সম্পাদকের কথা
বেড়ানোর কথা শুনলেই মন নেচে ওঠে। আসলে মন তো যাযাবর। তাকে বাঁধে সাধ্য কার! তাই প্রাত্যহিকতার একঘেয়েমি সরিয়ে রেখে ছুঁটে যাওয়া বারবার কখনো সমুদ্রে, কখনো পাহাড়ে, কখনো মরুভূমিতে...কখনো আবার একদম ঘরে পাশে 'একটি ধানের শীষের ওপর একটি শিশিরবিন্দু' দেখতে। মোটকথা, ভ্রমণ বাদে জীবন? না...সম্ভব না।
এই সংখ্যা উৎসর্গ করা হলো বিখ্যাত ভারতপথিক সুবোধকুমার চক্রবর্তীকে। ১৯১৮ সালের ১৫ই মার্চ জন্মগ্রহণ করা এই প্রখ্যাত সাহিত্যিক বহু রচনা করলেও খ্যাতি তাঁর উপন্যাস -রসসিক্ত কাহিনী 'রম্যানী বিক্ষ্য`-এর জন্য। এই সংখ্যায় শব্দে ও ছবিতে কিছু জায়গাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বেশির ভাগ জায়গাই অজানা, অচেনা। মুজনাইয়ের মতোই অখ্যাত। আর এটাই মুজনাইয়ের বিশেষত্ব যে অচেনাকে চেনানো, জানানো।
মুজনাই অনলাইন মাঘ সংখ্যা ১৪২৫
সাহিত্যিক সুবোধকুমার চক্রবর্তী
(জন্ম - ১৫ মার্চ, ১৯১৮
মৃত্যু- ১৮ জানুয়ারি, ১৯৯২)
মুজনাই অনলাইন মাঘ সংখ্যা ১৪২৫
এই সংখ্যায় আছেন যাঁরা
দেবাশিস ঘোষ, কুমকুম ঘোষ, সঞ্চিতা দাস, সুব্রত কান্তি হোর, কাকলি ভদ্র, রীনা মজুমদার, রুদ্র সান্যাল, মাম্পি রায়, মৌসুমী ভৌমিক, রতন দাস, ঋতভাষ রায়, শৌভিক রায়
মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন মাঘ সংখ্যা ১৪২৫
ঠিকানা- হসপিটাল রোড, কোচবিহার, ৭৩৬১০১
প্রকাশক- রীনা সাহা
সম্পাদনা, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়
মুজনাই অনলাইন মাঘ সংখ্যা ১৪২৫
-: অভিমুখ :-
মৌসিনরাম
শৌভিক রায়
Maw শব্দের অর্থ যে পাথর তা জানা ছিল আগেই। জানা ছিল সাম্প্রতিক কয়েক দশকের বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় (বছরের হিসেবে) এখানেই। এটাও জানতাম কলম্বিয়ার লোরো এবং লোপেজ ডি মাইকে ঘাড়ের কাছে শ্বাস ফেললেও গ্রীনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজের নাম তুলে নিয়েছে পূর্ব খাসি হিলসের এই ছোট্ট গ্রামটি।
......কিন্তু জানতাম না শিলংয়ের ৬৫ কিমি দূরে (চেরাপুঞ্জি থেকে ১৬ কিমি পশ্চিমে, যদিও পাহাড়ের জন্য যাওয়া ভালো শিলং থেকেই) মৌসিনরামে লুকিয়ে আছে এতো কিছু।
না ...ভূগোল বা ইতিহাস দিয়ে আমি বিচার করছি না মৌসিনরামকে। করছি না বিচার অন্য কোনো আঙ্গিকেও। আমাদের মাত্র কয়েকদিনের এই বেড়ানোর উদ্দেশ্য মৌসিনরাম ছিলও না। উদ্দেশ্য আগের দিনই সফল হয়েছে দারুণভাবে। কিন্তু ভাবিনি মৌসিনরামেরও এতো কিছু দেওয়ার আছে।
পথের অপরূপ শোভা বাদেও খাসি জনজাতির সাথে মেশা, তাদের গ্রাম, গ্রামের দোকান ইত্যাদি শেষ হবার পরে বাঁক ঘুরতেই যেন রহস্যময় হয়ে উঠলো চারদিক। মেঘ আর রোদের যুগলবন্দিতে সে এক অনন্য পাওয়া। সাথে হু হু হাওয়া আর ছমছমে পরিবেশে বৃষ্টির গন্ধ। দূরে পাহাড়ের গায়ে এলিয়ে থাকা মৌসিনরাম ঢেকে গেলো মুহূর্তেই। উড়ে এলো মেঘ সওগাত জানাতে।
মৌজীর্নবুয়ন গুহার স্ট্যালাগমাইটের গরুর বাঁটের মতো ঝুলতে থাকা আর ঠিক নিচে থাকা শিব লিঙ্গরূপী পাথরে টপ টপ করে জল ঝরানো এক তাজ্জব কান্ড। গুহার আদিম প্রকৃতি, গারো পাহাড়ের সাজু গুহার সাথে এর যোগাযোগ ইত্যাদি নিয়ে কেন কিভাবে কবে......নাঃ আমার মাথা ঘামানোর দরকার নেই। শুধু জানি এই গুহার অভ্যন্তরে সাড়ে চার কিমি যাওয়া যায় আলো নিয়ে। ভীতু মানুষ আমি, আছে ফেরার তাড়াও। তাই খানিকটা ঢুকেই আমার গুহাদর্শন সম্পূর্ণ। বোঝা গেল অবশ্য তাতেও গুহার আদিম রূপ। আর বাকি কিছুতে যাই না, আছেন গুণীজন, পন্ডিত ব্যক্তিরা, বিজ্ঞানীরা। জানাবেন তাঁরা আমি তো কেবল দেখবো। দর্শনেই আমার আনন্দ। দেখলামও। বর্ণনা কি দেব আর! যে দেখেছে সে জেনেছে আর মজেছে... আর না দেখলে, সত্যি বলতে, বোঝা মুশকিল। গুহার রাস্তাটাই মনে করিয়ে দেয় "সাধু সাবধান"...
গত দিনের মূল উদ্দেশ্য সফল হয়েছে ঠিকই কিন্তু সুন্দরতম ব্যাপারগুলি তো সহজেই সফল হয় না....তাই-ই বোধহয় সারা শরীরে সুঁচ ফোটার যন্ত্রনা। কিন্তু এই অদ্ভুত গুহা মুখে দাঁড়িয়ে নিমেষেই হাওয়া সেসব ! আকাশ কখনো ঘন কালো, সূর্য নেই কোত্থাও আবার হঠাৎ হঠাৎ সে নাগালের কাছে চলে এলেও মেঘের চাদর গায়ে জড়িয়ে নিচ্ছে একটু পরেই ৪,৬০০ ফিট উচ্চতার এই জনপদে। দূরে দূরে পাহাড়ের গায়ে দু'চারটে বাড়ি, দু`একটা চার্চ। পাইন, বার্চ, দেওদারের ডালে অদ্ভুত অজানা ডাক আর সাথে ঝিঁঝিঁপোকার রোমহর্ষক গুঞ্জন।
সারা চেরাপুঞ্জির প্রতিটি গ্রামই ঝকঝকে তকতকে। স্যালুট এদের পরিবেশ ভাবনাকে, এলাকাকে নোংরা না করবার মানসিকতাকে। মৌসিনরামও একই। জনবসতিতে খানিক পরেপরেই রাখা ডাস্টবিন, নেই কূটোটুকু পর্যন্ত পথেঘাটে। মানুষ যেমন দায়িত্ব নিয়েছে নিজেদের বসতিকে ঝকঝকে রাখার তেমনি বৃষ্টিও যেন পালন করছে তার কাজ কেবল ঝরে প্রকৃতিকে আরও সবুজ ক'রে!
আঁকাবাঁকা পথে এবার সারা গ্রাম বেড়ানো। লোককে জিজ্ঞেস করে পথের খোঁজ নেওয়া, কেননা আমাদের গাড়ি সমতলের, নিজেদের শহরের। আজকাল গুগুল ম্যাপের কল্যানে বেশির ভাগ জায়গাতেই দরকার পড়ে নি এমন কি পথ নির্দেশিকা পড়বারও। গুগুল ম্যাপের মহিলা কণ্ঠ ডাইনে বাঁয়ে, ১০০ মিটার , ৫০০ মিটার, টার্ন লেফট, টার্ন রাইট করে ঠিক পৌঁছে দিলেও সব জায়গাতেই তিনি যে অন্তরে থেকে চালাবেন তা তো হতে পারে না ! আমার পুরুষত্বেও খানিকটা লাগছিলো যেন ব্যাপারটা! এই মহিলা আমাদের চালাচ্ছেন নেপথ্যে থেকে এভাবে ! মৌসিনরাম অন্ততঃ আমাকে সেটা থেকে মুক্তি দিল।
খাসি মহিলাদের চালানো দোকান থেকে কেক, পাই (খ্রীষ্টানদের সংখ্যা বেশি এদের মধ্যে) খেয়ে "কুবলেই" (ধন্যবাদ) বলে ফিরতি পথে আবার হারিয়ে যাই মেঘবন্দী পথে....কানে শুধু ঝরঝর শব্দ, খাসি পাহাড়ের অজস্র ঝর্ণার কোনো একটির! পেছনে পড়ে থাকে মৌসিনরাম, ঢেকে যায় মেঘে...জানি না আবার কবে মেঘ ঠেলে দেখতে যাব পাথরসুন্দরীকে.....
(ছবি- লেখক)
ডাবল ডেকার
ঋতভাষ রায়
ডাবল ডেকার....ছোটবেলা থেকে বাসের সাথেই কথাটির ব্যবহার শুনে এসেছি। না, এবার বাস ছাড়াও অন্য একটি অদ্ভুত বস্তুর সাথে যে এই শব্দের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ তার প্রমাণ হাতেনাতেই পেলাম।
পুজোর জাঁকজমকময় দিনগুলোর শেষে আপামর মধ্যবিত্তের ন্যায় বার্ষিক ভ্রমণ পর্ব সম্পন্ন করার জন্য ভাড়ার গাড়ি চেপে বাবা মা এবং আমি হাজির হলাম খাসি পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত ছোট্ট শহর চেরাপুঞ্জিতে যার স্থানীয় নাম 'সোহরা' (SOHRA)। সেখানে দু'দিনের আস্তানা। হোটেলের সুবিনয়ী ম্যানেজারের কাছেই খোঁজ পেলাম এই ডাবল ডেকারের। কি এই জিনিস? না, এ আর কিছুই নয়- সেতু। সেতু? তা শুধু সেতুর এত সুনাম কেন? সেতুটি শেকড় দিয়ে তৈরী। শেকড়? হ্যাঁ, গাছের শেকড় এবং স্বাভাবিকভাবেই তৈরী। সেতুটি আবার দোতলা। অর্থাৎ ডাবল ডেকার। প্রকৃতির এই আশ্চর্যের প্রতি টান অনুভব করলাম এবারে। ভদ্রলোকের মুখেই জানতে পারলাম, শহর থেকে আধঘন্টার রাস্তা পরিয়ে 'টিরনা' (TYRNA) গ্রাম।
সেখান থেকে পাহাড়ের গা বেয়ে নীচে নেমে গেছে সাড়ে তিন হাজার সিঁড়ি। সিঁড়ির শেষে দেখতে পাওয়া যাবে এই সেতুটিকে। কিন্তু পথ বড়ই দুর্গম এবং সময়সাপেক্ষ। অতএব যাত্রার তোড়জোর শুরু হ'ল। পরদিন ভোর ছ'টায় সকালের তীব্র রোদ গায়ে মেখে টিরনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হ'ল। শহর থেকে খানিকটা বের হতেই পাহাড়ের সর্পিল রাস্তায় এঁকেবেঁকে চলতে লাগল গাড়ি। পথের দু'ধারে খাড়া পাহাড় এবং তা বেয়েই নেমে এসেছে ফার্ণ জাতীয় নানা গোছের উদ্ভিদ। বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা হওয়ার দরুণ স্যাঁতসেতে পরিবেশ বিরাজমান। ছোট পাহাড়ী ঝরণার প্রাচুর্যও লক্ষ্য করা যায়। কিছু জায়গায় সূর্যের আলোর অভাবে গা ছমছমে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। যেন কোন শিকারীর আখ্যান থেকে তুলে নেওয়া এক খন্ডচিত্র। কিছু সময় বাদেই চড়াই উৎরাই শেষ হল। টিরনায় প্রবেশ করলাম। দিকনির্দেশ নেওয়ার জন্য গাড়ি থামাতেই স্থানীয় খাসি উপজাতির কিছু মানুষ এগিয়ে এলেন। তাদের মধ্যে একজন ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বললেন, 'স্যার... গাইড...রুট ব্রিজ।' আমরা ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলাম গাড়ি রাখবার জায়গার কথা। তাদের নির্দেশানুসারে কিছুটা নেমে পাওয়া গেল সেই জায়গা। গাড়ি থেকে নামতেই দেখি সেই লোকটি। কখন পাহাড় বেয়ে চলে এসেছেন কে জানে।।আবার একইভাবে জিজ্ঞাসা করলেন গাইডের কথা। সরকারের নির্ধারিত ছ'শ টাকাতেই রাজী হলাম আমরা তাকে গাইড হিসেবে নিতে। আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবেন তিনি এবং নিয়ে আসবেন। ইতিমধ্যে অপর এক স্থানীয় ভদ্রলোক এসে হাতে ধরিয়ে দিলেন বাঁশের লাঠি এবং আকারে ইঙ্গিতে বোঝালেন যে পাহাড় চড়তে নামতে খুব কাজে লাগবে এই লাঠি। অতঃপর দেরী না করে আমরা রওনা দিলাম। আমরা বলতে আমি, বাবা আর সেই গাইড। মা হাঁটু ব্যথা এবং ড্রাইভারকাকু রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ভয়ে ওপরেই অবস্থান করবার সংকল্প করল। সবার আগে গাইড, তারপর বাবা, শেষে আমি। শুরু হল নামা। অতি মনোযোগ দিয়ে নামতে নামতেই কানে এলো গাইড এবং বাবার কথোপকথন। ভদ্রলোকের নাম শানবর। টিরনা গ্রামেই বসবাস। টি-শার্টের ওপর জ্যাকেট পড়া পাহাড়ী লোকটি ছোটখাটো হলেও বেশ শক্তপোক্ত চেহারায়। তার নির্দেশনায় চলতে লাগলো সিঁড়ি ভেঙে নীচে নামা।
পথের দু'ধারে ছোট ছোট ছবির মতো সুন্দর গ্রাম। তাতে একটি দু'টি দোকান এবং কিছু ঘর, লোকের বাস। কিছু সময় বাদে গ্রাম শেষ হতেই সিঁড়ির ধাপ যেমন খাড়া হল তেমনি দেখা গেল ঘোর জঙ্গল। পাশের রেলিঙ ধরে নামতে নামতে দেখা গেল স্থানীয় আরও কিছু মানুষকে। পথের ধারে পাথরের চাতালে বসে আমেজ সহকারে পাইপে টান দিচ্ছেন তারা। সিঁড়ি খাড়া হয়ে এঁকেবেঁকে নীচে নেমে যাচ্ছে। সাথে নামছি আমরাও। কিছু জায়গায় ধাপ ভাঙাচোরা। পা হড়কে পড়ে যাওয়া কিছু অস্বাভাবিক নয়। তাই প্রবল মনোসংযোগের প্রয়োজন। সিঁড়ি ভেঙে নেমে উপস্থিত হলাম একটি ঝুলন্ত সেতুর কাছে। নীচ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ী এক নদী। ছোট কিন্তু প্রবল স্রোতস্বিনী। তারই ওপর দিয়ে ঝুলতে ঝুলতে হৃৎপিন্ডের ব্যাপক চলাচল অনুভব ক'রে ওপারে পৌঁছলাম। কিছুটা সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হ'ল আবার। চারধারে সবুজ চাদরে ঢাকা পাহাড়। রোদ প'ড়ে যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে গেছে সেই শোভা। জঙ্গলের মধ্যে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে আসা আলোই পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল আমাদের। কিছুক্ষণ চলবার পর দেখা গেল কিছু বাড়িঘর। গাইড ভদ্রলোকের মুখে শুনলাম পৌঁছে গেছি আমরা। ঘর্মাক্ত কলেবর এবং হাঁপানির শিকার হলেও নতুন উদ্যম এলো মনে। হেঁটে চললাম।
হঠাৎই চোখে পড়লো ছায়াবৃত এক স্থান। নীচ দিয়ে বয়ে গেছে এক পাহাড়ী ঝর্ণা। তারই ওপরে দুটি পাহাড়ের ঢালকে সংযুক্ত করেছে শিকড়সেতু। একটি নীচে এবং একটি ওপরে। একটি গাছ থেকে অনেক শিকড় বেরিয়ে সমকোণে ঘুরে সোজা চলে গিয়ে জড়িয়েছে একই রকমভাবে বেরোনো অপর একটি গাছের শিকড়কে। এভাবেই তৈরী হয়েছে সেই সেতু। দু'শো বছরের পুরোন এই সেতুদ্বয় প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী। মানুষের হাত পড়ে নি তাতে। প্রকৃতির কোন্ জাদুকরের কোন্ অলীক মন্ত্রে যে এই সেতুর সৃষ্টি তা আজও অজানা। মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে দেখতে দেখতেই উঠে গেলাম সেতুর ওপরে। শিকড় নির্মিত হলেও বেশ শক্ত। নীচের ঝরণাটিও বেশ মনোরম। গাইড বললেন তাতে স্নানও করা যায়। কিন্তু কিছু ছোট মাছের কামড়ানোর উপদ্রবও আছে। ঝিঁ ঝিঁর ডাকে মত্ত এলাকাটি বহির্জগতের কলরব থেকে বিরত। প্রকৃতির রহস্য অনুসন্ধানী ব্যক্তির কাছে অতিব আকর্ষণীয়ও বটে। প্রাণ ভরে সেই পরিবেশ উপভোগ করলাম বেশ কিছুক্ষণ। ফেরার পালা এলো।
শুরু হল সিঁড়ি বেয়ে পাহাড় চড়া। নীচে নামার সময় যে কষ্টটা টের পাই নি তা এবার হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। কয়েক ধাপ সিঁড়ি চড়বার পরেই হাঁপাতে লাগলাম। ঝরতে লাগল ঘাম। যে বাঁশের লাঠি এতোক্ষণ অব্যবহৃত ছিল তা এবার পরম বন্ধু হয়ে দাঁড়ালো। ওপরে ওঠবার সাথে সাথে বাড়তে লাগলো হাঁফানি। সিঁড়ির ধাপ, পথের ধারে জঙ্গলের মধ্যে থাকা পাথর সবই প্রবল আরামদায়ক বসবার স্থানে পরিণত হল। খাঁড়া সিঁড়ির শেষে দেখা গেল এক গ্রাম্য ছোট্ট দোকান। সেখানে বিশ্রাম নিয়ে জলে গ্লুকোজ মিশিয়ে খেয়ে আবার রওনা হলাম আমরা। ঘামে আমার আর বাবার জামা যখন চুপচুপে তখন অবাক করা ব্যাপার হিসেবে নজরে এলো গাইড কাকুর শুকনো জামাকাপড়। জিজ্ঞেস করতেই বললেন তাকে প্রতিদিনই প্রায় দু'তিনবার এভাবে যাতায়াত করতে হয়। বিস্মিত মনে ভাবতে লাগলাম, সামান্য অর্থ উপার্জনের জন্য হাড়ভাঙ্গা এই খাটুনি করে কিভাবে জীবন চলে যায় এই মানুষদের। পান্ডববর্জিত এই জায়গায় বসবাস করে অল্পেতেই খুশী তারা। ঠোঁটের কোণে তাই হাসি লেগে থাকে সবসময়। অথচ সব পেয়েও মন খুলে হাসতে পারি না আমরা। জীবন অতিবাহিত করবার কষ্ট না জেনেই সামান্য "ভাল আছি" বলতেও দ্বিধাবোধ হয়।
এসব ভাবতে ভাবতেই ওপরে উঠে এলাম আমরা। পায়ের পেশী হাল ছেড়ে দিয়েছে ততক্ষণে। মায়ের কাছে যাত্রার বর্ণনা দিতে দিতে ছোট একটি দোকানে ধূমায়িত লাল চা এবং ম্যাগি নুডলস স্যূপ খেতে বসলাম। ঘামে ভেজা জামা ছেড়ে খালি গায়ে থাকা সত্ত্বেও যাত্রার ক্লান্তির চোটে ঠান্ডা লাগছিল না। হৃৎপিন্ডের তীব্র চলাচল তখনও কমে নি। কিন্তু বেলা বেড়ে যাচ্ছিল। অন্যান্য দর্শনীয় স্থান দেখা তখনও বাকি। তাই, খাবার শেষ করেই গাড়িতে উঠে বসা হল আবার। গাইড ভদ্রলোক সবার সাথে করমর্দন করে ফিরে চললেন গ্রামে। ধোঁওয়া উড়িয়ে গাড়ি এগিয়ে চলল। চোখে লেগে রইল শুধু পাহাড়ী সেই পথ আর কানে গাইড কাকুর খাসি ভাষায় বলা- ধন্যবাদ "খুবলেই সিবুন"!
(ছবি- শৌভিক রায়)
মুজনাই অনলাইন মাঘ সংখ্যা ১৪২৫
-:চেনা পথ অচেনা আলোয়:-
নির্জন সৈকতে
সুব্রত কান্তি হোড়
ঋতু বদলের সাথে সাথে আমিও বদলে যাই।কখনো চৈত্রের উদাসী হাওয়ায় স্নিগ্ধ ছায়ার খোঁজে আবার কখনও শ্রাবণের মেঘের ডাকে.... সাগরের ডাকে সুর বেঁধে অজানার পথে পাড়ি দিতে। সেই ডাক উপেক্ষা করতে পারি না।
তাই তো সাগর যখন ডাক দিল বললাম সবাই তোমায় এমনভাবে ঘিরে গল্প করে যে তোমার সাথে একান্তে দু'দন্ড কথা বলব তার উপায় নেই। তখনই তুমি তোমার গোপন ঠিকানা দিয়ে আমন্ত্রণ জানালে আমাকে।আমিও হাওয়াইয়ান গীটারে পাঁচটি তার বাজাতে বাজাতে চললাম....
"তোমারেই আমি চাহিয়াছি প্রিয়
শতরূপে শতবার।
জনমে জনমে চলে তাই মোর
অনন্ত অভিসার।।"
পূর্ব মেদিনীপুরের সেই গোপন আস্তানা 'বগুড়ান জলপাই' সৈকতে "সাগর নিরালায়" পৌঁছে গিয়েছিলাম শ্রাবণের এক সকালে মেঘ-রোদ্দুরের সাথে। কাঁথি থেকে বগুড়ান যাওয়ার রাস্তাটাও নীরব ভাষায় অনেক কথা জানিয়ে দেয়। একপাশে নোনাজলের খাল আর অন্যপাশে বাড়িঘর, দোকান, জেলেদের ঘর। সবুজ ধান আর তরুরাজির উষ্ণ সান্নিধ্যে আমরা পাঁচ মূর্তি গলা মিলিয়ে দিয়েছিলাম পাখিদের কিচিমিচিতে.... "আমি কোন পথে যে চলি, কোন কথা যে বলি......"।
এভাবেই চলতে চলতে পৌঁছে গেলাম শৌলা বাঁধের উপর। এবারে রাস্তার দু'পাশে নোনাজলের ভেড়ি। খালের মাধ্যমে নোনাজল এনে জলাশয় ভর্তি করে চিংড়ি চাষ হচ্ছে আর খুদেরাও আনন্দে মেতে উঠেছে ছাঁকনি জাল নিয়ে খাল থেকে মাছ ধরতে।
দেখতে দেখতে এসে গেল সুন্দর নির্জনাবাস। ছিমছাম, গাছপালার ছায়ায় ঘরগুলির নামকরণও সুন্দর -' বেলাশেষে, বসন্ত বিলাপ, যাযাবর, ইত্যাদি'। চা পানে অতিথি আপ্যায়িত হয়ে ছুট লাগলাম সরু গ্রাম্য মেঠো পথ ধরে তোমার সুরে সুর মিলাতে সঙ্গীতের উচ্চ মিঠে লয়ে। তোমার তটে পৌঁছে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলের রাশি, সফেদ আঁচলে ঢাকা বিস্তীর্ণ সোনালী বালুতট। সেখানে লক্ষ লক্ষ লাল কাঁকড়া মহানন্দে তোমার সাথে জলকেলি করছে নিজেদের মধ্যে খুনসুটি করতে করতে।
তোমার ছোঁয়ায় আমাদের মলিনতা ধুইয়ে দিতে হাত বাড়িয়ে দিলে আর আমরাও নেমে পড়লাম নীল জলের অবগাহনে। এক শীতল মধুর অনুভূতি সব ক্লান্তি মুছিয়ে দিল। সোনালী বালুকাবেলায় জলের অক্ষরে লেখা হচ্ছে নতুন নতুন চিত্রপট ফুটে উঠছে খোলা খাতায় প্রতি মূহুর্তে। সাময়িক অনুভূতি শাশ্বত আবেদনে জাগিয়ে দেয় জীবনের অন্তরাত্মাকে।এই শান্ত, আপাত নির্জন, নিরিবিলি প্রকৃতির সাথে কথা বলতে পারলেই বোধ হয় ঈশ্বরবাদ-যুক্তিবাদ সব একাকার হয়ে যায়।
(ছবি- লেখক)
রঙ-তুলির সে এক গ্রাম...
কাকলি ভদ্র
ভ্রমণপিয়াসীদের স্বর্গভূমি উড়িষ্যা..সমুদ্র,পাহাড়,অরণ্য আর দেবস্থানের মেলবন্ধন।আর বাঙালীর কাছে উড়িষ্যা মানেই পুরীর জমজমাট সমুদ্র তীর,জগন্নাথ দর্শন,তার সাথে কোনার্ক-ভুবনেশ্বর-চিল্কা সাইটসিয়িং।সেসব পথে ঘোরা বেশ কয়েকবার...তাই আমরা ঠিক করেছিলাম এবারে ঘুরবো অন্য উড়িষ্যায়।অন্য উড়িষ্যাকে জানতে এবারের ঘোরাঘুরি শুরু করেছিলাম একটু অন্য রুটে...সম্বলপুর থেকে।সম্বলপুর-হিরাকুঁদ-ঢেঙ্কা নলে কয়েকদিন কাটিয়ে ফিরলাম আবার চেনা পথে...ভুবনেশ্বরে।সেখান থেকে একটা পুরো দিন আমরা কাটাই পটচিত্রের এক রঙবেরঙের দেশ..রঘুরাজপুর গ্রামে।
ভুবনেশ্বর থেকে পুরী যাওয়ার পথে NH 203 তে পুরী থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার আগে চন্দনপুর...চন্দনপুর থেকে ভার্গবী নদীর তীরে চন্দনপুর বাজার ...এর পাশ দিয়ে বাঁ দিকে ঘুরলেই লেখা রয়েছে “Way to Heritage village Raghurajpur 1.5 K.M....” ছোট্ট ওই রাস্তাই চলে গিয়েছে পটচিত্রের এক মায়াময় জগৎ ... রঘুরাজপুর গ্রামে ।আর পাঁচটা গ্রামের থেকে একদমই আলাদা সবুজ তাল- নারকেল গাছের ছায়ায় ঘেরা এই গ্রাম।ছোট্ট সাজানো গ্রাম....১৪০টি পরিবারের বাস।U-আকৃতির এই গ্রামের যে কোনো একটাকে প্রবেশদ্বার করলে অন্যটা হবে প্রস্থানদ্বার। পুরো গ্রাম যেন সুনিপুণ পরিকল্পনার প্রতিচ্ছবি যার ঠিক মাঝখানেই রয়েছে একটি সাম্প্রদায়িক মিলন কেন্দ্র " ভগবৎ টুঙ্গি", আর আছে বেশ কিছু ছোট ছোট মন্দির।পুরো গ্রামের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে জগন্নাথ সংস্কৃতির ছাপ।
রঘুরাজপুর গ্রাম ওড়িশী নৃত্যগুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের জন্মস্থান।এছাড়া এখানে ওড়িশী নৃত্যের একটি বিশেষ শৈলী “গোটিপুয়া নাচ” সেখান হয়। এই নাচ ঈশ্বর মাগুণী দাস এর গুরুকুলে শেখান হত । এখন তাঁর ছাত্ররা ওই নাচ শেখান।এটি বলিষ্ঠ একটি নৃত্যশৈলী। শরীরটাকে ধনুকের মতো বাঁকিয়ে এই নৃত্য পরিবেশিত হয় বলে এই নৃত্যের জন্য প্রয়োজন কঠোর অনুশীলন ও শারীরিক দক্ষতা।
পুরীর এত কাছে অবস্থিত হয়েও এখনো রঘুরাজপুর পর্যটকদের কাছে অনেকটাই অজানা, অচেনা।আমাদেরও বিশেষ কিছুই জানা ছিল না, শুধু শুনেছিলাম নৃত্যগুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের জন্মস্থান এই গ্রামে হস্তশিল্পের নানা রকম জিনিস তৈরী হয়। কিন্তু ওখানে গিয়ে যা দেখলাম তাকে এক কথায় শিল্পপ্রেমীদের স্বর্গ বলা যায়। অতুলনীয় শৈল্পিক ঐতিহ্য এবং তাদের শিল্পকলার নৈপুণ্য না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।ছোট্ট গ্রামটাতে ঢুকতেই চোখে পড়লো রাস্তার দুধারে প্রতিটা বাড়ির বাইরের দেওয়ালে অসাধারণ সব ছবি আঁকা।
কোথাও শ্রীকৃষ্ণের জীবন কাহিনী, কোথাও হনুমান, কোথাও গণেশ, কোথাও বা সুন্দর সুন্দর লোক-নকশা। প্রতিটি বাড়ির দেয়াল,মেঝে,দরজা যেন লোকশিল্পের জীবন্ত প্রতিমূর্তি। অতি সাধারণ একচালা পাকা বাড়িগুলোর ভেতরে যে অসাধারণ সমস্ত চিত্র রয়েছে তা কল্পনার অতীত। বাড়ির ভেতরে অনাড়ম্বর ছোট ছোট ঘরগুলোই শিল্পীদের স্টুডিও।ঘর ভর্তি সাজানো তাদের তৈরী করা হস্তশিল্পের পসার।এই স্টুডিওগুলিতে ঢুকলে দেখা যাবে অসাধারণ সব পটচিত্র, যা আমরা দেখেছি ফ্রেমবন্দী হয়ে কোনো শৌখিন ড্রইংরুমে কিংবা হস্তশিল্প মেলায়।
কিন্তু শিল্পীর হাতে পটচিত্র তৈরী হতে দেখার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। তসরের কাপড়ের ওপর কিম্বা শুকনো তালপাতায় এই পট-চিত্র তৈরি হয়।সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করা হয় বলে পটচিত্রের রঙ দীর্ঘস্থায়ী হয়।সাদা রঙের জন্য ব্যবহার করা হয় শঙ্খ গুঁড়ো।কালো রং বানাতে ব্যবহার করা হয় কাজল বা ভুসো কালি। আর অন্য বিভিন্ন রঙ তৈরী করা হয় করা হয় রাজস্থান থেকে সেই পাথর গুঁড়ো করে তৈরী করা হয় রং।শুধু কারিগরী দক্ষতাই নয় – উদ্ভাবনী শক্তি,অভিনবত্বে, নিজস্বতার নিরিখে তাদের শিল্পীসত্ত্বা সত্যিই মুগ্ধ করে।
এমনই এক শিল্পী পরিবারের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানতে পারলাম জগন্নাথ মহাপাত্র নামে এই গ্রামের একজন পুরীর জগন্নাথ দেবের জগন্নাথ দেবের মন্দিরে প্রভুর সেবায় নিযুক্ত ছিলেন। রথযাত্রার সময় জগন্নাথ দেব মাসির বাড়ি যাত্রা করলে মন্দির ফাঁকা থাকে। সেই সময় এই সেবকের হাতে কোন কাজ না থাকায় সময় কাটাবার জন্য তিনি এই ধরনের পট আঁকতে থাকেন।পরবর্তীকালে এই পট শিল্পের সম্মান লাভ করে। এই গ্রামের প্রতিটা পরিবার কোনো না কোনো হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত।
শুধু পটচিত্রই নয় ছোট ছোট এবং সহজলভ্য নানা উপাদান যেভাবে ব্যবহার করে যে শিল্প সৃষ্টি হয় এখানে তা দেখবার মতন। নারকেলের খোলের ওপর নক্সা কেটে কিংবা কাঠ দিয়ে ছোটো ছোটো পাখি ও পুতুল তৈরী করে নানা রঙে তাদের রাঙিয়ে তৈরী হয়েছে ঘর সাজাবার নানা জিনিস। ভিজে কাপড়ের মণ্ড দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে কলমদানি বা ফুলদানি ।সেগুলোকে রাঙিয়ে তোলা হচ্ছে নানা রকম রঙিন নক্সা দিয়ে।Indian National Trust for Art and Cultural Heritage ১৯৯৮ সাল থেকে এই রঘুরাজপুরের ওপর তথ্য চিত্র প্রদর্শন করে । ২০০০ সালে কেন্দ্র সরকারের পর্যটন বিভাগ শিল্পীদের বিভিন্ন কলা কীর্তি দেখে রঘুরাজপুর গ্রামকে “হেরিটেজ ভিলেজ” সম্মান দিয়েছেন।
ছোট ছোট এবং সহজলভ্য নানা উপাদান যেভাবে ব্যবহার করে শিল্প সৃষ্টি হয় এখানে তা অবাক করে। নারকেলের খোলের ওপর নানা রঙে নানা নক্সা কেটে তৈরী হয়েছে ঘর সাজাবার নানা জিনিস। আবার কাঠ দিয়ে ছোট ছোট পুতুল,পাখি তৈরী করে নানা রঙে রাঙিয়ে দিয়ে ঝোলানো হচ্ছে দরজা বা জানালার পাশে। ভিজে কাপড়ের মণ্ড দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে কলমদানি, ফুলদানি... সেগুলোকে রাঙিয়ে তোলা হচ্ছে নানা রকম রঙিন নক্সা দিয়ে।
শিল্পে ভরপুর এই শৈল্পিকগ্রাম রঘুরাজপুর। শিল্পীরা এখানে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি-উৎসবে মগ্ন। কিন্তু শিল্প-রসিক মানুষের বড় অভাব...অভাব প্রচারের আলোর। আর এই অভাব ধরা দেয় অর্থাভাব হয়ে তাদের আঙিনায়।তবু তারা তাদের সুন্দর শিল্পকর্মগুলো নিয়ে থাকেন এক অনন্ত প্রতীক্ষায়,কখন একজন শিল্পপ্রেমী, শিল্প-দরদী সমাদর করবে তাদের সৃজনীর...
( ছবি- লেখিকা)
উদয় ও অস্ত
রীনা মজুমদার
এবারের রাজস্থান যাওয়া ছিল আমার স্বপ্নের জায়গা জয়শলমিরের সোনার কেল্লা দেখার l বালিতে সোনা , ফোর্ট বা কেল্লা হলদে পাথরে যেন সোনা দিয়ে মোড়া !
সেখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম আভা ছড়িয়ে পড়ার অনুভূতি না গেলে জানতাম না ! প্রকৃতির সে এক রূপ ! সোনা সোনা সবই তো সোনা ! নিত্য নতুন রূপে দেখা l
দিগন্ত যেখানে আকাশ ও পৃথিবী মিলে যায় l উদয় ও অস্ত প্রতি প্রভাতে ও অপরাহ্নে কত রূপে ধরা দেয় , ক্ষণিকের এই রঙের খেলা চিরন্তন l উদয়ে সূর্যের অপূর্ব আভা আস্তে আস্তে চারিদিক উজ্জ্বল হতেই পাখিরা ডানা ঝাপটে বেরিয়ে এল দিগন্তে l
জয়শলমিরের বিস্তীর্ণ সোনার বালিতে বসে সূর্যাস্ত দেখা _ চলছে রঙের, সূর্যের বিদায় বেলার টুকি টুকি খেলা ! বিষ্ময় সে এক অপরূপ অনুভূতি ! সুন্দরী জয়শলমির l
গতিশীল রাত্রি দিনের সন্ধিক্ষনে কতো রূপ ! কিছু ভালো লাগা রয়ে যায় মননে থেকে যায় ছবিতে l সেখানে বারবার আসা যায়।
(ছবি- লেখিকা )
মুজনাই অনলাইন মাঘ সংখ্যা ১৪২৫
-: অফ বিট :-
তোপচাঁচি লেক ও বাংলা সিনেমার নস্টালজিয়া
কুমকুম ঘোষ
গুগল ম্যাপ ও শীতের রোদকে সঙ্গী করে সপ্তাহ খানেক আগে,১৭ইজানুয়ারী বেড়িয়ে পরলাম NH-2 ধরে, ইতিহাস খ্যাত শের- শাহ্ প্রায় পাঁচশ বছর আগে এই রাস্তা তৈরী করিয়েছিলেন দিল্লি থেকে বাংলাদেশের সাথে সহজে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। দূরদর্শী শাসক ছিলেন বটে!!এখন এই রাস্তাই দিল্লি রোড নামে সবাই জানি।
গন্তব্য তোপচাঁচি লেক ও আশপাশ। আমাদের পাশের রাজ্যের ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার অন্যতম উল্লেখযোগ্য ট্যুরিস্ট স্পট। উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে তোপচাঁচি লেকটি কৃত্রিম ভাবে তৈরী করা হয়েছিল পরাধীন ভারতবর্ষে,ঝরিয়া ওয়াটার ওয়ার্কস এর তত্ত্বাবধানে স্হানীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য জল সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে। এবং সেই কাজে একজন বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার বাবু জে সি মুখার্জি বি ই(Babu J C Mukherjee . B E) যুক্ত ছিলেন অন্যান্য ইংরেজ প্রযুক্তিবিদদের সাথে। লেকের ব্রিজটিতে ঢোকার মুখে একটি পাথরের ফলকে খোদাই করা নামটি স্পষ্ট পড়া যায় প্রায় ৯৫ বছর পরেও।
তোপচাঁচি ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারীর আয়তন ৮স্কোয়ার কিমি,তার মধ্যে এই লেকটি প্রায় ২কিমি লম্বা ও ঝরিয়া খনি অঞ্চলের ছোট পাহাড় ও সবুজ বনানী ঘেরা। রাস্তা সোজা। পাঁচবার মিলিয়ে মোট ৩৪৫ টাকা টোলট্যাক্স দিয়েও আক্ষেপ নেই কারণ রাস্তা দারুণ।পথে শক্তিগড়ে একবার থামা হলো টিফিনের জন্য।লুচি তরকারি আর শক্তিগড়ের বিখ্যাত ল্যাংচা সহযোগে সকালের খাওয়াটা ভালোই হোলো। পথে আর থামা নেই, এমনটাই কথা হোলো। কারণ তোপচাঁচীর শান্ এ পাঞ্জাব হোটেলে লাঞ্চের অর্ডার দেওয়াই আছে আর গুগল ম্যাপ দেখাচ্ছে সোনালী চতুর্ভূজ এর একদম পাশেই সেই হোটেলটি পেয়ে যাবো একদম শেষে সামান্য ইউ টার্ন নিয়ে পানাগড়কে বাইপাস করে দুর্গাপুর, আসানসোল, রানীগঞ্জ পেরিয়ে এলাম। পিচঢালা মসৃণ ন্যাশনাল হাইওয়ে দিয়ে পানসি নৌকোর মত গাড়ী ছুটছে। আসানসোল রানীগঞ্জ খনি এলাকা, হাইওয়ে র বামদিকে বড়ো বড়ো খনি ও ডাঁইকরা কয়লায় ছোট ছোট টিলা তৈরী হয়ে আছে।এই পথে আগে আসিনি কখনো। বেশ নতুন অভিজ্ঞতা। পথের দুপাশে রুক্ষতার ছাপ। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা পর পৌঁছে গেলাম আমরা কিন্তু আমাদের আর একটা গাড়ী,যেটিও গুগল ম্যাপ দেখেই আসছিল , লোকেশন ভুল দেওয়াতে চলে গেছে তোপচাঁচী- গোমো রোড ধরে।সেই "গোমো" স্টেশন,যেখান থেকে নেতাজীর বিখ্যাত "মহানিষ্ক্রমণ" শুরু হয়েছিল।
যাই হোক, মোবাইল এ বিস্তর কথাবার্তা র পর সেটি আবার সঠিক রাস্তা ধরে পৌঁছে গেল আমাদের পূর্ব নির্ধারিত হোটেলটিতে।একেই বলে "ডিজিটাল ঝঞ্ঝাট"।
বাইরে থেকে রোড সাইড দাবা কিন্তু ভেতরের দরজা দিয়ে যখন পেছনের দোতলার ঘরে পৌঁছে দিল,জনলা খুলতেই আহা!! সবুজ পাহাড় মন কেড়ে নিল। ঠিক ছিল বিকেলেই লেক দেখতে যাওয়া হবে, কিন্তু ঝাড়খণ্ডের ঠান্ডা টা বেশ কড়াভাবে আক্রমণ করল,আর বিকেলটা যেন ঝুপ করে নেমে এলো হিমেল চাদর গায়ে। সেদিন সন্ধ্যেটা গল্প করে কাটালাম।
পরদিন সকাল গরম গরম আলুর পরোটা(পাঞ্জাব স্পেশাল) আর কবি সহযোগে জলযোগ করেই লেকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। লেক এ ঢুকতে ১০০ টাকার টিকিট কাটতে হলো। ঢুকে পরলাম স্যাংচুয়ারীর মধ্যে।বেশ ঘন জঙ্গল।লোকজন বিশেষ দেখা যাচ্ছে না।দেড়কিমি পথ পেরোতেই সামনে নজরে এলে বিখ্যাত সেই তোপচাঁচী লেক। বিখ্যাত কেন? মহানায়ক উত্তমকুমার যে থেকে শুটিং করে গেছেন সেটি বিখ্যাত হবেনা? একসময় বাংলা সিনেমার আউটডোর শুটিং স্পট হিসেবে এই রাঁচী- হাজারীবাগ-তোপচাঁচী-মাইথন ভীষণ পপুলার ছিল। সিনেমার পোকা হিসেবে সেসব খবর বহু আগে থেকেই জানতাম।যেমন--"শঙ্খবেলা" সিনেমায় মান্না দে'র কন্ঠে সেই বিখ্যাত রোমান্টিক গান--"কে প্রথম কাছে এসেছি" এখানে শুটিং হয়েছিল (পাঠক ইউ টিউব দেখে মিলিয়ে নেবেন অনুরোধ রাখলাম)। তার ও আগে "হসপিটাল" সিনেমার গান--"এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়,একি বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু"; গীতা দত্তের মায়াবী কন্ঠ লিপ দিচ্ছেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন।সেও এই লেক এ শুটিং হয়েছিল। সুচিত্রা সেন ও উত্তম কুমার অভিনীত "হারানো সুর" সিনেমার বিখ্যাত গান--"তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার".. তার শুটিং হয়েছিল এই লেক এর পাশের পার্কে। শোনা যায় উত্তমকুমার এই অঞ্চলে একটি হাসপাতাল করার জন্য জমিও কিনেছিলেন নাকি।
যাই হোক বাঙালী নস্টালজিয়া উস্কে দিল চোখের সামনে বিশাল শান্ত লেকটি। একটা জিনিষ খুব চোখে ও মনে রাখার মত সেটা হলো লেক এর ধারে পিকনিক হচ্ছে ঠিকই কিন্তু উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে অকারণ উল্লাস প্রকাশ করছে না কেউ। শান্ত নিরিবিলি এক পরিবেশ, একটি মাত্র চা' এর দোকান আর কয়েকজন ছোট দোকানী। লেক এর জলে মাছ ধরছে একটা ডিঙি নৌকা আর জলের মাঝে ডুব দিচ্ছে পানকৌড়ি। এই লেক এ অনেক ধরণের পরিযায়ী পাখি আসে। যদিও ছোট তবুও, পুরো অঞ্চলটা লাল,সেগুন,শিরিষ,আসান,কেন্দু , বাঁশ প্রভৃতি গাছের বেশ ঘন জঙ্গল। পুরো লেখাটা এখন এক পাক ঘুরে আসা যায়, কিছুবছর আগেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যা সম্ভব ছিলনা। ঘন্টা খানেক সেই অনাবিল প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটিয়ে শহুরে মনটা যেন হাঁফ ছাড়লো।দুদন্ড এমন নিরিবিলি সময় যে কত মহার্ঘ্য তা অনুভব করলাম।ফলতঃ আমাদের সঙ্গীরা কেউ আর ৩০কিমি দূরে মধুবন পার্ক ও জৈন তীর্থ পরেশনাথ পাহাড় যেতে রাজী হলো না।পরিবর্তে লাঞ্চ সেরেই লেক এ সূর্যাস্তের সময়টা উপভোগ করতে চাইলো। আবার এলাম লেক এর ধারে। সকালের টিকিট টা দেখাতেই বনরক্ষী কাঠের আগল খুলে দিল। পেছনে শাল -সেগুনের মাথায় সূর্য দেব দিগন্তচারী :ওদিকে শেষ আভা ছড়িয়ে পরেছে লেক এর জলে।একটা ছেলে ডিঙিতে কয়েকটি অল্পবয়সী ছেলে মাছ ধরছে।লেক এর জলে তাদের প্রতিচ্ছবি পরেছে এক শীতের বিকেলে সাক্ষী রেখে।
যাই হোক বাঙালী নস্টালজিয়া উস্কে দিল চোখের সামনে বিশাল শান্ত লেকটি। একটা জিনিষ খুব চোখে ও মনে রাখার মত সেটা হলো লেক এর ধারে পিকনিক হচ্ছে ঠিকই কিন্তু উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে অকারণ উল্লাস প্রকাশ করছে না কেউ। শান্ত নিরিবিলি এক পরিবেশ, একটি মাত্র চা' এর দোকান আর কয়েকজন ছোট দোকানী। লেক এর জলে মাছ ধরছে একটা ডিঙি নৌকা আর জলের মাঝে ডুব দিচ্ছে পানকৌড়ি। এই লেক এ অনেক ধরণের পরিযায়ী পাখি আসে। যদিও ছোট তবুও, পুরো অঞ্চলটা লাল,সেগুন,শিরিষ,আসান,কেন্দু , বাঁশ প্রভৃতি গাছের বেশ ঘন জঙ্গল। পুরো লেখাটা এখন এক পাক ঘুরে আসা যায়, কিছুবছর আগেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যা সম্ভব ছিলনা। ঘন্টা খানেক সেই অনাবিল প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটিয়ে শহুরে মনটা যেন হাঁফ ছাড়লো।দুদন্ড এমন নিরিবিলি সময় যে কত মহার্ঘ্য তা অনুভব করলাম।ফলতঃ আমাদের সঙ্গীরা কেউ আর ৩০কিমি দূরে মধুবন পার্ক ও জৈন তীর্থ পরেশনাথ পাহাড় যেতে রাজী হলো না।পরিবর্তে লাঞ্চ সেরেই লেক এ সূর্যাস্তের সময়টা উপভোগ করতে চাইলো। আবার এলাম লেক এর ধারে। সকালের টিকিট টা দেখাতেই বনরক্ষী কাঠের আগল খুলে দিল। পেছনে শাল -সেগুনের মাথায় সূর্য দেব দিগন্তচারী :ওদিকে শেষ আভা ছড়িয়ে পরেছে লেক এর জলে।একটা ছেলে ডিঙিতে কয়েকটি অল্পবয়সী ছেলে মাছ ধরছে।লেক এর জলে তাদের প্রতিচ্ছবি পরেছে এক শীতের বিকেলে সাক্ষী রেখে।
তোপচাঁচী লেক ও যেন চারপাশের পাহাড় - সবুজ বনানী আর নৈঃশব্দ নিয়ে চুপ করে আছে সময়ের সাথে। দুটো দিন নিমেষে কেটে গেল, তৃতীয় দিন ১৯শে জানুয়ারি সাদা-কালো বাংলা সিনেমার নস্টালজিয়া সঙ্গী করে ফেরার পথ ধরলাম।
মন বলছিল--আবার আসবো এই পথে...আবার হবে তো দেখা...এ দেখাই শেষ দেখা নয়তো।
সবুজের
সমারোহে
সঞ্চিতা
দাস
কে কোথায় যেতে চায় ঠিক করতে করতেই বেলা গড়াতে লাগল। কেউ বলল পাহাড়, কেউ বলল জল, কেউ বলল সমভূমি। পাহাড়ে যেতে হলে সময় চাই। ব্যস্ত মানুষ সব। জলটাও বেমানান লাগল অনেকের। তাহলে কোথায় যাওয়া যায়? শহরের মানুষ আমরা।
-চলনা, ছোট খাট একটা গ্রাম দেখতেই চলে যাই।
আমি লাফিয়ে উঠলাম। ভাল প্রস্তাব। ঘাসের উপর শিশির বিন্দুর টলটলে রূপ কোন ছোটবেলায় দেখেছিলাম। আজ নাহয় ঘর থেকে বেরিয়ে দু পা বাড়িয়ে একটা গ্রামকেই পর্যবেক্ষণ করে আসি।
যারা লঞ্চে সুন্দরবনে বাঘ দেখবার আশায় ছিল তারা রাজী হলনা গ্রামের দৃশ্যে গা ভাসাতে। তাই কয়েকজন সঙ্গী সাথী নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। বেশি দূরে নয়। মেদিনীপুরের একটা গ্রাম।
অনেক গাছের সমারোহ। ঊঁচু মাটি ফেলা রাস্তার দু ধারে বড় বড় বৃক্ষ। ছায়া ছায়া পথ। পায়ে হাঁটা পথে যেন মাথার উপর মায়ের আঁচল। হৈ হৈ করতে করতে এগিয়ে চলেছি আমরা। আদুল গায়ে কচিকাঁচাদের বিস্ময় দৃ্ষ্টি। কথা বলি ওদের সঙ্গে। বয়স্ক মানুষ জন এগিয়ে এসে আলাপ জমায়। কোথায় যাব জানতে চায়। আমাদের পরিচিত একজন থাকেন ওখানে।
বললাম, “সুরভীদের বাড়ী”।
কয়েকজন বলল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি”। কিছু সেবা মূলক কাজের জন্য সুরভীর নাম ডাক আছে এ অঞ্চলে। এগিয়ে চললাম সবাই। কিছুক্ষণ হাঁটার পর সুরভীকে পেয়ে গেলাম পথেই। ও এগিয়ে এল আমাদের দিকে।
-একি আপনারা? একটু খবর দিতে পারতেন।
-সময় পাইনিরে, হঠাৎ ঠিক হল, সবাই একটু ঘুরতে এলাম গ্রামে। তোদের গ্রামটা একটু ঘুরে দেখা দেখি।
-সে হবেখন, আগে বাড়ীতে চল। একটু বিশ্রাম নিয়ে সব দেখবে।
সুরভীর মাও এগিয়ে এসে আমাদের বসিয়ে ডাবের জল খাওয়াল। গ্রামের লোকজনদের, হঠাৎ আসা লোকজনেদের আপ্যায়নের জুরিমেলা ভার। তারপর মুড়ি, নারকেল আর গুড় সহযোগে একটু খাওয়া-দাওয়া সেরে কাছেই একটা মন্দিরে গেলাম। কয়েকজন আক্ষেপ করল খেয়ে ফেলেছে পূজো দিতে পারবে না। কয়েকজন পূজো দেবে বলে ডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি হাঁসফাঁস করতে লাগলাম। পাশে সবুজ ক্ষেতগুলো তখন আমায় হাতছানি দিচ্ছে। মাঠের পর মাঠ আর চাষের পর চাষ। কি নেই? কলাই, লঙ্কা, উচ্ছে, শশা, টমেটো, বীনস, কপি, সীম বলে শেষ করা যাবে না। মাঠে গাছ দেখতে নেমেছি বটে ভয়ও পাচ্ছি খুব। মাঠে তো জোঁক থাকে, আর জোঁককে আমার খুব ভয়।
শুধু যে সব্জির ক্ষেত দেখলাম তাতো নয়। পরপর ফুলের ক্ষেত। দোপাটি, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা চোখের মধ্যে স্বপ্নের ঘোর লাগিয়ে দিল যেন। মাঠ থেকে ওঠার যেন কারোর ইচ্ছেই নেই।
সুরভীর মায়ের ডাকাডাকিতে অবশেষে উঠতেই হল। আমাদের জন্যে উনি রান্নাও করে ফেলেছেন। ভাত, বিউলির ডাল, চুনো মাছের চচ্চরি, ফুলকপি দিয়ে মাছের তরকারী, টমেটোর চাটনি। এইটুকু সময়ে এতকিছু। ভাবা যায়? চেয়ার টেবিল তো নেই। আসনে মাটিতে বসেই খেলাম সবাই। সারাটা দিন খুব মজা করেই কাটল আমাদের। অনাবিল আনন্দে আমরা আত্মহারা।
ফেরার সময় সকলের হাতে একটা করে ব্যাগ ধরিয়ে দিলেন সুরভীর কাকা। তাতে নানান ধরনের সবজি আর চালকড়াই ভাজা। এতটা আমরা আশা করিনি।
কি এক অনাবিল আনন্দ নিয়ে আমরা ফিরলাম ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। যারা যায়নি তারা আফশোষ করতে লাগল। বলল, “সত্যিই তোমরা শিশিরের সন্ধান পেলে।”
" সফর পুন্দাগ"
মাম্পি রায়
সন্ধ্যের আরতি সেরে সবে একটু হারমোনিয়াম নিয়ে গলা সাধতে বসেছি, পাশের ঘরে শশুড় মশাই, শাশুড়ি মা বোকাবাক্সে মনোনিবেশে ব্যস্ত, অনুপম (বর) তখনও দিব্বি নাক ডেকেই চলেছে,কি না স্কুলে অফিসের প্রচুর কাজের চাপ ছিল তাই উনি ক্লান্ত,,,
হঠাৎ অনুপমের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল ঘঁৎ-ঘঁৎ ভাইব্রেশনের সাথে রিং দিয়েই চলছে ক্রিং-ক্রিং-ক্রিং...... উফফ.... শান্তিমত গানটাই আর সাধা হলনা।
ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে -- হ্যালো, মাম;
-- হ্যাঁ
-- আমি, বুড়ি মাসি, বলছি আমি আনন্দনগর জাচ্ছি আগামি ২৮ শে ডিসেম্বর তোমরা যাবে?
-- আনন্দনগর ঃ সেটা আবার কোথায়?.. আর কি আছে সেখানে?
-- আসলে আমি তো আনন্দমার্গি, আর আমার মতো অনেক মার্গিরাই ওইদিন আমাদের বাবার আশ্রমে যাব তাই ভাবলাম তোমাদেরও সাথে নেই, খুব সুন্দর জায়গা চলো ঘুরে আসি ভাল লাগবে।
কথা শেষ হতেই আমি আমার শশুড়মশাই আর শাশুড়ি মায়ের কাছে গিয়ে বেড়াতে যাওয়ার আর্জি জানাই, অনুপমতো শুনে বেজায় খুশি, ওদিকে তৎকালীন টিকিটও সে বুক করে নিয়েছে, সবার অনুমতি নিয়ে ২৮ ডিসেম্বর সক্কাল সক্কাল মাসি শাশুড়ির বাড়ি শিলিগুড়ি হাজির হয়ে গেলাম আমি আর আমার বর।
সন্ধ্যে সাড়ে সাত টা নাগাদ পৌঁছে গেলাম নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশন (N.J.P) রাতের দার্জিলিং মেল এ উঠে পড়ি আর নতুন জায়গা বেড়াতে যাওয়ার আনন্দে মেতে উঠি সকলেই। প্রায় ২০০ জন মার্গি ওই সফরে একই ট্রেনে যাত্রা শুরু করি। রাত ৯ টায় যাত্রা শুরু হয় আর ভোর ৬ টায় সাময়িক যাত্রা শেষ হয় বর্ধমান স্টেশন চত্বরে।
শিলিগুড়ি জংশন থেকে বর্ধমান পর্যন্ত আমাদের যাত্রা খুব কষ্ট করে কাটে, একেই জেনারেল সিট তার ওপর পুরো রাত বসে বসেই ঘুমিয়ে কেটেছে সবার, কেউ কেউ বসার জায়গা পায়নি, ভীষণ দুর্বিষহ ছিল সে যাত্রা, বর্ধমানে নেমেও আমরা ঠিক জানতামনা আসলে যাচ্ছি কোথায়, কোন পথেই বা পরবর্তী যাত্রা শুরু হবে, মাথায় নানান প্রশ্ন উঠল, পরে খোঁজ নিতে জানতে পারলাম পুন্দাগ বলে এক জায়গা আছে সেই ঝাড়খণ্ডে, জেলা পুরুলিয়া। কিন্ত, আশ্চর্যের বিষয় হল কেউই পুন্দাগ নামে কোনো জায়গায়র নাম শোনেননি, কিভাভে যাব, কোথায় সেই জায়গা কিচ্ছু জানিনা অজানা এক যাত্রায় আবার সফর শুরু করলাম।
বর্ধমান থেকে সকাল ৮ টায় " বর্ধমান হাটিয়া" প্যাসেঞ্জারে চেপে আবার চলতে থাকি, ট্রেন দুর্গাপুর, ধানবাদ,বেন্ডেল, বিহার,পুরুলিয়া ছেড়ে শেষ ষ্টেশন ছাড়িয়ে আবার উল্টো পথে ঝাড়খণ্ডের দিকে বেঁকিয়ে যাত্রা শুরু করলো, একের পর এক ষ্টেশন ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো অথচ পুন্দাগ বলে কোনো ষ্টেশন খুঁজে পাচ্ছিলাম না, ওদিকে যেইয়া ট্রেনটি বিহারে থেমেছে ওমনি টি.টি. এসে আমাদের কয়েকজন যাত্রিকে বিনা টিকিটে যাত্রার জন্য ফাইন করে বসল, ব্যস মার্গি বলে কথা এদের দলের পান্ডা হাতে ঝান্ডা নিয়ে, আমরা বাংগালির ব্যাচ লাগিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করলো, ",,,,,
পাশে কিছু বিহারি ছেলে মন্তব্য করতে লাগল -- ইয়ে লোগ পক্কা আসাম সে আয়ে হ্যায়, ইয়ে লোক বিনা ভোটারকার্ড বালে লগতে হ্যায়, আপনি মাংগে পুরা করনেকে লিয়ে র্যালি ভি নিকালা, পক্কেসে কোই পার্টিবাজি চল রহে হ্যায়।
আমার কানে এল সব কথা, শুনে একটু বুক কেঁপে উঠলো, মনে মনে ভাবতে লাগলাম কিজানি বিহারি এলাকা এদের কেউ যদি ভুল বুঝে হাংগামা করে তাহলেই হয়েছে আর বাড়ি ফেরা হল না।
শেষে আমি তাদের উত্তর দিলাম, নেহি নেহি, ভাইয়া জি, আপলোগ যো সোচ রহে হো বো নেহি হ্যায়, ক্যায়া হ্যায় কে হামলোগ শিলিগুড়ি সে আয়ে হ্যায়, আসাম সে নেই, হাম সব বাংগালী হ্যায়, বো পুন্দাগ মে এক বাবাকা আশ্রম হ্যায় ওয়া মাথা টেকনে যা রহে হ্যায়, ইয়ে টি,টি বিনা টিকিট বালেকো নেহি জানে দে রহে হ্যায়তো তভি বোলোগ এয়সে হল্লা কর রহে হ্যায়।
কথা গুলো শুনে ছেলে গুলো বুঝলো আর চুওচাপ ওখান থেকে সরে গেল।
ওদিকে কিচ্ছু পুলিশের ঢল স্পাই কুকুর আর ক্যামেরা নিয়ে হুর হুর করে সব ট্রেন গুলো তল্লাশি শুরু করতে লাগল, কিছু একটা খবর ছিল বোধহয়, যেইনা আমাদের ট্রেনে পুলিশের তল্লাশি চলতে লাগল সবাই ভয়ে আঁটসাঁট, আমিতো ভেবেছিলাম বোম ফিট করা নেই তো?.... ওদিকে লালা সেলামের মিছিল হাতে মশাল নিয়ে, ইশ কি যে অসহায় লাগছিল সেই সময়, খালি মনে হচ্ছিল মাসি শাশুড়ির কথা শুনে কেন যে এলাম..!
যাইহোক, খানিক বাদে সব ঝামেলা মিটে যায় আর আমাদের যাত্রা শুরু হয় আবার নতুন করে, এরই মধ্যে তর্পণ নামে এক কলেজ পড়ুয়ার সাথে আমার বরের বন্ধুত্ব হয়। সে তার ভাইকে নিয়ে দুর্গাপুর থেকে ধানবাদ যাচ্ছিল, এভাবেই গল্প,আড্ডা সব ছেড়ে বিকেল ৩ টেয় অবশেষে সবাই পোঁছোলাম পুন্দাগে ষ্টেশনে, সেখান থেকে আনন্দনগর ২ কিলোমিটার টোটোয় চেপে যেতে হয়,।
আনন্দ নগরে পোঁছে স্নান সেরে থাকার জায়গা করে নিয়ে আশ্রমেরই শিবিরে খেতে গেলাম, সেখানে সত্যিই খুব আনন্দের পরিবেশ, চারিদিকে খুব ভাল মনোরম দৃশ্য, সেখানে তাবু খাটিয়ে প্রায় ৩০০০ মানুষ অতিথি হিসেবে ৩ দিন বাস করেন, আমি আর আমার বর, আমার মাসি শাশুড়ি ২ দিন থেকেই চলে এসেছিলাম, যেদিন পোঁছোই সেভাবে রাতে আর কিছু জানতে পারিনা জায়গাটার ব্যাপারে,পরের দিন আমি আর আমার বর সকালে স্নান খাওয়া সেরে বেড়িয়ে পড়ি জায়গাটা জানার জন্য।
টোটোয় চেঁপে ২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আনন্দনগর থেকে পুন্দাগ ষ্টেশন যাই জানার জন্য কিভাবে পুন্দাগ থেকে বর্ধামান যাওয়া যায়, টিকিট কাউন্টারে খোঁজ নিতে জানতে পারি হাতে গোনা ৩ টে লোকাল আর একটা প্যাসেঞ্জার পাওয়া যায় তাও সময়ের কোনো ঠিক নেই, তবু জেনে শুনে সিদ্ধান নেই ধানবাদ এক্সপ্রেস এ টিকিট কাটি যা ২ আড়াই ঘন্টায় ধানবাদ পৌঁছে দেয় আর ব্ল্যাক ডায়মণ্ড এক্সপ্রেস ধানবাদ থেকে ৩ ঘন্টায় বর্ধমানে পোঁছে দেয়, কেনকি অন্য সব বর্ধমান পৌঁছোতে লাগে ৮/৯ ঘন্টা।
সারা সকাল ষ্টেশন দাপিয়ে জানতে পারি ওখান থেকে দেওঘর কাছেই, রাঁচি মাত্র ২ ঘন্টার পথ। এদিক ওদিক ঘুরে রাস্তাই ভুলে যাই আশ্রমে ফেরার, ওমনি ওখানকার কিছু বাসিন্দা সেই পথ ধরে যেতে দেখি আর সাহায্য চাই পথ চেনার উপায় আছে কি?... তারা নির্ধিধায় আমাদেরকে সুরক্ষিত ভাবে আশ্রমে ফিরিয়ে নিয়ে যান। আশ্রমে ফেরার পথে অনেক সৌন্দর্য্য পরিলক্ষিত হয়, হাজার একর জমি জুড়ে উর্বর লালা মাটির দেশ, পাহাড়ি রাঙা পানির দেশ, ছৌঁ নাচের দেশ, খেজুর, তাল, পলাশ,শাপলার দেশ,নানান শিলা পাহাড়, বিশালাকার বন জংগল, পোড়া মাটির ঘর, লাল,কালো রঙের বিভিন্ন কারুকার্জ করা নিজের হাতে আঁকা তুলিতে রাংগানো সেই পোড়া মাটির ঘর কি অপরুপ দেখতে, সত্যি যেন বইতে পড়া কোনো ছবি কাহিনী।
এদিক ওদিক ঘুরে আশ্রমে ফিরে ওখানকার মার্গি বর্গের যিনি আচার্য তার কাছে জানতে পারি বাবা রামদেব নাকি সেখানকার শিষ্য ছিলেন, কি নেই আনন্দমার্গে বাচ্চাদের স্কুল,কলেজ,অনাথ আশ্রম, চিকিৎসালয় থেকে শুরু করে প্রয়োজনের সব আছে,যাইহোক, আশ্রমে সারাদিন কাটালাম সন্ধ্যেবেলা ছৌঁ নাচ দেখলাম পরেরদিন ফেরার পালা বলে তারাতারি খেয়ে শুয়ে পড়লাম, প্রচন্ড ঠান্ডার জায়গা আনন্দনগর মানতেই হবে।
সকাল সকাল উঠে স্নান খাওয়া সেরে যেইনা আমাদের ফেরার পালা ওমনি আমার মাসি শাশুড়ি বেঁকে বসলেন কি না ঝরনায় নাইবেন, কেননা সেই ঝরনায় ওনার সেই বাবা স্নান করেছিলেন যার উনি শিষ্যা।
এখনও এই শিক্ষিত সমাজে কিছু মানুষকে অন্ধবিশ্বাস আর কু-সংস্কারি হতে দেখে অবাক হলাম। কাতারে কাতারে শিষ্যের ভীর জমেছে সেই পাহাড়ী নদীর জলে স্নানের জন্য, কি না সেই জল গংগার জলের থেকে পবিত্র, সব পাপ সেখানে পুণ্যে পরিণত হয়, দুরারোগ্য ব্যাধি সারে, এ সব কথা শুনে গায়ে জ্বালা ধরে গেল কি হারে সবাই অন্ধকারে রয়েছে।
পুন্দাগের সব পর্ব সেরে যথারীতি সকাল ১১ টার ট্রেন ধরার জন্য রওনা দিলাম, ট্রেন ২ ঘন্টার দেরীতে ছিল বলে সময় মত ধানবাদ পৌঁছোতে পারব কি না একটু সন্দেহ হচ্ছিল, দুপুর ১ টায় ধানবাদ এক্সপ্রেসে চেপে অবশেষে পোঁছলাম ধানবাদ ষ্টেশন, সেখানে গিয়ে দেখি দুর্গাপুরের সেই ভাই -বন্ধু তর্পণ আমার বরের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম,কেনকি একেতো অজানা জায়গা তার ওপর আমার বর ছিল এক কামরায় আর আমি আমার মাসি শাশুড়ির সাথে ছিলাম অন্য কামরায়, ধানবাদে পোঁছে বর্ধমানের টিকিট কাটার জন্য তর্পণ কে মাসি শাশুড়ির দেখাশোনার ভার দিয়ে বরকে নিয়ে চলে গেলাম টিকিট কাউন্টার খুঁজতে, কি বিশাল প্ল্যাটফর্ম হায় রে হায়, ১ নং প্লাটফর্ম থেকে ২ নং এ যেতে গেলে প্রায় ২ তলা সিড়ি পেরোতে হয়, তাড়াহুড়ো করে এপ্রান্ত থেকে সে প্রান্ত যেতেই ১০ মিনিট লেগে যায়,, লিফট থেকে ২ তলা বেয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে টিকিট কেটে অবশেষে ওয়েটিং রুমে বসেছি আবার জানতে পারলাম আমাদের যে ট্রেনে ধানবাদ থেকে বর্ধমান যাওয়ার কথা সেটা ২ ঘন্টা দেরীতে চলছে, আবার সময়মত বর্ধমান আসার চিন্তায় পড়লাম, এদিকে আমার বর কাউকে কিছু না বলে হুট করে মাসি শাশুড়ির জন্য জ্বরের ঔষধ আনতে চলে যায়, তর্পণকে আবার পাহাড়ায় রেখ বরকে খুঁজতে বের হই, সেখানে কোন নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলোনা কি যে অশান্তি লাগছিল, গোটা ষ্টশন চত্বরে অনুপমকে খুঁজে পেলাম না, ষ্টেশনের বাইরে গিয়েও পেলামনা, ফোনে নেটওয়ার্ক নেই, ওদিকে এনাউন্সমেন্ট শুরু ট্রেন ঢুকে গেছে, পাগলের মত ছুটে বেড়ালাম বরকে খুঁজে না পেয়ে মনে মনে ভাবলাম কাউন্টার থেকে ওর নাম এনাউন্স করাব, তর্পণকে অনুরোধ করলাম ভাই তোমার জিও থেকে একটা ফোন করে দেখনা তোমার দাদাকে পাও কি না, রিং গেল অনুপমের সাথে কথা হল প্রাণ ফিরে পেলাম যেন, শেষমেশ ট্রেনে চাপলাম সবাই, তর্পণ নেমে গেল দুর্গাপুরে,এদিকে সময় চলে যেতে লাগল রাতের ট্রেন উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস এ চাপব যে, ট্রেন লেট বলে কাটায় কাটায় ৯:২০ তে বর্ধমানে পোঁছলাম,ট্রেন থেকে নেমেই এক ছুঁটে কাউন্টারে খোঁজ নিলাম উত্তরবঙ্গ কি ছেড়ে দিয়েছে? ট্রেন ৯:২০ এ কি না! জানতে পারলাম বেন্ডেলে রাস্তার কাজ চলছে বলে ট্রেন ৩ ঘন্টা দেরীতে আসবে, শুনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে একটু সময় অপেক্ষা করে পরে অবশেষে উত্তরবঙ্গ চেপে বাড়িমুখো রওয়ানা দিলাম।
পুরো সফর শুরু থেকে শেষ অব্দি যতটা না আনন্দ করেছি তার চেয়ে বেশী ভয়ে কেটেছে যে আদৌ ফিরতে পারব তো সুস্থভাবে,, ¡..
মুজনাই অনলাইন মাঘ সংখ্যা ১৪২৫
-: ছবিতে ভ্রমণ:-
দেবাশিস ঘোষ
কলকাতা থেকে ২২৫ কিমি দূরে লালমাটির বাঁকুড়ার বিহারীনাথ
গ্রামের বাড়ি
মার্চ মাসে পলাশের উচ্চ্বাস পুরো রাস্তায়...মালভূমি অঞ্চলের ছোট পাহাড় দূরে দেখা যায়
রক্তিম পলাশের অভিবাদন
সূর্যাস্তের বিহারীনাথ
বাবা বিহারীনাথের মন্দির : শিবরাত্রির অন্যতম আকর্ষণ
খাবার ও দোকানি
বিহারীনাথ থেকে ২৪ কিমি দূরে বরন্তি
বরন্তি যেন পলাশভূমি
বাড়ির গায়ে আল্পনা
সূর্যাস্তের বরন্তি
জয়চন্ডী পাহাড়, সত্যজিৎ রায়ের 'হীরক রাজার দেশ' খ্যাত
জয়চন্ডী থেকে শহর পুরুলিয়া (পাহাড়ে উঠতে ভাঙতে হয় প্রায় ৫০০ সিঁড়ি)
(তথ্য সহযোগিতা -কুমকুম ঘোষ) ওয়ার মেমোরিয়াল, বাতাসিয়া লুপ
ও
সাদা কালোর কাঞ্চনজঙ্ঘা
রুদ্র সান্যাল
সন্ধ্যাআরতিতে বারাণসী গঙ্গা
মৌসুমী ভৌমিক
মেঘে ঢাকা জয়ন্তী পাহাড়
রতন দাস
মুজনাই অনলাইন মাঘ সংখ্যা ১৪২৫
No comments:
Post a Comment