Thursday, June 18, 2020





"বিশ্বকর্মার প্রাসাদ নির্মাণ "
মানস রায় 

দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা র শিল্পকর্মের বিভিন্ন কাহিনী সম্পর্কে এই ত্রিভুবনের প্রায় সকলেই অল্পবিস্তর অবগত। তবে বিশ্বকর্মার শিল্পকর্ম নিয়ে আজ যে গল্পটির উল্লেখ করবো , সেটির বর্ণনা পাওয়া যায় বিখ্যাত "গোসানী মঙ্গল" কাব্যগ্রন্থের একটি অংশে। গোসানীমারি এলাকা তো বটেই এছাড়াও তৎসংলগ্ন এলাকার স্থানীয় লোকেদের মধ্যে ও এই গল্পটি নানা ভাবে, নানা রূপে প্রচলিত ও জনপ্রিয়। তবে শুরু করা যাক গল্পের আসল কাহিনী। 
     বহুকাল আগে কোচবিহার জেলার গোসানিমারি নিকটস্থ গ্রামে কান্তেশ্বর নামের এক রাজা ছিলেন। এক পুরুষের রাজা ছিলেন তিনি, কিন্তু তার রাজা হয়ে ওঠার কাহিনী ছিল অত্যন্ত চমকপ্রদ। সেই এলাকার এক দরিদ্র কৃষক ভক্তিশ্বর ও তার সুলক্ষণা স্ত্রী অঙ্গনার গর্ভে জন্ম হয় রাজা কান্তেশ্বরের। শোনা যায় এই ভক্তিশ্বর দম্পতি ছিলেন প্রবল ভক্তি পরায়ণ ও সদাচারী। দেবী চন্ডীর কৃপা বশত ভক্তিশ্বর পত্নী অঙ্গনা পুত্রবতী হয় ও তার পুত্র পরবর্তীতে সেই রাজ্যের রাজ সিংহাসনে আসীন হয়। কিন্তু যেহুতু তার রাজত্ব প্রাপ্তি ঘটে দেবী চন্ডীর আশীর্বাদে সেই হেতু পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতন তার রাজপ্রাসাদ নির্মাণ থেকে শুরু করে প্রজা পারিষদ নির্মাণ, এই সম্পূর্ণ বিষয়টার পরিচালনার ভার গিয়ে পরে দেবী চন্ডীর উপর। কান্তেশ্বরের রাজ্যাভিষেকের ক্ষণ এগিয়ে আসার আগে ইন্দ্রলোকে একরকম কর্ম তৎপরতা দেখা গেল দেব দেবীদের মধ্যে। দেবী চন্ডী বিশ্বকর্মার  সাথে সাক্ষাৎ লাভের জন্য দূত মারফত বার্তা পাঠালেন। উপযুক্ত সময়ে দেবী চন্ডী ও বিশ্বকর্মার মধ্যেকার আলোচনাও একরকম সমাপ্ত হল। চন্ডী দেবী বিশ্বকর্মাকে কান্তেশ্বরের রাজার হবার ব্যাপারে পুরোটা বললেন, এবং কিভাবে তার রাজ্য ও রাজপ্রাসাদের নকশা তৈরী হবে সে পরিকল্পনার ও প্রায় সবটা শোনালেন। চন্ডীর মুখে গোটা কাহিনীর বৃত্তান্ত শোনার পর, দেবশিল্পী আর একমুহূর্ত ও সময় নষ্ট করতে রাজি হলেন না। তার নির্দেশে সমস্ত কর্মচারীরা একে একে রওনা হলেন সেই গ্রামের দিকে, যেখানে কান্তেশ্বরের রাজ্যপাট গড়ে ওঠার কথা। 
      দেবশিল্পীর নেতৃত্বে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ আরম্ভ হল গোটা এলাকা জুড়ে। কাজ শুরুর ঘন্টা পাঁচেকের মধ্যেই বিশ্বকর্মার কর্মীরা রাজ্য কে সুরক্ষিত রাখতে চারদিকে সুন্দর করে উঁচু উঁচু পাঁচিল বা গড় বাঁধলেন রাজ্যের সীমানা বরাবর। সেই গড়ের চারদিকে সুন্দর সুন্দর দরজারো নকশা করলেন দেবশিল্পী নিজে।  লোহার নকশাকৃত দরজা গুলোর নাম হলো শিলদ্বার, অক্ষয় দ্বার, ধর্মদ্বার ইত্যদি, ইত্যদি। সীমানা তো সাজানো হলো এবারে রাজপ্রাসাদ নির্মাণের পালা, পাহাড় পর্বত থেকে পাথর কেটে আনতে শুরু করলেন সেখানে নিযুক্ত কর্মীরা। পার্শবর্তী এলাকা থেকে মাটি কেটে এনে স্তূপাকৃতি করা হলো এবং পাথর সহযোগে সেখানে স্থাপিত হলো সুন্দর এক  দৃষ্টি নন্দন প্রাসাদ। প্রাসাদ উঁচু হওয়ায় সেখানে হয়তো জলের সমস্যা দেখা দেবে এই ভেবে বিশালাকার কুয়ো ও নির্মিত হলো সেস্থানে। এরপর একে একে দোকান পাট বাজার হাট সবকিছু নির্মিত হতে থাকলো এছাড়াও রাজবিনোদনের জন্য রাজপ্রাসাদের দক্ষিণ পূর্ব দিকে নির্মিত হলো সুন্দর এক বিশালাকার পুকুর। রুপোর রাজসিংহাসন তৈরী হলো এবং সেটির শোভাবর্ধনের জন্য সিংহাসনের মাথায় একটি ফণা ধরা সাপ সদৃশ রুপোর ছাতা ও তাতে যুক্ত করে দিলেন বিশ্বকর্মা স্বয়ং। একে একে তৈরী করলেন রাজকোষাগার, রাজার আরাধ্য দেবী চন্ডীর পাট, মহাদেবের পাট বিভিন্ন মঠ মন্দির ইত্যাদি।  শেষমেষ রাজ্যের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ও কোনো রকম ত্রুটি রাখতে চাইলেন না তিনি, কামান, গোলাবারুদ, সে গুলিকে পরিচালনার লোকজন প্রায় সব কিছুর ই সুবন্দোবস্ত করে এক রাত্রেই রাজার রাজ্য ও রাজপাটকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে দেবলোকের  উদেশ্যে রওনা হলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা।

No comments:

Post a Comment