Friday, February 21, 2020

















আমাদের  অহংকার একুশে ফেব্রুয়ারি
শেখ একেএম জাকারিয়া

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এ দিনে মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার জন্য ঢাকা নগরীর প্রধান সড়কে  বুকের তাজা রক্ত ঢেলে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এদেশের  বীর সন্তানরা। তাঁদের স্বার্থহীন জীবনদানের বিনিময়ে  বাঙালি জাতি পেয়েছে অতি মধুর মায়ের ভাষা, বাংলা । যা আমাদের প্রাণের ভাষা, গানের ভাষা, আবেগের ভাষা । প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয় বায়ান্ন'র ভাষা আন্দোলনের সকল মহান শহীদদের ।  আজ একুশে ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে  উদযাপিত হবে এ দিবসটি। একুশ আমাদের জাতীয় অনুভূতি, একুশ আমাদের উদ্দীপনা, একুশ আমাদের অহংকার।  কবির ভাষায়, 'একুশ আমার  হাওর জলে, সাদা বুনোঁহাস/একুশ আমার কিশোরবেলার, বায়ান্নটা তাস।/একুশ আমার বিরনি চালের  দারুণ মজার ক্ষীর/ একুশ আমার স্বাধীনতা, বেঁচে থাকার নীড়।/ একুশ আমার খেলার সাথী, ছোট্টবেলার সই/একুশ আমার আমার মায়ের দেওয়া,অআ, কখ  বই।
সকলেই বিদিত  ভাষা আন্দোলনের                                            গোড়ার কথা অত্যন্ত শোকাবহ। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যে আকস্মিক ঘটনা ঘটেছিল তা প্রতিটি বাঙালির বুকের অভ্যন্তরভাগকে রক্তাক্ত করে। ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য ধর্মভিত্তিক দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের সাম্প্রদায়িক মতবাদের  ওপর ভিত্তি করে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট
পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। পাকিস্তান অধিরাজ্যের দু’টি অংশ ছিল: পূর্ব বাংলা (যা ১৯৫৫ সালে  পূর্ব পাকিস্তান নামে পুনর্নামাঙ্কিত হয়) ও পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব বাংলার মুসলমানরা  ছিল সংখ্যা গরিষ্ঠ।তাদের ভাষা ছিল বাংলা । অার পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলমানরা ছিল সংখ্যালঘু। তাদের ভাষা ছিল উর্দু। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের অধিক দূরত্বে অবস্থিত পাকিস্তানের দুটি অংশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে বেশকিছু মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান ছিল। 

অতীব দুখের বিষয়, পাকিস্তানের নব্য উপনিবেশ বাদী, ক্ষমতালিপ্সু, গর্বোদ্ধত শাসকগোষ্ঠী প্রথম থেকেই বাংলা ভাষা এবং বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি চরম তুচ্ছতাচ্ছিল্য পোষণ করা শুরু  করে। সেই সঙ্গে  ক্ষমতাসীন শাসকরা পূর্ব বাংলার মানুষের ওপর উৎপীড়নের স্টিম রোলার চালাতে থাকে। শুরুতেই তারা কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়, কীভাবে পুরো ঢাকা শহর তথা এদেশের মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে  নেওয়া যায়। এ অংশের মানুষকে দাসত্ব-শৃঙ্খল পরানোর  জন্য  তারা বাংলাভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বাঙালিদের ঘাড়ে পশ্চিম পাকিস্তানের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার নীলনকশা তৈরি করে।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের স্থপতি ও গভর্ণর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার এক জনসমাবেশে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা দেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।  কিন্তু এদেশের ছাত্র সমাজ সে জনসমাবেশে নতুন ধ্বনি তুলে তার প্ৰগল্‌ভতা পূর্ণ ঘোষণার যথাবিহিত জবাব দেয়। প্রতিবাদের ভাষা এবং এর ব্যাপ্তি ক্রমানুসারে বাড়তে থাকে।
পাকিস্তান সরকার  সকল  প্রতিবাদকে  অমানুষিক শক্তি দ্বারা দমনের চেষ্টা চালায়। তাদের পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় ছাত্রসমাজসহ  দেশের অধিকাংশ তরুণ। এদেশের সূর্য সন্তানরা  মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য অত্যন্ত দৃঢ় শপথ গ্রহণ করে। ঢাকা শহর তথা আমাদের দেশে র্সবত্র ছড়িয়ে পড়ে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন।  ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি  প্রতিবাদ সভা এবং মিছিল হবে তা আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এমন সংবাদ পেয়েই পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার  জন্যে পাকিস্তান সরকার ১১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা আইন জারির মাধ্যমে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অপরদিকে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্ররা গোপন বৈঠক করে এবং সিদ্ধান্ত হয় যেমন করেই হোক তারা ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করবেই। সে সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি সকালবেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে  ছাত্রদের এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে ছাত্ররা রাজপথে মিছিল বের করে। সেদিন ছাত্রসমাজের প্রতিবাদী কন্ঠে ধ্বনিত হয় নিজ অধিকার আদায়ের  দাবি। প্রাদেশিক অধিবেশন শুরু হয়েছিল  সে সময়। ভাষার দাবিতে অত্যন্ত মুখর মিছিলটি এগিয়ে যায় প্রাদেশিক ভবনের দিকে।  মিছিল নিয়ে ছাত্ররা যখনই ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি আসে তখনই  ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে ও মিছিলটিকে ছত্রভঙ্গ করার লক্ষ্যে পুলিশ আন্দোলনকারীদের  ওপর নির্বিচারে  গুলি চালায়। পুলিশের বেপরোয়া গুলিবর্ষণের ফলে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, সফিউলসহ আরও অনেকেই শহীদ হন ।  আহত হন অনেক মানুষ। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। দুঃখজনক এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সমগ্র পূর্ব বাংলায় প্রচণ্ড ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।  বুকের তাজা রক্ত দিয়ে শহীদরা লিখে যান এক অনুপম ইতিহাস।  তাদের এ মহান আত্মত্যাগের ফলেই বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। বাঙালির স্মৃতিতে দীপ্তিমান হয়ে থাকে সেই দিন,সেই রক্তমাখা  রাজপথ। আনন্দের বিষয়, বায়ন্ন'র ভাষা আন্দোলনের বহু বছর পর ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা,বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠন ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার জন্য এ সংগ্রাম বিশ্বের বুকে মর্যাদার স্থান পায়। গত ২০০০ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।


















ভাষা-মেয়ে

মৌসুমী চৌধুরী 


বর্ণমালা থেকে রক্ত মাড়িয়ে
উঠে আসে সুগন্ধি আতর,
ভাষা ঝিনুক থেকে তুলে নিই শব্দ-মুক্তো
আমার চেতনায় গজিয়ে ওঠে একটি গাছ।
তাঁর আঁচলে আমি লুকিয়ে রাখি
নিস্তব্ধ রাতকথা আর নোনা ঢেউ... 

আলো আঁধারে ফুটে ওঠে অক্ষর শ্বাস
মাথার ওপর ছন্দ-বাক্যের শামিয়ানা। 
ভাষা-মেয়ের অতল বুকের শিমূল-পলাশের ঘোর
পাঁজর জুড়িয়ে তুলে আনে ঝুমঝুমি সুর।
জীবন অলিন্দে ওষধি প্রলেপ...

আমাদের প্রেম ছড়ায় ময়ূরকণ্ঠী মাদকতা।
আমদের প্রেমে সেতু হয়ে জেগে রয় ভাষা-মেয়ে... 

বিনিসুতোর বাঁধনে আমি, সে ও সখা।





















একা একদিন
বাণী প্রসাদ নাগ

স্মৃতিমাখা সকালে রোদে ছাওয়া আলোতে
বিস্মৃতির আঁধারে ভাসে কত ব্যথা মনে মনে
পাহাড়ের কোলে পাখিদের নানা কলরবে
বিদায় বেলার বুকভরা যাতনা ভাবি নির্জনে। 
                           
লাল চেলি পরে জীবনের স্বাদ পেতে ছুটছি পথে
বিধির বিধানে তুমি আর আমি পড়ি অঘটনে 
কোথায় কে জানে, চলে গেলে আমাদের ছেড়ে
আমি শুধু তব পথপানে চেয়ে ভাসি দু নয়নে। 
                           
বসেছিলে তুমি জানালার ধারে আমি পাশে
গাড়িটা জোর ধাক্কা খেলো অন্য গাড়ির সাথে
রক্তে ভেসে তুমি পড়লে ঢলে আমার কোলে
রেখে গেলে আমায় এক অনিশ্চিত জীবনে।


















ধূপের মতো
রুনা দত্ত

প্রকৃতি নির্জনতা আঁধার
রূপকথার মতো ঘিরে রাখে
নিঃসঙ্গ জীবন আমার,

জ্যোৎস্না চাঁদ নক্ষত্রের আকাশ
পেয়েছে যে আজ
ভালোবাসার অবকাশ,

শূন্যে আজ উড়িয়ে দিলাম
তাই একমুঠো প্রেম
ভরে দিও তাতে উষ্ণতার হেম,

ধূপের মতো জ্বলে যদি 
হই নিঃশেষ, তাও রেখে যাবো
রজনীগন্ধা আর চন্দনের আবেশ। 

  

Monday, February 17, 2020


















দুদিকে দুজনে
বাণী প্রসাদ নাগ                    

ভাবিনি দেখা হবে আবার কোনোদিনও
ওয়েটিং হলে তুমি ছিলে ব্যস্ত লিটিলম্যাগে
ট্রেনের আনাগোনায় নজর ছিল না তোমার
কি জানি কী ভেবে তাকিয়েছিলে আনমনে। 
                            
ভেসে এলো নানাকথা যা ছিল মনে গাঁথা
চেষ্টা তো কম করিনি একই বৃন্তে থাকার
ভাগ্যে ছিল না তাই হলো ছাড়াছাড়ি
তবু আজও ফেলে আসা স্মৃতিচারণে। 
                          
ট্রেন এলে যাত্রা শুরু দিকহীন জীবনের
জানালা পাশে আনমনা বসে অপলক
অবচেতন মনের কথা হলো না আর বলা
বিপরীত গামী ট্রেনে ছুটলাম দুদিকে দুজনে।
























Friday, February 14, 2020






















প্রসঙ্গ : বিশ্ব ভালোবাসা দিবস
শেখ একেএম জাকারিয়া

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন'স ডে হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীতে একমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী  বছরসংক্ৰান্ত উৎসবের দিন, যা ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে  উদযাপিত হয়। বর্তমানে এ দিবস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়ে থকলেও অর্ধেকের বেশি দেশেই দিনটি ছুটির দিন নয়। এ দিনে প্রেমিক-প্রেমিকা, হিতৈষী- স্বজন, স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা-সন্তান, শিক্ষক -শিক্ষার্থীসহ  নানারকম বন্ধনে আবদ্ধ মানবজাতি পরস্পরের কাছে তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে । পুরো পৃথিবীতে এ দিনটিকে মহাসমারোহে আনন্দনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। এ দিনে অবকাশযাপনের উদ্যান ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো প্রিয়মানুষে ভরতি থাকে।
প্রতিবছর  ভালোবাসা দিবসে প্রিয়মানুষদের সবাই ফুলসহ নানাধরণের উপটৌকন প্রদান করে থাকে।
এ দিবসের আনুষ্ঠানিক নাম সেন্ট ভ্যালেন্টাইন'স ডে।  অন্য নাম ভ্যালেন্টাইন'স ডে।  ভালোবাসা দিবস গত কয়েক বছর আগেও পৃথিবী জুড়ে এ সময়ের মতো জাঁকজমকভাবে পালন করা হতো না।দিবসটি  শুধু  আমেরিকার সংযুক্ত রাষ্ট্রসমূহ বা পশ্চিমের দেশে স্থিরীকৃত ছিল। মজার বিষয় হচ্ছে,  আমাদের দেশে গত কয়েক বছর ধরে  দিবসটি পালিত হয়ে আসছে অথচ আমরা অনেকেই জানিনা দিবসটি কীভাবে বা কোথা থেকে আসল। আসুন জেনে  নিই  বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের প্রাচীন  ইতিহাস। 
২৬৯ খ্রিষ্টাব্দ। ইউরোপে অবস্থিত  ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন'স নামযুক্ত  খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী একজন ধর্মপ্রচারক ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তাঁকে কয়েদ করেন। কারণ সে সময়ে রোমান সম্রাটের শাসনাধীন রাজ্যসমূহে খ্রিষ্টধর্ম প্রচার নিয়মবহির্ভূত ছিল। কয়েদ থাকাকালীন তিনি অনির্দিষ্ট কোনো একজন কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েকে রোগ নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুস্থ করে তোলেন। যে কারণে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের লোকপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আর এসব দেখে সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ভ্যালেইটাইনের প্রতি ক্ষুদ্ধ ও ঈর্ষান্বিত হয়ে  গুরুতর অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তাকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করেন। সেদিন ফেব্রুয়ারি  মাসের ১৪ তারিখ ছিল। অন্য সূত্রে  জানা যায়, সময়টি ছিল ২৭০ খ্রিষ্টাব্দ। সে সময়ে রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস নারী-পুরুষের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তার দৃঢ়  বিশ্বাস ছিল, বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে যুদ্ধের প্রতি পুরুষদের অনুৎসাহ সৃষ্টি হয়। সে সময়ে রোম নগরীর খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী পুরোহিত ‘ভ্যালেন্টাইন’ সম্রাটের নির্দেশ উপেক্ষা করে লুকিয়ে নারী-পুরুষের বিবাহবন্ধনের কাজ সম্পন্ন করতেন। এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ভ্যালেন্টাইনকে সম্রাটের নিকট ধরপাকড় করে নিয়ে আসা হয়। সম্রাটের আইন কেন অমান্য করা হয়েছে এ প্রশ্নের জবাবে ভ্যালেন্টাইন সম্রাটকে জানান,  যিশুখ্রিষ্ট প্রবর্তিত ধর্মবিশ্বাসের কারণে কিংবা যুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে  তিনি কাউকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে নিষেধ করতে পারেন না। সম্রাট এসব কথা শোনার পর  ভ্যালেন্টাইনকে কারাগৃহে পাঠান। কারাগৃহে থাকাকালীন সম্রাট তাকে খ্রিষ্টধর্ম পরিহার করে বহুকাল পূর্বের রোমান পৌত্তলিক ধর্মে ফিরে আসার প্রস্তাব দেন এবং প্রতিদানে তার সব অপরাধ মার্জনা করার কথা জানান। উল্লেখ্য, সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস অনাধুনিক রোমান পৌত্তলিক ধর্মে বিশ্বাস করতেন এবং সে সময়ে রোমান সম্রাটের শাসনাধীন রাজ্যসমূহে এ ধর্মের আধিক্য ছিল। যা হোক, ভ্যালেন্টাইন সম্রাটের প্রস্তাব মানতে অস্বীকৃতি জানান এবং যিশুখ্রিষ্ট প্রবর্তিত ধর্মের প্রতি প্রচণ্ড বিশ্বাস আছে এমন কথা  পুনরায় ব্যক্ত করেন। সম্রাট ক্লডিয়াস সঙ্গে সঙ্গে তাকে প্রাণদণ্ডের নির্দেশ দেন। অনন্তর সম্রাটের  নির্দেশে ২৭০ খ্রিষ্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ ভ্যালেন্টাইনের প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হয়। লোকশ্রুতি আছে, মৃত্যুদণ্ডের পূর্বে ভ্যালেন্টাইন অন্ধ মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে একটি চিরকুট লিখেছিলেন। তাঁকে হত্যার পর কারাপ্রধান চিরকুটটি  মেয়েটির হতে দিয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল, ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন (From your Valentine)। মেয়েটি চিরকুটের ভেতরে বসন্তের হলুদ ত্রৌকস ফুলের আশ্চর্য সুন্দর রং দেখতে পেয়েছিল। এর কারণ হচ্ছে  ইতোমধ্যে ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় মেয়েটির অন্ধচোখে দৃষ্টি ফিরে এসেছিল।পরবর্তীতে রোমান সম্রাটের শাসনাধীন রাজ্যসমূহে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রাধান্য সৃষ্টি হলে পাদ্রি  ও চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইনকে  Saint হিসেবে ঘোষণা করে। ৩৫০ খ্রিষ্টাব্দে রোম নগরীর যে জায়গায় ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল সে জায়গায় তার স্মৃতি রক্ষার্থে  একটি গির্জা বানানো হয়। অতঃপর ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে পোপ সেন্ট জেলাসিয়ুস ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন'স স্মরণে চৌদ্দই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস ঘোষণা করেন। সে থেকে এ দিনটিকে মানবজাতি ভ্যালেন্টাইন্স ডে হিসেবে পালন করে আসছে। তাছাড়া লোকশ্রুতি আছে, অনাধুনিক রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল রোমান দেব-দেবীর রানি জুনোর সম্মানে ছুটির দিন। জুনোকে নারী ও প্রেমের দেবী বলে লোকে বিশ্বাস করত। কারও কারও মতে চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হওয়ার কারণ ছিল এটিই। তবে এ মত সর্বজন স্বীকৃত নয়, দ্বিমত আছে অনেকের। ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র উৎপত্তি সম্পর্কে আরেকটি সম্পূর্ণ ভিন্নমত আছে। এই মতের লোকেরা  বিশ্বাস করে,ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে প্রিয়মানুষকে ভালোবাসার বার্তা পাঠানোর আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই। বহুকাল পূর্বে মানুষের বিশ্বাস ছিল, ১৪ ফেব্রুয়ারি হলো পাখিদের বিবাহের দিন। পাখিরা বছরের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিম পাড়া শুরু করে। আবার কারও মতে , মধ্যযুগের শেষদিকে মানুষ বিশ্বাস করত,  এদিন থেকে পাখিদের মিলন ঋতু শুরু হয়। পাখিরা সঙ্গী খুঁজে বেড়ায়। পাখিদের দেখাদেখি মানুষও তাই সঙ্গী নির্বাচন করে এ দিনে। তবে গবেষকগণ মনে করেন উল্লিখিত মতগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম মত দুটি এই সময়ে গ্রহণযোগ্য ও সর্বজন স্বীকৃত। 

তবে এটা সত্য যে, ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে যে ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র উদ্ভব হয়েছিল, সে দিবসটি প্রথম দিকে পৃথিবীব্যাপী তেমনভাবে প্রচার ও প্রসার লাভ করেনি।
নুনাধিক সকলেই অবগত পশ্চিমের দেশে জন্মদিনের অনুষ্ঠান,ধর্মীয় অনুষ্ঠান সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই উপাসনালয়ের ভেতরেও  মদ্যপান থেকে তারা বিরত থাকে না। খ্রিস্টীয় অনুভূতি ভ্যালেন্টাইন দিবসের কারণে নষ্ট হওয়ার অভিযোগে ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্স সরকার ভ্যালেন্টাইন'স উৎসব আইনসম্মত নয় ঘোষণা করে। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিক ভাবে এ দিবস উৎযাপন করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবসটি  বর্জিত হয়।২০১৭ সালে পাকিস্তান সরকারও ইসলামবিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে । 
বর্তমানে, পশ্চিমা দেশগুলোতে এ উৎসব ঘটা করে উদযাপন করা হয়। পশ্চিমা দেশ ছাড়াও ভ্যালেন্টাইন'স দিবসের কদর এশিয়া মহাদেশে প্রবলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বইপত্রাদি ঘেঁটে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে  প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য শুভেচ্ছা কার্ড, ফুল, চকোলেট ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী ক্রয় করতে। সবচে' বিষ্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে এ দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্যে  প্রায় ২.৫ কোটি ও যুক্তরাষ্ট্রে ৩ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।
শেষকথা হচ্ছে,  প্রচলিত  এ পাশ্চাত্য  কাহিনি বা ইতিহাস কতটুকু ঠিক, সেটা আমরা জানি না। তবে এটুকু জানি যে, ভালোবাসা প্রকাশের জন্য কোনও বিশেষ দিনের প্রয়োজন হয় না। প্রতিটি দিন ভালোবাসার দিন, ভালোবাসা প্রকাশের দিন। তবুও প্রচলিত রীতি অনুসারে চৌদ্দই  ফেব্রুয়ারি  আমাদের কাছে বিশেষ একটি দিন হিসেবে দাঁড়িয়েছে। সবাইকে ভালোবাসা দিবস-এর শুভেচ্ছা জানাই। প্রত্যেকের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ভালোবাসায় পূর্ণ থাকুক, এই কামনা করি।
























 ভালোবাসার রঙে......
        প্রতিভা পাল সেন

দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত বসন্ত আজ ভালোবাসা-রঙে রঙিন! 
পলাশের হাসি মেখেছে দূর-দিগন্ত!
ঝরাপাতার মূর্চ্ছনায় শিহরিত তরুদল-
নবপল্লবে আবার সজ্জিত, অবিরত! 

কত-অপেক্ষা হারিয়েছে সময়-স্রোতে!
উদাসীনতা স্থিত হয় তবু, পেতে চায় নবরূপ! 
ফাগুন-হাওয়ায়-ভেসে, খুঁজে-খুঁজে ফেরে মন-
স্বপ্ন-আশা, বেঁচে থাকার অমলিন-সুখ!

জলছবি-কত হুটোপুটি করে বিছানো স্মৃতি-আঙিনায়! 
আঁকড়ে ধরে ভালোবেসে, এক-মুঠো অতীত ;
বসন্ত শুধু জানায় মনে-মনে,
ভালোবাসারা আজও বাঁচে, গেয়ে যায় জীবন-সঙ্গীত!! 

বিশ্ব ভালোবাসার দিবসে শহীদদের জন্য একটি গোলাপ রেখো হৃদয়ের স্তবকে

বটু কৃষ্ণ হালদার


কাশ্মীর শব্দটি প্রাচীন সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপত্তি হয়েছে এবং যাকে "Kasmira"নামে অভিহিত করা হয়।নীল মত পুরাণ অনুসারে সতী সরস নামক হৃদয়ের পানি থেকে এই উপত্যাকার উৎপত্তি ঘটে।অনিশ্চিত এক জনশ্রুতি অনুসারে কাশ্মীর শব্দের স্থানীয় ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো পানি থেকে উদ্ভূত ভূমি।আবার লোক কথা অনুযায়ী কাশ্মীর মানে হল শুষ্ক ভূমি।দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে কলহনের লেখা কাশ্মীরের ইতিহাস রাস্তা রঙ্গিনী থেকে জানা যায় যে কাশ্মীর উপত্যকা পূর্বে একটি হ্রদ ছিল।হিন্দু পুরাণে বর্ণনা করা আছে সৃষ্টিদেবতা ব্রহ্মার পৌত্র মহর্ষি কশ্যপ বারামুলা পাহাড়ের একাংশ কেটে জল নিষ্কাশন করেন।কাশ্মীর সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার পর কশ্যপ ব্রাহ্মণদের সেখানে বসতি স্থাপন করার জন্য আমন্ত্রণ করেন। এই কাহিনী স্থানীয় ঐতিহ্য আজও রয়ে গেছে।
আপেল সুন্দরী কাশ্মীরের কথা মনে পড়লে মনটা কেমন নেচে ওঠে। পাহাড়,ঝর্ণা এবং আপেলের সুন্দর যে বিমোহিত হয়ে ওঠে পর্যটকদের মন।
ভু _ স্বর্গ কাশ্মীর ভারত তথা বিশ্বের কাছে এক বিস্ময়কর নাম। বিশ্বের ভ্রমণপিপাসুর মানুষগুলির চাহিদা পূরণ করে এসেছে কাশ্মীর। কাশ্মীর মানে সৌন্দর্যের এক আশ্চর্য লীলাভূমি।ডাল লেক, লাকুতি ডাল, গাগরিবাল, বড়া ডাল,হাউসবোট, নাগিন লেক,বোটানিক্যাল গার্ডেন, ইন্দিরা 
গান্ধী টিউলিপ গার্ডেন, নিশাত বাগ শালিমার বাঘ চাষাবাদ পরিমল হযরত বাল দরগাহ শঙ্করাচার্য ধাম,জলপ্রপাত, সহ আপেল বাগানের স্বাস্থ্যকর পরিবেশের এক পরিপূর্ণ জীবনের পীঠস্থান। কাশ্মীর কথাটির নাম শুনলেই হৃদয় হিল্লোলের প্রাণেের দোলা। যেন ঈশ্বরেের হাতে গড়া মনোরম আর নয়ন জুড়ানো ভুবনভোলানো দৃশ্যের সমাহার।
 দ্বাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত কাশ্মীর শব্দটি ভৌগোলিকভাবে শুধু এবং পিরপাঞ্জাল পর্বত মালার উপত্যকাকে নির্দেশ করা হতো।কিন্তু বর্তমানে কাশ্মীর বলতে বোঝায় একটি বিশাল অঞ্চল ভারতীয় শাসিত রাজ্য জম্মু-কাশ্মীর (এরমধ্যে বিভাগসমূহ রয়েছে কাশ্মীর উপত্যকা জম্মু এবং লাদাখ),পাকিস্তান শাসিত গিলগিত-বালতিস্তান এবং আজাদ কাশ্মীর প্রদেশে এবং চীন শাসিত আকসাই চীন এবং ট্রান্স কারাকোরাম ট্র্যাক্ট অঞ্চল সমূহ নিয়ে গঠিত।প্রথম শতাব্দীর প্রথমার্ধে কাশ্মীর অঞ্চল হিন্দুধর্ম উপরে ভৌত ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে পড়ে নবম শতাব্দীতে কাশ্মীরে শাইভিবাদের উত্থান ঘটে।১৩৩৯সালে শাহ মীর কাশ্মীরের প্রথম মুসলমান শাসক এবং সালতিন_ই_ কাশ্মীর বা শাহ মীর রাজবংশের গোড়াপত্তন করেন। এর পরে ১৫৮৬ থেকে ১৭৫১সাল পর্যন্ত এই কাশ্মীর মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮২০ সাল পর্যন্ত আফগান দুররানি সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। এই বছরেই পাঞ্জাব কেশরী রঞ্জিত সিং এর নেতৃত্বে শিখ রা কাশ্মীর দখল করেন।১৮৪৬সালে প্রথম ইঙ্গ শিখ যুদ্ধে শিখ রা পরাজিত হয় এবং জম্মুর রাজা গুলাব সিং অমৃতসর চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশদের কাছ থেকে এই অঞ্চল ক্রয় করে কাশ্মীরের নতুন শাসক হন।
১৯২৫ সালে হরি সিং কাশ্মীরের রাজা হন।ভারত বর্ষ স্বাধীনতা পর্যন্ত তিনি ছিলেন কাশ্মিরের শাসক। তবে স্বাধীন কাশ্মীরের ইতিহাস জানতে গেলে ভারত ভাগের ইতিহাস তাও আমাদের জানা খুব দরকার।১৯৪৭সালে ভারত বিভাজনের অন্যতম শর্ত ছিল ভারতের দেশীয় রাজ্যের রাজা ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবেন অথবা তারা স্বাধীনতা বজায় রেখে শাসন কাজ চালাতে পারবেন। ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর পাকিস্তান সমর্থিত পশ্চিমাঞ্চলে জেলার বিদ্রোহী নাগরিক এবং পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের উপজাতিরা কাশ্মীর আক্রমণ করে।কাশ্মীরের রাজা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলেও গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন এর কাছে সহায়তা চাইলেন কাশ্মীরের ভারতভুক্তি পক্ষে স্বাক্ষর করবেন এই শর্তে মাউন্টব্যাটেন কাশ্মীর কে সাহায্য করতে রাজি হয়।১৯৪৭সালের ২৬ শে অক্টোবর হরি সিং ভারতভুক্তি চুক্তিতে সই করেন।২৭ শে অক্টোবর অনুমোদিত হয়।চুক্তি সই হওয়ার পর ভারতীয় সেনা কাশ্মীরে প্রবেশ করে অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।ভারত বিষয়টি রাষ্ট্রসঙ্ঘের উত্থাপন করেন। রাষ্ট্রসঙ্ঘে ভারত ও পাকিস্তানের তাদের অধিকৃত এলাকা খালি করে দিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে গণভোটের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ভারত প্রথমে এই প্রস্তাবে সম্মত হয়েছিল।কিন্তু ১৯৫২ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচিত গণপরিষদ ভারত ভুক্তির পক্ষে ভোট দিলে ভারত গণভোটের বিপক্ষে মত দেয়।ভারত ও পাকিস্তান  রাষ্ট্রসংঘের সামরিকপর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধবিরতি তত্ত্বাবধানে আসে। এই গোষ্ঠীর কাজ ছিল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ খতিয়ে দেখা ও তদন্তের রিপোর্ট প্রত্যক্ষ পক্ষ ও রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব এর কাছে জমা দেওয়া।যুদ্ধ বিরোধী শক্তি হিসেবে কাজ থেকে উভয় পক্ষের সেনা প্রত্যাহার ও গণভোটের প্রস্তাব দেয়া হয়।কিন্তু ভারত গণভোটে অসম্মত হয় এবং এজন্য পাকিস্তান ও সেনা প্রত্যাহারের অসম্মত হয়।ভারত গণভোট আয়োজনের অসম্মত হয়,এজন্য যে এটা নিশ্চিত ছিল যে গণভোটে মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের বেশিরভাগ পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দান করবেন এবং কাশ্মীরে ভারত বিরোধী আন্দোলন আরো বেশি হবে। সেই থেকে আজও ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত বিদ্যমান।
১৪ ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ভালবাসা দিবস। সারা বিশ্বজুড়ে এই দিনে মানুষ হিংসা ছেড়ে সম্প্রীতি ও ভালবাসার বার্তা দেয়।২০১৯ সালে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বের মানুষ যখন ভালোবাসার আঙ্গিনায় একে অপরকে আবদ্ধ করার নেশায় মশগুল হয়ে উঠেছে ঠিক সে সময় কাশ্মীরের পুলওয়ামায় নিরাপত্তা কর্মীদের বহনকারী যানবহনে ঘটে গেল নৃশংস জঙ্গি হামলা। ভালোবাসার দিনে জওয়ানদের তাজা তাজা রক্তে রঙ্গিন হয়ে উঠলো আপেল সুন্দরীর শাড়ির আঁচল। প্রায় ৪০ এর বেশি তরতাজা প্রাণ ভারত মায়ের কোল ছেড়ে ফিরে গেলেন না ফেরার দেশে। এই নৃশংস ঘটনায় সারা বিশ্ব হতবাক ও স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে ভালোবাসার মলিন রং। ওই দিনই ভারত মা হারিয়ে ফেলেন তার বীর সন্তানদের। কত মা হলেন সন্তান হারা, সন্তানরা বঞ্চিত হলেন পিতৃস্নেহ থেকে, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে স্ত্রীরা বঞ্চিত হলেন স্বামীর ভালোবাসা থেকে। এই হামলার দায় স্বীকার করেন পাকিস্তানের ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই মোহাম্মদ। আজও কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী,সিয়াচেন থেকে লাদাখ,শীত,গ্রীষ্ম,বর্ষা তুষার,মরু কে উপেক্ষা করে প্রহর গুনতে থাকে। যারা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর গান শুনতে পায়। প্রতি ক্ষণে ক্ষণে মৃত্যু তাদের শিওরে কড়া নাড়ে। সবকিছুকে উপেক্ষা করে দুর্গম,গিরি,কান্তর,মরু দুস্তর কে জয় করেছে আমাদের দেশের বীর সন্তানরা।"প্রশ্ন করি বাবা তোমার আমার ছোট্ট মুখে/ তুমি কেন রাত্রি জাগো সীমান্তের এই বুকে? দেশের বীর সন্তানরা কেন,ওই সুদূর সীমান্তের বুকে রাত্রি জাগে উত্তর প্রদেশ আমাদের সবার জানা আছে। দেশের প্রতি ভালোবাসার টানে আজও সন্তানরা হাসিমুখে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে। সেই সন্তানরা সীমান্তের বুকে রাত্রি জাগে বলে, আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাই, সে সন্তানদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা আশা স্বপ্ন গুলোকে পদানত করে আমরা নিজেদে কে সুখের সাগরে ভাসিয়ে দিই।বিশ্ব ভালোবাসার দিবসে সেই সন্তানের জন্য একটা গোলাপ রেখো হৃদয় স্তবকে।























প্রেম
মৌসুমী চৌধুরী 


আমাদের নেই গোলাপে প্রেম যাপন,
কোন চকোলেট-প্রেমালাপ নেই আমাদের।
অনন্ত সংবাহে ধরা দেয় না আমাদের প্রেম,
আমাদের প্রেমে চুমুগুলো কেমন 
কেঁপে কেঁপে ঝরে পড়ে বিষন্ন বকুলের মতো!

নাহ্! আমাদের প্রেমে কোন প্রতিশ্রুতি নেই।

শুধু হাড়-মাস-চামড়ার অতলে কোথাও
প্রতিটি সেকেন্ডে পোড়ে রাবণের চিতা।

তার কোন দিন-ক্ষণ নেই।
















বসন্তের আগমনী ঘ্রাণ 
রুনা দত্ত

বুকের ভিতর সবুজ টলটলে
এক দীঘি
তাতে ফুটে আছে অজস্র 
শালুক পদ্মর কুড়ি। 

যখন ভালোবাসা দীঘিতে 
নেমে আসে
তখন আলতো আদরে ছুঁয়ে 
দেয় কুড়িদের । 

আর কুড়িরাও শিশিরবিন্দুর মতো 
ভালোবাসা মেখে নিয়ে 
পরম মমতায় মেলে দেয় 
একটি একটি করে পাপড়ি । 

ভালোবাসাও  আন্তরিক স্পর্শে 
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় পরাগরেণু 
পূর্ণতার সুগন্ধে ভেসে আসে
বসন্তের আগমনী ঘ্রাণ ।
























চিরস্থায়ী 
নির্মাল্য ঘোষ 

কাটিয়ে দিলাম অনেকগুলো দিন 
তোমার ছায়ায় নিবিড় ভালোবাসায় 
বুকের মাঝে জমিয়ে রাখা  ঋণ 
সবটুকু আজ তোমায় দিতে চায়

ইচ্ছে যখন ঘড়ির কাঁটায়  বাঁধা 
চাবুক চালায় ক্যালেন্ডারের পাতা 
কালোর মাঝে উড়ছে একটু সাদা 
ঘোড়ার পিঠে আমার শুন্য খাতা

ব্যাকুল রাধা বৃষ্টি ভেজা রাতে 
কিম্বা শীতের গভীর ঘন হিমে 
হাত গুঁজে দেয় আমার নিঃস্ব হাতে 
দাঙ্গা তখন  একটুখানি  কমে

শান্ত বুকে ঝিলের ভরে ওঠা 
তোমার চোখের টানা টানা কথা
সমাজ কিন্তু  ছড়িয়ে দেবেই  কাঁটা 
তোমার জন্য চির স্থায়ী ব্যথা
























অন্তর্লীন শব্দের নক্সা
     রীনা মজুমদার

একজন শিল্পী, সামনে তার দিগন্ত বিস্তৃত
    দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ
 আমাকে অবাক করে, এক স্বর্গীয় ক্যানভাস
      শিল্পীর চোখ সবুজে, জীবন্ত
 রমনীর পিঠে বাঁধা এক কালো মেয়ের 
     ঠোঁটের কোণে অরূপ হাসি,
 নয় কল্পনা, শিল্পীর রং তুলির আঁচড়ে 
     সযত্নে লালিত হচ্ছে সে সৃষ্টি ।
     আমি থমকে দাঁড়াই
 শিল্পী ও শিল্পের অন্তর্গত বোধের মাঝে,
   শব্দবিদ্ধ করে আমাকে ।
    আমি তো কেউ না, 
  শুধু অন্তর্লীন শব্দের নক্সা বানাই
  মাটির উপর টুকরো ছবি যাপন করি..

      বন্ধুত্ব আমার শব্দের সৃজনে
    সে শব্দের সাথে আড়ি দিতে পারি !

Tuesday, February 11, 2020

























পুতুল খেলার ছলে 
মজনু মিয়া 

মৌ, মীম, নূর এরা সবাই খেলা করছে কাঁঠাল গাছের তলে,,,খেজুর পাতার পাটি বিছিয়ে তারপরে সবাই বসে অনেক গুলো পুতুল দিয়ে খেলছে,পুতুলগুলো কাঠের তৈরি। 
নানান রঙের কাপড়ের টুকরা দিয়ে শাড়ি বানিয়ে পুতুলের গায়ে পরিয়ে দিয়েছে তা শুয়াইয়া রাখছে।
একটার নাম দিছে টুনি একটার নাম দিছে রনি একটার নাম দিছে ছবি এ রকম আরও অনেক নাম। 
টুনির বাবা মায় টুনির বিয়ে দিবে তাই বাড়িতে ইস্টি অর্থাৎ কুটুম আসছে এ খবর পেয়ে রনি ও ছবি সহ আরও অনেকেই এসেছে তাদের বাড়িতে।
টুনিকে দেখে কুটুমদের পছন্দ হলো তারা বিয়ের তারিখ ঠিক করে চলে গেল।কিন্তু রনি,ছবিসহ অন্যরা বলছে এটা কিছুতেই হতে পারে না।কারণ টুনির বিয়ের বয়স হয় নাই।তখন এদের মধ্য থেকে একজন বলল,স্যার বলেছিল আঠারর আগে বিয়ে আইনত অপরাধ চল আমরা এ বিষয় স্যারকে জানাব যদি টুনির বিয়েটা বন্ধ করতে পারে স্যার, টুনির বয়স মাত্র বারো কিংবা তেরো হবে।
মৌয়ের পক্ষের পুতুল গুলো ছেলে আর মীমের পক্ষের পুতুল গুলো মেয়ে নূর ছোট তাই সে বসে বসে খেলা দেখে। তখন একটা পুতুল বড় সেই পুতুলকে স্যার বানাল আর তখন সেই স্যারকে সব খুলে বলল,তখনি স্যার মেয়ের পক্ষের পুতুলগুলোর সঙ্গে আলাপ করতে লাগল,,,মেয়ের বাবাকে আর মা কে বলছে স্যার,,আপনারা জানেন কি?  আপনাদের মেয়ে টুনির বয়স এখনো আঠারো পূর্ণ হয় নাই? মেয়ের বাপ মায় আমতা আমতা করে কোন উত্তর দেয় না।আবার স্যার বলে,আপনারা এ বিয়ে দিতে পারবেন না কারণ এটা আইনত অপরাধ এ কাজ বা বিয়ে দিলে জেল খাটতে হবে উভয়কে সাথে ছেলের পক্ষকেও!

মেয়ের পক্ষের সবাইকে এ কথা বলাতে তারা সবাই স্যারকে বলল,আমরা তাহলে এখন বিয়ে দেব না টুনির বয়স আঠারো হলেই বিয়ে দেব। 
স্যার ও রনি,ছবিসহ সবাই তখন বের হয়ে এল বাড়ি থেকে।এসে স্যার বলল, তোমরা একটা সুন্দর কাজ করলা,,,একটা মেয়ের জীবন বাঁচল আর অল্প বয়সে বিয়ের আইনও ঠিক রইল। তোমরা সবাই দেখবা কোথাও যেন এ কাজ না করতে পারে।
এমন সময় ছেলের পক্ষের পুতুল গুলোর অভিযোগ এল মীম তখন মেয়ের পক্ষের কাছে জানতে চাইলে সব কথা বুঝিয়ে বললে মীমের পক্ষের পুতুল গুলো বুঝতে পারে,,, তখন সবাই বলে এই নিয়ম গুলো যদি আমাদের দেশেও সব জায়গায় প্রয়োগ হয় তবে আর কোথাও বাল্যবিবাহ থাকবে না।
সবাই তখন ইশকুলে যাবার প্রস্তুতি নেবার আর পড়া লেখা কি ভাবে শেখা যায় তার উপর পুতুলগুলোকে শিক্ষা দেয় আর নানান রকম খেলাধুলা করে চড়ুইভাতি খেলে। খুশিতে ডগোমগো হয়ে টুনিও তাদের সাথে খেলতে লাগল।
আমরাও যারা বড় আছি তারা যেন এই বিষয়টা মাথায় রাখি বাল্যবিবাহ যাতে না দেই।























ভালোবাসার কবিতা
রুনা দত্ত

ভালোবাসি বলেই
কাছে আসা
ছুঁয়ে থাকবো বলেই
স্রোতে ভেসে যাওয়া ।
ভালোবাসি বলেই
বৃষ্টি ভেজা ঠোঁটে
আলতো চুমু দেওয়া
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ভিজে
হারিয়ে যাওয়া ।
ভালোবাসি বলেই
পরাগরেণুর মতো
চিবুক ঠোঁট নাভিমূল ছুঁয়ে
হলুদ নির্জনে জলজ ঘ্রাণের
চিহ্ন এঁকে নেওয়া ।
ভালোবাসি বলেই
বৃষ্টিস্নাত হয়ে
শব্দর পর শব্দ সাজিয়ে
ভালোবাসার কবিতা হয়ে ওঠা .... 


Thursday, February 6, 2020




দুটি ছড়া
রথীন পার্থ মণ্ডল

১. নেংটি ভূত

রাত্রিবেলা ঘুমিয়ে তখন রান্নাঘরে ঝনঝন,
এতরাতে ঘরের মধ্যে ঢুকল আবার কোন্ জন?
বুবাই বলল, এত রাতে আসতে পারে চোর,
আমার তখন ধীরে ধীরে কাটছে ঘুমের ঘোর।
টুকাই বলে, যাসনে দাদা পাচ্ছি ভূতের গন্ধ,
আমি বললাম, ভূত দেখতে লাগবে না রে মন্দ।
ধীরে ধীরে পা টিপে যাই যেই জ্বেলেছি আলো,
ভূতের বাচ্চা ? নেংটি ইঁদুর অমনি পা-লালো।
বলল টুকাই,দাদার দেখছি সাহস আছে বটে,
ভূতের নামে এমনি করেই যায় ইচ্ছে তাই রটে।


২. হাইটেক ভূত

কাছে কাছে থাকো সব ভূত,দেয় উঁকি
ভূত বলে তোমরাও ভয় পাও নাকি!
যুগ এটা হাইটেক আমাদের ভয়
ছেলেমেয়ে বলে, ওরে ভূত কারে কয়!
মাউসে-তে আঁকে ভূত, কম্পিউটারে
ফুটে ওঠে কিম্ভূত সব মনিটরে
ভূত যদি শিখে ফেলে এইসব কাজ
ভাত যাবে মানুষের সেই ভয় আজ!
ভূত জাত,শেখে দ্রুত,অলস মানুষ
যাই পায়,তাই খায় অল্পেতে খুশ
ভূত হাসে মোবাইলে,হিমেশের গানে
মিস কল মানে আজ ভূত বেশ জানে
হাইটেক ভূতে দেখি, ছেয়ে গেল দেশ
সাইবারে কফি খায় রিংটোনে কেস।




মুজনাই অনলাইন মাঘ সংখ্যা ১৪২৬

রেজিস্ট্রেশন নাম্বার- S0008775 OF 2019-2020
ঠিকানা- হসপিটাল রোড, কোচবিহার, ৭৩৬১০১
প্রকাশক- রীনা সাহা 
সম্পাদনা, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায় 

মুজনাই অনলাইন মাঘ সংখ্যা ১৪২৬