মুজনাই সাপ্তাহিক
শিশু দিবস ২০২২
বিশেষ সংখ্যা
রেজিস্ট্রেশন নম্বর- S0008775 OF 2019-2020
হসপিটাল রোড
কোচবিহার
৭৩৬১০১
ইমেল- mujnaisahityopotrika@gmail.com (মাসিক অনলাইন)
- mujnaiweekly@gmail.com (সাপ্তাহিক)
প্রকাশক- রীনা সাহা
সম্পাদনা, প্রচ্ছদ ছবি, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়
মুজনাই সাপ্তাহিক
শ্রদ্ধার্ঘ্য
এঁকেছিলেন কতোই তিনি কল্পনার সব ছবি।
বিশু খুড়ো
মাথুর দাস
শিশু দিবসে বললো বিশু খুড়ো,
'আমিও শিশু, তোদের মতোই ঠিক,
ঘুরি ফিরি কাঁদি, হাসিও ফিক্ ফিক্,
ভুল করবি, ভাবিস্ যদি বুড়ো' ।
'খেলতে পারিস্ আমারও সঙ্গে ঢের,
এক্কাদোক্কা কাটাকুটি ছোঁয়াছুঁয়ি-বুড়ি,
লাটাই ধরে চল্ ওই মাঠে ওড়াই ঘুড়ি,
শিশুর মনে আমিও শিশুই হই ফের' ।
'ও শিশুরা, শিশু দিবসেই শপথটি নিস্ জোর
কখনো কেউ করবি না তো কর্মে অবহেলা,
তোদের কর্ম পড়াশোনা এবং কিছু খেলা,
আনতে পারিস্ ভবিষ্যতে তোরাই নতুন ভোর' ।
'চল্ পড়ি গে রাইমস্ ছড়া, অঙ্ক কড়াপাক,
বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকার আনন্দটি বেশ' !
বয়স তো ছার, শেখার কত আগ্রহ অক্লেশ,
শিশুর দলে বিশু খুড়ো শিশু হয়েই থাক ।
বিপ্লব গোস্বামী
বাবুর বাড়ীর দীঘির পাড়ে
ভূত প্রেতের বাস,
রাত গভীরে বেজায় ক্ষেপে
সরবে ভাঙে বাঁশ।
অমাবস্যার সন্ধ্যে-দুপুর
ভূতের বাড়ে বার,
মড়মড়িয়ে গড়গড়িয়ে
নুয়ায় বাঁশ ঝাড়।
বামুন পাড়ার হারুন মামা
কাটতে এলো বাঁশ,
সবাই বলে করিস না ভুল
হবে যে সর্বনাশ।
একঘেয়ে হারুন রগচটা যে
মানেনি কারো যে মানা,
বাঁঁশ কাটিয়ে সাফাই করে
ভাঙ্গল ভূতের থানা।
সেদিন হতে বাবুর বাড়ির
কাটল ভূতের ভয়,
সবাই বলে সাবাস হারুন
জয় হারুনের জয়।
মাছ বাজার
চন্দ্রানী চৌধুরী
ভোরবেলাতে চোখ কচলে দেখি আজব কা
মগডালেতে মাছের ভীড় ঘুম হল আজ
গিন্নী বলেন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও
মাছ আনতে এক্ষুনি গাছের আগায় যা
শুনে আমি ভিরমি খেলুম এবার উপায়
ঐ কাজটি কক্ষনো যে করতে পারিনি
গিন্নি শুনে ভয়ানক রেগে হলেন লা
বলেন হেঁকে গাছের আগায় পাতো তবে
ধুর্ ছাই কি বিপদ হল জাল পাতা কি যেসে কম্ম
থলে হাতে মাছ বাজারেই গেলাম শু
কি করি আর কোথায় যাই ভেবে নাজে
এমন সময় দড়াম করে পড়ল বুঝি তা
দেখি চেয়ে পায়ের কাছে পড়ল এসে
ওমা এযে কাতলা মাছ পিছলে গেল কি
মাছ পেয়ে গিন্নী খুশি ফিরল ঘরে
গাছে চড়ে মাছ না ধরে বাঁচল আমা
রাজার পাখী
চিত্রা পাল
গোপালের
বাড়িতে ওর ছোট মামা এসেছে। ওর মা খুব খুশী ভাই এসেছে বলে।মায়ের সঙ্গে বাবাও। আর
গোপালতো দ্বিগুণ খূশি, একতো মামা এসেছে বলে, দ্বিতীয়তঃ মামার কাছে গল্প শুনতে পাবে
বলে। কারণ মামা খুব ভালো গল্প বলে। সন্ধ্যে বেলায় ওরা বসেছে গল্প শুনতে,গোপালের
সঙ্গে ওর আরও তিন বন্ধুও আছে। গোপালের ছোটমামা বলে, আজ তাহলে একটা পাখির গল্প বলি,
কেমন? গোপাল বলে, কি পাখি ছোটোমামা? ছোটমামা বললেন, এই পাখিটা একটা টিয়া পাখি। বলে
মামা শুরু করলেন।
অনেকদিন আগে
আমি তখন ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়ি, তখন আমার এক বন্ধু ছিলো ওর নাম রাজা। ও নামেও
রাজা কামেও রাজা। গোপাল বলে, মানে? মামা বললেন, মানে ও যা বলবে তাই করবে। তো ওর
একবার ইচ্ছে হলো পাখি পুষবে। ওর বাবাও ওর কথা শুনতো।মানে ফেলতো না। ওর মা তো শুনে
থেকে বলছে, না,না ওসব পাখি টাখি পোষা হবে না। তাকে সময়মতো খেতে দাওরে, চান করাও
রে,আবার বেড়াল ওকে কামড়ে না দেয় সেও দেখতে হবে। রাজা বলে, ওতো খাঁচায় থাকবে। ওর মা
বললো,হ্যাঁ, সেও আর এক কাজ। আরে, খাঁচার তলার নোংরা পরিষ্কার করতে হবে। রাজা বলে ওকে বেশ দাঁড়ে
রাখবো। ও সবাইকে দেখতে পাবে, আর আমরাও ওকে দেখতে পাবো। ওর মা বলে, না, না ওসবে কাজ নেই ছেড়ে দে। রাজা বলে, যখন কথাবলবে, তখন কিভালো লাগবে, কি লাগবে না? এই সব ছেড়ে তুমি লেখা পড়ায়
মন দাও। বলে ওর মা চলে গেলো। রাজার বাবা মৃদু হেসে কাজে চলে গেলেন।
পরেরদিন বিকেলে
উনি যখন কাজ থেকে ফিরলেন, তখন ওনার সঙ্গে এলো ওনার অফিসের বেয়ারা ,সঙ্গে একখানা
খাঁচা সমেত টিয়া পাখি। এটা নাকি কথা বলা টিয়া পাখি। রাজার মা তোমরা যা পারো করোগে
বলে সেখান থেকে রাগ করে চলে গেলেন, রাজা পড়লো ওই পাখিটা কে নিয়ে। রাজা রোজ নিয়ম
করে ওকে জল দেয়, খাবার দেয়,কখনো ছোলা ভিজোনো, কখনো পেয়ারা, কখনও পাকা লংকা এসব।
রাজার মাও এখন রাজার সঙ্গে ওকে দেখভাল করে। রাজা ওকে কথা বলা শেখায়, শিষ দেওয়া
শেখায়। কিন্তু ওদের কাজের মাসিকে দেখলে কেন জানি ও খুব ক্যাচ ক্যাচ করে, মানে বেশ বোঝাই যায় যে
ওকে ও পছন্দ করে না। একদিন রাজা লক্ষ্য করলো, মাসী ওকে ঝ্যাঁটা দেখায়, বকাবকি করে,
কেননা এখন ওই খাঁচার তলাটা পরিষ্কার করতে হয় তাই। আর পাখিটাও ওই রকম চেঁচামেচি
করে। ও বলা হয়নি, রাজা পাখিটার নাম রেখেছে মণি। আসলে রাজার পাখি বলে ওর নাম রাখা
হয়েছিলো মন্ত্রী। এখন সেটা ছোট হয়ে মণি।
মণি এখন বেশ বড়
হয়েছে। ওর জন্যে এখন দাঁড়ের ব্যবস্থা হয়েছে। খায়দায় আর রাজা যখন শিষ দেয়, তখন ও ও
শিষ দেয়, কিন্তু কথা এখনও বলেনি। ও যখন দাঁড়ে বসে ওর ঠোঁট চুলকোয় তখন ওর পায়ের
শেকলের সঙ্গে দাঁড় লেগে কেমন ঝুমঝুম করে শব্দ হয়। সব ঠিক আছে, কিন্তু রাজার মা
থেকে থেকেই বলেন,’ও কথা বলবে না ছাই, ওকে শিগগির বিদেয় কর’। শুধু রাজা ওকে প্রায় জোর করেই রেখে
দিয়েছে।
একদিন কটা হবে
কে জানে,বেশ গভীর রাত। হঠাত্ মণি বলে উঠলো, রাজা নাকি, রাজা নাকি? ওর মা যেমন করে
বলে তেমন। রাজার মা মণির কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। এই প্রথম ওর কথা শুনছে বলে। ঘুম
থেকে উঠে দ্যাখে, কে একটা লোক মণিকে ধরেছে নিয়ে যাবার জন্যে। আর মণি যাবে না, ছটফট
করছে না যাবার জন্যে। তারপরে দিয়েছে বেদম জোরে এক কামড়। যাতে ওর হাত কেটে রক্ত
পড়ছে টপটপ করে। রাজার মা চোর চোর করে খুব চেঁচামেচি করাতে লোকটা মণিকে ফেলে
পালালো। বাড়ি শুদ্ধু লোক যখন উঠে এলো চোর
ধরবার জন্যে তখন চোর বাবাজী পগার পার।
আজ থানায় ঢুকতেই
থানার ওসি রাজাকে একটা ফুলের তোড়া আর চকোলেট দিয়ে সংবর্ধনা জানালেন। কারণ রাজার
জন্যেই ওখানকার ভয়ানক দুষ্টু লোক রাম ডাকাতকে পুলিশ ধরতে পেরেছে। তাই এই আপ্যায়ন। রাজা তখনও বুঝতে পারছে না, ওর জন্যে
কি করে রাম ডাকাতকে ধরা গেলো। তখন ওসি স্যর বললেন ঘটনাটা। রাজাদের বাড়িতে চোর
এসেছিলো বলে রাজার বাবা থানায় ডায়েরি করে, বা অভিযোগ জানায়। সেইজন্যে রাজাদের
বাড়িতে পুলিশ আসে অনুসন্ধান করতে আর ওখানে খাঁচার চারপাশে যেসব রক্ত পড়েছিল তার
কিছু নমুনা নিয়ে যায়। সেই রক্তর ডিএন এ
একজনের রক্তের ডিএন এর সাথে মিলে যায়।সে ছিলো রাম ডাকাতের দলের। আর চুরি
করার জন্যে সে রাতে সেই এসেছিলো। তাকে
গ্রেপ্তার করে জেরা করে দুর্ধষ রাম ডাকাত
আর তার দলবলকে পুলিশ সহজেই ধরে ফেলতে পারে।
এতে এই থানার ওসির সুখ্যাতি
চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।এদিকে তিনি মনে করেন তিনি এই দুরূহ কর্ম রাজার জন্যেই সমাধা
করতে পেরেছেন। তাই রাজাকে এই উপহার।এই
প্রাপ্তিতে রাজার মা বাবা খুব খুশি। রাজা বাড়িতে গিয়ে আগে মণির খাবারের বাটিতে চকোলেট দেয়, মণি তুই খুব ভাল কাজ করেছিস্রে। ওই জন্যেই বলি,কথা বলা শেখ, তাহলে
কেমন নিজেই বলতে পারতিস্।
ছোটমামা বলে,
দেখলিতো পাখিটা কেমন কাজ করে দেখালো? আসলে রাজার পাখি বলে কথা। গোপাল বললো, আমাকে
রকম একটা পাখি কিনে দেবে? ছোটমামা এবার কি করবে চিন্তায় পড়ে গেলো।
No comments:
Post a Comment