প্রকৃত শিক্ষা
অদিতি মুখার্জী সেনগুপ্ত
অঙ্কের অধ্যাপক বিপত্নীক কিঙ্কর বাবু জীবনের অনেক অঙ্কই মেলাতে পারেননি। আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে একটাই কথা ভাবছিলেন, কি পেলেন আর কি হারালেন। অল্প বয়সে স্ত্রী বিয়োগের পর ছেলে-মেয়ে দুজনকে খুব আগলে রেখে মানুষ করেছিলেন। পাছে সৎ মা দুর্ব্যবহার করে সেই ভয় উনি আর বিয়েই করেননি।
ছেলে,ইন্দ্রনীল বর্তমানে এক প্রতিষ্ঠিত ইঞ্জিনিয়ার আর মেয়ে ইন্দ্রাণী একটি সরকারী স্কুলের শিক্ষিকা। এখন তো তার পায়ের ওপর পা তুলে আনন্দ করার দিন, কিন্তু না, এখন তার ঠিকানা "আকাশ কুঞ্জ" বৃদ্ধাশ্রম। নিজেকে এই পরিবেশে একটু একটু করে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
আজ শিক্ষক দিবস, বৃদ্ধাশ্রমের বাগানে বসে মনটা চলে গেল সেই দিনগুলোর স্মৃতিতে যখন কিঙ্কর বাবুকে ছাত্র-ছাত্রীরা ঘিরে থাকতো।কি আনন্দটাই না হতো সেই দিনটায়। সম্বিত ফিরে পেলেন কেয়ার টেকারের ডাকে। সে বলল," স্যার, আপনার সাথে আমাদের ম্যানেজার বাবু দেখা করতে চান।" কিঙ্কর বাবু আকাশ-কুসুম ভাবতে লাগলেন।এখানে আসা অবধি ম্যানেজারের সাথে ওনার সাক্ষাত হয়নি। হলঘরে গিয়ে যাকে দেখলেন, তাকে প্রথমে চিনতে পারেননি। তন্ময় নিজের পরিচয় দিলো।
সে বলল,"স্যার, আজ আমি যা হয়েছি সবই আপনার অবদান।বাবার মৃত্যুর জন্য আমার পড়াশুনা বন্ধ হতে চলেছিল। আপনিই তো আমাকে ভরসা দিয়েছিলেন,ও আর্থিক সাহায্যও করেছিলেন। আজ শিক্ষক দিবসে আমার এই অনুরোধটা আশাকরি রাখবেন। আপনি আর এখানে থাকবেন না। আজ থেকে আমার ঠিকানাই হবে আপনার ঠিকানা। পিকলু ও খুউব খুশি হবে ওর দাদুভাইকে পেয়ে। আর আজ পিকলুর জন্মদিনে এটাই হবে ওর সবচাইতে অমূল্য উপহার। তন্ময় ওনাকে প্রণাম করল আর উনি প্রেক্ষাপটে গান শুনতে পেলেন,"গুরু থেকো আমার পাশে সারাটা জীবন।" কিঙ্কর বাবু একটু চমকেই গেলেন। মনে মনে ভাবলেন, শিক্ষা প্রদানের সার্থকতা তো এখানেই।ছাত্র-ছারী শিক্ষক কে এমন আসনে বসায়, যেখানে আজীবন তারা তাকে মনে রাখে। ওনার চোখের কোনটা চিকচিক করে উঠল।
No comments:
Post a Comment