Wednesday, June 30, 2021


 

পাঠ প্রতিক্রিয়া

কাব্যগ্রন্থ: মনীষা, তোমাকে
কবি: সুদীপ দত্ত 
প্রকাশনা: গাঙচিল 
মূল্য: ১২৫টাকা 
আলোচক: শৌভিক রায় 

পঞ্চাশটি কবিতা নিয়ে গাঙচিল থেকে প্রকাশিত হয়েছে সুদীপ দত্তের 'মনীষা, তোমাকে'। সীমা মন্ডলের প্রচ্ছদে, গাঙচিল প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থের মতোই, দামি কাগজের ওপর ঝকঝকে মুদ্রণের কাব্যগ্রন্থটি সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।


উত্তরের সাহিত্য জগতে সুদীপ দত্ত মূলত গদ্যকার হিসেবে পরিচিত। ছোটগল্প লিখেও পাঠকমহলে সমাদৃত তিনি। কিন্তু কবিতা জগতেও তাঁর গতিবিধি স্বচ্ছন্দ। তাই দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থে অনায়াসে লিখেছেন 'এখন আমার কোনও অসুখ নেই/ ক্ষোভময় এই বেঁচে থাকার সঙ্গে/ প্রথাগত সহবাস করি উলঙ্গ শরীরে' বা 'বারবার মৃত্যুকে শুনিয়েছি জীবনের পদাবলী/ আমিই সে/ সাদা কালো মুছে রঙিন এঁকেছি সমস্ত সুড়ঙ্গ-গলি' ইত্যাদির মতো চমকে দেওয়ার মতো বেশ কিছু লাইন। 

প্রথম কাব্যগ্রন্থের কবিতা থেকে অনেকটা সরে এসে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থে কবি বারবার নিজেকে ভেঙেছেন। একথা নিশ্চিন্তে বলা যায়। কিছু কবিতায় এক বা দুই লাইনে ভাবনার অসামান্য প্রকাশ করেছেন কবি। যেমন- 'মুকুট মানে নদী। অনুকূল  স্রোত। নৌকো।` অথবা 'মুখোশের দু চোখে কী রেখেছ তুমি? ভালবাসা না বেদনা?` সমসাময়িক বেশ কিছু শব্দবন্ধ যেমন '৬৪ জি বি মেমরি কার্ড', 'হোয়াটসআপ মেসেজ`, 'ফোর জি নেটওয়ার্ক`, 'অলীক ডিপির ফেসবুক মেয়ে` ইত্যাদি কবিতাগুলিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। আবার  'হে চিরপ্রণম্য অগ্নি`, 'শ্রাবস্তীর কারুকাজ` ইত্যাদি কিছু শব্দবন্ধে চিরন্তনতার সুর বেজে উঠেছে। 

আসলে আবহমানতার যেমন পরিবর্তন হয় না, তেমনই  পরিবর্তন হয় না মানুষের আবেগ ও অনুভূতির। সর্বদেশে সর্বকালে তা একই থাকে। কবিতা শুধু আলাদা হয় শব্দ চয়নে ও ব্যবহারে। অত্যন্ত পারদর্শীতার সঙ্গে কবি সেই কাজটি সম্পন্ন করেছেন এবং সমসাময়িক কবিদের থেকে সরে কবিতার নিজস্ব ভাষা সৃষ্টি করেছেন। এখানেই কাব্যগ্রন্থটির সার্থকতা। আলাদা ভাল লেগেছে 'স্বপ্ন`, 'ভাত খেতে ভয় পাই`, 'ছায়াপথ`, 'বিভাজিকা`, 'দুপার` ইত্যাদি কবিতাগুলি।

এই কাব্যগ্রন্থের 'মনীষা` সিরিজের বারোটি কবিতায় কবি আগের কাব্যগ্রন্থের মতোই কবির অনবদ্য সৃষ্টি। তীব্র আবেগ মেশানো কবিতাগুলিতে কবিকে নতুন করে আবিষ্কার করা যায়। এই সৃষ্টিগুলিতে টানটান শহুরে ভাষা ব্যবহৃত হলেও, সুরে ও মননে কবি চিরদিনের সেই প্রেমিকাকে খুঁজে চলেছেন। আর সেই অন্বেষণে মণিমুক্তোর মতো তুলে এনেছেন 'শপিংমলের টানটান মেয়ে তাচ্ছিল্যে তাকায় আমার দিকে, যেন আমি কাঙালেরও অধম`, 'পৌষালি দুপুরে কমলালেবুর কোয়া দেখে ইচ্ছে করে মনীষাকে চুমু খাই বেহিসাবি', 'মনীষার জন্য আমার কাছে আস্ত একটা পালতোলা নৌকা আছে` ইত্যাদি লাইনগুলি। 

মুদ্রণের ক্ষেত্রে প্রকাশক সেন্টার অ্যালাইন ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সেটি দৃষ্টিনন্দন হয় নি। সাবেক লেফট অ্যালাইন বোধহয় সঠিক ছিল। কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করা হয়েছে প্রবাদপ্রতিম অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যকে। সেদিক থেকেও কাব্যগ্রন্থটি অন্য মর্যাদা পাচ্ছে।      

Wednesday, June 2, 2021


 

সম্পাদকের কথা 


অতিমারী আবহে আবার সবকিছু স্তব্ধ। এই বিপর্যস্ত সময়ে সবচেয়ে প্রয়োজন যে ব্যাপারের, সেই সামগ্রিক টিকাকরণ থেকে আমরা অনেক দূরে এখনও। কবে সবাই টিকা পাবেন, কবে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন তা কেউই বলতে পারছেন না। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো চিকিৎসা  পরিকাঠামোর নানা দুরাবস্থা পরিস্থিতিকে আরও সঙ্গীন করে তুলেছে। শেষ অস্ত্র হিসেবে লকডাউনের আশ্রয় নিতে হচ্ছে বারবার। ফল? অর্থনীতির পতন। আর তার জন্য ক্রমশ সাধারণ মানুষ তলিয়ে যাচ্ছে আরও অন্ধকারে! কবে যে এর থেকে মুক্তি মিলবে কে জানে। 

চিন্তা আসলে পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবে। এভাবে সব থেমে যাওয়ায়, থমকে গেছে ওদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি। হয়ত একদিন এই অবস্থা কেটে যাবে, কিন্তু যে স্থবিরতা শিশুমনে সৃষ্টি হল, তা যদি না কাটে তবে বিপদ আগামীদিনের পৃথিবীর, যে পৃথিবীতে আমরা বেঁচে থাকব ওদের হাত ধরেই ...  



এই সংখ্যায় আছেন যাঁরা 

নরেশ রায়, কুমকুম ঘোষ, বিদ্যুৎ রাজগুরু, চিত্রা পাল, পার্থ সারথি চক্রবর্তী, শ্রাবণী সেন,  কবিতা বণিক, অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী, বটুকৃষ্ণ হালদার, শিল্পাশ্রী রায়দে, সুনন্দ মন্ডল, শ্রাবণী সেনগুপ্ত, মাথুর দাস, রীনা মজুমদার, মজনু মিয়া, শতাব্দী সাহা, দেবর্ষি সরকার, লুনা সিং, স্বপন দত্ত, মহাজিস মন্ডল, অদিতি মুখার্জী সেনগুপ্ত, রাফিকুল নাজিম, সূরজ সিং,  নয়ন রায় 

 

বিশেষ নিবন্ধ 


একটি টিকা আবিষ্কারের গল্প 

কুমকুম ঘোষ 






(চিকিৎসা বিজ্ঞান ও মহামারী র ইতিহাসে ডাঃ এডোয়ার্ড জেনারের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে  ভাইরাস ঘটিত ভয়ঙ্কর মারণ- রোগ গুটি বসন্ত (small pox) টীকা আবিষ্কারের জন্য। কিন্তু আমরা কি জানি এই মারণ ভাইরাসের প্রথম ট্রায়াল কার ওপর হয়েছিল? কে ছিল সেই প্রথম স্বেচ্ছাসেবক বা ভলান্টিয়ার যে মানবকল্যাণে স্বেচ্ছায় নিজেকে সমর্পণ করেছিল? কোন পথ ধরে ডাক্তার জেনার খুঁজে পেয়েছিলেন অব্যর্থ টীকার সন্ধান? এই গল্প তাদের নিয়ে)

 সেটা অষ্টাদশ শতকের শেষের দিক। ইংল্যান্ডের কান্ট্রিসাইডে   গ্রামের বাড়িতে এসেছেন এক প্রৌঢ় ডাক্তার। লন্ডনের ডাক্তার মহলে তখন তার প্রচুর নামডাক ।কিন্তু গ্রামের খামারবাড়িতে সেই ডাক্তার দূরবীন নিয়ে ঝোপেঝাড়ে শুধু কোকিল খুঁজে বেড়ায়, কারণ ডাক্তারী পেশা হলেও , নেশায় তিনি একজন কোকিল বিশেষজ্ঞ ছিলেন।  গ্রাম জীবনে  কোনো কোনো সময় মালির আট বছরের কিশোর ছেলেটা ছিল তার নিবিড় সঙ্গী ।সে ছিল ডাক্তারের খুব ন্যাওটা । পড়াশোনা ছেড়ে ডাক্তারবাবুর সাথে ঘুরে বেড়াতে কি ছিপ হাতে মাছ ধরতেই বেশী ভালবাসে।গ্রামের নিস্তরঙ্গ জীবনযাত্রা ,  পাখি দেখে আর গাছপালা নিয়ে বেশ কাটতো দিনগুলো কিন্তু এছাড়াও আরো একটা গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন   লন্ডন শহরের সদাব্যস্ত ডাক্তারবাবু। তিনি নিরিবিলিতে বসে সেসময়ের একটা মারণ- রোগের (গুটি বসন্ত/small pox) প্রতিকারের উপায় খোঁজার চেষ্টাও করছিলেন। সেই সময়েই গ্রামের চারদিকে ঘোরাঘুরি ও গ্রামবাসীদের সাথে মেলামেশা করতে করতে একটা ঘটনা তাঁকে আরো অনুসন্ধিৎসু করে তুলেছিল ; সেটা এই গ্রামের গোয়ালা শ্রেনীর লোকেদের মধ্যে বিশেষ করে ঐ নির্দিষ্ট মারণ-রোগের বা গুটি বসন্তের প্রকোপ খুব ই কম। কিন্তু কেন? 

ডাক্তারবাবুর বাড়িতে দুধ দিতে আসে এক তরুণী গোয়ালিনী। ডাক্তার লক্ষ্য করলেন ওর হাতে ফোস্কা টসটসে হয়ে আছে। সেগুলো কি? জানতে চাইলেন ডাক্তার। হেসে হেসে বললো সেই গোয়ালীনি যে তাদের গ্রামে যারা গরুর দুধ দোয়, তাদের হাতে এরকম ফোস্কা হয় আর তাদের কখনও গুটি বসন্ত ও হয়না। এগুলো কে গোয়ালারা গো- বসন্ত বলে।  বিষয়টা ভাবিয়ে তুললো ডাক্তারবাবুকে।সেসময় বসন্ত রোগ ইউরোপে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তো প্রতিবছর। মৃত্যুর হার ও খুব বেশী ছিল।
 সরেজমিনে তদন্ত করতে তিনি গয়লাদের গোশালায় উপস্থিত হলেন।দেখলেন গোরুর বাঁটে একধরণের ফোস্কা হয়ে আছে আর ঠিক সেই ফোস্কাই হয়েছে দুধ দোয় যে তার হাতে।
ঘরে এসে চিন্তা করতে লাগলেন আর খুললেন সেই নোটবই টা যেখানে তিনি লন্ডন শহরের বসন্ত রুগীদের যাবতীয় তথ্য রেখেছেন।

তাহলে কি ঐ গোয়ালীনির ফোস্কার পূঁজ অন্য কারোর শরীরে ঢুকিয়ে দিলে সে আর গুটি বসন্তের শিকার হবেনা? গো- বসন্ত হলে কি তার শরীরে আর গুটি বসন্ত ( small pox) হবেনা? কীভাবে হাতেকলমে সেই পরীক্ষা তিনি করবেন? কে রাজি হবে স্বেচ্ছায় এই রোগ নিজের শরীরে নিতে?

 চিন্তায় পড়লেন ডাক্তার। গ্রামের কাউকেই রাজী করাতে পারলেন না।আর পারবেন কি করে?যেচে মরতে কে চায়? গোয়ালা দের ওপর এই  পরীক্ষা করা যায়না কারণ তাদের প্রায় কারোর ই গুটি বসন্ত হয়না।  একমাত্র বাকি আছে সেই ডাক্তার- ন্যাওটা মালির ছেলে, বয়সে যে কিশোর কিন্তু স্বাভাবিক শরীর স্বাস্থ্য তার ভালোই।

অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে তাকেই বোঝালেন ডাক্তার, সঙ্গে সাহস জোগানোর কাজটা করলো গয়লানী। রাজী হলো সেই কিশোর, আসলে ডাক্তারবাবুর ওপর তার অগাধ আস্থা। অবশেষে একদিন গয়লানীর হাতের ফোস্কা থেকে কিছুটা রস নিয়ে ঢুকিয়ে দিলেন তার হাতে , চামড়ার মধ্যে। দুহাতের সাথে শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়লো সেই ফোস্কা ,যা ছিল আদতে গো- বসন্ত। নিভৃতে থাকতে হলো তাকে ,বড়ো কষ্ট তার। তার কষ্ট দেখে  ডাক্তার নিজেও  খুব কষ্ট পাচ্ছেন মানসিক ভাবে  কিন্তু ঠিক ছয় সপ্তাহ পরে সে সুস্থ হয়ে উঠলো।
এবার শুরু হবে আসল পরীক্ষা।এক গুটিবসন্ত আক্রান্ত লোকের শরীরের জীবাণু আবার দেওয়া হলো তার হাতে।কি আশ্চর্য, আর গুটি বসন্ত হলো না তার। সুস্থ সবল ডাকাবুকো কিশোর কয়েক দিন পরেই আবার গ্রামের পরিচিত ছন্দে ঘুরে বেড়াতে লাগলো,ছিপ হাতে মাছ ও ধরতে গেল।

আর ডাক্তার পেলেন গুটি বসন্ত(small pox) রুখে দেবার অবশ্যম্ভাবী প্রতিষেধক। যদিও লন্ডন ও ইউরোপে এই টীকার প্রচলন হতে আরও কিছু দিন দেরী হলো ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক বাধার জন্য।
গরুর লাটিন নাম ভাক্কা(Vacca)।তাই টীকার ইংরেজী হলো ভ্যাকসিন(vaccine) এবং টীকাকরণের ইংরেজি হলো ভ্যাক্সিনেশন(vaccination)।

 আজ থেকে ২০০ বছরেরও আগে (১৭৯৬ সালে)  টীকা পরীক্ষার  প্রথম  মানব-ট্রায়াল যে দিয়েছিল, সেই পৃথিবীর প্রথম স্বেচ্ছাসেবক (Volunteer); একটি  আট বছরের কিশোর : নাম তার জেমস্ ফিপস ( James Fipps)।

আর অখ্যাত যে গ্রাম্য- গোয়ালীনি ডাক্তার জেনার কে আলোর দিশা দেখিয়েছিল ;  তার নাম সারা নেমস (Sarah Nelms)।
  
(ডাক্তার এডোয়ার্ড জেনারের ছবি কম- বেশী আমরা সবাই দেখেছি কিন্তু "জেমস্" ও "সারা" র প্রামাণ্য ছবি নেই।সে যুগে  যদি নেটদুনিয়া ও ফেসবুক থাকতো তাহলে তাদের দুজনের ছবি লক্ষ লক্ষ শেয়ার লাইক কমেন্টস পেত এটা  নিশ্চিতভাবেই বলা যায়)




ভাবনা 


মামেকং শরণং ব্রজ
               কবিতা বণিক

বিশ্ববাসী আজ সবাই এক  এক জন সৈনিক। এই যুদ্ধ  অন্যান্য সময়ের মত দৈনন্দিন অর্থ রোজগার এর যুদ্ধ নয়। এই বিধ্বস্ত কালখণ্ডে বেঁচে থাকার আশায় প্রতি মূহুর্তে মানুষের যন্ত্রণা -- মানসিক, শারীরিক, আর্থিক সব দিক থেকেই অনুভূত হচ্ছে। এত মৃত্যু সংবাদে মানুষ হতাশা গ্রস্ত। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে আছি সবাই।
     এই অবস্হায় আমরা অবশ্যই স্মরণ করব ' গীতার' উপদেশ বাণী  যা আমাদের হতাশ প্রাণে শক্তি দেবে। যেমন ভাবে কু্রুক্ষেত্রের যুদ্ধ ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে বিষাদগ্রস্ত অর্জুনকে দেওয়া শ্রী ভগবানের উপদেশ মূলক বাণী  যা তার মোহ নষ্ট করে স্থিতপ্রজ্ঞ হতে সাহায্য করেছিল।
        অর্জুন যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে হতাশ ও বিষাদগ্রস্ত হয়ে তার রথের সারথি ও সখা শ্রীকৃষ্ণকে বলছেন-- যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্হিত সকলেই আমার আত্মীয়,পরিজন, আচার্য্য। আমি এই যুদ্ধ  করতে পারব না। অস্ত্র ধরব না। ধৃতরাষ্ট্রের অস্ত্র ধারী পুত্রেরা আমাকে অস্ত্রাঘাত করলেও বাধা দেব না। আমাকে বধ করলেও তা  মঙ্গলজনক হবে।  লক্ষ্যনীয় অর্জুনের মত বিবেকী মানুষ জগতে বিরল। পাপ-পূণ্যের বিচার,কূলধর্ম,  জাতিধর্মের রক্ষা স্বজনদের বধ না করার সিদ্ধান্ত সহজেই নিতে পেরেছিলেন। এই রকম অবস্হায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যে সাহস,জ্ঞান, কর্ম করার উৎসাহ, উপদেশ , প্রেরণা দিয়েছেন। তাই  "শ্রীমদ্ভগবদ গীতা " নামে পরিচিত।
       শ্রী ভগবান প্রথমেই অর্জুনকে হৃদয়ের দূর্বলতা ত্যাগ করতে বলেছেন। যুদ্ধ করলে তার জয় পরাজয় দুইটিই আছে। বিজয়ী হলে গুরুজনদের বধের কারণে পাপ হবে। পরাজিত হলে
 ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করতে হবে। সেটাও পাপ। এই রকম উভয় সংকটে পড়ে অর্জুন  তার অজ্ঞানতাকে প্রকাশ করে শ্রীকৃষ্ণকে গুরুত্বে বরণ করে তাঁর কাছেই কাতর ভাবে উপদেশ চাইলেন , কি করা উচিত। 
          শ্রীকৃষ্ণ সাংখ্য যোগ, কর্ম যোগ, জ্ঞান যোগ, ভক্তিযোগের মাধ্যমে নানা ভাবে জীবনের কর্তব্য সম্বন্ধে বোঝালেন -- বিষয়ভোগের নিয়মাদি, আত্মার সাথে পরমাত্মার ও শরীরের সম্পর্ক।  শ্রী ভগবান এর মুখ নিঃসৃত পবিত্র 'গীতা' আমাদের আত্ম নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়। তিনি বলেছেন স্বর্গ প্রাপ্তি আমাদের লক্ষ্য নয়। মোক্ষপ্রাপ্তি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মোক্ষ লাভ করতে হয় আত্মজ্ঞানের দ্বারা। অর্থাৎ ব্রহ্মকে জানলে। ব্রহ্মকে জানা সম্ভব হয় আত্মপলব্ধির দ্বারা। গীতা আত্মপলব্ধি   জাগ্রত করতে সাহায্য করে। গীতা শেখায় দেহের থেকে পঞ্চ ইন্দ্রিয়  বড়। ইন্দ্রিয়ের থেকে বুদ্ধি বা জ্ঞান বড়। বুদ্ধির থেকে বড় আত্মা। আত্মার থেকেও পরমাত্মা বড়। আমরা পরমাত্মার অংশ। তাই আমাদের আত্মার ধ্বংস হয় না।
         মানুষের  সবচেয়ে বড় শত্রু হল লোভ,ক্রোধ, লালসা, হিংসা, বিদ্বেষ। এই সব আমাদের চরিত্রকে নষ্ট করে। এই রিপু থেকে পরিত্রাণ এর উপায় বের করে গীতা। মন থেকে সন্দেহ দূর করে বিশ্বাস স্হাপন করে মানসিক শান্তি পাওয়ার কথাও শেখায় গীতা। সবাই আমরা নিজেই নিজের চিন্তা অনুযায়ী কর্ম করি।এবং গাসেই ফল ভোগ করি। সুতরাং কর্মফলের আশা না করে নিষ্কাম কর্ম করা উচিত। ঈশ্বরের মন সমর্পণ করা উচিত। শ্রী ভগবান বললেন , "সর্বধর্মান পরিত্যাজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।"  অর্থাৎ  "মোক্ষ প্রাপ্তির জন্য যে যে পথ আছে সব ছেড়ে শুধু আমার শরণ নাও। আমি তোমাকে সকল পাপ থেকে মুক্ত করে দেব।" 
       গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে শিখতে পারি , অন্য কারো  কাছ থেকে  সম্মান পেতে হলে অন্যদের আগে সম্মান করা উচিত। গীতা নিজেকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে শেখায়। নিজেকে ও নিজের শক্তিকে জানার জন্য ও পরম ব্রহ্মকে জানার জন্য গীতা পাঠ প্রয়োজন। গীতা প্রথমে বোঝা না গেলেও ঈশ্বরের আশীর্বাদে প্রতিদিন পাঠ করতে করতে গীতা বোঝা সহজ হয়। এটাই  ঈশ্বরের  আশীর্বাদপুষ্ট গীতার মাহাত্ম্য।  প্রতিদিন অন্ততঃ একটা শ্লোক পাঠ করা উচিত। এতে  আমাদের ও সন্দেহ দূর হয়ে মোহ নষ্ট হবে। নিষ্কাম ভাবে কর্ম করার মনের জোর ও শক্তি সঞ্চয় করে আমরাও যেন  অর্জুনের মত শ্রী ভগবানের শরণে এসে বলতে পারি " করিষ্যে বচনং তব।" অর্থাৎ  " তুমি যা বলবে আমি তাই করব।"।  
      এই বিধ্বস্ত কালখণ্ডে এ ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। "গীতা"  নামের  শ্রী ভগবানের বার্তাই শান্তি এনে দিতে সক্ষম।  পবিত্র গীতা শুধু মাত্র  ধর্মগ্রন্হ ই নয় । সকল সমস্যা সমাধানের পথ দেখায়। গ্রন্হটিকে স্পর্শের মধ্য দিয়েও এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগে। গীতা সকলের পাঠ করা উচিত।
বিশ্বের অনেক দেশের মত আমাদের ও ঘরে ঘরে " গীতা পাঠ হোক।



গল্প 

  দ্বিরাগমন

   চিত্রা পাল

 সাদা ছায়ার মতো ঘরে ঢুকলো ও। ঠিক ছায়া নয়, জমাট বাঁধা কুয়াশার মতো।ওর ঠিক পেছনে পেছনে আর একজন। ঢুকেই কাজ শুরু করে দিলো ওরা। সুকুমার জ্বরের ঘোরে পড়ে ছিলো, একবার যেন মনে  হলো চেনা কেউ। ওর বউ মণিকা সেও শুয়ে আছে আর এক ঘরে। কপালে জলপট্টি দিতে দিতে ইশারায় আর একজনকে বলতেই সে ডাক্তারে সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। এখন ভিডিও কলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ হলে একজন বলে,বাবা, সামনে দেখো ডাক্তারবাবু কথা বলছেন, ঊনি এখন তোমাকে যা যা জিজ্ঞেস সব ঠিক করে উত্তর দেবে। জ্বরের মধ্যেও সুকুমার বলে ওঠে,’তুই কখন এলি’? সে কথা পরে হবে। এখন তোমাকে যা জিজ্ঞেস করছেন তার উত্তর দাও। কথা শেষ করে আবার আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। জ্বর কমাবার ওষুধ খাইয়ে এলো মায়ের ঘরে।

    মণিকা ওকে দেখেই আঁতকে ওঠে। ইশারায় মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলে জ্বর মাপে। অক্সিমিটার দিয়ে অক্সিজেন লেভেলটাও দেখে নেয়। অভ্রকে বলে, এর কন্ডিশন বেটার। এর মধ্যে দীপু এনেছে কাগজের কাপ প্লেট বাটি সব।কাগজের কাপে ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে মায়ের মুখের কাছে দিলে মণিকা বলে,কখন থেকে ইচ্ছে করছে চা খেতে,কিন্তু উঠে করতে আর পারিনি।

    এঘরে এসে দেখে বাবার জ্বর খানিক কমেছে। বাবাকে উঠিয়ে পিঠে বালিস দিয়ে বসিয়ে দিয়ে হাতে গরম চা ধরিয়ে দেয়।চা খাবার পরে এই অসুস্থতাতেও  যেন আরাম বোধ করে।সুকুমার কথা বলতে গেলে তাকে থামিয়ে দিয়ে দীপু বলে, তোমরা কি এখন খেয়ে নেবে না পরে খাবে? পরেই খাবো।‘ মা মা একবার এঘরে এসো’। দীপুর ডাক শুনে মণিকা এঘরে আসতে  ওসব বলে বুঝিয়ে দেয়। এই টিফিন কেরিয়ারে তোমাদের খাবার আছে। আর এই সব ওষুধ। এগুলো সব ঠিক সময়মতো খাবে’। আর ফ্লাস্কে গরমজল রেখেছি,বাবা তুমি মনেকরে ওষুধগুলো খাবারপরে গরমজল খেয়ে শোবে। আমি আবার কাল সকালে আসবো। আর মা রাতে একবার জ্বর মাপতে হবে। বাবাকে সময়মতো ওষুধগুলো দেবে। এখন দরজা একেবারে চাবি বন্ধকরে দাও।ডুপ্লিকেট চাবিটা দাও।বলে অবশ্য ও আর দেরি বনা করে যেখানে চাবি থাকে সেখান থেকে চাবি নিয়ে,সমস্ত বলে বুঝিয়ে, ‘মা,তোমায় আর উঠতে হবে না, আমি দরজা বন্ধ করে দিয়ে যাচ্ছি’বলে দুই সাদা ছায়ামূর্তি যখন বিদায় নিলো, তখন মানসিক শান্তিতে দুজনেই অনেকখানি সুস্থ।

     সুদীপ্তা ওরফে দীপু বাবা মায়ের অমতে পাশের পাড়ার অভ্রকে বিয়ে করে। অভ্র সাধারণ ঘরের বিধবা মায়ের সাধারণ ছেলে।সরকারি কলেজের সি গ্রুপ কর্মচারী। কিন্তু পাড়ায় ওর সততা ,বিনম্র ব্যবহারের সুনাম আছে। সুদীপ্তা ওরফে দীপুর বাবা সেই অর্থে ব্যবসায়ী বিত্তশালী। সে বিত্তশালী ঘরেই একমাত্র মেয়েকে দেখতে চেয়েছে। মা ও ই দিকেই। ও বাবা মায়ের অমতেই অভ্রকে বিয়ে করে, অভ্রর মা ওদের পরম স্নেহে গ্রহণ করে। সেই থেকে বাবা মায়ের সঙ্গে কন্যার বিচ্ছেদ।

     এদিকে ওদের বিয়ের পরেই শুরু হলো লকডাউন। এই পরিস্থিতিতে কারোর সঙ্গে কারোর দেখা নেই, বলে কারোর খবর জানাও যায় না। দীপুর মনে বাবা মায়ের জন্য কষ্ট যে লেগে থাকে সেটা মা ছেলে দুজনেই বোঝে। দীপু পাশের বাড়ির লিলিকাকিমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে, ‘কাকিমা, আমি দীপু বলছি, তোমরা এই অসুখ বিসুখে সব কেমন আছ? হ্যাঁ,আর একটা কথা,আমার মা বাবা কেমন আছে’? আর বলিস না, তোর মায়ের জ্বর শুনলুম দুদিন থেকে। তোর মাকে বারান্দায় দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিলুম বলেই জানতে পারি। আর আজ তোদের কাজের মেয়ে ভানির থেকে শুনলুম, আজ দাদারও জ্বর। বাবার কত টেমপারেচার? ‘তা জানিনা, এখন তো কেউ কারোর বাড়িতে যায় না, তাই ফোন করেছিলুম, কিন্তু ফোন ধরেনি কেউ’।‘ঠিক আছে,দেখছি কি করা যায়’ বলে চিন্তিত দীপু ফোন রেখে দেয়।

 অভ্র আর ও প্ল্যান করে এইরকম।  একেবারে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা পি পি কিট পরে যাবে। কিন্তু অভ্রর মায়ের একেবারে ইচ্ছে ছিলোনা । এই অসুখে ওরা যাক। একতো ওরা মেনে নেয়নি,ওর ছেলে ফ্যালনা নাকি যে এভাবে নিজে থেকে যাবে, আর কি হয়েছে জানা নেই,তবু এই ছোঁয়াচে অসুখের সময়ে--- না, না বাবা যেতে হবে না। অভ্র এবার বলে, ‘মা, এমন অসময়ে যদি একটু পাশে--। যা ভালো বোঝ করো। মাএর বলার ধরণ শুনে মনে হলো মা যেন বুঝতে পারছে ব্যাপারটা। তারপরে বেরোবার সময়ে এই টিফিন ক্যারিয়ার আর চায়ের ফ্লাস্ক সঙ্গে দিয়ে দিলেন। আসার সময়ে বুদ্ধি করে দীপু কিছু কাগজের কাপপ্লেটও সঙ্গে নিলো।         

  এবার  ধড়াচূড়ো পরেএই রণক্ষেত্রে আগমন। বাবার অক্সি মিটারে সংখ্যাটা নব্বুই ছুঁতে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো দীপু। অক্সিজেনের সিলিন্ডারও এনে রেখেছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাগেনি। দিন পনেরো পরে  সুকুমার সুস্থ হয়ে হাঁটাচলা করতে পারলো, আর আরেকবার নেগেটিভ রিপোর্টের জন্য টেস্ট করতে দিলো, তখন দীপু জানিয়ে দিলো কালথেকে আর ও আসবে না। সুকুমার আকাশ পড়লেন যেন।আসবি না কেন জিজ্ঞেস করতে গিয়েও চুপ করে গেলেন।

   দুমাস পরের কথা। সুকুমারবাবুর বাড়িতে আজ ঘন ঘন উলুধ্বনি আর শাঁখের আওয়াজ। আজ ওনার একমাত্র মেয়ের দ্বিরাগমন,মেয়ে জামাই এলো যে এখন। কিন্তু ওদের দ্বিরাগমন যে আগেই হয়েছে সে কথা কে না জানে!  

                                    


 আপনজন
অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী

শেষ বিকেলের আলোটা মুছে যাচ্ছিল ধীরে ধীরে। জ্বরের ঘোরে ঘুমিয়ে পড়েছিল সুজাতা। পাশের ঘরে অতুলও একই অবস্থায় পড়ে আছে।  বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে এভাবেই। ওদের দুজনেরই শারীরিক অবস্থার  কোনো উন্নতি হচ্ছে না, ক্রমাগত দুর্বলতা ও অন্যান্য উপসর্গ বেড়েই চলেছে ।এখন পর্যন্ত সুস্থ তরী এ অবস্থায় দরজার বাইরে থেকে সময়ে সময়ে খাবার, জল,  ফলমূল,  ওষুধ সবকিছু জুগিয়ে যাচ্ছিল। বলেছিল,  কোনো সংস্থা থেকে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করেছে। একেই শরীরের কষ্ট,  তার ওপরে নিজেদেরএই পরিস্থিতিতে অসহায় তরীর কথা ভেবে আরও ভেঙে পড়ছিল সুজাতা। অন্ধকার ঘরের বিছানায় শুয়ে ফ্ল্যাটের জানলা দিয়ে বাইরের আলো ঝলমলে সন্ধ্যের দিকে তাকিয়ে মাথাটা আবার ঝিমঝিম করে উঠলো,  টের পেলো ওর দমবন্ধ হয়ে আসছে কেমন..  এরই মধ্যে তরীর গলা কানে এল.. ফোনে কথা বলছে কারো সঙ্গে..  টুকরো যেটুকু কথা কানে এল তাতে বুঝলো অতুলকে নার্সিং হোমে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করছে তরী..  জ্ঞান হারালো সুজাতা..... 
                                 তরীর ফোন.. আর এক মুহূর্তও দেরি করলোনা ওরা.. ক'দিন ধরে তো এই চলছে।  এখানে পাড়ার মধ্যে বেশ কতোগুলো পরিবার এই অতিমারীর শিকার। কমবেশি সকলের পাশে থাকবার সঙ্গে সঙ্গে ওরা তরীর পাশেও আছে সব ভাবে..  তরীদের হোম ডেলিভারিতে সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেওয়া,এখানকার কাছাকাছি ভালো ডাক্তারের সঙ্গে ওর যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া, সবসময় ফোন করে কথা বলে তরীকে সাহস যোগানো..  যাতে ওর একা না লাগে কোনোভাবেই.. এই এতো বড় শহরে তরীদের নিজেদের বলতে আর কেউ নেই..... এই মুহূর্তে তরীর ফোনে ওর বাবা মায়ের শারীরিক অবস্থার কথা শুনে পরপর কতোগুলো ফোন করে ফেলল ওরা কয়েকজন মিলে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, নার্সিং হোম, অক্সিজেন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গুলো বেশ দ্রুততার সঙ্গে ঘটে গেলো ওদেরই তৎপরতায়। 

এই নতুন আবাসনে আসবার সময় থেকেই ছেলে মেয়ে গুলোকে চোখে পড়েছিল ওদের। প্রাণোচ্ছল,  হাসিখুশি ছেলেমেয়ে গুলো কখনো রাস্তার মোড়ে,  কখনো পাড়ার ক্লাবে,  কখনো ওদের ফ্ল্যাটের নীচে হৈ হৈ করতে থাকতো..সাদামাটা,  তরীরই বয়সী বা একটু ছোটো বড়ো আঠেরো থেকে বাইশ ছোঁয়া এই তরুণ তুর্কিদের দেখে সুজাতার খুব ভালো লেগেছিল। দেখা অবশ্য দূর থেকেই। গাড়ি করে বাড়ি থেকে কোথাও বেরোবার পথে বা ফেরার পথে। অবশ্য ওদের কথা প্রথম বলেছিল অতুলই। ফ্ল্যাটের কাজ চলাকালীন যখন ও এখানে আসা যাওয়া করতো তখনই বলেছিল ওদের কথা। উচ্চাকাঙ্ক্ষী, সদাব্যস্ত,  জীবনের ইঁদুর দৌড়ে ছুটে চলা অতুল প্রথমেই সাবধান করেছিল সুজাতাকে..  'দেখো তরী যেন আবার এদের পাল্লায় না পড়ে। ওদের আর তরীর জীবন কিন্তু এক না। ওর সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে..  রাস্তাঘাটে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়ালে ওর চলবেনা'.... 
সুজাতারা এই আবাসনে আসবার পর প্রথম যে নববর্ষ পড়েছিল,  সেইদিন ঐ ছেলেমেয়ে গুলো ওদের ঘরের সামনে এসেছিল প্রথমবার..  কিচেন থেকে অতুলের গলা শুনেছিল সুজাতা....  'কি চাই?'ওরা বলেছিল 'কাকিমা নেই?  আজকের দিনে একটু প্রণাম করতাম আপনাদের।'....  'আমরা ওসব প্রণাম টনাম নিইনা'....  অতুলের গলায় বিরক্তি ঝরে পড়েছিল। লজ্জায়,  অভিমানে সুজাতার পা আটকে গিয়েছিল রান্নাঘরেই। ওরা বলেছিল,  'তরী  কোথায়?'
 'আজকে আমাদের ফাংশন আছে..  তরী গান গাইলে খুব ভালো লাগতো আমাদের।'....  অতুলের তাচ্ছিল্যে ভরা গলা ভেসে এসেছিল 'জানো তরী কার কাছে গান শিখছে এখন?  যেখানে সেখানে ও গান গায়না।'....  এরপর দরজাটা সশব্দে বন্ধ করেছিল অতুল। আরেকবার নতুন করে অতুলের থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়েছিল সুজাতা। আবারও এই সাজানো, গোছানো,  বিলাসবহুল সংসারটাকে নতুন করে কৃত্রিম,  অনেক দূরের মনে হয়েছিল ওর।মফস্বলের সাধারণ একান্নবর্তী মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা সুজাতা এই মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ার খেলায়.. মেপে মেপে কথা বলা নিয়মমাফিক জীবনে নতুন করে আবারও হাঁপিয়ে উঠেছিল। জীবনের এতোগুলো বছর পার করেও নিজের ভাই,  বোন,  দিদিদের সঙ্গে কাটানো অগোছালো আনন্দের দিনগুলো ওকে ডেকে যাচ্ছিল বারবার.. যে দিনগুলোর ঝলক ও এই টিকলু, বুবাই, চুমকি,  রণি,  টিটোদের দিনকাটানোর ছবিতে, ওদের পরোপকারী স্বভাবের মধ্যে টের পেয়েছে এই আবাসনে আসবার পর.... 

‌                                এতোক্ষণ ধরে যেন একটা টাটকা বাতাস বয়ে গেলো ওদের এই বসবার ঘরটায়। সতঃস্ফূর্ত ছেলেমেয়ে গুলো গল্প,  কথায়, দুষ্টুমিতে আবারও অনেকটা অক্সিজেন দিয়ে গেলো ওদের।  হ্যাঁ,  বাড়িতে ফিরে এসেছে অতুল ও সুজাতা।  খুব কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে, এই উদ্যমী,  তৎপর ছেলেমেয়ে গুলোর আন্তরিক চেষ্টায় সময়োপযোগী সঠিক চিকিৎসা পেয়ে,  দ্বিতীয় জীবন ফিরে পেয়েছে ওরা। বেশ কতোগুলো দিন কাটিয়ে এখন ওরা পুরোপুরি সুস্থ। ওদের  আনন্দ দিতে গল্পে,   গানে, কবিতায় সন্ধ্যেটাকে ভরে দিয়ে গেলো ওরা। কি অসামান্য সুর চুমকির গলায়, কি অসাধারণ কন্ঠস্বরেে আবৃত্তি করলো রণি।ওদের প্রায় সকলেরই কোনো না কোনো প্রতিভার খোঁজ পেয়ে সুজাতার মন কানায় কানায় ভরে যাচ্ছিল বারবার।  অতুলও আজ  ওদের সঙ্গে সময় কাটালো একভাবে.. ওদের সকলের মাথায় হাত রেখে স্নেহাশীষ জানালো। অতুলের চোখে মুখে যে অনুতাপের ছায়া দেখলো সুজাতা,  তাতেই ও খুশি।।নার্সিং হোমের রিসেপশনে চুমকিকে দেখেছিল সুজাতা একঝলক.. একটু জ্ঞান ফিরেছিল সেসময়।  চুমকি তরীর হাত জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল..  ওদের নার্সিং হোমের দিনগুলোতে চুমকি সেই হাত ছাড়েনি তরীর.. একভাবে তরীর সঙ্গে এখানে থেকে গিয়েছিল যতোদিন  ওরা না ফিরেছে। এভাবেই বেঁধে বেঁধে যেন থেকে যায় ওরা..  একে অপরের পাশে...  এই প্রজন্মের গর্ব হয়ে......  পরিবারের আশীর্বাদ ও ভালোবাসা নিয়ে সকলের পাশে দাঁড়ানোর মনোবল নিয়ে এভাবেই জীবনের জয়গান গেয়ে চলুক এই যৌবনের দূতেরা ... ..  সুজাতাদের প্রজন্ম ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যা করে দেখাতে পারেনি তরীদের প্রজন্ম তা করে দেখাক। মানুষের পাশে থাকবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে চলুক ওরা নিঃস্বার্থ ভাবে। ওরা সুজাতাদের ঘর থেকে চলে যাওয়ার সময় তরীও আজ চুমকির হাত ধরে ওদের সঙ্গী হলো।ওদের হাজার বারণ না মেনে। খুব আনন্দ হচ্ছিল সুজাতার.. ওর আঙুলগুলো তরীর চিবুক ছুঁয়ে নিজের ঠোঁটের কাছে ফিরে এল.. ওদের সকলের জন্য মন বলে উঠলো 'মঙ্গল হোক'...... 




কবিতা প্রথম পর্যায় 
 
ভরসা রেখো
শ্রাবণী সেন

এই দুঃস্বপ্ন ভেঙে যাবে একদিন,  
কেটে যাবে একদিন এই দুঃসময়!
সেদিন তোমার সাথে আমার দেখা হবে।
ভরসা রেখো, একটু ভরসা রেখো
আজ পাহাড়প্রমাণ দুর্ভাবনা ঘিরে ঘিরে আসে 
যদি, তবু বিশ্বাস রেখো নিজের ওপর,
আর বিশ্বাস রেখো ভালোবাসায়!
একদিন এই অন্ধকার কেটে যাবেই 
রোদ ঝলমল কোনোদিনে আমাদের দেখা হবে 
শহরের ব্যস্ততম স্টেশানে.... 
অথবা কোনো বৃষ্টিভেজা দিনে অরণ্যপথে 
হেঁটে যাব পাশাপাশি, 
সবুজে সবুজ মেখে অজানায়।
হয়ত তখন চোখের নীচের কালিমা আর একটু গাঢ় হবে, 
 ঘুমহীন রাতের স্মৃতি খুব তাড়িয়ে বেড়াবে দুজনকেই।
তবু ভরসা রেখো, ভরসা রেখো নিজের ওপর 
আর ভরসা থাক ভালোবাসায়!
সেই ভরসায় এসো এই দিনগুলো পার হয়ে যাই।




ফেরা
নরেশ রায়

যেন ব্রম্মতালুতে হিম শিতল রুদ্র পরশ
কোন কিছু কথা না বলে যেন কালের হিস্ হাস্
এই বুঝি থেমে যাবে শেষ ট্রেণ ও ফুসফুসের ফিসফাস । 

আলিপুরদুয়ার মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ড । 

রাত সাড়ে দশটায় বুঝি থেমে গেছে বিশ্ব
রাজা আজ অক্সিজেন দেউলিয়াপনায় নিঃস্ব । 
 কল্পনায় মিশেলে ইজেলে খেলা করে
বিভৎস রক্তশোষকরা দল বেঁধে  নেমে আসে
ইংরেজী কল্পকথা থেকে আর
হিমোগ্লোবীনের অঙ্ক কমতে কমতে--
    ----দাও আরো দু বোতল ----
ডক্টর সরতাজ আহমেদ যেন আজ ভগবান 
তার সঠিক নিখুঁত রোগ নির্ধারণ । 
তরুণ তুর্কির মত তাতিয়ে আমায়
কার্ণিসের কৃষ্ণচূড়া ভালবাসা স্বপ্ন দ্যাখায় । 
শ্বাস কষ্ট ও এটাতো অতি স্পষ্ট -----
‘কোভিড’ নয় ? তাহলে হৃদয়বীণার
        তার ছিঁড়েছে নিশ্চয়  । 
ডিপ ডিপ ডিপ ডিপ 
অক্সিজেনের মলিন স্পীড
আর কতক্ষণ কে জানে কখন
--এনজিওগ্রাম--ইসিজি-অক্সিজেনের নল
  অতিদ্রুত আসে যেন ঘোর মহাকাল । 
মাথায় থাকো তুমি ড্ক্টর সরতাজ
ধন্বন্তরী হও মুমুর্ষু কে পথ দ্যাখাও 
এমনি করে গেয়ে যাও জীবনের জয়গান । 
ডাক্তার ফুসফুসের সাথে তোমার ফিসফাস
বাঁচলো রোগী জাগলো বিশ্বাস 
হয়তো আর একটু দেরী হলে
যেন কিছু কথা না বলে
বিদায় নিত নিতান্ত  অবহেলে । 
ধন্য তুমি সরতাজ আহমেদ
তোমার সঠিক নির্ণয় কৃষ্ণচূড়াকেও আবার
ভালবাসতে হাসতে নাচতে শেখালো----
--একটু চুক হলে-- টুক করে
জীবন পড়তো ঝরে । 
-বলেছিলে -মাত্র তিন দিন
তার ভেন্টিলেশন সি সি ইউ----
এর পর সবি তার হাতে
বিশ্ববিধাতার হাতে
ডাক্তার তোমার হাতেও যাদু আছে
এগিয়ে যাও ধণ্বন্তরি হও
বিশ্বজয়ী তুমি আমার কাছে ।  




আমাদের পৃথিবী
  রীনা মজুমদার

"অদ্ভুত নির্জন হয়ে শুয়ে আছে পৃথিবী.."
  এ কোন পৃথিবী !
মা তার সন্তানকে দূরে সরিয়ে রাখে
  এ কোন অচেনা পৃথিবী !
নারী শিউরে উঠে মাতৃত্বে, চন্দ্রাহত অন্ধকারে

ভোরের আলো ম্লান করে, আঁধার
  নেমে আসে ঘরে, এ কেমন পৃথিবী ! 
  হিম ঘরে জমছে প্রাণের উষ্ণতা
অলস দুপুর কাঁদে, নীরব রৌদ্রময় চঞ্চলতা।

এ পৃথিবী আমার, এ পৃথিবী তোমার
     এ পৃথিবী আমাদের-- তাই, 
পৃথিবীও অনুভব করে, 'সহজ পাঠ' ভাল নেই
আঠারোর উচ্চাশা, উচ্ছ্বলতা রয়েছে নীরবে
 তবুও আছে,
 মনুষ্যত্ব, অসংখ্য হাতের মধ্যে হাতে হাত
প্রত্যাশা আসবে আলো, ভাঙবে লৌহ কপাট
  হবে বিজ্ঞানের জয়, মানুষের জয়

অসীম সৌন্দর্যে ভরা পৃথিবীর বুকে
ফুটবে জয়ের ফুল, হাসবে আমাদের পৃথিবী..

 


অবিনাশী গান 
বিদ্যুৎ রাজগুরু

মৃত্যু তো বাঁধছে ঘর
ঘরের খুব কাছে
কম্পিত হৃদয় আমার
সর্বনাশের বাজনা বাজে

পাঁচিলের পাখি উড়ে গেছে 
কবে কে জানে
তবুও রুপালী ডানায় পাখি 
লিখে গেছে সবই গানে গানে

দুনিয়া তো ভরে গেছে পাপে
হিমরেখা কাঁদে খর তাপে

 তবুও তোমার স্তব্ধ ঠোঁটে
আমার ভীরু দুহাত রেখে
আমি গাই অবিনাশী গান
স্বপ্ন সুখ মেখে৷



জীবন 
শিল্পাশ্রী রায়দে 

জীবন মানে অনন্ত এই ব্রহ্মাণ্ড মাঝে 
পৃথিবী নামক ছাদ 
জীবন মানে সূর্য নামের এক পজেটিভিটির সান্নিধ্য;
ওহম্" শব্দের প্রতিধ্বনি, চিরন্তন সত্যের পথে-
বেশ কিছুদিন সূর্যালোকের ঘ্রাণ
তিসি পরিমান বৃষ্টিবিজুরীর নৃত্যকলা-
বৃহৎ থেকে মাইক্রো কিছু ব্যাক্টিরিয়া 
 জীব ও জড়ের উন্মুক্ত মিলনে আবেগ-অনুভূতির পাঁচমিশালি 
সাইকোলজিক্যাল বন্ড-
 জীবন মানে, রাতপাখির নীলাম্বরী রুপকে  বিদায় জানিয়ে একঝাঁক হলুদ পাখির গান, নদীর স্রোত, মিছিলের লাল পতাকা 
ঝুপড়ির ভাঙা থালায় হাভাতের গান ;
অনশন, বিগ্রেড থেকে রাজধানীর রাজপথ পর্যন্ত 
অনিষ্টকাল বনধ-
শরশয্যা, শোক-
 জীবন মানে   দৃশ্যপটে ভেসে ওঠা যাবতীয় ঘটনাপন্জীর মাঝে সুখ খুঁজে নেবার একটা দৃঢ় প্রচেষ্টা-

একটা সময়ের পর--
ফের নি:সীম ব্রহ্মাণ্ডের চীর নীলান্ধশূন্যতায় মিশে যাওয়া--




ভরসা  
পার্থ সারথি চক্রবর্তী 

সেদিন রাতে সব আলো নিভে গিয়েছিল
আকাশে চাঁদও ছিল না,
চারদিকে কালো অন্ধকার,
দু'ফুট দূরেও কিছু দেখা যাচ্ছিল না!

বৃষ্টি হচ্ছিল মুষলধারায়-
গহিন শাল-সেগুনের দুর্ভেদ্য জঙ্গল
হোঁচট খাচ্ছিলাম বারবার,
বাহাদুর, তুমি আমার হাত ধরেছিলে-
'বাবু, ডরনেকা নেহি-হাম হ্যায় না '
সত্যিই তুমি ছিলে, আজো জানি আছো।


হয়ত শুধু হাত বাড়ানোর সেই সাহসটা,
সেই ভরসাটাই শুধু নেই।



শ্রেষ্ঠ উপহার 
শ্রাবণী সেনগুপ্ত 

এ ঘোর অমনিশা 
হে প্রভু দেখাও দিশা ।
চারিদিকে খালি হাহাকার 
বুকফাটা আর্তনাদ সবাকার।
এতো মৃত্যু আর শোক,
এ জগতে নাই তার মাপজোক।
মন যখন হতাশায় ভেঙে পরে  
হঠাৎ আলো দেখা যায় যে দূরে।
এগিয়ে আসে সে নাইটেঙ্গেল রূপে,
দেবদূত হয়ে এ ধরার বুকে।
আশার আলো জাগায় ঘরে ঘরে 
তাঁর ছোঁওয়া পেয়ে মৃত্যুরা সরে।
বুকে জাগে বল আর  নতুন আশা-
দেবদূতেরা জাগায় ভরসা।
এ ধরণী হেসে উঠবে আবার ,
অবসান হবে সব আশঙ্কার।
সুন্দর এক পৃথিবী পাব শ্রেষ্ঠ উপহার। 



চোখ
সুনন্দ মন্ডল

ভেসে গেছে শহর
শহরের বাড়িঘর।

উড়ে গেছে আশা
সব নির্বিকার নিস্তব্ধ প্রলেপ।

মুছে গেছে ঢেউ
তবু জেগে রাত।

একাকী চড়ে বসে থাকা
বালিয়াড়ি কিংবা প্রপাত।

ধ্বংস লেগে রয়েছে কোণায় কোণায়
মরণের খেলায় সব কিছু শেষ।

শেষ হয়নিকো ভালোবাসা, শুধু 
দরকার ভালোবাসা ফুটে ওঠা সেই বিশ্বাসী চোখ।



প্রবন্ধ 

জীবন দায়ী অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু মিছিল বেড়ে চলেছে
বটু কৃষ্ণ হালদার

অতি মারী করোনা র দ্বিতীয় ঢেউয়ের অবশেষে স্তব্ধ হতে চলেছে ভারতবর্ষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।বিগত এক বছর যাবত এই করোনার প্রভাবে সমগ্র ভারতবর্ষে বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লাশের পাহাড় তৈরি হয়েছে হাসপাতালগুলোত। কর্মচ্যুত হয়েছে মানুষ।পরিযায়ী শ্রমিক দের অবস্থা চরমে পৌঁছে ছিল। স্কুল-কলেজে পঠন-পাঠন বন্ধ। সেই মহামারী থেকে যখন সাধারণ জনগণ ধীরে ধীরে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছিল, পরিবেশ যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল, মানুষ ভ্রমণ করতে শুরু করেছিল, কর্মহারা মানুষগুলো পুনরায় কর্ম পেতে শুরু করেছিল ঠিক সেই সময়ে এই সমাজের কিছু কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষগুলোর বিবেকহীন কর্ম নীতিতে ভারতবর্ষের অবস্থান আজ প্রশ্নচিহ্নের মুখে। মহারাষ্ট্র উত্তরপ্রদেশ সহ বহু রাজ্যে যখন ধীরে ধীরে করোনা ঢেউ চুপি সাড়ে বিস্তার লাভ করতে শুরু করেছিল, ঠিক সে সময়ে পশ্চিমবাংলার ক্ষমতা দখলের লড়াই আজ বহু মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল।বাংলা দখল করার উদ্দেশ্যে কার্যত প্রতিটি রাজনৈতিক দল গুলো জনগণের সাথে জীবন নিয়ে লুকোচুরি খেলা খেলা করে গেলো।তবে আমাদের দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া হলো শুধু মাত্র নেতা মন্ত্রী ও সমাজের এক শ্রেণীর উচ্চ শ্রেণীর স্বার্থ বাদীদের ভালো থাকার কৌশল মাত্র এই ভাষাটা বোধ হয় আমরা জেনে ও না জানার ভান করি।স্বাধীনতার আগে যেমন এক শ্রেণীর সুবিধা বাদী রা স্বাধীনতার নামে সাধারণ জনগণ কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।ঠিক তেমনি স্বাধীনতার পর নির্বাচনের নাম করে সুবিধা বাদীরা সাধারণ জনগণ কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে।গত জানুয়ারি থেকে দেশের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে, এসব জেনে শুনেও রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার কোনো প্রস্তুতি নেইনি। এই বাংলার কোন  রাজনৈতিক দল একটিবারের জন্যও প্রশ্ন তোলেনি নির্বাচন কমিশনকে,যে বর্তমান ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সময়ে এই বাংলায় কেন নির্বাচন হবে? এর একমাত্র কারণ হল ক্ষমতা দখল। জনগণ মরে মরুক তাতে আমাদের কি? কিন্তু ভোট হয়ে যাওয়ার পর একে অপরকে দোষারোপ করতে শুরু করেছে।
ইতিমধ্যেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যে পশ্চিম বাংলা তথা ভারতবর্ষকে মহাশ্মশানে পরিণত করবে সে বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে। কারণ ইতিমধ্যেই অক্সিজেনের অভাবে বহু মানুষ অসহায় ভাবে ছটফট করতে করতে মারা যাচ্ছে। চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল। অসহায় মানুষগুলো প্রিয়জনকে হারিয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। কিন্তু এসব নিয়ে কারোর ভাবার সময় নেই। কারণ রাজনৈতিক মহলে দরকার শুধু ক্ষমতা ও বাংলার মসনদ। দেশ এত কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আসার পরও এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি টাকা ব্যয় থেকে আমরা সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পারলাম ভারতবর্ষে নির্বাচন একটা উৎসব ছাড়া আর কিছুই নয়। এই উৎসবে একশ্রেণীর মনুষ তাদের প্রিয়জনকে হারায়,আরেক শ্রেণীর মানুষ সাধারণ জনগণের রক্তে হাত লাল করে সারি সারি লাশের মিছিল দেখে উল্লাস করে,। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে। অথচ দেশের সার্বিক উন্নয়ন বলতে গেলে শূন্য। যে টাকা রাজনৈতিক দলগুলো খরচা করেছে, তাতে কয়েকটা স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, উন্নত সরঞ্জাম, কিংবা কয়েকটা কল-কারখানা গড়া যেত। এই ভয়ঙ্কর সময়ে ডাক্তার-নার্সরা তাদের প্রয়োজনীয় উন্নত যন্ত্রপাতি কে থেকে শুরু করে নিজেদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পায় নি।এর কারণে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বহু ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী। আশার আলো একমাত্র ভ্যাকসিন।দেশে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই। অক্সিজেনের সিলিন্ডারের অভাবে রাস্তায় বাড়িতে এমনকি হাসপাতালের বাইরে রুগী মরে পড়ে আছে। অথচ দেশের বহু রাজ্যে অক্সিজেন প্লান্ট বানানোর জন্য টাকা দেওয়া হলে, তা সময়মতো বানানো হয়নি।সময়মতো অক্সিজেন প্লান্ট বানানোর অভাবে কৃত্তিম অক্সিজেন ভাণ্ডার তলানিতে এসে ঠেকেছে।যে কারণে কেন্দ্রীয় সরকার রুবেলের কম অক্সিজেন ব্যবহার করার কথা বলছেন।জনগণ নিজেদের স্বেচ্ছাধীন মত অক্সিজেন ব্যবহার করার অধিকার টুকুও হারিয়ে ফেলছে। অক্সিজেনের অভাবনীয় সংকটের মধ্যেও দেশে অক্সিজেন রপ্তানি ৭০ শতাংশ বেড়েছে।এটাকি কেন্দ্র সরকারের দায়িত্ব জ্ঞানহীন কাজ নয়?
ভাবতে পারছেন আমরা কোন সময়ের মধ্য দিয়ে চলছি।যে কারণে রতন টাটা,সোনু সুদ অক্ষয় কুমার, অমিতাভ বচ্চন,সুনীল শেট্টির মত মানুষরা মাসীহা হয়ে এগিয়ে এসেছে সাধারণ মানুষের সাহায্য করতে।আবার কেউ কেউ নিজেদের কে বাঁচাতে পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে বিদেশে। যে দেশগুলো ভারতের দয়ায় বেঁচে থাকে,সেই সব দেশ আজ ভারতকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসছে,এসব কি আমাদের দেশের চরম লজ্জা নয়? অক্সিজেন এই মুহূর্তে কতটা জরুরি তা বুঝিয়ে দিয়ে গেল অতি মারি করোনা। সুষ্ঠু সামাজিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে সবুজ সতেজ বন ময় একমাত্র বিকল্প। এই গাছ পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে আমাদেরকে প্রাণদায়ী অক্সিজেন দেয় এবং দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে শোষণ করে। এই ভাষা টুকু সমাজে বাচ্চা থেকে বয়স্ক বোধহয় সবাই জানে। তবুও সভ্যতার শ্রেষ্ঠ মানব সভ্যতার দ্বারা জঙ্গল কেটে  চোরাপথে কাঠ বিক্রির ব্যবসা রমরমা হয়ে উঠেছে।গাছ মারো। দামের লোভে। ঝরুক সবুজ রক্ত। শেষ হয়ে যাক অক্সিজেন। পরোয়া নেই। বহরমপুর শহরে তাই তো হচ্ছে! ইতিহাসের শহর। নবাবিয়ানা, ঐতিহ্য। প্রাচীন, অতি প্রাচীন গাছের আর ঠাঁই নেই সেখানে। খুল্লমখুল্লা চলছে এই খুনোখুনি। কী দোষ? জীবন দেওয়া? প্রাণভরে অক্সিজেনের যোগান যুগিয়ে যাওয়া? সভ্যতার আদালতে এর শাস্তি হবে না, হয় নাকি! ধীরে ধীরে মৃত্যু। স্লো পয়জন। এটাই নাকি এদের ভবিতব্য!ঐতিহ্যময়, সবুজ স্কোয়ার ফিল্ড গ্রাউন্ডেও তাই যেন ধূসর ছায়া।এসবই ঘটনা ঘটছে প্রশাসনের চোখের সামনে। প্রশাসন হাতগুটিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকায়। কারণ চোরাকারবারীদের থেকে একটা অংশ তাদের পকেটে ও তো আসে।তবে সবুজ সতেজ বনময় ধ্বংসের অন্যতম একটি কারণ হলো মানব সভ্যতার আধুনিকীকরণ।বিজ্ঞান কে সঙ্গী করে মানুষ যত উন্নত হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, ততোই সবুজ সতেজ বনময় ধ্বংস করে তার উপর গড়ে তুলছে কংক্রিটের ইমারত। জনগণ তার পরিবেশকে যেমনভাবে সুন্দর করে সাজাচ্ছে, উল্টোদিকে সবুজ সতেজ বনময় গুলো দাঁত খিঁচিয়ে হাসছে। মানব সভ্যতা যতই এগিয়ে চলেছে,সবুজ সতেজ পরিবেশ তাতে উলঙ্গ হচ্ছে। ধীরে ধীরে পরিবেশে অক্সিজেন কমছে, আর কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পাল্লা ভারী হচ্ছে। অগ্রগতির নামে আমরা ধীরে ধীরে ইতিমধ্যেই ধ্বংসের মুখে পৌঁছে গেছি তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এর সুদুরপ্রসারি ফলাফল হল মানুষকে প্রাকৃতিক অক্সিজেন ছাড়াই, কৃত্তিম অক্সিজেনের উপর নির্ভর হতে হচ্ছে।এছাড়া সুন্দরবনের জঙ্গল ধস নেমে নদীর গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে।এর কারণ হলো চুরি করে গাছ কাটা,আর নদীর গর্ভ থেকে বালি চুরি করে নদীর মোহনাকে শূন্য করে দেওয়া।তবে সবথেকে ভয়ঙ্কর খবর হলো গতবছর পরিবেশে সবথেকে বেশি অক্সিজেন সরবরাহ দাতা অ্যামাজন ও অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।এবার জ্বলছে সুন্দরবন। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মিজোরামের বন জঙ্গল। বিধ্বংসী দাবানল এর লকলকে শিখায় বহু বন্যপ্রাণী মারা গিয়েছে।পাখি পক্ষ থেকে শুরু করে বহু জীবজন্তু বর্তমানে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। এই জঙ্গলের সঙ্গে পতঙ্গদের সঙ্গে নাড়ির সম্পর্ক। একটা সময় ছিল পৃথিবীতে শুধুই গাছ ছিল কিন্তু সেই গাছে কোন  ফুল ছিল না। এরপর যখন প্রকৃতির টানে গাছপালার শাখা-প্রশাখায় রং-বেরংয়ের ফুলে ভরে উঠলো, তাদের সঙ্গে পতঙ্গদের খুব ভাব হলো। এই সমস্ত উড়ন্ত কীটপতঙ্গ রা ফুলের রেণু হাতে পায়ে মেখে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করল। এর বিনিময়ে ওরা পেল মিষ্টি মধু।তাই জঙ্গল পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার ফলে পরিবেশে যে শূন্যতার সৃষ্টি হল, তা পূরণ করব কি করে আমরা? এতে নষ্ট হতে পারে পরিবেশের ভারসাম্য।সব জেনে  প্রশাসন গাছ চুরি ঠেকাতে পারেনি।
জীবনের সাথে এক না জানা সম্পর্কের অনুভূতি। না দেখে ও তাকে স্পর্শের অনুভূতি মধ্যে দিয়েও আত্মার পরম পাওয়া। মানব জীবনে তার অবদানের ঋণ কখনোই শোধ করার নয়। তার না থাকা র যন্ত্রণা প্রতিটি মুহূর্তে অবদান করে মানব সমাজ। বর্তমান এই অতি মারি র সময়ে তার শূন্যতায় হাহাকার চলছে।হ্যাঁ, বলছি অক্সিজেনের কথা।বাংলায় যাকে অম্লজান বলা হয়। ১৭৭৪ সাল তখন। বিজ্ঞানী পি.বায়েন তার গবেষণাপত্রে ধাতু দাহ করলে তার ভর বৃদ্ধির কারণ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। তিনি বলেন বাতাস থেকে ভারী এক অদ্ভুত পদার্থ দাহ করার সময় ধাতুর সাথে যুক্ত হয়। পারদ্ঘটিত যৌগের তাপবিযোজনের মাধ্যমে এই গ্যাসটি উৎপন্ন হয়েছিল। বায়েন নিজের অজান্তেই কাজ করলেন অক্সিজেন নিয়ে এবং দুর্ভাগ্যবশত তার কাছে অজানাই থেকে গেল নিজের আবিষ্কার। একই বছর রসায়নবিদ জোসেফ প্রিস্টলি যৌগ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ইতোমধ্যে তিনি কার্বন-ডাই অক্সাইড এর মত গ্যাস আবিষ্কার করে ফেলেছেন। প্রিস্টলি একদিন নিজের ঘরে গবেষণা করতে গিয়ে পাত্রে কিছু সালফিউরিক এসিড নিয়ে উত্তপ্ত করছিলেন। কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করলেন পাত্র থেকে এক ধরনের গ্যাসীয় পদার্থ বের হচ্ছে। প্রিস্টলি গ্যাসটি আলাদা পাত্রে সংরক্ষণ করলেন। পরীক্ষা করে দেখা গেল পাত্রের কাছে জলন্ত মোমবাতি নিয়ে আসলে তা আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। শুধু তাই নয় তিনি পাত্রে একটি ইঁদুর ছানা আটকে পরীক্ষা করলেন। দেখলেন ছানাটির যতক্ষণে মারা যাওয়ার কথা তার চেয়ে বেশিক্ষণ সময় বেঁচে ছিল। জোসেফ প্রিস্টলি শুধু এইটুকু বুঝতে পেরেছিলেন যে এটি বাতাসের উপাদান যা দাহ করতে এবং প্রাণীর নিঃস্বাস নিতে সাহায্য করে। পরবর্তিতে তিনি প্যারিসে গিয়ে বিভিন্ন ফরাসি বিজ্ঞানীদের সাথে এ নিয়ে বিশদ গবেষণা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বিজ্ঞানী ল্যাভয়সিয়ে বিষয়টি নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখান। তিনিই প্রথম গ্যাসটির অক্সিজেন বা অম্লজান নামকরণ করেন। কেননা তখন ধারণা ছিল এটি একটি জটিল পদার্থ। পরে গ্যাসটি নিয়ে অনেক গবেষণা করে জানা যায় ধারণাটি ভুল ছিল। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অক্সিজেন বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। তবে আজকের ব্যস্ত শহরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন বিরল বস্তু।
অক্সিজেন আবিষ্কারের পর প্রিস্ট্‌লে প্যারিসে গিয়ে  সহ অন্যান্য ফরাসি বিজ্ঞানীদেরকে বিশদভাবে তার গবেষণার কথা বলেছিলেন। এই অংশটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রিস্ট্‌লের চেয়ে ল্যাভয়সিয়েই এই আবিষ্কারটির মর্ম বেশি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রিস্ট্‌লে একসময় মনে করতেন তার এই আবিষ্কারটি একটি জটিল পদার্থ। কিন্তু ১৭৮৬ সালে ল্যাভয়সিয়ের ধারণা দ্বারা অণুপ্রাণিত হয়ে তিনি একে মৌল হিসেবে দেখতে শুরু করেন। এ হিসেবে অম্লজান আবিষ্কারের পিছনে মূল অবদান প্রিস্ট্‌লে এবং বায়েনের। এদের সাথে  নামক আরও একজন বিজ্ঞানীর নাম সংযোজন করা যেতে পারে। শিলে ১৭৭২ সালে Chemical Treatise About Air and Fire নামক একটি বই লেখার কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু প্রকাশকের দোষে বইটি ১৭৭৫ সালে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ে অক্সিজেনের বর্ণনা প্রিস্ট্‌লে বা বায়েনের দেয়া বর্ণনার চেয়েও নিখুঁত ছিল। কিন্তু প্রকাশক দেইতে প্রকাশ করাতে তিনি অক্সিজেনের আবিষ্কারক হিসেবে নিজের নাম প্রস্তাব করতে পারেননি। কারণ প্রিস্ট্‌লের আবিষ্কার প্রকাশিত হয় ১৭৭৪ সালে। শিলে অম্লজান উৎপন্ন করেছিলেন অজৈব যৌগের বিয়োজনের মাধ্যমে।
"বৃক্ষ নেই, প্রাণের অস্তিত্ব নেই, বৃক্ষহীন পৃথিবী যেন প্রাণহীন মহাশ্মশান।”অফুরন্ত সৌন্দর্যের এক মধুর নিকুঞ্জ আমাদের এ পৃথিবী। এই পৃথিবীকে সবুজে-শ্যামলে ভরে দিয়েছে প্রাণপ্রদায়ী বৃক্ষরাজি। এ বিশ্বকে সুশীতল ও বাসযোগ্য করে রাখার ক্ষেত্রে বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য। আবার মানুষের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্যে যেসব মৌলিক চাহিদা রয়েছে তার অধিকাংশই পূরণ করে বৃক্ষ। তাই মানবজীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরীসীম।মানুষ ও প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বৃক্ষের ব্যাপক আবশ্যকতা রয়েছে। তাই বৃক্ষকে মানবজীবনের ছায়াস্বরূপ বলা হয়। বৃক্ষ আমাদের নীরব বন্ধু, সে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত কত যে উপকার করছে তা একবার ভেবে দেখলে অনুধাবন করা যায়।এই মুহূর্তে সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য বান নাগরিক হিসাবে সচেতন হওয়া দরকার।পরিবেশে অক্সিজেন শূন্যতার ঘাটতি মেটানোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে হবে। স্কুল-কলেজ পঞ্চায়েত স্তর থেকে শুরু করে কর্পোরেশন স্তরে সামাজিক সচেতনতা উদ্দেশ্যে বনসৃজন প্রকল্পের উদ্যোগ নিতে হবে। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে গাছ লাগানোর চেষ্টাকে সফল করে তুলতে হবে। যেখানে যেখানে গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সেখানেই প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে হবে। তাদেরকে গাছের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝাতে হবে।আর তার সঙ্গে এটা অবশ্যই বোঝাতে হবে গাছ আছে বলেই পরিবেশ বেঁচে আছে। আর পরিবেশ বেঁচে আছে বলেই আমরা বেঁচে আছি। গাছ কাটা নয়, একটি গাছ একটি প্রাণ এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সফল করে তুলতে হবে। আসুন জাত,ধর্ম নির্বিশেষে আমরা সবাই গাছ লাগানোর কর্মসূচিতে নিজেদেরকে নিয়োজিত করি। আর তাতেই বাঁচবে, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ। নইলে আগামী দিনে মৃত্যুর হার এমনভাবে বেড়ে চলবে, মৃতদেহ সৎকর করার মানুষ জন থাকবে না।শুধু তাই নয় একদিন হয়তো মানুষকে এই পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন ও পয়সা দিয়ে কিনতে হবে।তার সঙ্গে এটাও প্রমাণিত হয়ে যাবে সবুজ সতেজ পরিবেশ ধ্বংস করার জন্য দায়ী বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানব সভ্যতা। সবুজ সতেজ পরিবেশ ধ্বংসের কর্মকান্ড, আমাদের কাছে গৌরবের নয়, অত্যন্ত লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। শুধু তাই নয় আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা নিজেরাই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে যাচ্ছি। এর সাথে সাথে এটাও প্রমাণ হয়ে যাবে আমরা নিজেরাই আমাদের কফিনের গর্ত খুঁড়ে চলেছি।



ছড়া


এ সময়

মাথুর দাস


ভ্যাকসিন নিয়ে চলতেই থাক এক সীন্

দিন দিন বাড়ে বেঁচে থাকবার আশ,

টিকা নিলে ঠিক টিঁকবই আরো বেশিদিন

কাবু হয়ে যাবে খিঁটকেল ভাইরাস ।


মারী নিয়ে ঘর মানুষেরই চিরকাল

আসুক যত না জীবাণুরা তেজবান,

সময় নিরিখে সব ক্রমে হয় বেহাল

'বিষে বিষক্ষয়' অক্ষয় বাণী বহমান ।


দাপুটে অসুখ চলে যাবে একদিন

যদি জীবনশৈলী থাকে নিয়ম-ছন্দে,

হাসবে ফুলেল নতুন আলোর দিন

প্রকৃতি আবার ভরবে যে মধু গন্ধে ।


মার নেই জেনো কখনো সাবধানের

বিশ্ব তো চলে মিলিয়ে কারণ-কার্য,

করাল রাত্রির ভোর সে কথা জানে

ভয় পেয়ে যাই তবু জয়ই অনিবার্য । 





মধুমাস জৈষ্ঠ্য
মজনু মিয়া 

আম পেকেছে জাম পেকেছে 
কাঁঠালের ঘ্রাণ খুব,
মধুমাসে ফলের ঘ্রাণে
মন দিতে চায় ডুব।

থোকা থোকা আম ধরেছে 
 জাম পেকে কালা,
খেতে মজা সুস্বাদ কাঁঠাল
গরমে জ্বালা!

কাক বাঁদুর বানরে খেয়ে
লিচু সারা হয়,
কাঠবিড়ালির অধিক মজা
জৈষ্ঠ্যমধুময়।



চিরদিনের গল্প 
শতাব্দী সাহা


সারি সারি ঘরদোরময়
দরজায় গান গায় ঝুলন্ত তালা
আকাশ নীলে খামখেয়ালী
মেঘের মতো ছোট্টবেলা।

মাঠের’পরে সবুজ ঝরে
আকুল করে মনটা
হারানো সুরে অনেক দূরে
নিস্তবদ্ধ  ছুটির ঘন্টা ।

দেরাজ মাঝে একই সাজে
“লাল ফিতে সাদা মোজা”
প্রশ্নেরা অফুরান
নিরলস তবুত্ত উত্তর খোঁজা।

ডেস্কের জমা ধুলো
হাতড়ায় কোলাহল
শেকলের বাঁধা কেটে
খুলে যাক কপাটকল ।

ব্যাগ বোঝে
বোঝা নয় বই টানা
স্বপ্নের পালকে
জুড়ে যায় ইচ্ছেডানা।

মিঠেকড়া বকুনির ধূপছায়া
জমে রয় পাহাড়ে
টিফিনের কৌটোটা
লুচি খোঁজে  আহারে!

বিটনুনে হুটোপাটি
মেতে ওঠা অল্পেই
আমাদের কথকতা
চিরদিনের  গল্পেই।



অনুগল্প 


যুদ্ধ
দেবর্ষি সরকার

বাদবাকি দিনগুলির মতই আজও সকালের সূর্য উঠার সাথে সাথে জানিয়ে দিল যে আজও লকডাউন। টিয়াপোতা বস্তির ঠিক পশ্চিম কোণে একটি অন্ধকার ঘরে চারটি প্রাণীর বাস। রমা,রমার দুই মেয়ে আর রমার স্বামী কালু। কাল দু দিন হল মাক্স না পড়ার দায়ে জেলে গিয়েছে। ঘরে এখন তিনটি প্রাণী ,রমা আর তার দুই মেয়ে। দুদিন হল তারা জল বাদে আর কিচ্ছুটি খায়নি। ঘরে চাল নেই, ডাল নেই, খাবে কি? কেউ এসে সাহায্যও করে না। এতক্ষণে রমা ছেঁড়া চাদরটা গায়ে দিয়ে বাইরে এসে বসলো। ঘরে কঙ্কালসার দুটি মেয়ে শুয়ে। এমন সময় এক ভদ্রলোক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে রমার বাড়িতে হাজির। সে বেরিয়েছে যারা খেতে পারছে না তাদের উপকার করার জন্য। রমা তৎক্ষণাৎ অশ্রুসিক্ত নয়নে জিনিসপত্রগুলি তার হাতের থেকে নিয়ে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। মেয়ে দুটিও যেন খাবার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। এই ভাবেই রমারা কখনো জীবন যুদ্ধে হারেনা, যুদ্ধ চালিয়ে যায়।




কবিতা দ্বিতীয় পর্যায় 


অদৃশ্য আলো
লুনা সিং

মায়াবী আহ্বানে অলীক স্বপন করাঘাত হানে 
ভাবাবেশে।চমৎকৃত ভুজে মরলীধারি দাড়ালো 
এসে,বাজায় বাঁশি হৃদয় দুয়ারে ক্রমাগত
চেতনাআগত স্তম্ভিত ছিন্নগুন ধনুকের মত।
মণিদীপ্ত দিব‍্য আলোকের স্নেহে মৌন আগমনে
হেরি-- ঝরণা ধারা ঝরে মম নয়নের কোনে।
স্নিগ্ধ সুরে প্রতিধ্বনি শুনি অমৃতের বানী গীতা
নিলিমার জোৎস্নাধারে সুদর্শনচক্রধারী পরম পিতা।
শিহরন রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতি রোমকূপে তৃষিত অন্তরে
কাঙ্খিত সাধনার সিদ্ধিলাভ সার্থক প্রতিক্ষারে
সবেমিলে একাকার রাম,শিব,আল্লা,রহিম,জিশু,পিরে।


প্রত্যয় 
স্বপন দত্ত 

এক বিধ্বস্ত কালবেলায়
উপনীত আমরা।
অতি মারির কালনাগিনী র ছোবলে
তীব্র হলাহল।
শুধু মৃত্যুর মিছিল -----
চারদিকে হাহাকার,
স্বজন হারানোর ব্যথায়
অশ্রুর বন্যা।
নেই কোন সান্ত্বনার ভাষা,
অসহায় মানুষ আজ দিশেহারা।
এ কোন রাতের অন্ধকার !

কিন্তু ধ্বংসের গর্ভেই তো
সুপ্ত থাকে ,-----
সৃষ্টির বীজ।
কাল রাতের পর ই তো ঘটে
নতুন সূর্যোদয়।
' জীবনতো জীবনের জন্যে '
হারালে চলবেনা মানসিক দৃঢ়তা,
ধৈর্য্য আর ভয়ের
চোখরাঙানি।
জয় হবেই " অমৃতের পুত্রদের " ---
থাকুক অটুট আত্মপ্রত্যয়।



লক্ষ্য
 মহাজিস মণ্ডল

মনস্ক হবার জন্য দাঁড়িয়ে থাকো
আত্মনির্ভরতার মাটির উপর
ক্রমাগত ঘড়ির কাঁটা ঘুরে যাচ্ছে
               আত্মদহনের নিয়ত সংসারে

জোছনার ঘর-বাড়ি বড় মায়াময়
অভুক্ত পেটে জ্বলে অনল
সমর্থ হাতে যতই ধরে থাকো বৈঠা
লক্ষ্যহীন হলেই সম্মুখে নেমে আসবে প্রগাঢ় অন্ধকার...



 প্রত্যয়ী 
 অদিতি মুখার্জী সেনগুপ্ত 

বুলবুল, ফনি,  নিস্বর্গ, আমফান আরো কত শত ঝড় করেছে কত ক্ষয় ক্ষতি, 
আসছে ইয়াস তাই ভয় বয় মনে, কি হবে পরিনতি? 

এরই মাঝে রয়েছে মনের গভীরে প্রত্যয়, 
আসিবে সুদিন, আমরা করব দুঃখ- গ্লানি সকলই জয়।

মহামারীর প্রকোপে হারিয়েছি কত স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশী, 
তবু কেন জানি মনে হয় হেরেও জিতব আমরা, ফুটবে মুখে আগের সেই হাসি। 

ভিন্ন ব্যক্তির ভিন্ন মতবাদ না জানি শুনি কত শত উক্তি, 
এ যেন এক নতুন যুদ্ধ যাতে হিসাব মেলা ভার কি হল লাভ আর কি হল ক্ষতি। 

জীবনের এই যুদ্ধে মুল্যবান অনেক শিক্ষা পেয়েছি নিত্য, 
কিছু জাগিয়েছে মনে আশা কিছু করেছে আশ্চর্য, 
কাটিবে দুর্দিন আসিবে সুদিন দেখিবো ভোরের সূর্য, 
ভোরের নতুন আলোয় উজ্জ্বলিত হবে পূর্ব দিগন্ত।



হাতি ও পিঁপড়ের গল্প
রফিকুল নাজিম

হে অসভ্য,
তুমি জালিম- মস্ত জানোয়ার- দানবীয় বন্য হাতি
ইচ্ছে করলেই তুমি মাড়িয়ে দিতে পারো ধানক্ষেত 
তুমি মুছে দিতে পারো কৃষাণীর সুখ আহ্লাদ 
ইচ্ছে করলেই লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারো গেরস্তবাড়ি
আহা! আল-আসকার ধ্বংসস্তূপ, রক্তের দাগ ও মৃত্যু। 

যাদেরকে তুমি পিঁপড়ের মত পিষে পিষে মারছো
তারা যদি একবার দলবদ্ধ হয়?
যদি শিনা টান টান করে তোমার সামনে এসে দাঁড়ায়?
যদি কায়দা করে কয়েকটা ঢুকে যায় তোমার কানে?
যন্ত্রণায় তুমিও চিৎপটাং হবে;
সাবধান,
ফিলিস্তিনের শিশুরা কিন্তু হাতি ও পিঁপড়ের গল্পটা জানে।



ক্ষুধার্ত 
সুরজ সিং 

অজস্র অবসাদ  
আশ্চর্য , অন্তহীন ফুটপাতে 
আজও শিউরে ওঠে  ।

চুপচাপ , নিস্তব্ধ , নিরপরাধ জীবন 
বুভুক্ষুর মতো পরিত্যক্ত  ।

বিস্ময়কর দৃশ্য........
তাদের হাত , পা পঙ্গু  .....!
শুধু দস্তার থালা
জাতিশ্বরের দেওয়া একমাত্র ভরসা  ।

কাঠঝিঁঝির মতো পেটের মধ‍্যবর্তী মাংসপিন্ডে
প্রতিনিয়ত আঘাত করে চলছে 
তাদের অনাহারী প্রাণ  ।

মৃত্যু তাদের দৃষ্টির সম্মুখে দাড়িয়ে 
অথচ তারা অধিভৌতিক নয় এক চিলতেও ।

এখানে জীবনের প্রাসঙ্গিকতা নেই  ।

শ‍্যাওলাপড়া ফুটপাতেই 
তারা থাকে চিরকাল ক্ষুধার্ত।



ধর্ম নয় কর্ম চাই
নয়ন রায় 

যদি বিদ্ধান্ হও শত্রু
          কলম হাতিয়ার !
যদি মূর্খ হও  শত্রু
তবে অস্ত্র'য় দরকার।
রিক্ত হাতে রক্ত চুষি  আর কত__
                                   বাবার !
পিঠ ঠেকেছে__কে সামলাবি ?
আয় দেখি একবার !
যদি বেকার জোয়ান হই আগুয়ান
কোথায় পালাবি ?
ধর্ম নয় কর্ম চাই
আমি দেশকে ভালোবাসি।

শুকনো মুখে বুক চাপরে আমরাও চেয়ে আছি
সিংহাসন তো সবার স্বপ্ন ;
অর্থ নাই তা'তে কি !
রাষ্ট্র কারো বাবার ?
যোগ্যতা যদি থাকে,আছে মানুষের অধিকার।
কে আছিস ক্ষমতাবান  রুখে দেখা  হিম্মোৎ কার !
আলালের ঘরের দুলাল নই মোরা
খেটে খাওয়া চাষির হাতিয়ার।
                                 হুশিয়ার !
মরণ বরণ করব ভাতের লড়াই লড়ব
ধর্ম গিলে পেট ভরেনা কর্মের আবদার।
বিদ্রোহ চাইনা কেউ'ই দেশটা সবার।
তা'বলে ভীরু ভাবিস'নে,দম নেই রুখে দাঁড়াবার !
যদি পেটে পরে লাথি আমরাও জেগে আছি
সাবধান,হুশিয়ার !
ধর্ম নয় কর্ম চাই
আমরা দেশকে ভালোবাসি।





মুজনাই সাহিত্য সংস্থা 

রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020

হসপিটাল রোড 

কোচবিহার 

৭৩৬১০১

ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com (মাসিক অনলাইন)

- mujnaiweekly@gmail.com (সাপ্তাহিক)

 

 প্রকাশক- রীনা সাহা 

সম্পাদনা, প্রচ্ছদ, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায় 

মুজনাই অনলাইন জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা ১৪২৮