Thursday, February 23, 2017

 

গড়
তুষার আহাসান
হাইস্কুলের মাঠে মাইক বাজলেই ছুটে যায় লতাবুনি! কত গান হয়। কত ‘বক্তিমে’ হয়।ঝগড়াঝাঁটিও কম হয় না! খাওয়া-দাওয়া,তা-ও হয় বৈকি।কাগজের ঠোঙায় ‘টিপিন’ বিলি হয়।লতাবুনিও পেয়েছে তা। ভোটের ‘মিটিন’ ।জোটের মিছিল।সব দেখে সে।কাউকে কিছু বলে না।পাঁচবাড়ি চেয়ে খেলে কি ‘টুঁটি-জোর’ করা যায়। তবে হাইস্কুলের মাইকে আজ যারা ‘বক্তিমে’ করছে তারা কেউ চেয়ে খাওয়া লোক নয়।গলার জোর কি গো!মনে হয়,মাইক না হলেই চলতো।ইনাদের ছেলেরাই তো টাউনের ‘ইনজিরি’ স্কুলে পড়ে!’ডেরেস’ কি গো,সব সাহেববাচ্চা!বছরে এক-দুবার আসে,ঝলমল করতে! ‘বক্তিমে’র বাবুদের আজ সবার ধূতি-পানজবি!যেমনটি থাকে পুজোর সময়।ঠাকুর-দেবতা নাই।তবু বেশ পুজো-পুজো ভাব।মনে মনে গড় করে লতাবুনি।কাকে করছে,তা সে নিজেও জানে না! খিচুড়ি-ভোগ খেয়ে পেট আইঢাঁই।এখনও গান বাজছে চারদিকে!এত গান,এত সুর,সবেই কেমন লক্ষীমন্ত ভাব।কেউ তো কোন ‘ইনজিরি’ বললো না!আবার গড় করে লতাবুনি।তবে মনে-মনে!

Monday, February 20, 2017

সারারাত বনবীথি ধরে
শিবু

তুমি যখন আয়না ধরলে আমার সামনে, দেখলাম
অহংকারের বাষ্পে আচ্ছন্ন আমার অবয়ব-
মার্কারির দেওয়াল ভেদ করে সে পালিয়ে গেল
মুখ লুকালো বৈকুণ্ঠপুরের শালবনেবনে ।

ভুল,ভুল, প্রকৃতির সব শিক্ষা ভুল প্রমাণিত করেছে
প্রায়শ্চিত্ত করবে বলে হাজার হাজার মাইল হাঁটে
রেললাইন ধরে- পৌঁছে যায় গজলডোবায়,
দুয়ার খুলে যায় আমারই আমার চক্ষু ভেদ করে।

মনমরা একটা বিকেল মাথায় পেতে পড়ে থাকে যত অবরোধ-
টন টন নুড়ি আর বালি ভরা শরীরে, পাশ ফিরে
শুয়ে থাকা তিস্তার পাট-ভাঙা তাঁতের আঁচলে মুখ ঢাকে

ভারাক্রান্ত সে মুক্তি পেতে হেঁটে বেড়ায় সারারাত বনবীথি ধরে।




:বেঁচে থাক অক্ষরগুলো
রকি মিত্র
   --------------------
অনেককথাই তো বলে ফেলি
'ক' থেকে 'ম' পর্যন্ত বলতে গিয়ে-
মাটি খুঁড়ে বের করে আনি,
হাজার বছরের প্রাচীন শিকড়।
পাহাড়ের বুক চিঁড়ে নদীটাকে নিয়ে এসে
তোমার আঙিনায় বসিয়ে রাখি
কি জানি যদি নদীটা ইশারায় কিছু বুঝিয়ে দেয়,
    এই আশায়!!!!!
একটা আস্ত গোলাপের পাপড়ি ছিঁড়ে,
দেখিয়ে যাই আমার অনাদি বসন্ত।
ঝরঝরে হাত দিয়ে আজকাল প্রেম জমে না
তাই অচিন পাখিটার গায়ে হাত বুলিয়ে,
ওকে বলে উঠি "যা এইবার"।
ডানায় লিখে দেই আমার ঘুমজাগা রাতের কথা।
কিন্তু যদি বৃষ্টি এসে ধুঁয়ে দেয় অক্ষরগুলো,
তাতে পাখিটার কি দোষ বলো?
থাক না নাই বা শুনলে আধমরা তিনটি শব্দ
আমি বরং ওদের দুবেলা জল দিয়ে যাই
ওদের বাঁচিয়ে রাখি,ওরা বেঁচে থাক।
হয়তো একদিন বাতাসের হাতেই ছেড়ে দিব
অপেক্ষার মুক্ত আকাশে ওরাও উঁড়ে বেড়াবে।

Friday, February 17, 2017

শোকরং
 নীপবীথি ভৌমিক

 জলের কথা শুনেছো কি কখনও
 শান্ত জলভেজা দুপুর-পুকুর ঘাটে ?

  এসে বসো পাড়ের কাছে,
    কান পাতো সে রঙে ,
এত, রঙিন আলোর  রঙ সাজাও  কেন আজ !
 বরং জানালা খুলে রাখো ওই পশ্চিমের 
  আসুক শান্ত রঙের বাতাস ;
দেওয়াল  সাজিয়ে নামুক কোনো এক শোক পাখির নিরীহ গান...

   উৎসব কি শুধুই আলোর স্বর রচনা করে ?
  শোক  রঙেও থাকে উৎসব রঙের গভীর ঘুম শয্যা।

   আসলে কি জানো, 
শোক, কোনো স্তব্ধতা নয়,  নিঃশব্দের এক গান
 মুক্ত বৃষ্টির পথে বেজে যায় কেবল বিষাদ রঙিন সেই তান।
#সংজ্ঞা
(উৎসর্গ  :  জীবনানন্দ দাশ)

--উদয় সাহা
পথ ধূলো বন প্রান্তর
বনলতা সুচেতনা পরস্পর
                      হেঁটে চলে যায়
ডোরা কাঁটা স্মৃতি
ভুলে যাওয়া গীতি
                      ঠোঁট ছুঁয়ে যায়।
আজ বিতর্কের আগুণ
চোখজুড়ে পলাশের ফাগুন 
                      সুরভি ছড়ায়
নারী জাগরণের কাহিনী শুধু
ঝাপসা দৃশ্যপটে ফেলে আসা বধূ
                       গল্প শোনায়।
পোশাক- প্রতিবাদে বিদ্রোহ ঘোষণা
মূলধন কেবল নিজস্ব প্রেষণা
                       কলম কথা বলে চলে
কাঁধে কাঁধ স্পষ্ট চোখ
অতিআধুনিকতায় রঙীন অন্তঃলোক
                        যুক্তিতে বরফ গলে।
প্লাস্টিক মোম-তাপ (বিকল্প)
---------------------------------------------
বিকল্প সন্ধানে বেছে নিই - 
বেছে নিই নিরাকার মুখ ও চেটোর ঘাম।।
আসলে বিকৃত আলোয় মুখের চেয়েও মুখোশ।
টোটাল উইন্ডো সিট : সিট বেল্ট ও প্রাক-রতি
ঝাড়াইবাছাইয়ের আগে স্ট্যাটমোডে সম্মোহন।
কিশোরী খুন হয় - নাবালক দেশ ও খবর.....?
বড্ডো ধন্দে আছি : বেশুমার শ্মশান গন্ধে।
বুলেট ইতস্তত : প্লাস্টিক মোম-তাপে ছেঁড়া রাত
কতটা সীমানা ছেঁড়ে?কিশোরীর যোনীজ প্রশ্ন।।
জল দিয়ে নিজের জলবাড়ি বানাই।।

শব্দরূপ : রাহুল

Wednesday, February 15, 2017


"বসন্ত-বাহক"

রীনা সাহা

সত্তর পেরোনো বুড়িটার
বসন্ত নেই, বসন্ত-বিলাপও নেই----
সম্বল বলতে একটা বি.পি.এল কার্ড
আর ঘুণধরা আড়তের
দুটাকা কেজির চাল!
সত্তর পেরোনো বুড়িটারবসন্ত নেই, বসন্ত-বিলাপও নেই----
সম্বল বলতে বহুকালের পুরোনো
একটা কাঁসার থালা,
সকাল-সন্ধ্যে পারশ করে নেওয়া
লাল রঙের ভাত, দুটো আলুসেদ্ধ,
নোনতা স্বাদের একটুখানি রক্ত
পরবশ বসন্ত!

সত্তর পেরোনো বুড়িটার
বসন্ত নেই, বসন্ত-বিলাপও নেই---
সম্বল বলতে বংশের ধারক একটা নাতি,
দিনমান ভিক্ষে শেষে,
নেই রাজ্যের দেশে পাঁচটাকা, দশটাকা,
নাতির জন্য কিনে আনা
একটা বান-পাঁউরুটি বা
মিষ্টি দুখানা।
সত্তর পেরোনো বুড়িটার
বিনি সুতোর বসন্ত
শিমূল তুলোর বল---
সম্বল বলতে,
রাত-বিছানায় নাতিটার সাথে
একটুখানি খুনসুটি,
অনেকখানি জাপটা-জাপটি,হুটোপুটি।

Tuesday, February 14, 2017

অনুভূতিই আনন্দের সাগর 
প্রশান্ত কুমার ঘোষ 

প্রত্যেকের বোধ বিভিন্ন 
আমরা যদি একটি গাছের দিকে তাকাই তাহলে প্রত্যকের পৃথক উপলব্ধি হয় ,
একদিন বৈশাখের পড়ন্ত বিকালে কয়েকজন বন্ধু মিলে প্রকৃতির কোলে বসে আছি।প্রকৃতির বুকে গাছেরা  সৌন্দর্যের হাতছানি দিয়ে চলেছে।একটি সুবৃহৎ আম গাছের পাশে আমরা সকলে গেলাম।আপ্লুত হলাম তার যৌবনের  ইশারায়।আমি রূপের ত্বিষামে হাবুডুবু খেয়ে বললাম,একটা কাব্য লেখা যাক।পাশেই কালু একটা ঢিল কুড়িয়ে বললে রেখে দে তোর কাব্য ,ওর লাল হয়ে পেকে থাকা ফল গুলি আমার রসনেন্দ্রীয়কে বড্ড আকৃষ্ট করছে বলেই ঢিল টি ছুঁড়ে দিল,আম পড়লে শুরু করল তৃপ্তি পেতে।আর এক বন্ধু ঝন্টু বললে সারাদিন গরমের পর এই গাছের ঠান্ডা বাতাসে বসে প্রাণটি জুড়ে গেল ,আমি একটু আরামে বসি।ভোলা বলে এই গাছটা যদি বিক্রি করে তাহলে আমি কিনব,নিজের প্রয়োজনে লাগিয়ে বাকিটা বিক্রি করলে একদিকে কিছু লাভ হবে আবার বাড়ির আসবাবপত্রও হয়ে যাবে।
    আমি বসে বসে ভাবলাম বাস্তবে যা কিছু আছে তার সবই আমাদের অনুভূতির ফসল।এত সুন্দর পৃথিবীরও সুখ আঁকার অধিকার নেই;নিজের অনুভূতিই নিজের সুখ এঁকে দেয়।বাস্তবটা বোধের ফসল।
        তবে আমাদের অনুভূতি আছে বলেই নদীর গতি বুঝি,বাতাসের বহমান বুঝি ,জীবনের প্রবাহ বুঝি ,আকাশের স্নিগ্ধতা বুঝি ,পাহাড়ের সুউচ্চ দৃঢ়তা বুঝি সবই অনুভূতি,অনুভূতিই জীবন;জীবনের সারমর্ম ,জীবনের স্বার্থকতা ।
                আমাদের বোধ শক্তিই বাস্তবকে স্বর্গ বা নরকে পরিণত করে ।গুছিয়ে জীবনটা চালাতে পারলেই সবে সুখ,সুখেই স্বর্গ লাভ ,জীবনের স্বার্থকতা ।
          নেগেটিভ চিন্তা কে মাইনাস করে সকল কিছুতে পজিটিভ মানসিকতা আনলেই আমাদের যত গ্লানি সব মুছে যাবে ,শিশু হয়ে থাকতে হবে মানে কুসংস্কারের জটা জাল ছিন্ন করে সবেই আনন্দের উপাদান খুঁজতে পারলেই আমরা পরম সুখী।প্রকৃতির সকল কিছুতেই নিজের হৃদয় যুক্ত করে তার যথার্থ মর্ম সঠিক ভাবে উপলব্ধি করতে পারলেই আনন্দের সাগরে স্নাত হতে পারবো ।
"বন্ধু"
--উদয় সাহা

পর্ণমোচী পাতা আমার পিঠ ঢেকে আছে
চোখের নীচে অর্ধবৃত্তাকার খাদ
তোর গোলাপ বাগান আজ অনুর্বর
একটা উদ্ধত বাতাসের গন্ধ সমস্ত জুড়ে--
বিষাক্ত সাপের ছোঁবল আজ এক নেশা
অভিজ্ঞতা আমি বুকপকেটে রাখি
আবেগরা এখনও স্বচ্ছ টলমল
বুকের ভেতর একটা দ্বীপ বলেই জানি।
তোমার তপস্যার ফুল আজ ভ্রূণ
কিন্তু সম্ভাবনাময় --আমি বিশ্বাসী
বাঁকা চাঁদ , কালো অবাক রেখা
উত্তুরে বাতাসকে বিদায়ী চিঠি --
আমায় তুমি শ্রাবণ করে নিও।
তুই কি আমার স্বপ্ন হবি? ________________________ ফিরোজ আখতার _________________ তুই কি আমার স্বপ্ন হবি? হোক না তা আকাশ কুসুম... হোক না তা রঙীন ফানুস... তুই কি আমার সুখ হবি? হোক না তা ভ্রান্তি বিলাস... হোক না তা ক্ষনিক হাওয়া... তুই কি আমার নৌকা হবি? হোক না তা পালহীন ডিঙি... হোক না তা ভঙ্গুর তরী... তুই কি আমার সুবাস হবি? হোক না তা তীব্র পুরুষালি... হোক না তা তিক্ত স্বেদময়... তুই কি আমার যৌবন হবি? হোক না তা নষ্ট আবেগময়... হোক না তা বিষন্ন রূপালী... তুই কি আমার গোধূলি হবি? হোক না তা ধুলোয় ধূষরিত... হোক না তা সাঁঝের অন্ধকার... তুই কি আমার দিগন্ত হবি ? হোক না তা অস্পষ্ট রেখাহীন... হোক না তা ধরায় অবনত...
ছুঁয়ে থাকি মন্দিরা ঘোষ তোমাকে ছুঁয়ে থাকার আনন্দে রাত ভোর হয়; সকালবেলা চায়ের কাপে বাষ্পীয় সম্পর্কের লেনদেন চলে। সংসার ছুঁয়ে থাকে পায়ে পায়ে সারাবেলা; ভাবনার টানাপোড়েনে দৃশ্যত গড়ে ওঠে আত্মিক লেনদেন। তীব্র অনাদর ও পথ পাতে অসীমের শূন্যতায়। এস অলৌকিক মেলামেশা শুরু করি অতলান্তিকের গভীরে আরেকবার

Sunday, February 5, 2017

জল ছবি আবীর কান্তি পাল জল ছবি ভেসে চলে ,দু চোখের কোলে ,টুপ টুপ গ'লে ! সেই জলে স্নান করে তুমি চলে গেলে ! আমি এখন ফাঁকা বোতল,,, দড়িতে ঝোলানো প্যান্ট হয়ে দুলি বাতাসে, হাল্কা হয়ে ! জল ঝরা বুক জল ঝরা মুখ ,জল ঝড়া তোমার ওই চিবুক ! চাপকে চলি দু বেলা বুক ,বুকের ভেতর হৃদয় আমার বানভাসি ! বাংলার মুখ ,স্বতন্ত্র প্রহরী ,তবুও প্রবেশ করে চলছে লাখে লাখে আগুন্তক ! ছোট্ট ছোট্ট আগুন লেগেছে দেশলাই কাঠির মুখ ,ভয়ংকর হয়ে ফিরে যাবে একদিন ,পোড়াবে জল ছবির মুখ ! তিলে তিলে অচেনা শহর অচেনা গ্রাম তবুও হেটে চলি সবাই অবিরাম , একটি আয়না দেখায় না পরিচিতের মুখ ,সকলেই যেনো খেলা করে অব্যাক্ত ভাষায় ,অথচ কি ভয়ংকর ওদের মুখ ! প্রতিবাদ চুপ ,জলে ভেসে চলে সকলের জল ছবি ,একে একে একই রূপ !
              ক্ষুধার পদোন্নতি
                   শিবু

আগুনের উল্লাসে লুকিয়ে থাকা উত্তাপ বেরিয়ে আসে
অর্ধদগ্ধ দেহ-যন্ত্রনা মুক্তি খোঁজে অব্যক্ত আওয়াজে
ফেটে পড়ে চারিদিকে
ছাই হতে বাঁধা নেই শুধু উড়ে যেতে মানা বাতাস কণার সাথে।
প্রগতির প্রলেপ মেখে এখনও আদিম রসাস্বাদ রক্তিম জিভে লেগে আছে
আর ম্যারিনেট করা চিকেনের তন্দুরিকরনের মধ্য দিয়ে আমাদের
ক্ষুধার পদমর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে শুধু

মনের উল্লাসে গোপন খেলারা বেরিয়ে আসে

কেউ কাঁদে কেউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অট্টহাসে ।

Friday, February 3, 2017



শালুক সময় রাহুল গঙ্গোপাধ্যায়

ব্যস্ততা বাড়াচ্ছ।এটাই জীবন ও চাকার মিল। শিশির।ঋতু।বৃষ্টি।জল।জলের চাপ। কারুর কোনো ব্যস্ততা নেই।হচ্ছে না প্রাক-রতি। বিশেষজ্ঞ বলেন - গর্ভনিরোধক পিলের কুসুম। ফুল বলে - পাপড়ি হারিয়ে বড্ড ক্লান্ত প্রিয়। আমাদেরও কোনো ব্যস্ততা নেই।আজ অমাবস্যা। লাল শালুকে সর্বনাশ বাড়ে।।

বুনোহাঁসের ডানা 

শ্যামলী সেনগুপ্ত

বুনো হাঁসের ডানায় ভর করে 'সে'আসে।কর্কশ রুক্ষ কন্ঠে হাঁক পাড়ে-'সময় হয়েগেছে।চলো,চলো।আর একমুহূর্ত দেরি নয়।তোমার কাল ফুরিয়েছে-এবার কালযাত্রা।'প্রাণটি ছটফটকরে,বেরোতেচায়,সাড়া দিতেচায় বুনো হাঁসের ডাকে।আধার হাত জোড়করে-'যাস নি,দোহাই তোর,এখনি যাসনে।ঐ যে তোর আপনজন,তোর ভালবাসার মানুষজন---ওদের চোখে  জল,মুখ বিষণ্ণ,বুকে হাহাকার।বুক চাপড়ে বুনোহাঁস কে ফিরেযেতে বলছে।'
            সম্ভবত,হৃদয় বিদারক হাহাকারকে সামান্য মর্যাদা দিয়ে বুনোহাঁস নিজের ডানা খুলে সরিয়ে রাখে একপাশে,কিছুটা বিরতি---যেতে তো হবেই।
           'জন্মিলে মরিতে হবে
            অমর কে কোথা কবে'
        মধুকবি না বললেও এই সারসত্য সকলে জানতো।তাঁর জন্মের আগেও জানতো।তিনি শুধু আমাদের চেতনাকে জাগিয়ে দিয়েছেন।কিন্তু সেই জানা আর এই জানার মধ্যে অনেক বিষাদ,অনেক চোখেরজল,অনেক আশার বিনাশ।
               তবু কেউকেউ মৃত্যুকে বড় ভালোবাসে।মৃত্যু যেন শ্যামময়   অথবা শ্রীরাধার হাতছানি।পথজুড়ে দাঁড়ানো কালো জটিলতার মুখোমুখি হতে ভয়পায়,আর ভালোবেসে গলায় পরেনেয় ফাঁস,ঠিক যেভাবে কবরীতে জড়ানো থাকে যুঁইএর মালা।মৃত্যুর কাছে সমর্পণ করে নিজেকে।মরেবাঁচতে চায়।
                 আর,যে সত্যিই বাঁচতে চায়,অথচ তিলে তিলে মৃত্যুদূত তাকে নিয়েচলে যমের দুয়ারে!বছর বছর বোনটি তাকে ফোঁটা পরিয়েছে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায়।ফোঁটা দিতে দিতে বিড়বিড় করে আউড়েছে '---যম দুয়ারে দিলাম কাঁটা--'তবু কি ছাড় পেলো যমযাতনা থেকে!সারা শরীরে হেঁটেবেড়াচ্ছে এক অশান্ত বিছে-লেজ উঁচিয়ে দাপটে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর প্রতি মুহূর্তে হুলটি গেঁথে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছে।কর্কট আক্রান্ত মানুষটি নার্সিংহোমের বিছানায় শুয়ে একইসঙ্গে আত্মীয়জন ও মৃত্যুর অপেক্ষায়---বারেবারে দরজায় চোখ যায়-এই বুঝি এলো!এলো কি কেউ!এক এক করে চেঁছেফেলা হচ্ছে বাড়তি কোষ,ছেঁটে ফেলাহচ্ছে  আক্রান্ত প্রত্যঙ্গ--সাদা অ্যাপ্রনের প্রশান্ত মুখের আড়ালে শমনের বিকট ছায়া।মুখব্যাদানকরা সেই ভয়ংকর রূপ কল্পনা করতে
করতে মনেপড়েযায় প্রিয়,প্রিয়তম মানুষের কথা,বাবা-মা  ভাইবোন  আত্মীয়-বন্ধু  জীবনসঙ্গিনীর চিন্তাভারাক্রান্ত মুখের সাদা-কালো ছবি।কোথাও বুনোহাঁস ডেকেওঠে--তবে কি শীত এসেগেলো!ঝরেযাবে সব পাতা!প্রায় ঠুঁটোগাছটির মাথার ওপর দিয়ে পরিযায়ী হাঁসের কর্কশ ডাক আকাশ চিরে ভেসেআসে,বেডের পাশের জানলার দুধসাদা পর্দা সরিয়ে যেন ঢুকেই পড়বে 'সে'।ক্রমশ এগিয়ে আসে শেষদিন,ততোই পা গেঁথেযায় সংসারের আনাচেকানাচে---প্রিয় খাট,নরম কম্বল,আলো ঝলমলে ব্যালকনি,মেলা থেকে কেনা হলুদ গোলাপ আর ফুলেফুলে ছেয়েথাকা মোতিয়া-বেলীর গাছদুটি পিছু টানে।ক্রমশ ফুরোতে থাকে একটা জীবনের গল্প।

                                                   [২]
                পেরিয়েগেল আরেকটি জন্মদিন।একইসঙ্গে বিজয়া ও জন্মদিনের প্রণাম জানাতেই আমার সেজমামীমা বলে উঠলেন--'আয়ুষ্মতী হও।'আমি মাথা ওঠাই।কী ভাবে!একেকটি জন্মদিন তো আমাদের জীবন রেখাটিকে একবছর ছোট করেদেয়!এগিয়েচলি মৃত্যুর দিকে।তবে এই আশীর্বাদের কী মানে?আসলে জন্মেই তো মৃত্যুর দিকে এগোতেথাকি প্রতি পলে-অনুপলে।পায়েস,কেক,পাঁচভাজা,পোলাউ,মাছ-মাংস  এসব তো ছেলেভোলানো ছড়ার মতো।হাঁউমাউ করে যেন ব্যঙ্গ করে--'খায়্যা লও  খায়্যা লও,দু'দিন বৈ তো নয়!'
                 মৃত্যু নিয়ে এই ভাবনা বেশ বিলাসী।পোলাউ খেতে খেতে ভাবছি,মৃত্যুর দিকে একধাপ এগোলাম।সুস্থ শরীরে আত্মীয়জন পরিবৃত হয়ে এসব ভাবনা ভাবতে বেশ ভালোই লাগে!

                                                   [৩]
                  ভালোবাসার চরম উৎকর্ষে পৌঁছে দয়িতা বলেওঠে'আমাকে মেরেফেলো'---সে ও মরতে চায়।এ বড়ো সুখের মরণ!বুনোহাঁসের ডানায় ভর করেআসে ঐ উদ্দাম মরণ।চরম উৎকর্ষে পৌঁছেদেওয়া সেই মৃত্যুই বুনেদেয় একটি জীবনের বীজ-একটি জন্মের প্রস্তুতি।

                                                    [৪]
                 অসুখ থেকে সুখ---সব মৃত্যুতেই বুনো হাঁসের পৌরুষ প্রকট হয়।তার ডানা ঝাপটানোর শব্দে শেষবারের মতো খুলেযায় চোখের পাতা।উদ্ভাসিত হয় কনীনিকা,কিন্তু কেমন যেন উদাসীন,নিষ্প্রাণ,ঘোলাটে,প্রত্নপ্রাচীন সেই দৃষ্টি।
                  মৃত্যুর দিকে এক পা এগিয়ে ,আশীর্বাদের হাতদুটি মাথায় ছুঁইয়ে জন্মদিনে পাওয়া উপহারের মোড়ক খুলতে থাকি একটি একটি করে  আর আনন্দের সঙ্গে বিষাদও বাসা বুনতেথাকে শরীর ও মনে।আমি কান খাড়া করি-পরিযায়ী বুনো হাঁসের ডানার শব্দ শুনতে-----
                             ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

Thursday, February 2, 2017

দ্বিতীয় আমি শুভ্র ঘুমনোর চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি না। অবচেতন মন থেকে খুব স্ট্রং একটা সিগনাল আসছে। আজ দুপুরে ঘুমানো যাবে না। বড়সড় একটা ক্ষতি হতে পারে। কি ক্ষতি ক্যানো ক্ষতি জানি না। জানলা গলে রোদ আসছে। পায়ে রোদ্দুর। শীতের শেষ বিকেলে বেশ ভালো লাগছে উষ্ণতাটুকু। ঘুম আসছে। যেকোন মুহূর্তে গভীর ঘুমে ডুবে যেতে পারি যদিও আমি চিন্তিত। কিন্তু ক্যানো! যখন ঘুম ভাঙলো ততোক্ষণে সন্ধে হয়ে গ্যাছে। ঘরে অন্ধকার। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমি দুপুরের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করছি। গত বুধবার নেত্রকোনা থেকে একটা কাজের মেয়ে নিয়ে আসেন বাড়িওয়ালা। আমার প্রতি ভদ্রলোকের অনেক প্রেম। ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে। তার দুটি কন্যাসন্তান আছে। আচ্ছা মেয়েটার কথায় আসা যাক। মেয়েটির নাম কী! মনে পড়ছে না। প্রয়োজনও নেই। রান্নাঘরে ঢুকেই দেখি মেয়েটি কাঁদছে। কান্নার তোড়ে একেকবার শরীর ফুলে ফুলে উঠছে। আমি ডাক দিলাম নেত্রবতী। মনে পড়লো নেত্রকোনা থেকে আসার কারণে ওর নাম রেখেছিলাম নেত্রবতী। তুমি কাঁদছো ক্যানো? মেয়েটি আমায় দেখে কোণার দিকটায় সেঁধিয়ে গ্যালো। অস্পষ্ট ভাবে শুনতে পেলাম, খুব ব্যথা। আমি আর এগোলাম না। চলে এলাম। সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। 'এক কাপ চা দাও' - চেঁচিয়ে বোললাম। মেয়েটির চিন্তা আবার মাথার মধ্যে আসলো। যদিও ডাক্তার বেশি চিন্তাভাবনা করতে নিষেধ কোরেছেন। তাদের মতে আমি নাকি পাগল হয়ে যাচ্ছি। যদিও তারা তা বলেননি। বলেছেন ডুয়েল পার্সোনালিটি। আমার মধ্যে দ্বিতীয় আমি। যা হোক, মেয়েটির সাথে আমি কী করেছি! তার নাম কী! 'এই নেন চা', একটা সরু হাত বেশ কিছু দাগ। লালচে রক্ত জমে আছে। মেয়েটির দিক তাকাতেই ভয় পেয়ে গেলাম। মুখ অসম্ভব ফুলে আছে। চোখের নিচে কালচে হয়ে আছে। মেয়েটি সহজভাবে বললো চাচা, আমি বাড়ি যাবো। বেশ অনেকগুলোবছর পার হয়ে গ্যাছে। নেত্রবতী না কিজানি নাম মেয়েটির। ভুলে গ্যাছি। আজ আবার বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক একটা মেয়ে নিয়ে এসেছেন। যদিও খুবি কম বয়স। তবুও আমার খুব খুশী খুশী লাগছে। আজকাল আনন্দটা লুকিয়ে রাখতে পারি না। বাড়িওয়াল হাত কচলে বললো মিয়াভাই, গতবারের টাকাটা দেওয়া হয় নাই। আমি হো হো করে হেসে উঠি। বয়স হয়ে গ্যাছে বুঝলেন। আচ্ছা মেয়েটি কোথাকার? নেত্রকোনা। মেয়েটি উত্তর দেয়। খুব চেনা গলা।