Wednesday, June 14, 2017


“পাক”

তুষার আহাসান













--মাটিই হলো গিয়ে পিথিবীর সবচেয়ে খাঁটি,বুঝলি সোনা-বউ।

--তবে তাকে আগুনে পুড়াও কেনে?
--ভগবান যেমুন আমাদের পুড়ায়,দুক্খু-কসটে আমরা খাঁটি হই,
ঠিক তেমনি আমরা হলাম গিয়ে বাবা-বিশ্বকরমার দূত,মাটি
পুড়িয়ে খাঁটি করি।
গালে হাত দিয়ে বিশুর বাবার কথাগুলো ভাবছে সোনালী।বিশুর
বাপের,সোনা-বউ!
যুগের সাথে যুঝতে গিয়ে ‘থপথপে’ হয়ে গেছে মানুষটা!চাকীর পাশে বসলে অবশ্য
আলাদা হয়ে যায় মানুষটা।তার হাত আর আঙুলের মোলায়েম ইশারায় নরম কাদামাটি
কোনটা হয়ে ওঠে হাঁড়ি,কলসী,সরা,যখন যার চাহিদা থাকে।
দিনের পর দিন চাহিদা কমে গেল মাটির জিনিষের।কাঁসা,পেতলের সাথে পাল্লা দিয়ে স্টিল
আর স্টেনলেস স্টিলের তৈরী জিনিষে কোণঠাসা হয়ে পড়ল বিশুর বাবাদের কারিগরী।
থপথপে লোকটাকে ঘরে রেখে পশরা সাজিয়ে বসে সোনা।সোমত্থ ছেলেটা ভুলেও এদিকে আসে না।
বলে—আমার নাম বিশ্বকর্মা নয়,বিশ্বরুপ।আমি গ্যারেজে কাজ করবো তবু তোমাদের ওই
মাটিগড়াতে জীবন মাটি করবো না।
দু-দুবার চুরির দায়ে হাজত খাটল,তবু ‘সুজবুঝ’ নাই!
আবার কেন আশার আলো দেখা? বুড়োবুড়ি যতদিন থাকবে,চাকীর
পাক ঘুরবে।চুরি করে মার খাওয়ার চেয়ে তা ঢের সম্মানের!
পথে মিছিল হাঁটে।গাছ আঁকা সাদা গেন্জী-পরা লোকগুলো স্লোগান দিতে-দিতে
এগিয়ে যায়।এরা কখনো পেছন ফিরে দেখেনি,আজ-ও দেখলো না।
পরক্ষণেই ভুল ভাঙলো সোনার,মিছিলের শেষে হাঁটতে থাকা ওয়ার্ড-কাউন্সিলার
ফিরে এল।বলল—মাটির ভাঁড় তৈরী করো না?
--না বাবু,কে কিনবে?
--আমরাই কিনবো,দেখছো না এস-ডি-ও সাহেবও হাঁটছেন আজকের মিছিলে।
কাল থেকে প্লাসটিকের সব জিনিষ বন্ধ।
আরো কি সব বললো লোকটা,মাথায় ঢুকছে না সোনাবউয়ের।মানুষটা
বলে বটে,চাকা একদিন ঘুরবেই।
পাকের চাকা তবে কি ঘুরছে?

No comments:

Post a Comment