ছাত্রী গুরুতর আহত হন। এরমধ্যে রওশন আরা বাচ্চু, সারা তৈফুর, বোরখা শামসুন, সুফিয়া ইব্রাহীম, সুরাইয়া ডলি ও সুরাইয়া হাকিম ছিলেন। এসব আহত আন্দোলনকারীদের চিকিৎসায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের নারী শিক্ষার্থীরা জরুরি ও তাৎপর্যবহ ভূমিকা রাখেন। এ নারীরাই আহত আন্দোলনকারীদের চিকিৎসার খরচ যোগাড় করতে শহুরে বাসা-বাড়িতে গিয়ে চাঁদা তুলে আনেন, পুলিশের ধাওয়া খেয়ে আসা আন্দোলনকারী ছাত্রদের নিজেদের কাছে লুকিয়ে রাখেন, আন্দোলনের খরচ চালাতে অনেক গৃহকর্ত্রীরা গায়ের গহনা পর্যন্ত বেচে দেন। শুধু তাই নয়, ভাষা আন্দোলনে জড়িত হওয়ায় অনেক নারীকে জেলও খাটতে হয়েছে। আবার কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর নিগ্রহের প্রতিবাদে অভয়দাশ লেনে এক সভায় নেতৃত্ব দেন বেগম সুফিয়া কামাল ও নুরজাহান মুরশিদ। ধর্মঘট চচলাকালীন পোস্টার ও ব্যানার লেখার দায়িত্ব পালন করেন ড.শাফিয়া খাতুন ও নাদিরা চৌধুরী। সে সময়ের ঘটনা নিয়ে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, ভাষাসৈনিকদের স্মৃতিচারণা, দলিল ও বইতে এর প্রমাণ মিলে। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেন, ‘১১ মার্চ ভোর বেলা থেকে শত শত ছাত্রকর্মী ইডেন ভবন ও অন্যান্য জায়গায় পিকেটিং শুরু করল। সকাল ৮টায় পোস্ট অফিসের সামনে ছাত্রদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করলে কয়েকজন ছাত্রী বাধা দিতে গেয়ে পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হন।' তাছাড়া আত্মজীবনীতে লেখা আছে ‘ যে পাঁচদিন আমরা জেলে ছিলাম, সকাল ১০টায় স্কুলের মেয়েরা (মুসলিম গার্লস স্কুল) ছাদে ওঠে স্লোগান দিতে শুরু করত, আর ৪টায় শেষ করত। ছোট ছোট মেয়েরা একটু ক্লান্তও হতো না। 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, বন্দি ভাইদের মুক্তি চাই’, ‘পুলিশি জুলুম চলবে না’-এরকম বিভিন্ন ধরনের দাবি আদায়ের জন্য সমস্বরে উচ্চারিত ধ্বনি অর্থাৎ স্লোগান দিতে থাকত।
ভাষা আন্দোলন শুধু ঢাকায় নয় ঢাকার বাইরেও নারীরা এ আন্দোলন করতে গিয়ে পাকিস্তানি পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন নারায়ণগঞ্জের মরগান হাইস্কুলে হেড মিস্ট্রেস মমতাজ বেগম। তিনি স্থানীয়ভাবে রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বপক্ষে নেতৃত্ব দেন। মমতাজ বেগমের ছাত্রী ইলা বকশী, বেনু ধর ও শাবানীর মতো কিশোরীকেও পুলিশ সেদিন গ্রেপ্তার করেছিল। ১৯৪৭ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় বাংলা ভাষার পরিপন্থি একটি লেখা প্রকাশিত হলে যশোরের হামিদা রহমান একটি নিবন্ধ লেখেন। পরে তিনি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক হয়েছিলেন। এ সময় সুফিয়া খাতুন, হালিমা খাতুন নামে দু'জন নারীর নাম শোনা যায় যারা ভাষা আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সিলেটের যে সব মহিলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তাদের মধ্যে রওশনারা বাচ্চু, মুসলিম লীগের নেত্রী বেগম জুবায়দা রহিম চৌধুরী, সালেহা বেগম, ফারজানা মাহমুদ অন্যতম। এছাড়া সিলেট মহিলা কলেজের আরও অনেক নারী শিক্ষার্থী তাদের সাথে কাজ করেছেন। সে সময়ে সিলেট থেকে পাকিস্তানের মূখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনের নিকট প্রতিনিধিও পাঠানো হয়়। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বেগম জোবায়দা রহিম চৌধুরী। অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সাহারা বানু, সৈয়দা লুৎফুন্নেছা, রাবেয়া বেগম প্রমুখ। জানা যায়, সিলেটের কুলাউড়ার সালেহা বেগম ময়মনসিংহ মুসলিম গার্লস স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী থাকাকালীন ভাষা শহীদদের স্মরণে নিজ স্কুলে কালো পতাকা উত্তোলন করেন। এ খবর সেখানকার জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছলে জেলা প্রশাসকের আদেশে স্কুল থেকে সালেহা বেগমকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এরপর তাঁর আর পড়ালেখা করা হয়ে ওঠেনি। বিপ্লব ও বিদ্রোহের অঞ্চল চট্টগ্রাম। যে কোনও সময়ে দেশ ও জাতির দরকারে চট্টগ্রামের ভূমিকা অদ্বিতীয়। ভাষা আন্দোলনেও এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। চট্টগ্রামের বেশকিছু নারী শিক্ষার্থীসহ সেখানকার প্রগতিশীল মহিলারাও বায়ান্ন'র ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে তোহফাতুন্নেছা আজিম, সৈয়দা হালিমা, সুলতানা বেগম, নুরুন্নাহার জহুর, আইনুনু নাহার, আনোয়ারা মাহফুজ, তালেয়া রহমান, প্রতিভা মুৎসুদ্দি অন্যতম।
ভাষা সৈনিক চেমন আরা জানান, ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে যারা তমদ্দুন মজলিসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন খুলনার
আনোয়ারা খাতুন। তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন তমদ্দুন মজলিসের কর্মী সাজেদা আলী ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরা। ভাষা সৈনিক আনোয়ারা খাতুন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং বায়ান্নর ভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন।
সাতক্ষীরায় এ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন গুলআরা বেগম ও সুলতানা চৌধুরী। টাঙ্গাইলে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নুরুন্নাহার বেলী ও রওশন আরা শরীফ। রংপুরে এ সময় যে সব নারীরা রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে মিছিলে গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন তারা হচ্ছেন নিলুফা আহমেদ, বেগম মালেকা আশরাফ, আফতাবুন্নেছা প্রমুখ। রাজশাহীতে যারা আন্দোলনে অংশ গ্রহন করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ড. জাহানারা বেগম বেনু, মনোয়ারা বেগম বেনু, ডা. মহসিনা বেগম, ফিরোজা বেগম ফুনু, হাফিজা বেগম টুকু, হাসিনা বেগম ডলি, রওশন আরা, খুরশিদা বানু খুকু, আখতার বানু প্রমুখ। গাইবান্ধার বেগম দৌলতুন্নেছা ভাষা আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। নাদেরা বেগম ও লিলি হকের নামও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। এছাড়া হামিদা খাতুন, নুরজাহান মুরশিদ, আফসারী খানম, রানু মুখার্জী প্রমুখ নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ভাষা আন্দোলনে নারীর অংশগ্রণে সবচেয়ে বড় অঘটন বা ক্ষতির দিন ছিল ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন নারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে লায়লা নূর, প্রতিভা মুৎসুদ্দি, রওশন আরা বেনু, ফরিদা বারি, জহরত আরা, কামরুন নাহার লাইলি, হোসনে আরা, ফরিদা আনোয়ার ও তালেয়া রহমান অন্যতম। ভাষা আন্দোলন বা তার পূর্ববর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রীদের প্রক্টরের অনুমতি নিয়ে এবং প্রক্টরের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র বা অন্য পুরুষের সঙ্গে কথা বলতে হতো। সে সময়ের পরিবেশ এমন দুর্বোধ্য ছিল যে, শহর কিংবা গ্রামে যে কোনও স্থানে নারীদের পর্দা প্রথা কঠোরভাবে মেনে চলতে হতো । সমাজসম্বন্ধীয়, ধর্মবিষয়ক, প্রতিষ্ঠানগত ও রাষ্ট্রসংক্ৰান্ত বাধা ঠেলে বাংলাভাষার দাবিতে নারীদের রাজপথে নেমে আসা খুবই দুরূহ ছিল। এতকিছুর পরেও পুরুষের পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনে অংশ নিতে সবচেয়ে বড়ো ঝুঁকিটাই নিয়েছে নারীরা।
মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন ফাল্গুন সংখ্যা ১৪২৬
বসন্ত গল্প
উদযাপন
মৌসুমী চৌধুরী
ভেসে চলেছে তারা "আনন্দ বসন্ত সমাগমে"। চলছে প্রেম-উদযাপন। একে একে গোলাপ, টেডি, চকোলেট, প্রমিস ডে-গুলো নির্বিঘ্নেই পেরিয়েছে। তবে আজকের দিনটির জন্য ঋষভের একাগ্র অপেক্ষা ছিল । আজ যে "কিস ডে"। সকাল থেকেই বুকটা কেমন ঢিপ ঢিপ করছে। নাহ্! এর আগে কখনও কোন মেয়েকে চুমু খায় নি সে । তাই অজানা এক শিহরণে, গভীর পুলকে ভরে আছে মন-প্রাণ।
কলেজ করিডোরে হঠাৎ ঐশীকে দেখতে পেয়ে ঋষভ বলল, "আজ বাড়িতে একটু সামলে দিস, প্লিজ। মা জিজ্ঞেস করলে বলিস ভূগোল প্র্যাকটিক্যালের জন্য কলেজ থেকে নয়াচরে নিয়ে গেছে। আজ রূপসাকে নিয়ে ডায়মন্ডহারবারে বেড়াতে যাব।" বলে চোখ মটকে হাসল ঋষভ।
ঋষভদের পাড়াতেই থাকে ঐশী। কয়েক মাস থেকে ঋষভ যে রূপসাতে বিভোর হয়ে আছে, ঐশী তা জানে। কলেজের পর ওরা সোজা চলে যায় কখনও ভিক্টোরিয়ায়, নয়তো প্রিন্সেপ ঘাটে, কখনও বা ইকোপার্কে...। আজকাল ঋষভ রাত করে বাড়ি ফেরে। আর যতক্ষণ ঋষভ না ফেরে কি যেন এক অদ্ভুত ছটফটানি অনুভব করে ঐশী! সে নিজেই জানে না এ কিসের ছটফটানি!
রূপসার জন্য উপহার আর ফুল নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মতো ঋষভ পৌঁছে গেল কলেজের জি-১৫ রুমের সামনে। দূর থেকে দেখতে পেল রূপসাকে। হলুদ টপ আর নীল জীনসএ তাকে কী ভীষণ আকর্ষণীয় লাগছে! কিন্তু হঠাৎ একটি অভাবনীয় দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেল ঋষভ। রাহুলের বক্ষলগ্না হয়ে তীব্র চুম্বনরত রূপসা! বুক ভেঙে যেন চুরচুর হয়ে যেতে লাগল ঋষভের।
অনেক রাতে বাড়ি ফিরল ঋষভ। আজ আকন্ঠ মদ খেয়েছে সে । বুকের ভিতরটা তবুও হা হা করছে। চারিদিক এত ভীড়ে ঠাসা তবুও মনে হচ্ছে কেউ কোত্থাও নেই! পাড়ার গলির মোড়ে ঢুকতেই পা টলছিল ঋষভের। চোখে ঘোর অন্ধকার। আধো অন্ধকারে তপু পিসিদের ঝাঁকড়া আম গাছটার তলায় কে যেন দাঁড়িয়ে আছে।
ঐশী!
হ্যাঁচকা টানে ঋষভের ঠোঁটে ঠোঁটে রাখল ঐশী। সেই প্রথম চুম্বন মিশে যেতে লাগল আমের মুকুলের মাতাল করা ঘ্রাণের সঙ্গে।
তপুপিসিদের বাড়ির টিভি থেকে তখন ভেসে আসছিল, " বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে /বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ, আমার বাড়ি আসে...".।
স্বপ্নমেঘ
সত্তাপ্রিয় বর্মন
১.
রেজাল্টটা হাতে পাওয়ার আগেই রফিক জানত কী রেজাল্ট হবে, তবু রেজাল্টে চোখ বুলিয়ে মনটা একদম দমে গেল। পড়াশোনা, রেজাল্ট ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সে দৈবাৎ কোনদিনও ভাবেনি। কীভাবে কোথায় টাকা ওড়ানো যায়, কোথায় মচ-মস্তি-আড্ডা-ঘোরাঘুরি করা যায় এই ছিল তার চিরকালের ধান্দা। আর সেই ধান্দাতেই সে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে পড়াশোনার অজুহাত দিয়ে কোচবিহার সদরে এসেছে। তার আব্বা আনোয়ারও চায় ছেলে যেন তাদের মত গরিব না হয়, তাই যেকোন প্রকারে ছেলেকে অর্থ উপার্জনের জন্য যোগ্য করে তোলাই তার লক্ষ। ছেলে বুঝিয়েছে এম এ-টা পাশ করলেই চাকরী তারপর টাকায় টাকা। সেই আশাতেই আনোয়ার ছেলেকে শহরে পাঠিয়ে কষ্ট করে জন খেটে ওর জন্য টাকা পাঠায় ও অশেষ আশায় বসে থাকে একদিন ছেলে এম এ পাশ করে ফিরবে আর তারপর চাকরি তারপর টাকায় টাকা...
বন্ধুরা সবাই খুব ভালো রেজাল্ট করেছে, অনেকে এর মধ্যেই নেট পাশ করেছে, অনেকে নেটের প্রস্তুতি নিচ্ছে, অনেকে বি এড করবে ইত্যাদি। কিন্তু রফিক যা রেজাল্ট করেছে তাতে নেটেও বসতে পারবে না আর বি এড করার জন্য অর্থের যোগানই বা কে দেবে। সুতরাং সব দিকেই তার রাস্তা বন্ধ। তাই মনটা একেবারে দমে গেল।
২.
-'তুই রফিকুল না? তোর খবর শুনলুং আনোয়ারেরঠে। উয়ায় তো খুশিৎ কথাই কবার পায় না, তুই এম এ পাশ কচ্ছিস। যা যা ঘরৎ য্যায়া দেখেক তোর আব্বাজান কি করেছে।'
গ্রামে ঢোকার মুখে আব্দুলচাচার সঙ্গে দেখা। তারপর যার সাথেই দেখা হয় সবাই তাকে একটা সম্ভ্রমের চোখে দেখতে লাগল, কেউ মুচকি হাসি দিয়ে কেউ অপলক চোখে চেয়ে থেকে রফিককে বরণ করে নিতে লাগল যেন। রফিককে একদিন এই গ্রামের লোক সবচেয়ে ডানপিটে, বদ ছেলেদের দলে ফেলত, তাই কেউ তাকে এভাবে সসম্ভ্রমে কথা বলত না। আজ সব পালটে গেছে। কিন্তু এত পরিবর্তন কিসে? সে তো এমন কিছু আহামরি রেজাল্ট করে নি। আজকাল এমন পাশের তো কোনও দাম নেই। অবশ্য গ্রামের অশিক্ষিত সমাজ অত শত জানে না, 'এম এ পাশ ' এই শব্দ টাই ওদের কাছে অনেক কিছু।
বাড়ি ঢুকতেই একটা আনন্দের বহর পড়ে গেল। বাড়ির সবাই তাকে আদর আপ্যায়নে ভরিয়ে তুলতে লাগল। আব্বাজানকে জীবনে কোনোদিন এত খুশি হতে দেখেনি রফিক। আব্বা রফিকের পাশের খবর পেয়ে সারা গ্রামের সবাইকেই বলে বেরিয়েছে - 'মোর বেটা এম এ পাশ করিছে।' কিন্তু এই বছর দুই ধরে রফিক যে কী লারেলাপ্পায় টাকা উড়িয়ে দিন কাটিয়েছে সে কথা শুধু সেই জানে। পাশ তো কোনো রকমে করেছে, কিন্তু এ পাশে সে কিছুই করতে পারবে না। তাই সে নিজে যেমন হতাশায় ছিল তেমনি বাড়িতে বাবার মুখ মনে পড়ে যাওয়ায় একটা তীব্র অনুশোচনা বোধ তাকে আঘাত দিচ্ছিল। আবার পাড়ার বেপাত্তা ছেলে চেঙ্গড়া দলে সে মিশে যাবে বোধহয়। কিন্তু বাড়ি এসে সে আব্বাজানের মুখের অন্তহীন খুশির ছবি দেখে পিতার প্রতি সুপ্ত ভালোবাসা চাপা পড়া ছাইয়ের আগুনের মত তাকে দহন করছিল। সে প্রবল আবেগে লুকিয়ে কেঁদে চোখ মুছে সামনে এলো।
৩.
বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় আম্মু চোখের জল ফেলেছিল। আব্বাজান বল্লেন - কান্দিস কেনে। রফিক চাকরি নিয়া ঘরৎ ফিরি আসিলেই দেখিস আমার এখেনাও দুঃখ থাকিবে না। আর কয়খান বছর যাবার দে।
রফিক আব্বাকে বলেছে এবার কলকাতা যেতে হবে চাকরি নেওয়ার জন্য। চাকরি পেলে ফিরে আসবে। এবার সে বাবার কাছ থেকে এক টাকাও নেয় নি। অবশ্য সত্যই সে কলকাতা যাচ্ছে না, কোথায় যাচ্ছে সে নিজেও জানেনা, যেদিকে চোখ যায় সে চলে যাবে । যে করে হোক দুই বছরের মধ্যে উপার্জনের একটা রাস্তা সে বের করবেই। এই সংকল্প নিয়ে সে পথে বের হল।
মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন ফাল্গুন সংখ্যা ১৪২৬
বসন্ত গদ্য
ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়
শম্পা সামন্ত
ফাগুন মাসের নাম শুনলেই মন কেমন যেন আনন্দে গুন গুনিয়ে ওঠে , "নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগলো..." প্রকৃতি যেন নিজেকে নিজের মতো করে সাজাতে ব্যস্ত। একদিন ঠান্ডা আবার একদিন গরম, এই ভাবে পথ চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে শীত একদিন প্রকৃতির কাছে থেকে বিদায় নেয়। তখন প্রকৃতির দ্বারে এসে দাঁড়ায় বসন্ত। প্রকৃতির এই মন মুগ্ধকর উপহার সাদরে গ্রহণ করে আমরা মেতে উঠি অনাবিল আনন্দে।
ভোর বেলায় কোকিলের ডাক শুনে আজও ঘুম ভাঙে। কি মধুর সেই সুর! সারাদিনটাকে সুরে সুরে ভরিয়ে রাখে। ছেলে বেলায় দুপুর বেলা স্কুল থেকে ফেরার পথে কোকিলের সুরে কত সুর মিলিয়েছি, তা আজও মনকে নাড়া দেয়। গাছেরাও পাতা ঝরিয়ে নতুন সাজে সুসজ্জিত। মাঝে মধ্যে দক্ষিণা বাতাস! মন উড়ে বেড়ায় আমের মুকুলের গন্ধে এ বাগান ও বাগান পিপাসু ভ্রমরের মতো ।
এসবের মধ্যে সময় এসেছে কাছের মানুষদের সাথে রং নিয়ে খুনসুটির। মনের মানুষের দেওয়া প্রথম রং আজও মনকে উথাল পাথাল করে দেয়। মনে পড়ে যায় সেই দুটি লাইন, গুন গুন করে গেয়ে উঠি,"রাঙ্গিয়ে দিয়ে যাও,/যাও,যাও, যাও গো এবার / যাবার আগে রাঙ্গিয়ে দিয়ে যাও"।
আনন্দের মাঝেও আজ মন ভারাক্রান্ত। চারিদিকে দেশের সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসের শিকার। শত শত নিরপরাধ মানুষের রক্তে ভিজেছে রাজধানী। প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে লড়াই। হ্যাঁ লড়াই,টিকে থাকার লড়াই। সাম্প্রদায়িকতার যাঁতা কলে পিষে তাদের রক্তে রঙিন হয়ে রাজপথে এসেছে রক্তাক্ত বসন্ত । আকাশে বাতাসে বিষাদ সুর, ফলে রঙিন বসন্তও কেমন যেন ফিকে একটু। কোথাও যেন বেহাগ সুর।
আমার প্রিয় বসন্তকাল
ডাঃ সঞ্জয় কুমার মল্লিক
কনকনে শীতের শেষে বসন্ত আগত।ধীরে ধীরে মাঠের থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছে রবিশস্যের চাষ।সর্ষেফুলের মোহ কাটিয়ে সোনার দানা ভর্তি হলদে সুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাছগুলো, এবার চাষীর ঘরে যাওয়ার পালা।আলুর জমিতে চাষীর দল ব্যস্ত, প্রধান অর্থকারী ফসল যেন দ্রুত হিমঘরে পাঠানোর ব্যাবস্থা করা যায়।এ বাংলার মাটি যে শুধু দিতে জানে,সেখানেই বোরো ধানের চারা বসানোর কাজ প্রায় শেষ।
এদিকে শীতের মিঠে রোদ বিদায় নিয়েছে,বসন্তের মিঠে-কড়া রোদ সকালের শিশির অনেকটাই শুষে নিয়েছে ।ফলে,মেঠো পথে পায়ে শিশিরের আদর অনেকটাই কমেছে।সকাল-বিকাল কোকিলের কুহু কুহু ডাক অনেকটাই নিশ্চিত করেছে বসন্তের আগমন।কোকিলের মায়াবী কুহু কুহু ডাককে আমি বলি,বসন্তের গান।
আমের মুকুল থেকে সদ্য উঁকি দেওয়া কচি আম কিছু খসে পড়েছে গাছের তলায়।অলস দুপুরে শিশুদের দল কাগজে মোড়া লবণে ডুবিয়ে কচি আমের তিতে-টক স্বাদ নিতে ব্যস্ত।ওরাই আবার কুল গাছের তলায় বারবার ঢুঁ মেরে যায়,কিছু পাকা কুল পড়ে থাকার আশায়।এভাবেই শৈশব ব্যস্ত হয়ে পড়ে আমতলায়, কুলতলায়।এ ব্যাপারে লেখকও ছোটবেলায় কিছু কম ছিল না!
শিমুলের ডাল লালে লাল,যেন আগুন লেগেছে।বাজে গন্ধযুক্ত শিমুল ফুল কিন্তু বসন্ত বাহারে কম যায় না।যে কোন পতঙ্গ,পাখি এ রূপের
মোহে শিমুলের ডালে ভিড় করে,একটু মধু পাওয়ার আশায়।
বাঁকুড়া,পুরুলিয়া ও বীরভূমের পলাশের বন লালে লাল,যেন আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করেছে জঙ্গলের পর জঙ্গল।রাস্তায় যাওয়ার সময় মনে হবে যেন,প্রকৃতি রাস্তার দুধারে অবস্থিত তার পলাশ গাছেদের নির্দেশ দিয়েছে,অতিথি ও পথিককে যেন তাদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়।অতিথিদের পথ যেন হয়,লাল পাপড়ির কার্পেটে মোড়া।এও বসন্তের এক অমূল্য উপহার,যা প্রকৃতি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব,মানুষকে দিতে চায়।
মনে জ্বালিয়ে দিতে চায় ভালোবাসার আগুন।যেন
বলতে চায়, ভালোবাসা ও প্রেম হোক জগতের মূল মন্ত্র।প্রেমময় হোক এ পৃথিবী। আহ্বান জানায়, এসো একসাথে রঙের খেলায় মেতে উঠি, হোলি হ্যায়।
মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন ফাল্গুন সংখ্যা ১৪২৬
বসন্ত কবিতা, কবিতায় বসন্ত
ফাগুন রাঙে যখন
সুস্মিতা পাল কুন্ডু
আমার ইচ্ছেরা খেলা করে
পলাশ রাঙা পথ
ফাগুন রঙে আগুন হয়
অশোক শাখে গুঞ্জরিত ভ্রমর ;
আমার ইচ্ছেরা তাল মেলায়
মাতাল হাওয়ার দল
আম্রকুঞ্জে মুকুলিত সুগন্ধ
বিমোহিত চঞ্চল ;
আমার ইচ্ছেরা ছুঁয়ে যায়
ওই কৃষ্ণচূড়ার ডাল
দিগন্তরেখায় অস্তমিত রবিচ্ছটা আঁকে
সাঁঝবেলায় যখন আবীররঙা আঁচল --
আমার ইচ্ছেরা সুর তোলে
কোকিলের কুহুতান
প্রজাপতি দল ডাক দিয়ে যায়
ফাগুনের আহ্বান ;
শিমূল শাখা নব সাজে
পুষ্প কানন অকম্পিত লাজে
মধুমাসের অনলস প্রকাশে
বলে , ' সবার আমন্ত্রণ ;
ফুল পল্লবে শাখে শাখে
রঙের আলাপন
বসন্ত এসে গেছে ,প্রকৃতি উছলিছে
উদাস কেন তবে এখন !'
কি বলি তারে
কত কথা যে বয়ে যায়
বিরহ বিধুর মন ...একাকি আনমন
কোথায় আছে যে সুজন ....
পৃথিবীর আজ গভীর ব্যাধি
রীনা মজুমদার
আমার কাছে আনন্দবসন্ত--
ভরবে পলাশ ঝরবে শিমুল সবুজ ঘাসে
ডানায় ঝলমলে রোদ ফিরোজা আকাশে
বইবে নদী ফলবে ফসল আনবে কড়ি
জেলের জালে ফাগুন আসে জীবন তরী
আকাশ মাটি মিলেমিশে যায়
শাশ্বত আলিঙ্গনে বৃষ্টি ধারায়
রং বেরঙের কাগজনৌকো আশায় রয়
'বেনীআসহকলা' এক মহাকায় বিস্ময় !
খেলছে ওরা রক্তহোলি ভিজছে আমার মাটি
লুটছে পরশপাথর করছে লোভে ছুটোছুটি !
আর বুঝবে কবে ?
পৃথিবীর আজ গভীর ব্যাধি !
আয় ছুটে আয়, বসন্তের দোর খুলে দিই
খেলব হোলি, সাবান জলে রঙ মিশিয়ে
অনন্ত বিশ্বাস রঙিন বুদ্বুদে
যেমন ব্রহ্মকমল হয়ে ফোটে..
বসন্তের পাঁচালি
মাথুর দাস
শীত শেষে গীত গায় মলয় বাতাস,
আগুন জ্বালায় মনে শিমূল পলাশ ;
যত ফুল ফোটাফুটি ফাল্গুন জুড়ে
তত বেশি প্রেম জাগে অন্তর খুঁড়ে ।
হোলির মধুর আবেশ কৃষ্ণচূড়ায়,
কোকিলের কুহুতান হৃদয় জু্ড়ায় ;
অশোক বাসক বকুল পারুল কামিনী
কাঠচাঁপা কসমস ফোটে দিবস যামিনী ।
মধু মাস ভরে ওঠে মধু জলসায়,
কোনও ফুল চিরকাল অনাদর পায় ;
চিনুক বা না চিনুক কেউ তাকে নামে
ডাঁটে ফোটে ভাটফুল বাংলার গ্রামে ।
"আর্দ্র-বসন্ত"
প্রতিভা পাল সেন
শীত-শেষের বাসন্তী হাওয়ার শীতল-স্পর্শে,
প্রকৃতি যেদিন মন হারিয়েছিল
বৃষ্টির সুরে আনমনে-
ঝরে-পড়া জলের টুপ-টাপ শব্দ আর
ভেঁজা-মাটির সোঁদা-গন্ধ,
চুপিসারে আমি সরিয়ে রেখেছিলাম-
আমার মনের এক-কোণে, আগামীর জন্যে!
আকাশ-ভরা মেঘের আদর আর
আবছা-জলছবি,
বর্ষা হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল চারিদিকে -
শহরের আনাচে-কানাচে, নির্বিকারে, নীরবে!
বর্ষা-বসন্তের মিলনে-
হলুদ-বসন্ত সেদিন হয়েছিল নীলাভ!
অন্য-এক ভালোলাগা, নিশ্চুপে এসেছিল-
বাসন্তী-ভালোবাসার আর্দ্র-অবয়বে!!
পুনর্জন্ম
ফিরোজ হক্
বসন্তের মৃদু বাতাসে নিজেকে এলিয়ে নিই।
পিলা রঙের পাঞ্জাবি পড়ে
চোখে সানগ্লাস দিয়ে বেশ হিরো সেজে এগিয়ে যাই চৌরাস্তার মোড়ে।
মনে বসন্ত না এলেও স্কুলের অনুষ্ঠানে বসন্ত নিয়ে
লম্বাচওড়া ভাষণ ঝেঁড়ে দিই।
মনে বসন্ত এসে নিভে যায়নি
তোমার ছুঁয়ে যাওয়া বসন্ত যুগকে ম্মরণ করে
কাঁটিয়ে দিই পুরুষজন্ম।
প্রিয়তমা,
তোমার ছুঁয়ে যাওয়া বসন্ত নিয়েই জন্ম নিতে চাই
একশত একবার।
ফাগুন এলো
রীতা মোদক
ও শিমুল বউ ঘোমটা খোলো ...
ফাগুন এলো বনে ,
লাল হলো যে কৃষ্ণচূড়া
লাগলো আগুন মনে ।
গাছে গাছে গাইছে পাখি
অলি উড়ে বাতাসে ,
ডাল- পালা ঢেকে গেছে
গুচ্ছ গুচ্ছ পলাশে।
ডালে বসে ডাকিস কেনো
ওরে কোকিল পাখী ,
বসন্ত কাল চলে গেছে
জানতে নেই তো বাকি ।
মহুয়া বনে পাগল বাতাস
মন হলো যে আনমনা --
ভ্রমর গুঞ্জন কানে বাজে
ডাকে আমায় কোন জনা ?
রীতা মোদক
ও শিমুল বউ ঘোমটা খোলো ...
ফাগুন এলো বনে ,
লাল হলো যে কৃষ্ণচূড়া
লাগলো আগুন মনে ।
গাছে গাছে গাইছে পাখি
অলি উড়ে বাতাসে ,
ডাল- পালা ঢেকে গেছে
গুচ্ছ গুচ্ছ পলাশে।
ডালে বসে ডাকিস কেনো
ওরে কোকিল পাখী ,
বসন্ত কাল চলে গেছে
জানতে নেই তো বাকি ।
মহুয়া বনে পাগল বাতাস
মন হলো যে আনমনা --
ভ্রমর গুঞ্জন কানে বাজে
ডাকে আমায় কোন জনা ?
মধ্যরাতে
রুপক রায়
আমি জেগে থাকি কবিতায় কবিতায়
আমি জেগে থাকি তোমার চোখে
আমি জেগে থাকি সাদা খাতার পাতায়,
কলমের কালি হয়ে যায় শেষ
পাণ্ডুলিপি থাকে পড়ে ছলনায়
বন্ধ চোখে অন্ধ ঘরে একা আমি
মিথ্যে ভালোবাসা অজুহাতে মিলিয়ে যায়,
কিছু কথা নিঃস্বার্থ নিঃশ্বাসে
কিছু কথা শ্বাস-দীর্ঘশ্বাসে,
চাপা পড়ে দুটি কথা আঁখির পলকে
একটি সম্পর্ক হারিয়ে যায় বিশ্বাস-অবিশ্বাসে
লজ্জায় মুখ ঢাকে মিথ্যে আকাশ
স্বপ্নরা নিজ স্বার্থে ভেঙে যায় ভোরে
পাখির কলরবে মুছে যায় সব আঁধার
ফিরে পায় প্রাণ একটি জীবন অন্যটি অন্ধকারে।
হিয়ার মাঝে
বিজয় বর্মন
হৃদয় বলে শোন ,বরফ কেন লাল ?
অনেক দিনের জিজ্ঞাসা,মনে পড়ল কাল !
গোলাপ কেন ফিকে ,কোথায় গোলাপী ,
রঙ গেছে সেই ঘুমের দেশে ,তুমি জান কি ?
কাঁটা তারের অশ্রু ঝড়ে ,মুছে দিও জল !
মন দূয়ারে তালা চাবি ,কে লাগাবি বল ?
পুব আকাশে প্রভাত,হাওয়া,মুচকি হাসে ,
মন খারাপের কালে,হৃদয় তোমার পাশে !
শিমূল ,পলাশ রঙ ,বসন্ত বাতাসের সুর ,
আসিছে ফাগুন, হৃদয়, রাঙাতে মধুর !
প্রেম ভালোবাসা , বুক বাঁধে আশে ,
স্তব্ধ গোলাপ যেন ,শিহরণে হাসে !
কোকিল যেন বাঁধিছে সুর মনের উল্লাসে ,
হিয়ার মাঝে জমানো গান, বসন্ত বিলাসে !
আমার বসন্ত
মাম্পী রায়
বসন্তের ঐ প্রথম কীরণ
ফুটল আমার কোলে,
রঙিন শতক আবির মেখে
ঘুচবে মনের কালো।
রঙধনু রং হাট বসেছে,
হৃদ আঙিনায় আমার;
নীল সবুজের আভায় যেন
মন নেচেছে সবার!
লাল রঙের সোহাগ করি
আদর মাখি গালে,
আভা হাসি ছড়িয়ে পড়ে
গোলাপী ঠোঁট মেলে।
হলুদ রঙের সোহাগ করি
আমি যখন তারে,
আহ্লাদে তার মন ভরে যায়
খুশির বাহুডোরে।
কালো রঙের কাজল মাখা
তার নয়ন যুগল জোড়া,
নীল যমুনার জলে ভাসা
অভিমানে ভরা।
বে_ রঙিন বসন্ত
বটু কৃষ্ণ হালদার
রাঙ্গামাটির শিমুল,পলাশের ওই পথ ধরে আমি আর যাই না,শুধু তুমি যাও বলে।তোমার নিগূঢ় ইচ্ছার দাম দিতে গিয়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছি বিবর্ণ বনবাসের গহীনতায়।আর কেনই বা যাব?শুধু তুমি চাও না,আমার জীবনে নেমে আসুক বসন্ত। তোমার কোমল হাতের স্পর্শে,যে মরুভূমিতে বসন্ত নেমে আসতকোমল তৃনের দল দক্ষিণ বাতাসের তালে তালে মাথা নোয়াতো,সে হাত দিয়ে আমার হৃদয়ে সদ্য ফোটা গোলাপের কুঁড়িটির ইচ্ছাশক্তি কফিনবন্দি করেছে।বসন্তের রঙিন গোধূলি ফ্যাকাসে হয়ে মিশেছি দূর সীমান্তে।কোকিলের মিষ্টি কলতান আমার কাছে সানাইয়ের বিষাদময় সুর।তাই আজ দূর নীলিময় রঙিন হলেও আমার কাছে অন্ধকূপ এর মত।আমার হৃদয় কারাগারে অনেকগুলি বসন্তের অপমৃত্যু ঘটেছে,শুধু তোমাকে খুশি করতে গিয়ে।
মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন ফাল্গুন সংখ্যা ১৪২৬
পুস্তক পর্যালোচনা
কাব্যগ্রন্থ - দহন
কবি- সুজাতা মিথিলা
প্রকাশক- সমিধ
মূল্য- ৫০ টাকা
কবি সুজাতা মিথিলার কাব্যগ্রন্থ 'দহন'-এ আটাশটি কবিতা মলাটবন্দি হয়েছে। তিন-চারটি দীর্ঘ কবিতা-সহ মাঝারি ও ছোট মাপের কবিতাগুলি ঝকঝকে মুদ্রণে ও সুন্দর কাগজে নজর কাড়ে। স্বরুপেন্দ্র রায়ের প্রচ্ছদটিও কাব্যগ্রন্থের সঙ্গে মানানসই।
কবিতা নিয়ে এই মুহূর্তে প্রচুর ভাঙাগড়া চলছে। শূন্য দশকের ভাষা ও বিন্যাস এবং বিষয়বস্তু থেকে অনেকটাই এগিয়ে গেছে বর্তমানের কবিতা। কবি সুজাতা মিথিলার কিছু কবিতা সেই পর্যায় স্পর্শ করেছে। কিছু কবিতা আবার একটু যেন পুরোনো ধাঁচের।
কিন্তু বেশিরভাগ কবিতাতেই কবির শব্দচয়ন, চিত্রকল্প ব্যবহার ও যাপন প্রমান করে যে, তাঁর ভেতর কবিতা আছে। সাবধানে লালন করলে আগামীদিনে আরও ভাল লেখা তাঁর কাছে প্রত্যাশা করাই যায়। 'বিশ্বাস মরে গেলে মন সাদা খান পড়ে', 'বরফ চাপা শরীর শুধু উত্তাপ চায়/ বড়ো পবিত্র এ আগুনের আঁচ' 'খোলাশুদ্ধ বাদাম কিনে মাঠে হাত পা ছড়িয়ে/ মুঠো মুঠো অক্সিজেন কুড়িয়ে আনব' ইত্যাদি শব্দবন্ধ তার প্রমান।
কবিতাগুলির বিষয়বস্তু হিসেবে মাতৃত্ব থেকে শুরু করে সম্পর্কের টানাপোড়েন, নারীজন্ম এবং অতি-অবশ্যই আত্মঅন্বেষণ অন্য মাত্রা পেয়েছে। কিছু কবিতায় প্রকৃতি ও পরিবেশ চুপিসারে উপস্থিত হয়েছে। সব কবিতাগুলিই কমবেশি সুখপাঠ্য। জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে আরও নানা বিষয় কবির মনোজগতে জন্ম নেবে সেকথা আগাম বলে দেওয়া যায়।
নির্মোহ দৃষ্টি নিয়ে কবি সুজাতা মিথিলা লিখে চলবেন সেই আশা রইল।
মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন ফাল্গুন সংখ্যা ১৪২৬
Subscribe to:
Posts (Atom)