ভাষা দিবসের অন্য কথা
সব চরিত্র কাল্পনিক নয়
শ্রাবণী সেনগুপ্ত
"বাপ আমার,মাচানের উপর থনে কচি কয়টা লাউ পাতা পাইরা দে
যা না রে,দুফুরে এটটু চচ্চড়ি রান্ধুম,ভাতের সাথে মানুষডা ভাল খায়।"
দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যেতে যেতে মায়ের ডাকে ফিরে আসে ছেলে-মাচা নে উঠে লাউপাতা পেড়ে দিয়ে যায়।মাকে বলে যায়,"মা,আজ ভাল কইরা রান্ধ, আর আমার লগে বইয়া থাইক্য না,আজ আমাগো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিক্যা একটা মিছিল বাইর অইব বাংলা ভাষারে রক্ষা করনের লাইগ্যা।আমি সেই মিছিলে থাকুম,ফিরতে দেরি অইব,তাই কই না খাইয়া বইয়া থাইক্য না,তোমরা খাইয়া লইও।"আমিনা কন-"আমার বড়ো ডর লাগেরে বাপ,সাবধানে যাস।"উঠোন থেকে শাজাহান মিঞা কাশতে কাশতে বলেন-"তুমি কিছু চিন্তা কোরোনা গো
নাসিরের মা,এরা সব পুণ্যির কাজে যাইতাছে -মায়ের ভাষার মান রাখতে,ওদের কিসসু হইবনা।"নাসিরউদ্দিন চলে যায় তার আরো কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে।
বেলা গড়ায় -ভাতের থালা কোলে নিয়ে বসে থাকেন
আমিনা,বাড়ির সবাই কচি লাউ পাতা ,ডগার চচ্চড়ি দিয়ে সাপটে ভাত খেলেও তাঁর গলা দিয়ে ভাত নামেনা-বুকের কলিজা নাসির যে এখনো বাড়ি ফেরে নাই।হঠাৎ দৌড়ে আসে পাশের গ্রামের সনাতন-"চাচিগো, শুনছনি-আজ যে ব্যাবাক গুলি চলছে গো রাজপথে নাসির ভাইদের মিছিলের উপর,কত মানষে জখম হইছে ,চাচারে একবার আমার লগে আসতে কও।"-আমিনার মাথা চাপড়ানোর মধ্যে দিয়ে পরনের লুঙ্গি কষতে কষতে বেরিয়ে গেলেন শাজাহান মিঞা।সেদিন সারা এলাকায় একটি ঘরেও আলো জ্বলেনি,কতগুলি তরতাজা প্রাণ গুলিবিদ্ধ হয়ে ফিরে এসেছিল-প্রাণ দিয়েছিল তারা তাদের মায়ের জন্য-জন্ম নাভির জন্য।হ্যাঁ,অবশ্যই জয়ী হয়েছিল তারা-আজ মাকে তারা নিজ আসনে অধিষ্ঠিত করতে পেরেছে।
বেশ কয়েক বছর পরের আরেক একুশে ফেব্রুয়ারি।আজ আবার আমিনার উঠোনে আলোর মেলা।আশপাশের এলাকার লোকজন জড়ো হয়েছে এই দিনটি পালনের জন্য।ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা আমিনাবিবির বাড়ির সামনের এক চিলতে উঠোনে জড়ো হয়েছে তাদের নগেন দাদার নেতৃত্বে।এসেছে আশেপাশের বাড়ির ময়না,হাসিনা,শেফালী,নয়নারা।সব্ বাই আজ জড়ো হয়েছে মাতৃভাষার জন্য উৎসর্গীকৃত দিনটিকে পালন করার জন্য।সস্তা কাঠের টেবিলে মায়ের স্নেহমাখা এমব্রয়ডারির মাঝে হাসিমুখে সেদিনের বীর শহীদ।বড়ো, ছোট কণ্ঠে ভেসে আসে-"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।"
No comments:
Post a Comment