কারিগর
নন্দিতা পাল
শিক্ষক দিবসে মনের কোণে ভিড় করে আসে কত ভরসার মুখ। শুধু আমার জীবনে কেন, আমার ছেলে মেয়েদের জীবনে দেখছি কিভাবে সেই একই অনুরণন। শিক্ষাস্থল, পরিপ্রেক্ষিত, জায়গা সব বদলায় ফ্রেমের মত কিন্তু শিক্ষক শিক্ষিকা তাদের যে মূল কাজ মানুষ তৈরিতে তা কিন্তু চিরন্তন। অনেক রকম শিক্ষক শিক্ষিকাকে সামনে দেখে বড় হয়েছি, অবাক হয়ে যেতাম স্কুলের হেডস্যর নাম ধরে ডেকে পাঠাতেন ক্লাস ইলেভেনে এটা জিগ্যেস করতে কোনও বিষয়ে আরো সাহায্য লাগবে কিনা, ঠিকঠাক সব বুঝতে পারছি কিনা। কোন অসুবিধে আছে বললে তার কিভাবে সমাধান করা যায় পথ ভাবতেন। আবার একবার খুব কস্ট, বকা খেয়ে অনেকদিন ধরে রিহার্সাল করে নৃত্যনাট্য ‘তাসের দেশে’ ছক্কা হয়েছিলাম আমি। দারুণ হাততালি পড়েছিল শো এর পরে। কিন্তু যখন স্টেজ থেকে নামছিলাম নাচের দিদিমণি বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, সেটাই ছিল আমার কাছে বড় ছক্কা। পরবর্তীতে বিশ্ব বিদ্যালয়ের গন্ডিতে এসে গুরু গম্ভীর সব বিষয়ের মধ্যে দেখেছি তাদের ই খুব মনে রেখেছি যারা অসময়ে ভরসা দিয়েছেন, বলেছেন ঠিক পারবে চেষ্টা করে যাও। সেই স্যরকে এখন ও মনে আছে যখন চাকরি হচ্ছে না, বাংলা মিডিয়াম থেকে আসা বলে ইংরেজির সেই গ্রুপ ডিশকাসন গুলোতে কাত হয়ে যাচ্ছি, উনি বুঝিয়েছিলেন কিভাবে তৈরি হতে হবে। বুঝিয়েছিলেন পয়েন্ট করে কথা বলা, যা কিনা ‘বুলেট’ শক্তি। বাংলায় ভেবে ইংরেজির বুলেট হয়ে বেড়িয়ে আসা আর কি! সেই শিক্ষা আজও কাজে লাগে দুর্দান্ত। মনে পড়ে আমার মেয়ের প্রথম নার্সারি স্কুল, তার এত ভালো লেগে গেলো যে সে স্কুল থেকে আসার সময় কান্নাকাটি। মনে পড়ে মিস আমায় ডেকে বলেছিলেন আমার যদি অসুবিধে নাহয় উনি স্কুলের পর যতক্ষণ বাকি কিছু কাজ করবেন আমার মেয়ে থাকতে পারে ততক্ষণ। সেই মিসকে আমরা কেউ ই ভুলতে পারিনি আজও। কারণ সে মেয়ের মনে যে স্কুল ঘিরে যে আনন্দ তাকে সন্মান করেছিলেন।
এসব কথা বলতে গেলে রাত ফুরিয়ে যাবে কিন্তু শেষ হবে না। শিক্ষক শিক্ষিকারা আমাদের বড় করেছেন, আগলে রেখেছেন, জেদ তৈরি করেছেন আমাদের মধ্যে এগিয়ে যাবার। এঁরা কারিগর, কারিগর মানুষ তৈরি করবার, মানুষের মধ্যে সত্তা টাকে জাগিয়ে তোলবার। আমার জীবনের এইরকম অনেক পান্না হারিয়ে গিয়েছেন অনন্তে। কিন্তু আমার বিশ্বাস তাদের ই নতুন জন্ম আবার হয়েছে এই পৃথিবীর মানুষের কারিগর হয়ে। তাদের সবাইকে আমার প্রণাম আজ এই পুন্যদিনে।
No comments:
Post a Comment