Monday, November 3, 2025


 

আমার লেহ লাদাখ ভ্রমণ
         ছবি ধর 

বিস্ময়কর সৌন্দর্যপূর্ণ  প্রকৃতি এবং ভারতে আমি যতগুলো জায়গা ঘুরেছি তার মধ্যে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর মনে হয়েছে লেহ লাদাখ।

চারদিকে পাহাড়ের দুর্গ, উড়ন্ত রঙিন প্রার্থনা পতাকা,সেনা শিবির, স্তূপীকৃত নুড়িপাথর, খুবানি বাগান, ছোট ছোট কাদামাটি ঘর,গোলাপি গালওয়ালা শিশু এবং আরও অনেক কিছু। লেহ লাদাখের আকাশের রঙ সবচেয়ে অপূর্ব সুন্দর ন্যাড়া পাহাড় তবুও যেনো বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।

লাদাখে সৌন্দর্যের বিশুদ্ধতম রূপ খুঁজে পাই এবং গন্তব্যের মতো ভ্রমণও উপভোগ করার জন্য যথেষ্ট।
লাদাখ খালি একটা ট্যুরিস্ট প্লেস নয় বেশিরভাগ মানুষের কাছে একটা স্বপ্ন। ঘন নীল আকাশ, মাঝে সাদা মেঘের ভেলা, রুক্ষ উষর এলাকা, লাল হলুদ, বাদামী রঙের ন্যাড়া পর্বতের সারি, নীল জলের বিশাল মায়াবী হ্রদ, সহজ সরল মানুষ, ও সুন্দর আথিথেয়তা,বৌদ্ধধর্ম,অসাধারণ এবং ভয়ঙ্কর সব রাস্তা, পৃথিবীর কিছু উচ্চতম পার্বত্য গিরিপথ এসব নিয়েই লাদাখ, এসবই লাদাখকে আমাদের পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরেছে, আর লাদাখ পর্যটনকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে বলিউড, আরো বলতে গেলে ২০০৯ সালের একটি সিনেমা, আমাদের সকলের পরিচিত "থ্রি ইডিয়টস্"।






লাদাখ যাওয়া অনেকের কাছেই স্বপ্ন থাকে, কিছু কিছু মানুষের স্বপ্ন থাকে লাদাখ বাইক ট্রিপ করা, কিন্তু ব্যাপারটা এত সোজা না। লাদাখ ভ্রমণ অন্য অন্য জায়গার মতো না। লাদাখ ভ্রমণের জন্য অনেকদিন আগে থেকে প্রচুর প্রচুর পরিকল্পনার প্রয়োজন।লাদাখ কিন্তু সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ১৪-১৫ হাজার ফিট উচ্চতায় তাই পরিকল্পনা ছাড়া গেলে কিন্তু সমস্যা পড়তে হতে পারে।  নিজেদের প্ল্যানে লাদাখ যাওয়া এমন কোনো কঠিন ব্যাপারও না,আমরা নিজে নিজেই প্ল্যান করে গেছি আমি মেয়ে আর হাসব্যান্ড তিন জন মিলে। 

নিজেদের প্ল্যানে ঘোরাতে আলাদা একটা স্বাধীনতা আছে, আপনি যেখানে নিজেই সর্বেসর্বা, এবং অনেক কম খরচে জায়গাগুলো ঘুরে আসা যায়। ভারতের যে কোনো স্থান থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লী আর দিল্লী থেকে লেহ এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট। হোটেলও বুকিং করেছি অনলাইনে আর লেহ থেকেই লোকাল ট্যুরের জন্য গাড়ি পাওয়া যায় হোটেল মালিকও গাড়ি ঠিক করে দেয়। বেশি দামাদামি না করাই ভালো। ওরা খুব বেশি চায় না। সহযোগিতায় ওরা বিশ্বস্ত। সারা বছরের মধ্যে খুব অল্প কটা মাস পর্যটক আসেন। তাই আতিথেয়তায় কোনো খামতি রাখে না।

কেন্দ্রশাষিত অঞ্চল লাদাখে একটি মাত্রই এয়ারপোর্ট যা লাদাখের রাজধানী লেহ শহরে অবস্থিত,যার নাম কুশক বকুলা রিমপোছে এয়ারপোর্ট, যেটা একটি সামরিক এয়ারপোর্ট হলেও সামরিক, অসামরিক দুধরণের বিমানই ওঠানামা করে, শ্রীনগর বা দিল্লী দুটো জায়গা থেকেই  একটু পরপর লেহ এর ফ্লাইট রয়েছে আসার ফ্লাইট ও একই ভাবে। ওয়েদার খুব খারাপ হলে বিমানযাত্রা দেরি হতে পারে। আমরা দু ঘণ্টা দেরিতে লেহ থেকে দিল্লি পৌঁছেছি। তবে টিফিন দেয় বিমান সংস্থা। 

শ্রীনগর হয়ে রাস্তা কিন্তু এপ্রিল মাসের শেষ দিকে এবং মে মাসের প্রথম দিকে ওপেন হয়ে যায় একটা লেন দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু মানালি হয়ে রাস্তা কিন্তু খুলতে আরো দেরি হয়। লাদাখ যাওয়ায় জন্য বেস্ট টাইম হবে মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুন মাস আবার সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর।

সেই সময় পুরো লাদাখ এলাকা হলুদ, লাল রঙের বাহারি পাতায় ভরে থাকে কি দারুণ লাগে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। 





লাদাখে ঘোরার জন্য পারমিট এর প্রয়োজন যাকে ILP বলে বা inner line parmit বিদেশীদের ক্ষেত্রে PAP বা protected Area permit। শ্রীনগর থেকে লেহ বা মানালি থেকে লেহ আসার ক্ষেত্রে কোন পারমিট এর প্রয়োজন নেই। পারমিট এর প্রয়োজন নুবরা ভ্যালি, খারদুংলা, প্যাংগং, সোমোরিরি, হানলে প্রভৃতি জায়গায়।পারমিট জন্য অনলাইন apply করতে পারেন।

লেহ DC অফিসে গিয়ে offline এ করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হবে  ড্রাইভার কে বুক করে তাকে দিয়েই করান । ভোটার কার্ড whatsapp পাঠিয়ে দিলে তারাই করে দেবে।  একটু বেশি টাকা লাগবে কিন্তু ঝামেলা মুক্ত।

লাদাখে প্রধান যে সমস্যার সম্মুখীন হয় সেটা হলো Altitude Sickness বা যাকে আমরা Acute Mountain Sickness ।কারণ আমরা যে উচ্চতায় থাকি এখানে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় 100% কিন্তু  লাদাখের উচ্চতা ১৪-১৫ হাজার ফিট সেখানে কিন্তু অক্সিজেনের পরিমাণ ৫০%, সেই জন্য  মাথা ধরা, মাথা ঘুরে অজ্ঞান, জ্বর, বমি শ্বাস প্রস্বাসের সমস্যা এই সব হতে পারে। গাড়িতে যদি ছোটো একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার রেখে দেই তাহলে জরুরী ভিত্তিতে কাজে লাগতে পারে দামও বেশি না। তিন চারশো টাকার মতো।সমতল থেকে গাড়ি ওপরের দিকে ওঠার সময়ে আমাদের শরীরকে যতটা বেশি সংখ্যক ঠান্ডা হাওয়া উপভোগ করতে দিতে হবে। বেশী করে জল পান করা, বেশী দৌড়াদৌড়ি বা জোরে হাঁটাচলা বেশি  না করাই ভালো বিশেষ করে খারদুংলাতে।  ফ্লাইটে এলে ওই দিন টা পুরো হোটেলে রেস্ট। সাথে সাথে বাইরে বেরোলেই কিন্তু সমস্যা হতে পারে।

দুদিন পর তৃতীয় দিন লেহ থেকেই কয়েকটা প্রয়োজন মতো জলের বোতল গাড়িতে তুলে নিলে ওপরে উঠে গেলে দুতিন দিনের জন্য আর বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে না। আমাদের গাড়ির ড্রাইভার বলায় আমরা কিনে নিয়ে গেছি। লেহতে ঠান্ডা যা পাবেন ওপরে তার থেকে অনেক বেশি শীতের প্রকোপ তাই গাড়িতে বেশি করে শীত বস্ত্র নিয়েই ওপরে উঠলে ভালো। 

এই সমস্ত কিছু যদি আপনি ফলো করেন তাহলে অনেকখানি সেফ থাকবেন।
খাওয়া দাওয়া ---
 লাদাখে খাওয়া দাওয়ার দাম কিন্তু প্রচন্ড বেশি। যদি রাস্তায় কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্টে খান তাহলে অবশ্যই দেখবেন যাতে সেগুলো পাঞ্জাবি ধাবা হয়। এই ধাবা গুলোতে নর্থ ইন্ডিয়ান খাওয়ার গুলো পাবেন এবং দামও হবে সাধ্যের মধ্যে। 
হাতে সময় থাকলে আমার মতে লাদাখ আসার ক্ষেত্রে বাই রোড আসাই সঠিক হবে এবং বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তার কারণ হচ্ছে রাস্তা দিয়ে এসে যখন আপনি লাদাখ পৌঁছোবেন তাতেই আপনার অর্ধেক লাদাখ দেখা সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।

লাদাখ পৌঁছোনোর দুটি রাস্তা আছে এক শ্রীনগর হয়ে দুই মানালি হয়ে। শ্রীনগর হয়ে গেলে দূরত্ব ৪১৮কি.মি এবং মানালি হয়ে গেলে প্রায় ৪৪০কি.মি, সময় আরো 2 ঘন্টা বেশি লাগবে। শ্রীনগর হয়ে গেলে ৩ টে মাউনটেন্ট পাস বাংলায় যাদের আমরা গিরিপথ বলি এবং তিব্বতী ভাষায় 'লা' পেরোতে হবে আর মানালি হয়ে গেলে ৫টে পাস পেরোতে হবে। শ্রীনগর হয়ে গেলে রাস্তায় আপনারা পাবেন জোজিলা,  ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের প্রধান কারণ নামিকা-লা, ফটুলা পাস। ফটুলা টপ শ্রীনগর-লেহ হাইওয়ে (NH-1) এর সর্বোচ্চ স্থান উচ্চতা ১৩৪৭৮ ফিট। আর মানালি হয়ে গেলে রোহতাং পাস তারপর বারালাচলা,নাকিলা সর্বোচ্চ স্থান মানালি-লেহ হাইওয়ের লাচুংলা,টাংলাংলা। আমার মতে শ্রীনগর হয়ে গিয়ে মানালি হয়ে ফিরে আসা লাদাখ ভ্রমনের ক্ষেত্রে আদর্শ হবে, বেশিরভাগ পর্যটকরাই তাই করে। অনেকে সময় বাঁচানোর জন্য ১টা দিক ফ্লাইটে করে। কারণ শ্রীনগর থেকে মানালি এই গোটা সার্কিটটা কভার করতে  ১০-১১ দিন সময় লেগে যাবে, তার ওপরে এতদিন ধরে এত হাইটে গাড়িতে জার্নি করা শরীরের ওপরেরও যথেষ্ট চাপ পড়ে। বেশিরভাগ পর্যটকরাই শ্রীনগর হয়ে গিয়ে মানালি হয়ে ফিরে আসে এর পেছনেও একটা বড় কারণ আছে। লাদাখ বা লেহ সমুদ্রতল থেকে ১১০০০-১৫০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত, আর আমরা প্রায় সমভূমি এলাকা থেকে এত উচ্চতায় যখন যাবো, তখন শরীরের একটা ভারসাম্য বা উচ্চতাকে মানিয়ে নেওয়া প্রয়োজন নাহলে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। বয়স্কদের জন্য বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

লাদাখ পৃথিবীর দ্বিতীয় শীতলতম স্থান। কারগিলের যুদ্ধ অনেকটা এখানকার টলোলিং পাহাড়ে হয়েছিলো তাই এখানে কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়াল তৈরি করা হয়েছে,এই মেমোরিয়ালটা দেখতে একটু টাইম লাগবে। এরপর একদম সোজা কার্গিল।






লামায়ুরু মনাস্ট্রি, মুনল্যান্ড এখানে আসলে আপনার মনে হবে আপনি অন্য জগতে আছেন, একদম চাঁদের পাহাড়, এরপর একটি জায়গায় আসবে যেখানে রাস্তা একদম সোজা, ছবি তোলার পক্ষে আদর্শ জায়গা। তারপর পত্থর সাহিব গুরুদোয়ারা, ম্যাগনেটিক হিল, নিম্মোর সিন্ধু ও জাঁস্কার নদীর সংগমস্থল দেখে আপনারা লেহ শহরে ঢুকে পড়বেন। পত্থর সাহিব গুরুদোয়ারার একটা ইতিহাস আছে, এক পাথরের ওপরে গুরু নানকের পায়ের ছাপ আছে। ম্যাগনেটিক হিলে শোনা যায় গাড়ি নাকি স্টার্ট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ওপরের দিকে চলতে থাকে কিন্তু আমরা এরকম কিছু দেখি নি। এখানে করার মতো অনেক Activity আছে চাইলে আপনারা করতে পারেন। সেদিনকার মত লেহতে বিশ্রাম, পরের দিন লেহ লোকাল সাইটসিং।

লেহ মার্কেট, মল রোড, লেহ প্যালেস, শান্তি স্তূপা, লেহ ওয়ার মেমোরিয়াল। শান্তি স্তূপা, লেহ প্যালেসে বিকেলের দিকে গেলে ভালো কারণ এখান থেকে সানসেটটা দারুন লাগে।  সাইটসিং এর মধ্যে নিম্মোর সঙ্গম পয়েন্ট, ম্যাগনেটিক হিল গুরুদোয়ারা  লাদাখ ট্যুরের সবচেয়ে কঠিন কষ্টকর এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় জার্নি  এদিন পৃথিবীর সবচেয়ে উচু রাস্তার ওপর দিয়ে ট্রাভেল করেছি আর মনে হয়েছে স্বর্গ যেনো হাতের নাগালে! যারা ফ্লাইটে আসবেন তাদের একটু প্রব্লেম হলেও হতে পারে। তাই লেহ তে স্টে করতে হবে এক রাত । গন্তব্যস্থল হবে নুবরা ভ্যালি যাকে শীতলতম সাদা বালির মরুভূমিও বলে। নুবরা যেতে পার করতে হবে খারদুংলা পাস, যা পৃথিবীর উচ্চতম হাইওয়ে উচ্চতা 18000 ফিট, বর্তমানে দ্বিতীয় উচ্চতম। এই এলাকাটি পুরোটাই ইন্ডিয়ান আর্মির সিয়াচেন ওয়ারিওস্ এর কন্ট্রোলে, এই রাস্তাই যাচ্ছে নুব্রা হয়ে সিয়াচেন বেসক্যাম্পে। খারদুংলা পাসের আগেই একটি চেকপোস্ট পড়বে নাম নর্থ পুল্লু এখানে খারদুংলার পারমিট চেক হবে, এখানে আর্মি ক্যাম্প এবং কিছু খাওয়ার রেস্টুরেন্টও আছে। খারদাংলা পৌঁছে আমার একটু শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। অনেকে গাড়ি থেকে নেমেই বমি মাথা ঘোরা এধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন দেখেছি।

খারদুংলা টপে পৌঁছে  বেশিক্ষণ এখানে না থাকা ভালো ১৫ মিনিট যথেষ্ট নাহলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে। বেশি হাঁটাহাটি না করাই ভালো এখানে একটা ক্যাফে আছে যেটা বিশ্বের উচ্চতম ক্যাফে। SBI এটিএমও রয়েছে।এরপর আবার যাত্রা শুরু নিচে নামার, পরের স্টপেজ আসবে সাউথ পুল্লু যেখানে  নুব্রার পারমিট চেক হবে।

নুব্রা ভ্যালিতে বাম্বো কটেজ গুলো তে রাত্রি যাপন করেছি। ওখানে  ডিনার আর চা কফি ব্রেকফাস্ট বুফেতে ছিল নানা রকম আইটেম।কটেজের ভেতরে সুন্দর বাগান ফুল দিয়ে সাজানো। আর উইলো পপলার গাছের সারি। কি অপরূপ দৃশ্য। সকাল নটায় পরের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম সাদা ইনোভা গাড়িতে উঠে আমরা তিন জন মিলে। ড্রাইভারের থাকার ব্যবস্থা কটেজের ভেতরেই ছিল।

এর পরের স্টপেজ আসবে খালসার যেখানে খাওয়ার মতো কিছু হোটেল পেয়ে  লাঞ্চটা এখানেই সেরে নিয়েছি। লাঞ্চ সেরেই চলে এলাম ডিস্কিটে, ডিস্কিট মনাস্ট্রি এবং ভগবান বুদ্ধের বিরাট মূর্তিটা দেখতে যেটা এখানকার প্রধান আকর্ষন,৩০ টাকা এন্টি ফি। ডিস্কিট মনাস্ট্রির ওপর থেকে পাশের শায়ক নদী দৃশ্য অপরূপ। নেক্সট গন্তব্যস্থল হলো হুন্ডার যেখানে সাদা বালিয়ারির মরুভূমি যেখানে অনেকটা সময় কাটিয়ে এবং সূর্যাস্ত দেখেছি।প্রচুর কিছু আছে সবচেয়ে জনপ্রিয় দু-কুচ যুক্ত ব্যাকট্রিয়ান উট সাফারি। এরকম ধরণের উট  আর কোথাও নেই। সুদূর চিনের গোবি মরুভূমি থেকে এই উট গুলো এসেছিল যখন প্রাচীনকালে এই এলাকা ওল্ড সিল্ক রুটের অংশ ছিলো। মাত্র ১৫ মিনিটের সাফারি চার্জ নেয় ৩৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। 

তুরতুকের সুন্দর সুন্দর কৃষিজমি, তাদের বাড়ি ঘর, ন্যাচারাল কোল্ড স্টোরেজ, যেটা এখানকার প্রধান আকর্ষন, আর প্রচুর Apricot ফলের গাছ, এই এলাকা গুলো Apricot এর জন্যই বিখ্যাত। রাস্তার ধারে ধারে দেখতে পেলাম আর্মি পক্ষ থেকে Apricot Shop খুলে রেখেছে। এখান থেকেও পাকিস্তান LOC দেখতে পেলাম কিন্তু থাঙের মতো এতো ভালো ভাবে নয়।

প্যাংগং পৌঁছে ঘন্টা দেরেক ছবি তুলে লেকের পাশের ক্যাম্প গুলো ভাড়া করে স্টে করা যায় আবার কেউ চাইলে আরো একটু এগিয়ে একটু নিরিবিলি জায়গায় থাকতে পারেন। আমরা দুর্বুক গ্রামের একটা হোমস্টেতে রাত্রি যাপন করেছি। রাতের খাবার রাজমা ডিম কষা ভাত রুটি সালাদ পাপড় আর আচার ছিল।

পাশ দিয়ে একটা ছোট্ট নালা বয়ে যাচ্ছে কুল কুল করে। গ্রামের মানুষ গুলো হাসিখুশি ভাবে চাষ বাসের কাজ করছে। 

আমরা দুরবুক থেকে ভোরবেলা,চাংলা পাস পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম রোড কারু হয়ে লেহ পৌঁছেছি। এদিন ও দেখার মত ভালো স্পট আছে তার মধ্যে চাংলা পাস, এখানে প্রচুর বরফ পেয়েছি। আর লেহ শহর ঢোকার আগে দুটি স্পট, এক থিকসে মনাস্ট্রি এবং থ্রি ইডিয়টস্ স্কুল বা Rancho's School, যেখানে এই মুভির কিছু অংশের শুটিং হয়েছিলো। 

হানলের প্ল্যান করা যেতে পারে। আমরা একই জায়গা মাহেতে পারমিট চেক হয়ে হানলে গেছি ভিউ নিয়ে তো কোনো কথাই হবে না। আরো একটা উপরি পাওনা Indian Astronomical observatory center. হানলে তে বেশিরভাগ ফটোগ্রাফাররা অ্যাস্ট্রো- ফটোগ্রাফি করার জন্য যায়। 

সোমোরিরি লেক হানলেতে ,প্যাংগং লেক  নীল জলের লেক কিন্তু দুটোর মধ্যে একটু পার্থক্য আছে প্যাংগং কিন্তু নোনা জলের লেক কিন্তু সোমোরিরি মিষ্টি, প্যাংগং লেকের বেশিরভাগটাই কিন্তু চিনের দখলে, কিন্তু সোমোরিরি পুরো অংশই ভারতের ভূখন্ডে। সোমোরিরি লেকের রঙ কিন্তু আরো ঘন নীল। প্যাংগোং লেক  ভিউ অপূর্ব সুন্দর স্বচ্ছ নীল জলের নীচে কুচি পাথর গুলো বিভিন্ন মূল্যবান স্টোন মনে হবে। তবে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে আমরা ফিরে এসেছি লেকের ধারে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাসে কম্পন অনুভূত হওয়ার।আর সূর্য অস্ত যাওয়ার মুহূর্তটা খুব উপভোগ করেছি। লাদাখের প্রকৃতি বিশুদ্ধ পরিবেশে কটা দিন কাটিয়ে নিজেকে ধন্য মনে হয়েছে। লাদাখ যেনো অন্য এক গ্রহ। এখানকার মানুষজন তাদের সরলতা এখনো বিদ্যমান।ঈশ্বরের আশীর্বাদ যেনো লাদাখের জন জীবনে ভরপুর। সুযোগ সময় পেলে আবারও লাদাখ যাওয়ায় ইচ্ছা রাখি।

No comments:

Post a Comment