শ্রীকৃষ্ণের গুরুকূল  সান্দীপনি আশ্রম
জনা বন্দ্যোপাধ্যায় 
মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী স্টেশনে এই শহরের মাহাত্ম্যর কিছু দৃশ্য দেওয়াল-চিত্রে চোখে পড়ে! এই চিত্রগুলোর মধ্যে সান্দীপনি মুনির আশ্রম অন্যতম! এই আশ্রমে  সান্দীপনি মুনির কাছে কৃষ্ণ, বলরাম সহ কিছু বিদ্যার্থী শিক্ষা লাভ করছে এরকম চিত্র থেকে পর্যটকদের ধারণা জন্মায় এই শহর কতটা প্রাচীন! মহাভারতে না থাকলেও শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ, অগ্নিপুরাণ,  ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ প্রভৃতিতে সান্দীপনি আশ্রমের উল্লেখ পাওয়া যায় l 
       সান্দীপনি মুনি এই আশ্রমে কাশী থেকে এসেছিলেন l এখানে কৃষ্ণ, বলরাম, সুদামা সহ দেশ-দেশান্তর থেকে অনেক শিক্ষার্থীদের আগমন ঘটে l এই আশ্রমের একটি শিলাতে একটি অঙ্কের উল্লেখ আছে, বিশ্বাস করা হয় যে,  সান্দীপনি মুনি ওই শিলাতে অঙ্কটি লিখেছিলেন l 
        মহাকাল মন্দির এই আশ্রম থেকে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত l সান্দীপনি আশ্রমে কুণ্ডেশ্বর মহাদেবের মন্দিরটি সম্পর্কে কথিত আছে শ্রীকৃষ্ণ এই মহাদেবকে পূজা করতেন! তাই এই মহাদেবকে তুলসী দ্বারা পূজা করা যায়! এরকম পূজা ভারতে বিরল! সবই শ্রীকৃষ্ণের লীলা! তাঁর বিদ্যালয়ে শিবের মন্দির থাকার অর্থ হল স্থানটি হরিহর ক্ষেত্র l সমস্ত দেবতা এই ক্ষেত্রটির কথা অবগত আছেন!
      সান্দীপনি আশ্রমে একটি জলাশয় আছে যা গোমতী কুণ্ড নামে প্রসিদ্ধ! গুরু সান্দীপনি এখানে স্নান করতেন l এছাড়া শ্রীকৃষ্ণ অঙ্ক মোছার জন্য স্লেট ধুতেন l স্থানটি এইজন্য অঙ্কপাত নামে প্রসিদ্ধ ছিল!
          সান্দীপনি আশ্রমের চারিপাশ শান্ত, নির্জন! অনেক গাছপালা চোখে পড়ে! এক পবিত্র ধ্যান যোগের স্থান! আশ্রমের গ্যালারিতে চৌষট্টিটি বিদ্যার চিত্র আছে! শোনা যায় এই প্রাচীন গুরুকূলে শ্রীকৃষ্ণ এগারো বছর সাতদিন বয়সে বিদ্যা শিক্ষা লাভ করতে এসেছিলেন l এখানে তিনি  আঠারো দিনে আঠারোটি পুরাণ, চার দিনে চারটি বেদ, ষোল দিনে ষোলটি কলা সহ চৌষট্টি দিনে বিদ্যাশিক্ষা অর্জন করেছিলেন!
       এই আশ্রমে কুণ্ডেশ্বর মহাদেবের মন্দিরের সামনে নন্দীর স্থাপত্যটি শুঙ্গ যুগের! এখানে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের গুরু বল্লভাচার্য-র বৈঠক অনুষ্ঠিত হত! তাঁর চুরাশিটি বৈঠকের মধ্যে তিয়াত্তরটি বৈঠক এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল!
      প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে অগণিত ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড় হয় এখানে! এই পৌরাণিক স্থান এই যুগেও এক ভক্তি রসের আশ্রয়স্থল রূপে সর্বজনবিদিত!

No comments:
Post a Comment