বিশ্ব রঙ্গমঞ্চের বিবর্তন-কথা
দীপায়ন ভট্টাচার্য
আবহমান কাল থেকে মানুষের হৃদয়-অন্দরে রয়েছে তীব্র প্রকাশমানতা। সে সৃষ্টির ডানায় ভর করে আপনার গন্ডিটুকু ছাড়িয়ে যেতে চায়। অন্তরে তার অব্যক্ত অনেক কথা। সৃজনের মাধ্যমে চায় অন্যের কাছে নিজের বার্তাটুকু পৌঁছে দিতে। আদিম মানুষ বিচিত্র গুহাচিত্রে সে কাজ শুরু করেছিল। স্পেনের আলতামিরা, ফ্রান্সের ত্রোয়া ফ্রের বা ভারতের ভীমবেটকা গুহায় তার জলছাপ তো পাথরের দেওয়ালে এখনও দৃশ্যমান। আজকের মানুষ তাদের সেদিনের কথা হয়তো সবটুকু বোঝে নি। কিন্তু প্রকাশমানতার সেই ধারাকে বিকাশের পথে আজও ছুটিয়ে নিয়ে চলেছে। সুদূর অতীতের মিশরীয় কি মেসোপটেমীয় সভ্যতা, ব্যবিলন- রোম কি গ্রীস সভ্যতা, সিন্ধু বা চিন সভ্যতা, মায়া অথবা অ্যাজটেক সভ্যতা – সবখানে এই প্রকাশব্যাকুলতার চিহ্ন। আজও কেউ যদি অজন্তা-ইলোরার গুহার অভ্যন্তরে গিয়ে দাঁড়ায়, কোনারক বা খাজুরাহো মন্দির গাত্রে চোখ রাখে, পিরামিডের চুড়োয় বিস্মিত দৃষ্টি পাঠায়- অতীতের সৃষ্টি-যাদুকরদের আত্মপ্রকাশের বৃন্দগান যেন ঠিক শুনতে পায়।
মানুষের সৃষ্টি যখন উপভোক্তার সমীহ আদায় করবার পর্যায়ে উন্নীত হল, তখন তাকে ভালো করে দেখে-শুনে নেবার সুবিধে পেতে সৃজন-মুহূর্তকে বিশেষ দ্রষ্টব্য স্থানে স্থাপনের জন্যে কলারসিকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হল। এ তো অবশ্যম্ভাবী – যারা গড়ে না, তারাও অনুপুঙ্খভাবে দেখতে-শুনতে চায়। তার অন্তর্লীন শিল্পীসত্তা সৃজনের আনন্দ প্রাণভরে উপভোগ করতে চায়। সৃষ্টি করে স্রষ্টা যে আনন্দ পেয়েছে দ্রষ্টা হয়ে সেই আনন্দকে ছুঁয়ে দেখতে চায়। এ থেকেই পৃথিবীর নানা প্রান্তে শুরু হয়ে গেল মঞ্চ তৈরির উদ্যোগ। গ্রীসে অঙ্গনমঞ্চ প্রাধান্য পেলেও রোমে নাটমঞ্চের মতই উঁচু বেদী তৈরি হল অভিনয়ের জন্যে। ভরতের নাট্যশাস্ত্র থেকে জানা গেল প্রাচীন ভারতে নাট্যাভিনয়ের উদ্দেশ্যে তিন ধরনের রঙ্গালয়ের প্রচলন হয়েছিল – বিকৃষ্ট (আয়তাকার বা Rectangular), চতুরস্র ( বর্গাকার বা Square) এবং কনীয় বা ত্র্যস্র ( ত্রিভুজাকার বা Triangular)। এগুলোর নানা স্তরের জন্যে নানা সূক্ষ্ম মাপজোখের বিধান ছিল। এর দর্শকদেরও নাট্যভাষায় সুসংস্কৃত হতে হত। ফলে এ ধরণের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে আম-জনতার প্রবেশাধিকার কতটা ছিল তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। হয় তো শাসক ও অভিজাতবর্গই ছিল প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে ভাস, ভবভূতি, কালিদাসের নাটকের দর্শক ও পৃষ্ঠপোষক। ছত্তিসগড়ের সীতাবেঙ্গা গুহাটি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম রঙ্গমঞ্চ বলে অনেক নাট্যতাত্ত্বিক মনে করেন। প্রাচীন ভারতীয় রঙ্গমঞ্চে পরিবেশিত নাট্যরীতি প্রসঙ্গে এখানে দু’চার কথা বলে নেওয়া যাক ।
• পূর্বরঙ্গ – যবনিকা ওঠার আগে গায়ক ও বাদকদলের সমবেত হওয়ার পর সংগীত পরিবেশিত হত।
• ধ্রুবা – নাট্য সংগীত। ধ্রুবা ৫ প্রকার – প্রাবেশিকী (প্রবেশের সময়)। নৈষ্কামিকী (প্রস্থানের সময়)। আক্ষেপিকী (বন্দিদশা, রোগাক্রমণ, মৃত্যু প্রভৃতি সময়)। প্রাসাদিকী (উত্তেজিত দর্শকচিত্তকে শান্ত করতে)। অন্তরা (প্রধান চরিত্রগুলির বিষাদ, উদাসীনতা ও ক্রোধের অবস্থায়)। ধ্রুবাগীতিগুলির মধ্য দিয়ে চরিত্রের মানসিক অবস্থা বা নাট্যসময়ের সংকেত দেওয়া হত।
• জর্জর দন্ড প্রতিষ্ঠা - জলভরা সোনার কলস নিয়ে সাদা পোশাক পরিহিত, সাদা ফুল সাথে সুত্রধার ও তার দু'জন সহকারী প্রবেশ করে ব্রহ্মার উদ্দেশ্যে প্রণাম নিবেদন করতেন। পরে এদের দ্বারাই জর্জর দন্ড প্রতিষ্ঠিত হত।
• নান্দীপাঠ - দেবতা, রাজা, ব্রাহ্মণ, নাট্যকার, প্রয়োগকর্তার প্রশংসা সম্বলিত নান্দীপাঠ করতেন সূত্রধার। তারপর তার সহকারী বা বিদূষকের ডাক পড়ত। সংলাপের মাধ্যমে নাটকের বিষয়বস্তু ঘোষণার পর এরা সবাই মঞ্চ ত্যাগ করত। এখানেই পূর্ববঙ্গের চূড়ান্ত সমাপ্তি। ভরতের কঠোর নির্দেশ - পূর্বরঙ্গ যেন দীর্ঘস্থায়ী না হয়।
• প্রস্তাবনা- 'নান্দ্যন্তে সূত্রধার'। সূত্রধারই 'প্রস্তাবনা' করে নাট্যারম্ভ করিয়ে দিতেন। দর্শকদের কাছে নাটকের পরিবেশ পরিস্ফুট করতেন। কখনো বা পাত্রপাত্রীর পরিচয় দিতেন বা তাদের প্রবেশ বিষয়েও উল্লেখ করতেন।
মূল নাটক শুরু হত এসব রীতি-রেওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়ে যাবার পর। এদেরই বিপরীত মেরুতে লোকশিল্পীরা পথকেই নাট্যমায়াতে মোহিত করে চারণিক রূপে স্থানে স্থানান্তরে ছুটত শিল্পের ফুল ফোটাতে। সব রকমের বাঁধনেই এদের অনীহা ছিল, তাই মঞ্চের বাঁধনও সযত্নে এড়াতে পেরেছে। ইংলন্ডে অবশ্য এলিজাবেথিয়ান থিয়েটারে সাধারণ দর্শক প্রবেশমূল্যের বিনিময়ে প্রবেশাধিকার পেয়েছিল আমাদের আগেই। সে যাক – মঞ্চ পাবার পর মানুষ বুঝল, এ আশ্চর্য এক দেশ। এর কোণে কোণে ছড়িয়ে রয়েছে অদ্ভুত রহস্য। এখানে কোথা থেকে যে কী হয়ে যায় আগে থেকে আঁচ করাই যায়না। এই মঞ্চই তো অভিনেতাদের স্বপ্ন। শুধু অভিনেতাই বা বলি কেন – নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, যন্ত্রসংগীতশিল্পী, আবৃত্তিকার, মূকাভিনেতা, হরবোলা, বক্তা – সবারই মনের গহীনে লুকিয়ে রয়েছে মঞ্চাবতরণ করে সমবেত দর্শকদের মনে স্থায়ী রেখাপাত করবার অভিলাষ। তাদের দীর্ঘদিনব্যাপী একনিষ্ঠ অনুশীলন তো মঞ্চে ওঠার স্বপ্নিল দিনগুলোর দিকে চেয়েই। নিজের অভ্যন্তরের সৃষ্টিবীজের তারা যত্ন নিচ্ছে তো এই মঞ্চের উর্বর ক্ষেত্রে সোনালি ফসল ফলাবার জন্যেই। মঞ্চ সত্যিই এক মায়াভুবন। দিনের অন্তিম আলো দিনান্তে মিলিয়ে যাবার পর মঞ্চে যে আলোর জোনাকি ফুটে ওঠে, শিল্পীর অন্তরাঙ্গনে তা বয়ে আনে হাজার সূর্যের দীপ্তি। ওই আলোকরশ্মিতে স্নাত হতে হতেই সে সৃষ্টিসুধা নির্মাণে মগ্ন হবে। মঞ্চশিল্পীর নিপুণ করস্পর্শে এই মঞ্চেই ফুটে উঠবে স্থাপত্যের নানা আলপনা। তার যাদুকাঠিতে এই মঞ্চ কখনো হবে ঘর, কখনো ঘন অরণ্য, কখনো ধূসর মরুভূমি, কখনো ধূ ধূ প্রান্তর বা স্নিগ্ধ নদীতীর – আবার কল্পলোকের স্বর্গ হতেও তার কোন বাধা নেই। দর্শকাসনে উপবিষ্ট দীনের চেয়েও দীন যে ব্যক্তি, এই মঞ্চে রাজপ্রাসাদ গড়ে উঠলে তিনিও হবেন তার অংশীদার। আবার মঞ্চে রণক্ষেত্র তৈরি হয়ে গেলে দর্শকের নিরপেক্ষ থাকার কোন সুযোগ নেই – তাদের মন স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই তখন ঢলে পড়ে ন্যায়ের পক্ষে। অন্যদিকে এই মঞ্চেরই বিভিন্ন তল বা উপকরণে যখন মঞ্চালোক পিছলে যায়, তখন দর্শকমনে তার প্রতিক্রিয়ায় ওঠানামা করতে থাকে অনুভূতির উথাল-পাথাল ঢেউ। মঞ্চমায়ার এই তো তেজ — ক্ষীণতেজা মানুষকেও সতেজ করে তুলতে তার জুড়ি নেই।
আজকের কথা তো নয়, প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরোনো দিনে গ্রীস দেশের এথেন্স নগরীর উপকন্ঠে এ্যাক্রোপোলিস পাহাড়ের গায়ে খোলামেলা ডাওনিসাস থিয়েটারে প্রায় তিরিশ হাজার দর্শক এসে জড়ো হয়ে বসতেন নাটক দেখবার আশায়। অতীতের সেই দুর দিগন্তে নাটকের সাথে জুড়ে থাকত ধর্মাচার। কৃষি ও সুরার দেবতা ডাওনিসাসের মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা হত। ওই এ্যাক্রোপোলিস পাহাড়ের মাঝে অর্কেষ্টা পিট, তাকে ঘিরে পাহাড়ের গায়ে ধাপে ধাপে কাটা অর্ধবৃত্তাকার দর্শক গ্যালারি। সামনের সারি পুরোহিতদের জন্যে সংরক্ষিত। গ্রীসের এপিডোরাস থিয়েটার অঙ্গনে অর্কেষ্ট্রার মাঝখানে দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে কথা বললেও দর্শকাসনের শেষপ্রান্তের দর্শকেরাও তা স্পষ্ট শুনতে পেতেন। অর্কেস্ট্রা নির্ধারিত ছিল কোরাসদের জন্যে। নাটক শুরুর আগে অর্কেস্ট্রার বেদীতে পুরোহিতদের নেতৃত্বে হত কিছ ধর্মীয় কৃত্য। পূর্বোল্লিখিত শোভাযাত্রায় এফিবোই অস্ত্রসজ্জিত হয়ে থাকতেন পুরোভাগে। শোভাযাত্রাটি আকাদেমিতে এসে পৌঁছোলে অর্কেস্ট্রাসংলগ্ন বেদীর ওপর মূর্তিস্থাপন করা হত। তারপর তার সামনে হত যাগযজ্ঞ, প্রার্থনা, পশুবলি ও নাচগান। গাওয়া হত ডিথিরাম্ব স্তুতিগীতি। এই গীতিতে বলা হয়েছিল ডাওনিসাসের জন্ম, মৃত্যু ও পুনর্জন্মের উপাখ্যান। সেকালের নাট্যতাত্ত্বিক আরিস্টটলের মতে, এই ডিথিরাম্ব থেকেই এথেনিয়ান ট্র্যাজেডির উৎপত্তি। অর্কেস্ট্রা পিটে এসে দাঁড়াত সমবেত সঙ্গীতদল বা chorus. কোরাসদলের নেতার গায়ে মূল্যবান পোশাক, উঁচু গোড়ালিযুক্ত জুতো (কোথর্ন), মাথায় রাজমুকুট-তুল্য উন্নতশীর্ষ মুখোশ। গ্রীসদেশের মানুষের মনে গাঁথা ছিল এই ধারণা যে, শীতকালে প্রকৃতির জীবনীশক্তি শুকিয়ে যায়, গ্রীষ্মে আবার তা পুনর্জীবন লাভ করে। এই ঋতুচেতনা থেকেই মার্চ মাসের শেষদিকে হত পাঁচ-ছ'দিনের ডাওনিসাস উৎসব – যেখানে পরিবেশিত হত ট্র্যাজেডি নাটক আর জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে অনুষ্ঠিত হত দু' তিন দিনের লেনাইয়া উৎসব – যা ছিল কমেডি নাটক প্রদর্শনের জায়গা – সবই ওই আলোচ্য ধরণের রঙ্গস্থল-কেন্দ্রিক। ৫৩৪ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে পেইসিসট্রোটাসের উদ্যোগে পৃথিবীর প্রথম যে নাট্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল, তা-ও এই ধাঁচের রঙ্গমঞ্চে। এখানেই বিশ্ববিখ্যাত নাট্যকার ইস্কাইলাস, সোফোক্লিস, ইউরিপিদিসের নাটক দেখেছেন গ্রীসদেশের দর্শকবৃন্দ।
রোমে খ্রীষ্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতেও হাল্কা চালের কৌতুকনক্সা (কমেদিয়া দেল আর্তে) পথে পথে ঘুরে ঘুরে পরিবেশিত হত। গ্রীসদেশ রোম দখল করবার পর দখলদার দেশের উন্নততর সংস্কৃতির প্রভাবে রোমান নাট্যচর্চা উন্নত হয়। ধর্মাচরণ জড়িত ছিল রোমান থিয়েটারের সঙ্গেও। তবে দেবদেবীর প্রভাব খর্ব হযে যখন রাজারাজড়ার প্রভাব বিস্তারলাভ করতে লাগল, তখন নাট্যানুষ্ঠানের ধরণও বদলে যেতে লাগল। রোমের প্রাচীন থিয়েটার ছিল পম্পেই আর মার্শেলাস শহরে। অভিজাতেরা নিয়ন্ত্রক ছিল গ্রীক থিয়েটারের আর রোমান থিয়েটারে প্রাধান্য হল ক্রীতদাসদের। রোমান রঙ্গমঞ্চে অর্কেস্ট্রা বা সেখানকার বেদী বাদ গেল। উঁচু মঞ্চে খোলা আকাশের নিচে অভিনয় হতে থাকল। আগে অনুষ্ঠানের দিন অস্থায়ী রঙ্গমঞ্চ তৈরি করে নাট্যানুষ্ঠান হয়ে যাওয়ার পর আবার সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হত, পরে মন্দির, প্রাসাদ প্রভৃতি স্থাপত্যকীর্তি নির্মাণের প্রচলন হওয়ার সাথে সাথে নগরে স্থায়ী রঙ্গমঞ্চু তৈরিও শুরু হয়ে গেল। সামাজিক প্রতিষ্ঠা অনুযায়ী প্রেক্ষাস্থলে বসবার আসনের আগু-পিছু নির্ধারণ করা হতে লাগল। অর্কেস্ট্রার নামটা বজায় রইল তবে সে জায়গাটা নির্ধারণ করা হল সেনেটরদের বসার জন্যে। বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি আর রাজ-পরিবারের কিছু সদস্যের এখানে বসবার সুযোগ ছিল। অর্কেস্ট্রার পেছনে ১৪টি সারির মধ্যে নাইটরাও বসতে পারতেন। অবিবাহিত নরনারীর চেয়ে বিবাহিত নরনারীদের স্বাচ্ছন্দ্যকর বসবার স্থান দেওয়া হত। থিয়েটার হলে দর্শক হিসেবে ক্রীতদাসদের প্রবেশাধিকার ছিল না, কিন্তু নাটকে ভাড়াটে অভিনয়শিল্পী হয়ে এরাই দেখা দিত বারবার। কিছু মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদিও এদের সাথে জুটে যেত। কৌতুকাভিনয়, মূকাভিনয় আর লোকসংস্কৃতি থেকে তুলে আনা 'আতেল্লানা' দর্শকমহলে সমাদৃত হত। ইতালিতে বাতির সামনে রঙিন জলের বোতল স্থাপন করে, পেছনে আয়না জুড়ে আলোর হেরফের ঘটিয়ে আলোকসম্পাতের নানা পথ খোঁজা চলত এই সময়ে। পার্মা শহরের ফারনিস থিয়েটারেই প্রথম মঞ্চের সামনের অংশ 'প্রসেনিয়াম', 'আর্চ' আর 'কার্টেন' দিয়ে ঢাকা হল – এভাবেই সূত্রপাত পিকচার ফ্রেম স্টেজের।
ষোড়শ শতাব্দীর লন্ডনে সরাইখানার প্রাঙ্গনে মঞ্চ বানিয়ে নাটক হত, মুক্তাঙ্গনেও পরিবেশিত হত 'কর্যাল' থিয়েটার। 'কর্যাল' বলতে বোঝায় সারি সারি বাড়ির পেছনে আবর্জনা ফেলার জায়গা। ১৫৭৬ সালে প্রথম এলিজাবেথের রাজত্বকালে ইংল্যান্ডে প্রথম সাধারণ রঙ্গমঞ্চ স্থাপিত হয় – নাম তার ‘দি থিয়েটার', নির্মাতা একজন কাঠমিস্ত্রি জেমস বারবেজ। আবার তিনি অভিনেতাও বটে। থিয়ে- টারের বিরুদ্ধে তখন কিছু অভিযোগও উঠে যাচ্ছিল। যেমন, সেখানে দর্শকদের ভিড়ে চোরেরা হাতসাফাই করে, প্রোটেস্ট্যান্ট আর ক্যাথলিকদের দাঙ্গাহাঙ্গামাও ঘটে, দর্শকদের ভিড়ে সেই আমলের বিভীষিকা প্লেগ মহামারীর সংক্রমণও ছড়াতে পারে, আর ছোঁড়া হল নৈতিকতার বাণ – নাটক দুষ্কর্মে প্ররোচনা যোগায়। রানি বা রাজন্যবর্গ অবশ্য এসব নালিশে কর্ণপাত না করে নাট্যচর্চার পৃষ্ঠপোষকতাও করতেন। এলিজাবেথিয়ান থিয়েটারে অভিনেতাদের ব্যবহারের জন্যে পেছনে দু'দিকে দুটি দরজা, ওপরে বারান্দাসহ মঞ্চ, দর্শকদের যাতায়াতের জন্যে বড় দরজা আর তিন দিক জুড়ে ছিল গ্যালারি। মঞ্চের অর্ধেকটা সামনের খোলা প্রাঙ্গণের দিকে এগিয়ে থাকত। এলিজাবেথিয়ান রঙ্গমঞ্চে অভিনয় ক্ষেত্র ৭টি – মূল মঞ্চ, একই উচ্চতায় অন্দর-মঞ্চ, তোর দুপাশে দুটি জানালাযুক্ত দুই মঞ্চ, উঁচুতলায় বাদকদের জন্যে জায়গা।
চীনা রাজাদের নির্মিত প্রাচীন মন্দিরে প্রার্থনার সময় পতাকা, পালক ও অন্যান্য উপকরণ নিয়ে লোকেরা নাচগান করত। বলা হয়, তা থেকেই চীনা নাটকের উদ্ভব। এসব নাটকে কোরাস, বাদ্যযন্ত্র, কথ্যভাষা, দৃশ্য, অঙ্ক এসব ছিল – যেগুলো এসেছে গ্রীক নাটক থেকে। নাটকে দেবদেবী থেকে সম্রাট বা দাসদাসীরাও চরিত্র হিসেবে আসত। তবে চীনদেশের তখনকার আইনে কিন্তু সম্রাট, সম্রাজ্ঞী ও মহামানবদের চরিত্রচিত্রণ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ওসব গ্রাহ্য করা হত না। য়ুয়ান রাজবংশের শাসনকাল ছিল চীনা নাটকের স্বর্ণযুগ। সে সময় নাটকের চরিত্রগুলি সংলাপ বলার পাশাপাশি ঘন ঘন গানও গাইত। দৃশ্য বা অঙ্কের পর পর্দা ওঠানামার কোন বালাই ছিল না। শুধু দেহ ভঙ্গিমায় ঘোড়ায় চড়া, নদীতে নৌকোযাত্রা ইত্যাদি বুঝিয়ে দেওয়া হত। কিছু বড় শহরে অল্প কিছু স্থায়ী মঞ্চ ছিল। তার মধ্যে বিশেষভাবে বলা যায় ‘চা-ঘর থিয়েটার'-এর কথা – যেখানে নাটক প্রদর্শনের পাশাপাশি চা-পানেরও ব্যবস্থা থাকত। সেখানকার গ্রামেগঞ্জে ভ্রাম্যমান অভিনেতারা বাঁশের বেড়া আর পাতার ছাউনি দেয়া মঞ্চে নাটক পরিবেশন করতেন।
এখন জাপানে আধুনিক নাটক পরিবেশনের পাশাপাশি ঐতিহ্যশালী 'নো' আর 'কাবুকি’ থিয়েটারও চালু রয়েছে। 'সারগাকু' নৃত্য থেকেই 'নো' নৃত্য-গীতিনাট্যের উদ্ভব। নো প্রধানত নাচ-গানের নাটক। বৌদ্ধ ধার্মিকেরা কিওগেন নামে এক ধরণের ব্যঙ্গ নাটিকাও প্রদর্শন করতেন। নো বা কিওগেন সর্বসাধারণের জন্যে নয়, অভিজাত লোকদের জন্যে। কামারের মেয়ে ইজুমোনো ও-কুনি নো নাটকে ধর্মীয় সংগীতের পরিবর্তে জনপ্রিয় গানের প্রচলন করেন। এ রকম ধর্মনিরপেক্ষ জনপ্রিয় অনুষ্ঠানকে বলা হত শিবাই'। এই শিবাইয়েরই নাম পরে হয়েছে 'কাবুকি'। ইয়েদো শহরে ১৬২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সারুগাজা থিয়েটারই জাপানের প্রথম কাবুকি রঙ্গমঞ্চ । প্রেক্ষাগৃহের এক প্রান্ত থেকে বিপরীত প্রান্তবর্তী মঞ্চের সমান উঁচু পথকে বলা হয় ‘হানামিচি' বা ফুল-বিছানো পথ। ডানদিকেও এ রকম পথ থাকলে তাকে বলে 'কারিবানা মিচি’ বা অস্থায়ী ফুলের সেতু। হানামিচি আর মঞ্চের মধ্যবর্তী জায়গা চিহ্নিত হয়ে আছে 'হাশিগাকারি' বা যোগাযোগ স্থল হিসেবে । কখনও যোদ্ধা চরিত্রের ছোটাছুটির এ জায়গাটা হয়ে ওঠে 'মুশা বাশিরি’ বা যোদ্ধাদের দৌড়ক্ষেত্র। এরই কাছাকাছি থাকে হঠাৎ মঞ্চে প্রবেশ-প্রস্থানের পথ 'ওকুবায়ো গুচি’ বা ভীতুদের গর্ত। 'বুতাই বান' হল মঞ্চাধ্যক্ষের স্থান।
বাংলার মঞ্চকথা এখানে একটু আলোচনা করে নেওয়া যেতে পারে। চর্যাপদ' বা 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর নির্ভর করে বলা যায় – প্রাচীন যুগ থেকেই বাংলায় নাট্যচর্চা ছিল। নেপালের রাজ-গ্রন্থাগারেও পুরোনো বাংলা নাটকের নিদর্শন পাওয়া গেছে। বৃন্দাবন দাসের 'চৈতন্য ভাগবত'-এর তথ্যসূত্র থেকে জানতে পারি – শ্রীচৈতন্যদেবও অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এই নাটকগুলি সবই পালাগান ধাঁচের। কোনো মঞ্চে এগুলি অভিনীত হয়েছে বলেও কোন তথ্য নেই। প্রকৃতপক্ষে প্রাচীন বাংলার কোন আদর্শ রঙ্গমঞ্চ অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয়নি। হয় তো অঙ্গন অথবা মন্দির প্রাঙ্গনই ছিল প্রাচীন বঙ্গদেশের অভিনয়স্থল। আধুনিক থিয়েটারের Picture Frame Stage পরাধীন ভারতে এল ইংরেজদেরই হাত ধরে। সাম্রাজ্যরক্ষার প্রয়োজনে মেসব ইংরেজ স্বদেশ ছেড়ে ভারতবর্ষে আস্তানা গাড়তে বাধ্য হলেন – তারাই মনোরঞ্জনের খাতিরে দেশজ সংস্কৃতিটাকেও এদেশে নিয়ে এলেন। আধুনিক থিয়েটার স্টেজ এল সেই সুবাদে। এর প্রথম নিদর্শন – ১৭৫৩ সালে কলকাতার লালবাজারে প্রতিষ্ঠিত 'প্লে হাউস'। প্রখ্যাত ব্রিটিশ মঞ্চাভিনেতা ডেভিড গ্যারিক এই মঞ্চ প্রতিষ্ঠার কাজে স্থানীয় ইংরেজ উদ্যোক্তাদের সহায়তা করেছিলেন। ১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজদ্দৌল্লার হানায় কলকাতার পতনের পর প্লে হাউস বন্ধ হয়ে যায়। এর পর ১৭৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত 'ক্যালকাটা থিয়েটার' ৩৩ বছর ধরে কলকাতার বুকে টিঁকে ছিল। পরে দেনার দায়ে এটাও স্তব্ধ হয়ে যায়। ইংরেজ প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য নাট্যশালাগুলি হল – মিসেস ব্রিস্টোর প্রাইভেট থিয়েটার ( ১৭৯৭), মিসেস লিচের থিয়েটার, ওয়েলার প্লেস থিয়েটার, দমদম থিয়েটার, আর্মেনিয়ান থিয়েটার, এথেনিয়ন থিয়েটার (১৮১২) , চৌরঙ্গী থিয়েটার ( ১৮১৩) ,বৈটাকোণা থিয়েটার ( ১৮২৪) সাঁ সুসি থিয়েটার ( ১৮৪১) প্রভৃতি। ১৭৯৫ সালের ২৭শে নভেম্বর ২৫ নং ডোমতলা লেনে রুশ দেশ থেকে কলকাতায় আগত ভাগ্যান্বেষী গেরাসিম স্তেপানভিচ লেবেদেফ প্রথম বাংলা অনুবাদ নাটক 'কাল্পনিক সংবদোল' (মূল নাটক – দ্য ডিসগাইজ, নাট্যকার – এম. জোড্রেল) মঞ্চস্থ করেন। তাঁর রঙ্গালয়টির নাম ছিল- 'বেঙ্গলি থিয়েটার'। কিন্তু ইংরেজদের কুনজরে পড়ে লেবেদেফ এই মঞ্চটিকে টেঁকাতে পারেন নি। ১৭৯৬ খ্রীস্টাব্দে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এটি ভস্মীভূত হয়। এর মধ্যে বাঙালি বাবুদের মনেও থিয়েটারের রং লেগে গিয়েছিল। ইংরেজ থিয়েটারে একের পর এক নাটক মঞ্চস্থ হতে দেখে তারা চাইলেন ভারতীয় ঘরানায় একটা-কিছু করে দেখাতে।। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রসন্নকুমার ঠাকুর নারকেলডাঙায় তার শুঁড়োর বাগানবাড়িতে ‘হিন্দু থিয়েটার’ প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু এখানে সংস্কৃত, ইংরেজি প্রভৃতি ভাষার নাটকেই পরিবেশিত হত। বাংলা ভাষায় থিয়েটার পরিবেশনে সর্বাগ্রগণ্য নাম নবীনচন্দ্র বসুর। ইনি ১৮৩৬ খ্রীস্টাব্দে নিজের প্রাসাদোপম বাসগৃহে থিয়েটার স্থাপন করেন। এখানে নাকি বছরে চার পাঁচটি করে নাটক মঞ্চস্থ হত। ১৮৩৫ খ্রীস্টাব্দের ৬ই অক্টোবর এখানে পরিবেশিত হয়েছিল কবি রায় গুণাকর ভারতচন্দ্রের ‘বিদ্যাসুন্দর'-এর নাট্যরূপ। বাংলা ভাষায় এই নাটকটি সেদিন রাত ১২-৩০ টায় শুরু হয়ে পরের দিন ভোর ৬-৩০ টায় শেষ হয়েছিল। নবীনচন্দ্রের বাড়ির পুকুরপাড়, বাগান, বৈঠকখানা প্রভৃতি স্থানে নাটকের বিভিন্ন দৃশ্য সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। এক জায়গায় অভিনয় দেখে দর্শক দ্রুত ছুটছিলেন আরেক জায়গার অভিনয় দেখতে। কখনো বা যেতে হচ্ছিল মাটির নিচের সুড়ঙ্গপথ দিয়ে।এই নাটকে রাধামণি, জয়দুর্গা,রাজকুমারী প্রভৃতি মহিলাদের দ্বারাই নারীচরিত্র রূপায়িত হয়েছিল। শিল্পী ও কলাকুশলী সকলেই ছিলেন বাঙালি। 'লক্ষাধিক চল। নাটকটির হয়েছিল। লি। শোনা যায় এ নাটকের মঞ্চায়নে নবীবচন্দ্রের দু’লক্ষাধিক টাকা ব্যয়িত হয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে তাকে ইংরেজটোলার খাতাবাড়ি বিক্রি করতে হয়েছিল। বাঙালি বাবু সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠিত আরো কয়েকটি নাট্যশালা হল – শোভাবাজার নাট্যশালা (১৮৪৪, রাধাকান্ত দেব) জোড়াসাঁকো থিয়েটার (১৮৫৪, প্যারীমোহন বসু), বিদ্যোৎসাহিনী থিয়েটার (১৮৫৭, কালীপ্রসন্ন সিংহ), বেলগাছিয়া থিয়েটার (১৮৫৮, প্রতাপচন্দ্র সিংহ ও ঈশ্বরচন্দ্র সিংহ), মেট্রোপলিট্যান থিয়েটার (১৮৫৯, রামগোপাল মল্লিক ), পাথুরিয়াঘাটা বঙ্গনাট্যালয় (১৮৬৫, সৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর ও যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর), বহুবাজার বঙ্গনাট্যালয় (১৮৬৮, বলদেব ধর ও চূণীলাল বসু) প্রভৃতি। এই থিয়েটারগুলি মূলত ছিল বাঙালি অভিজাত সম্প্রদায়ের বাড়ি বা বাগানবাড়িকেন্দ্রিক। ইংরেজ নাট্যশালায় শেক্সপীয়র ও লন্ডনের রঙ্গমঞ্চের জনপ্রিয় নাটকগুলির পুনরাভিনয় দেখার অভিজ্ঞতার সাথে বাংলার ঘরোয়া যাত্রা দেখার অভিজ্ঞতা একত্রে জড়ো করে বাঙালি বিত্তশালীরা এই থিয়েটার অভিযান শুরু করেন। এদের কারো কারো কাছে এই নাট্যচর্চা ছিল নিতান্তই বিলাসিতা – ঘুড়ি ওড়ানো বা বুলবুলির লড়াইয়ের পেছনে পয়সা ওড়ানোর মত। অন্তরঙ্গ, অনুগত বা ভাড়াটে শিল্পীদের দিয়ে এরা এসব নাট্যায়োজন সম্পন্ন করতেন। কখনো কখনো বিত্তশালী বাবুর অভিনয়ের কেরামতি দেখানোর জন্যে অন্যান্য শিল্পীরা সহায়ক হিসেবে নিযুক্ত হতেন। আবার নাট্যচর্চার আবডালটি কোন কোন বাবুর বারবিলাসিনীর সঙ্গ পাবার পক্ষে সুবিধেজনক হত বলে কারো মনে সন্দেহ জাগাটা কোন অস্বাভাবিক বিষয় ছিল না। নাট্যচর্চাকে সবসময় এই বাবুরা কলাকৈবল্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গীতে প্রশ্রয় দিতেন কি? তা যদি হয় তো 'কিছু কিছু বুঝি' প্রহসনে 'দন্তবক্র' চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফিকে পাথুরিয়াঘাটার রাজবাড়ির আশ্রয় থেকে বিতাড়িত হতে হল কেন? তবে এই ধরণের নাট্যশালাগুলির মধ্যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ও গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির নাট্যশালা (১৮৬৫) রুচি ও নিষ্ঠার দিক থেকে সম্ভবত ছিল অন্য ধাঁচের। বাবু থিয়েটারে সাধারণ দর্শকদের প্রবেশাধিকার ছিল না – আমন্ত্রিতরাই সেজেগুজে এখানকার দর্শকাসন অলঙ্কৃত করতেন। নির্মেঘ সন্ধ্যায় মায়াবী আলোকমালায় সাজানো অনুষ্ঠানমুখর বাবুদের নাট্যশালার দিকে চেয়ে নিজের ভেতর থেকে উঠে আসা হতাশ্বাসে সাংস্কৃতিক বাসনাকে চাপা দেয়া ছাড়া আমজনতার তখন আর কিছুই করণীয় ছিল না। এর মধ্যে অভিজাত সমাজের মধ্যে থিয়েটার বেশ জাঁকিয়ে বসেছে, কিন্তু ইংরেজ রাজপুরুষ বা স্থানীয় অভিজাতদের আওতাভুক্ত না হওয়ার দুর্ভাগ্যে সাধারণ মানুষ থিয়েটারেরও কেউ হতে পারেন নি। কারণ, তারা ইংরেজ রাজপুরুষ নন, অথবা বাবুদের টাকার স্তূপে গজিয়ে ওঠা মোসায়েব নামক আগাছাও তারা নন – তারা যে সাধারণ মানুষ। অতএব, থিয়েটার তাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সাধারণ দর্শক দর্শনীর বিনিময়ে নাট্যশালায় প্রথম প্রবেশাধিকার পেলেন ১৮৭২ সালের ৭ই ডিসেম্বর ন্যাশন্যাল থিয়েটারে 'নীলদর্পণ' নাটকের প্রদর্শনীতে। আট আনা ও এক টাকা ছিল সেই থিয়েটারের প্রবেশমূল্য।
তখন থেকে থিয়েটারের ঘটল বাঁকবদল – নাকি একে রাহুমুক্তি বলা যাবে? থিয়েটারের ক্ষীণ ধারা স্রোতস্বিনীর সাথে মিশে দেখা করতে রওয়ানা দিল মহামহিম জলধির সাথে।
সহায়ক গ্রন্থঃ-
• থিয়েটারে দৃশ্যের বিকাশ ও সমীক্ষা - রঞ্জিত কুমার মিত্র
• রঙ্গমঞ্চ স্থাপত্য- কৌশিক সান্যাল
• সংস্কৃত নাট্য প্রয়োগ- পরিমল চট্টোপাধ্যায়