Friday, January 3, 2025


 


স্বাগত নতুন 



 সূর্যাস্তের পর হয় সূর্যোদয়
 কবিতা বণিক


 সুর্যাস্তের নিয়মে আলোর বিদায় হয় আরও এক উজ্জ্বল নুতন সুর্যোদয়ের জন্য। সুর্যোদয়ের নুতন আলোকচ্ছটায় প্রকৃতি উদ্ভাসিত হয়। বিগত দিনের সূর্যাস্তের মোহময়ী সৌন্দর্য বন্দী হয় মনের মণিকোঠায়। সূর্যাস্তের রক্তিম আলোক বর্ণের দিগন্ত জোড়া ওড়না মাথায় সূর্য সোনার টিপ পড়ে সাগর জলের নীল ঘাগরায় সেজে অথবা বনভূমির সবুজ শাড়িতে সেজে ঘুমিয়ে পড়ে যেই মেয়ে ! সে যেন সত্যিই ঘুমিয়ে পড়ে সবার হৃদয়ে স্মৃতি হয়ে। আবার জেগে ওঠে সোনার কাঠি ছুঁয়ে নুতন আশার সোনালি আলো নিয়ে, যাকে সূর্যোদয় বলে - “ প্রতিদিন আমি, হে জীবন স্বামী, দাঁড়াব তোমারি সম্মুখে।” হ্যাঁ, কর্ম চঞ্চল প্রতিটি দিন এমনি ভাবেই আসবে যাবে। বরণের মালা পরে যেমন আসে প্রতিদিন, প্রতি মাস , প্রতি বছর! ঠিক তেমনি ভাবেই মালা খুললেই সে কথা, সে দিন, সেই ক্ষণ স্মৃতি হয়ে থাকে নিজের মনে। মনের কথ বোঝার বয়স আসে শৈশব থেকে কৈশোর তারপর যৌবন পার হয়ে প্রৌঢ়াবস্হার পর বৃদ্ধাবস্হা পার হয়ে আসে মৃত্যুর দুয়ার। ব্যক্তির কাছে মৃত্যুর আগে পর্যল্ত সব স্মৃতি হয়ে থাকে তার কাছে, মৃত্যুর পর তো সবই স্মৃতি হয় অন্যদের কাছে। এই তো প্রকৃতির নিয়ম। 

              প্রকৃতির নিয়মে পর্ণমোচীদেরও ঝরে পরার উৎসব হয় দেখি। নুতনদের স্বাগত জানাতে তাদের এই উৎসব। জীবনের শেষে ঝরে যাওয়ার সময় রঙীন স্বপ্নে বিভোর করে রাখে প্রকৃতিকে। রঙীন পাতার গালিচা বিছানো পথ ধরে আসে কিশলয়েরা। রঙীন প্রকৃতি তখন সেজে ওঠে সবুজের রঙে। রঙীন প্রকৃতি তখন স্মৃতি হয়ে মনে গেঁথে থাকে। সবুজের সাথে পরিচিত হতে আসে কত ফুল, পাখী , ভ্রমরেরা। সে ,আর এক আনন্দ। 

             মানুষের জীবনেও আসে নুতন প্রাণ। এই আগমন বার্তায় কত না আনন্দ, কত না উৎসবের আয়োজন। সংসারে পূর্ণ বয়স্ক মানুষের জীবনের যখন শেষ হয়, ওদিকে দেখা যায় হয়ত কোন নুতন জীবনের শুরু। এ যেন “ তোমার হল শুরু আমার হল সারা। / তোমায় আমায় মিলে এমনি বহে ধারা।’”পুরোন যা কিছু, সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে নুতনকে বরণ করে তাদের আরও উন্নত করে তৈরি করা। এই ভাবেই দেখা যায় তাদের দ্বারা কত নুতন জিনিসের আবিস্কার হয়। সনাতনী ধারায় এমন ভাবেই পেলাম বসিষ্ঠদেবের পুত্র শক্তিকে। তাঁর পুত্র পরাশরকে। তাঁর পুত্র ব্যাসদেবকে। ব্যাসদেবের পুত্র শুকদেব মহারাজকে। এনারা পাঁচ পুরুষ ভারতবর্ষের প্রাণ পুরুষ স্বরূপ। এনারা প্রত্যেকেই বেদ, পুরাণ, তন্ত্র শাস্ত্র , স্মৃতি শাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে উজ্জ্বল স্বাক্ষরতার প্রমাণ রেখেছেন। ব্যাসদেব তো বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ভাগবত প্রণেতা হয়েও আজও সন্ন্যাসীদের সার্বভৌম গুরু। এখান থেকে বোঝা যায় পুরাতনের অভিজ্ঞতা নিয়ে নুতনের পালন পোষনের প্রয়োজনীয়তা কতখানি সার্থক করে তোলা যায়। 

             পুরোন কে মনে রেখে নুতনকে সার্থক করে তোলার নামই জীবন। আবারও মনে হয় ‘ রাতের সব তারাই থাকে দিনের আলোর গভীরে ‘। মনের ভিতরের মণি মুক্তো দিয়ে নবীনের সবসময় স্বাগত জানানোর মধ্যেই জীবনের সার্থকতা। তাই তো কবি বলেন “ আমার ছুটি জাগাও তুমি , ওইখানে মোর জিত। “

No comments:

Post a Comment