মুজনাই সাপ্তাহিক
এই তো কাছেই
চিত্রা পাল
এই
তো কাছেই অথচ এতোদিন যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এবার সুযোগ পেয়েই বেরিয়ে পড়লাম গন্তব্য
স্থানের দিকে। আমি বলছি বক্সাফোর্টে যাবার কথা। বক্সা ফোর্ট আমাদের ডুয়ার্সের
মধ্যেই। জলপাইগুড়ি শহর থেকে রাজাভাতখাওয়া
পৌঁছতে আড়াইঘন্টা মতো লাগে, তবে আমাদের একটু বেশীই লাগলো।ওখান থেকে গেলাম
সান্তালাবাড়ি। সান্তালাবাড়ি থেকে বক্সাফোর্ট তিনমাইল মতো। সেই পাহাড়ের চূড়োয় উঠতে
হবে। খানিকদূর অবধি গাড়ি গিয়ে আর যায় না, তারপরে পদব্রজে। সমতলের থেকে এখানে হাঁটা ব্যতিক্রমী। ধীরে
ধীরে ওপরে ওঠা। সহজেই হাঁপ ধরে যায়। কিন্তু
যাবার আনন্দে তাকে পাশ কাটিয়ে চলেছি আমরা। চারদিকে সবুজ। পাহাড়ি ঝোরা পাশ দিয়ে বয়ে
চলেছে কুল কুল করে। নানারকমের ফার্ন গাছের
সঙ্গে বাঁশ গাছের ঝোপঝাড় বেশ বেশি। খানিক দূর গিয়ে পাহাড়িয়া পথের ধারে ছোট্ট চাএর
দোকানে বসে চা খেয়ে আবার চলা। বক্সার এই বনাঞ্চলে অনেক রকমের পাখি দেখা যায়। ময়না
কোয়েল ধনেশ তো আছেই, তার সঙ্গে আছে সবুজ বুনো পায়রা। শুনেছি অনেক বিপন্ন প্রজাতির
পাখীর ও বাস এখানে। পাখীদের কলকাকলিতে মুখর এ বনভূমি। এই পথে যেতে যেতে দেখা হলো
এখানকার পোষ্ট অফিস। এখানে এখনও ডাকহরকরা সমতল থেকে ডাকের বোঝা পিঠে বয়ে নিয়ে আসে।
এসব দেখতে দেখতেই পৌঁছে গেলাম বক্সা ফোর্টে।
এই সেই ফোর্ট যেখানে বিপ্লবীদের শাস্তি
স্বরূপ রাখা হতো। শুনেছি আন্দামানের পরেই কুখ্যাতি ছিলো এই জেলের। কবি সুভাষ
মুখোপাধ্যায় ১৯৫০ সালে এখানে বন্দী হয়ে ছিলেন। সামনের ফলকে উৎ্কীর্ণ রয়েছে
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কবিতা। সামনে শহিদবেদীতে
ফুল দিয়ে বাতি জ্বালিয়ে এ প্রজন্মের আমরা ক্ষণিক বিরতিতে নিঃশব্দ নিস্তব্ধ হয়ে
আমাদের প্রণতি জানালাম। যদিও ফোর্ট এখন ধ্বংস স্তূপ। তবু বিপ্লবী বীরদের স্মৃতি
বিজড়িত এই স্থানে আপনি নত হয় মস্তক। তারপরে আবার সেই আরণ্যক পথে অবতরণ। বনস্পতির
প্রাচুর্য্য এ পথের বড় সম্পদ।
No comments:
Post a Comment