Friday, January 3, 2025


 

নিবন্ধ 


স্বাগত নবীন, পুরনো থাক মনে
শুভেন্দু নন্দী 

নবজাতককে ঘিরে শঙ্খধ্বনি বেজে ওঠে। মাতৃজঠর থেকে ভূমিষ্ট হয় সে, তার অজানা অদেখা এই বিরাট পৃথিবীতে। কেঁদে সে আকুল  হয়ে ওঠে ।সমগ্র ধরনী তা দেখে আনন্দে হেসে ওঠে। তাকে "নবীন শিশু" বলে স্বাগত জানায়। মা-বাবার তাকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন, প্রত্যাশা জেগে ওঠে। মনের মত তাকে লালন-পালন করতে চেষ্টার ত্রুটি করেননা তাঁরা ।তাঁদের স্নেহে, আদরে, ভালোবাসায় ধীরে ধীরে সে বেড়ে ওঠে ও বড়ো হয়। ঠিক যেমন ছোট্ট বীজের মধ্যে বিরাট গাছ নিহিত থাকে। মানুষের ভালোবাসায়,পরিচর্যায় প্রথমে জন্ম নেয় চারাগাছ। তারপর অনুকূল পরিবেশে, মানুষের ছত্রছায়ায় তা থেকে কচি ডালপালা,পাতা গজায়। আস্তে আস্তে বড় বড় শাখা-প্রশাখায়,ফুলে-ফলে এবং একসময়ে বিরাট গাছের সে পরিনতি লাভ করে। আর বৃক্ষ কেমন - তা ফলেন পরিচয়তে। অর্থাৎ 'নবীন অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে 'প্রবীণ 'গাছে তার রূপান্তর।  নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফুলে,ফলে পল্লবিত হয়ে এক সময়ে
শাখা-প্রশাখা যুক্ত এক বিরাট মহিরুহে তার প্রকাশ ঘটে যায়। জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে শিশুও ক্রমশঃ পরিনত--প্রাপ্ত হয়। বাবা-মায়ের শিক্ষাদীক্ষায় সে নবীন থেকে আস্তে আস্তে শিশু, কৈশোর,যৌবন থেকে বার্ধক্যে উপনীত হয়।  তার প্রবীণত্ত্ব প্রকাশ পায়। জীবনের সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার জন্য বাবা-মা তাকে অনুপ্রেরণা , সাহস জোগান। সাফল্যের উঁচু সোপানে পৌঁছুতে  অনেক বুদ্ধি,সাহস,পরিশ্রম, মেধা,জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। আর পরাজয় থেকেই তো সাফল্য আসে। কারণ পরাজয়ইতো সাফল্যের মূল চাবিকাঠি বা পাসওয়ার্ড।  নবীন থেকে প্রবীণ-জীবনের সব অবস্থাতেই মা-বাবাই পথ-প্রদর্শক। সব প্রতিকূলতাকে পেরিয়ে একসময়ে তথাকথিত শিশুর সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠা আর সমাজের মুখ উজ্জ্বল করার প্রচেষ্টা ।  তাই নবীন অবস্থায় যে শিশুর কান্না দেখে সমগ্র জগত হেসে ওঠে,তার মধ্যেই তো লুকিয়ে থাকে আগামীতে বিরাট প্রতিশ্রুতি ও সম্ভাবনা। আর এই আশায় মা-বাবা তাদের উপযুক্ত ভাবে তৈরী করেন। তাঁদের এই ঋণ অপরিশোধ্য।  তাদের ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধন করার দায়বদ্ধতাও মা-বাবার উপর বর্তায়। .....ঋতুচক্রের পালাবদলে বছর শুরু হয়। আবার একবছর পরে তার সমাপ্তি ঘটে। বছরের প্রথম দিনটিকেই সবাই স্বাগত জানায়। নতুন সূর্যের আগমনের সাথে সাথে  গানবাজনা,নাচ ইত্যাদি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করা হয়। আগামী দিনের অনেক প্রত্যাশা ঘিরে এই অনুষ্ঠানের  আয়োজন হয় স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত,ঘটনা-দুর্ঘটনা, ভালোমন্দের ভেতর দিয়ে বছর শেষ হয়। অনেক স্মরণীয় ও উল্লেখযোগ্য ঘটনা যেমন মনকে উজ্জীবিত করে  তেমনি অনেক অপ্রীতিকর, অবাঞ্ছিত  ন্যক্কারজনিত ঘটনাও মনকে বিষাদগ্রন্থ করে তোলে। তবে ভালো, রুচিশীল,মহৎ ও সাহসিকতার ঘটনাগুলোকে নতুন
বছর পদার্পনের পরে সবার বিশেষভাবে স্মরণ রাখা উচিত। সেটা মনে রেখেই নতুন বছর উদযাপন করা  একান্ত কাম্য। বিগত বছরের বিশ্রী, অশুভ,কুৎসিত, অপ্রীতিকর ও খারাপ ঘটনাবলী মন থেকে একেবারেই মুছে ফেলা উচিত এবং নতুন বছরে তার থেকে পুরোপুরি প্রভাবমুক্ত থাকা উচিত-অর্থাৎ নবীনকে স্বাগত জানানোর অগ্রাধিকার আর পুরনোকে একেবারেই অস্বীকার করা যাবেনা, তবে ভালো ঘটনাকেই শুধুমাত্র মনে স্থান দিতে হবে। নতুন বছরে অন্যান্য অনেক ভালো কিছুর সাথে এটাও হবে রেজলিউশন। 

No comments:

Post a Comment