গল্প
ডট পেন
চিত্রা পাল
বাড়ী থেকে বেরোবার সময়ে ডটপেনটা নেবো না নেবো না করেও সঙ্গে নিয়ে নিলো নিখিলেশ। যদিও জানে এখন কোন কাজে লাগবে না, তাও সঙ্গে নিয়ে নিলো।কী জানি বলা যায় না, যদি কোন কারণে কাজে লেগে যায়। পকেটে গুঁজে নেবার পরে আবার একবার পেনটা বের করে খবরের কাগজের সাদা জায়গায় ঘসে দেখে হিজিবিজি কেটে দেখেও নিলো কালি ঠিক আছে কি না,দ্যাখে, হ্যাঁ ঠিক আছে। এবার আর ফোনটা পকেটে গুঁজে নিতে দ্বিধা করলো না ।
নিখিলেশ আজ নিয়ে দুতিন্ দিন বাড়িতেই আছে। কদিন সর্দি গা ম্যাজম্যাজ এসবের সঙ্গে গা টা ও যেন গরম গরম লাগছে। ছুটি পাওনা ছিলো বলে অফিস থেকে ছয় দিন ছুটিই নিয়ে নিলো। সবে পুজো পার হয়েছে। মেয়ের এখন স্কুল ও ছূটি। কথায় কথায় বীণা বলে, এই তো ছুটি নিয়ে বাড়িতে বসে আছ। রিনিরও স্কুল ছুটি, আমরা সবাই মিলে কুচবিহারে মায়ের কাছে ঘুরে আসতে পারতাম। নিখিলেশ বলে, তা যাও না, কে বারণ করেছে। বীণা বলে, তা কি করে হবে, তোমার শরীর ভালো নয়, গা গরম, এভাবে তুমি যাবে না কি ?নিখিলেশ বলে, না, আমি যাবো না, তোমরা ঘুরে এসো। বীণা আবার বলে, না তা হয় না। তোমার শরীর ভালো নয়, আর তোমাকে রেখে আমি যাব? না ,এমন কিছু শরীর খারাপ নয়, আমি একা বেশ থাকতে পারব, তুমি বরং রিনিকে নিয়ে ক দিন ঘুরে এসো। এখন ওর স্কুলের ছুটি ওর দিদিমণিও বলে গ্যাছে দিন দশ বারো আসবে না, এটাই যাবার সময়।নিখিলেশের কথা শুনে রিনি বলে, চলো না মা কুচবিহারে, কতদিন যাই না, চলো না, চলো না বলে বায়না ধরে ।
ওদের ট্রেনে তুলে দিয়ে এসে যেন কাত্রে পড়লো নিখিলেশ। ওদের নিয়ে কোন চিন্তা নেই, সঙ্গে একজন অফিস কলিগকে পেয়ে যাওয়াতে ও নিজেও খানিক চিন্তামুক্ত। কিন্তু ওর শরীরটা ঠিক নেই।আজকে যে বেশি খারাপ লাগছে সেটা ও বীণাকে বলেনি।ভাবলো সামান্য সর্দিজ্বর ও দুদিনে সেরে যাবে,কিন্তু বীণা আর রিনি যাবে বলে যে হৈচৈ করছে, ওর জন্যে বীণা যাওয়া ক্যান্সসেল করে দেবে, তারপরে রিনি গোঁজ হয়ে থাকবে আর বাড়ির আবহাওয়া একেবারে হঠাত্ ঘুর্ণীঝড় আসার ঘোষনার পরের অবস্থায় এসে যাবে। তাই যাওয়াটাই বহাল থাকলো। নিখিলেশ ওদের ট্রেনে তুলে দিয়ে ওষুধের দোকান থেকে জ্বর কমাবার ট্যাবলেট কিনে নিয়ে এলো। রাতে অল্প কিছু খেয়ে ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লো।
সকালে জ্বর সামান্য কমলেও শরীর ভালো বোধ হচ্ছে না দেখে কাছেই চৌমাথার ওধারে যে ডাক্তারবাবু বসেন তার শরণাপন্ন হলো নিখিলেশ। ডাক্তারবাবু সব দেখেশুনে পাঁচ দিনের ওষুধ লিখে দিলেন।বললেন, এইওষুধগুলো খান ঠিক হয়ে যাবেন। যদি না সারে তবে আসবেন।
ডাক্তারখানা থেকে বেরিয়ে নিখিলেশ কাছের ওষুধের দোকানে গেল। প্রেসকৃপশন দোকানদারকে দেবার আগে নিখিলেশ নিজেই একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো,কি ওষুধ দিয়েছে দেখার জন্য। ডাক্তারবাবুর লেখা এত জটিল আর গুঁড়ি গুঁড়ি যে কিছুই পাঠ্যধার করতে পারলো না। দোকানদার তিনটে ওষুধ দিয়ে বললো,প্রথমটা যে কি দিয়েছেন,ওটা আমাদের দোকানে নেই।নিখিলেশ সব ওষুধগুলো কিনবে বলে ওই খানকার কাছাকাছি তিন চারটে দোকান ঘুরে এলো, কিন্তু কেউই এক নম্বর ওষুধটা দিতে পারলো না।
এক নম্বর ওষুধ না পাওয়া গেলেও যে তিনটে পাওয়া গ্যাছে, সে গুলো নিয়মমাফিক খেয়ে নিয়েছে। আজ জ্বরটাও আসেনি।শরীরটা আগের থেকে ভালো বোধ হচ্ছে। খাওয়া দাওয়ার পরে দুপুরে একটু বিশ্রাম নিতে বিকেলে বেশ ফুরফুরে লাগলো নিজেকে। ভাবলো, আচ্ছা এক নম্বর ওষুধটার খোঁজে একবার স্টেশনের ওপারের বড় দোকানটায় যাই। দেখি ওরা দিতে পারে কি না। ওদিকটায় আবার টোটো যায় না। একখানা অটো নিয়ে ওই বড় দোকানটায় হাজির হয় নিখিলেশ।সেখানে বেশ ভীড়।লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কজন। নিখিলেশও লাইন দিলো। ওর টার্ন আসতে ও ওর প্রেসক্রিপশনটা কর্মচারিকে দিয়ে বললো,শুধু প্রথম ওষুধটা দেখবেন,অন্যগুলোপেয়ে গেছি। সে খানিকক্ষণ দেখে বোধ হয় বুঝতে না পেরে অন্য দুচারজনকে দেখায়। শেষে একজন বললো, না এ ওষুধটা নেই। নিখিলেশ বলে,কয়েকটা দোকানেতোদেখলাম, পাইনি জানেন। আচ্ছা ওষুধটা কি সংক্রান্ত বলতে পারেন? অনেক দেখেটেখে বলে ঠিক বঝতে পারছি না,কোন বড় অসুখ ক্যন্সার ট্যান্সারের হতে পারে, আপনি কাইন্ডলি অন্য দোকানে জিজ্ঞেস করে নিন।
শুনে নিখিলেশ বেজায় চিন্তায় পড়ে গেলো। কি হলো, আমার আবার ক্যান্সার হলো নাকি?জ্বর শরীর দুর্বলতা কি তারই পূর্ব লক্ষণ? মেয়েটা ছোট, এখন ও যদি এমন অসুখে পড়ে তবে বীণার কি হবে? বাড়িতে এসেও ওর মাথা থেকে চিন্তা যায় না। এর মধ্যে বীণার ফোন এলো। জিজ্ঞেস করে ,কেমন আছতুমি? বলতে যাচ্ছিলো, না আমি ভালো নেই, বলতে গিয়েও বোললো,আমিভালই আছি, কোন চিন্তা কোরো না।
রাতে ভালো ঘুম হয়নি, নানারকম আবোলতাবোল চিন্তার জট এসে মাথায় ভীড় করে। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। সকালে ঠিক করে, না, আর কোন চিন্তা নয়, আগে আর একবারডাক্তারবাবুর সঙ্গে দেখা করি। এই ভেবে ডাক্তারবাবুর সঙ্গে দেখা করে প্রেস্ক্রিপ্শন দেখিয়ে বলে, যেমন ওষুধ দিয়েছেন তেমনই খেয়েছি, কিন্তু এক নম্বর ওষুধটা কোন দোকানে পাইনি। ওটা কোথায় পাব?ডাক্তারবাবু প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে দেখে বললেন, আরে, ওটা কোন ওষুধই নয়। আমার পেনটা ঠিক ছিলো না বলে আপনার পেনটা নিয়ে লেখার আগে একবার দেখে নেবার জন্য ওই লেখাটা লিখে আবার কেটেও দিয়েছি। নিন, কিচ্ছু চিন্তা করবেন না।ভালোই আছেন দেখছি।নিখিলেশ প্রথমে একটু হকচকিয়ের গেলো। কি থেকে কি ভাবছিলো ও।ভাগ্যিস্ বীণাকে কিছু বলেনি।তাহলে আর এক কান্ড হতো। তারপর ডট পেন টা পকেট থেকেনিয়ে একেবারে ফেলে দিতে গিয়েও থমকে গেলো দোষটা কার সেই ভেবে।

No comments:
Post a Comment