।।পুস্তক পর্যালোচনা।।
আলোচক- স্বরূপ গুপ্ত
কাব্যগ্রন্থ- অবরোহণ
কবি- বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য্য
কবি- বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য্য
তেইশটি কবিতা নিয়ে"বইতরণী ট্রাস্ট" থেকে এই বছরের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে "প্রিয় পঞ্চবিংশতি" সিরিজের "অবরোহণ"। কবি শ্রীমতি বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য্য। "অবরোহণ" শব্দটি প্রচ্ছদে যুক্ত হওয়ায় মনে প্রশ্ন জাগে "আরোহণ" বলে কোন পর্ব আছে কি? উত্তর নিশ্চয়ই সময়ে পাওয়া যাবে। তবে প্রশান্ত সরকারের ছিমছাম প্রচ্ছদ এক ঝলকেই বইটিকে ভাল লাগায়।
বাংলা কবিতার বিবর্তনের ইতিহাস যদি অনুসরণ করা যায় তবে আমরা দেখবো কবিতা নিয়ে বহু কথা হয়েছে। কবিতা কি, কবিতা কেন, কবিতা কার জন্য ইত্যাদি নানা কিছু নিয়ে প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের আলোচনা সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছে। যে কোন লেখারই শ্রেষ্ঠ বিচারক, আমার মতে, কাল বা সময়। সময়ই বলবে আজ যা কবিতা বলছি তা আদৌ কবিতা ছিল কি না। ঠিক এই কথাটি মাথায় রেখেই ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে লেখা পাঠকের মনকে নাড়া দেয়, পাঠককে স্পর্শ করে, পাঠকের বোধ ও চেতনাকে জাগিয়ে তোলে, এক অদৃশ্য দর্পণের সামনে পাঠককে দাঁড় করিয়ে নিজের মানস-প্রতিবিম্ব দর্শন করায় তা-ই কবিতা, তা-ই সুলেখা। শ্রীমতি বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য্যের কবিতা সেদিক থেকে একশো ভাগ সার্থক। তাঁর কবিতা রচনার সার্থকতা নিয়ে কোন প্রশ্নচিহ্নই তাই আসে না।
বইয়ের উপক্রমণিকায় "অবরোহণ থেমে যাবে একদিন..." দিয়ে যে কথাগুলি কবি বলেছেন তার থেকেই মূর্ত হয়ে ওঠে কবি বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য্যের কবিতাগুলি কি হ'তে পারে। এই ভূমিকাটিকেও আমি কবিতা বলেই গণ্য করছি। ভূমিকাটিই বইটির গত বেঁধে দেয় যেন।
কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা "বাবা"। কবি বর্ণালী এখানে উত্তর খোঁজেন আপাতসহজ কিন্তু সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নটির- "তবু বাবা ফিরে এলো কই?" উত্তর কি কেউ দিতে পারেন? না পারেন না। মানব জীবন যায় কেবল, ফিরে আসে না। ফেরে নি কেউ আজ অবধি। একটি ব্যক্তিগত অনুভূতিকে এভাবে সামগ্রিকতায় অনায়াসেই পৌঁছে দিয়েছেন কবি তাঁর এই কবিতাটিতে।
কবির সমাজসচেতনতার পরিচয় পাওয়া যায় "... ইঁটের ভাটায়/ খুন হয়ে যাবে না তো- ধর্ষণের পরে/ একাকী কুমারী কোনও মেয়ে?" (সেদিনও কি), "বিন্দাস আছি আমি গতানুগতিকতায়" (এক নদী ঢেউ), "অমানুষিকতার ক্ষমাহীন লাজ" (ঘুমিও না) ইত্যাদি সাবলীল লাইন বা শব্দবন্ধে। "আদম তুমি এসো" কবিতাটিতে সঙ্গত প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন- "ওরা কারা ইতিহাস লেখে?/ ওরা কারা যাদুঘরে বন্ধ করেছে/ অস্তিত্বের অস্তিত্বহীনতা?" সত্যিই আজ যেন আদমের আবার ফিরে আসার সময় হয়েছে। নাগরিক যন্ত্রণার তরঙ্গাঘাতে আজ যখন ব্যক্তির অস্তিত্বই সংকটের মুখে তখন পুনর্সৃষ্টির কল্পনা কোন বিলাস না। আর আদম তো সবার মধ্যেই বিদ্যমান। আদি থেকেই শুরু হওয়া দরকার আমাদের যাবতীয় সবকিছুই!
"বৃষ্টি সংবাদ", "এক নদী ঢেউ", "তুমি", "দহন যখন" ইত্যাদি কবিতাগুলির লিরিক চরিত্র ভালো লাগে। ভালো লাগে "তখন ষোড়শী", "সেদিনও কি?" কবিতার নস্টালজিয়া। বস্তুতঃ প্রতিটি কবিতাই স্বতন্ত্রতায় আলাদাভাবেই উজ্জ্বল। কিছু মুদ্রণ প্রমাদ ঘটলেও কবিতার গুণে সেগুলিকে অনায়াসেই উপেক্ষা করা যায়।
মুদ্রণ, কাগজ এবং পেপারব্যাকের জন্য কম দাম (চল্লিশ টাকা) বইটির অপর বৈশিষ্ট্য।
সবশেষে, একটি ভাল বই উপহার দেবার জন্য বইতরণীকে ধন্যবাদ ও কবি বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য্যকে অভিনন্দন। তাঁর কলমের আরোহণ ও উত্তোরণ কামনা করছি।
বাংলা কবিতার বিবর্তনের ইতিহাস যদি অনুসরণ করা যায় তবে আমরা দেখবো কবিতা নিয়ে বহু কথা হয়েছে। কবিতা কি, কবিতা কেন, কবিতা কার জন্য ইত্যাদি নানা কিছু নিয়ে প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের আলোচনা সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছে। যে কোন লেখারই শ্রেষ্ঠ বিচারক, আমার মতে, কাল বা সময়। সময়ই বলবে আজ যা কবিতা বলছি তা আদৌ কবিতা ছিল কি না। ঠিক এই কথাটি মাথায় রেখেই ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে লেখা পাঠকের মনকে নাড়া দেয়, পাঠককে স্পর্শ করে, পাঠকের বোধ ও চেতনাকে জাগিয়ে তোলে, এক অদৃশ্য দর্পণের সামনে পাঠককে দাঁড় করিয়ে নিজের মানস-প্রতিবিম্ব দর্শন করায় তা-ই কবিতা, তা-ই সুলেখা। শ্রীমতি বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য্যের কবিতা সেদিক থেকে একশো ভাগ সার্থক। তাঁর কবিতা রচনার সার্থকতা নিয়ে কোন প্রশ্নচিহ্নই তাই আসে না।
বইয়ের উপক্রমণিকায় "অবরোহণ থেমে যাবে একদিন..." দিয়ে যে কথাগুলি কবি বলেছেন তার থেকেই মূর্ত হয়ে ওঠে কবি বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য্যের কবিতাগুলি কি হ'তে পারে। এই ভূমিকাটিকেও আমি কবিতা বলেই গণ্য করছি। ভূমিকাটিই বইটির গত বেঁধে দেয় যেন।
কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা "বাবা"। কবি বর্ণালী এখানে উত্তর খোঁজেন আপাতসহজ কিন্তু সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নটির- "তবু বাবা ফিরে এলো কই?" উত্তর কি কেউ দিতে পারেন? না পারেন না। মানব জীবন যায় কেবল, ফিরে আসে না। ফেরে নি কেউ আজ অবধি। একটি ব্যক্তিগত অনুভূতিকে এভাবে সামগ্রিকতায় অনায়াসেই পৌঁছে দিয়েছেন কবি তাঁর এই কবিতাটিতে।
কবির সমাজসচেতনতার পরিচয় পাওয়া যায় "... ইঁটের ভাটায়/ খুন হয়ে যাবে না তো- ধর্ষণের পরে/ একাকী কুমারী কোনও মেয়ে?" (সেদিনও কি), "বিন্দাস আছি আমি গতানুগতিকতায়" (এক নদী ঢেউ), "অমানুষিকতার ক্ষমাহীন লাজ" (ঘুমিও না) ইত্যাদি সাবলীল লাইন বা শব্দবন্ধে। "আদম তুমি এসো" কবিতাটিতে সঙ্গত প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন- "ওরা কারা ইতিহাস লেখে?/ ওরা কারা যাদুঘরে বন্ধ করেছে/ অস্তিত্বের অস্তিত্বহীনতা?" সত্যিই আজ যেন আদমের আবার ফিরে আসার সময় হয়েছে। নাগরিক যন্ত্রণার তরঙ্গাঘাতে আজ যখন ব্যক্তির অস্তিত্বই সংকটের মুখে তখন পুনর্সৃষ্টির কল্পনা কোন বিলাস না। আর আদম তো সবার মধ্যেই বিদ্যমান। আদি থেকেই শুরু হওয়া দরকার আমাদের যাবতীয় সবকিছুই!
"বৃষ্টি সংবাদ", "এক নদী ঢেউ", "তুমি", "দহন যখন" ইত্যাদি কবিতাগুলির লিরিক চরিত্র ভালো লাগে। ভালো লাগে "তখন ষোড়শী", "সেদিনও কি?" কবিতার নস্টালজিয়া। বস্তুতঃ প্রতিটি কবিতাই স্বতন্ত্রতায় আলাদাভাবেই উজ্জ্বল। কিছু মুদ্রণ প্রমাদ ঘটলেও কবিতার গুণে সেগুলিকে অনায়াসেই উপেক্ষা করা যায়।
মুদ্রণ, কাগজ এবং পেপারব্যাকের জন্য কম দাম (চল্লিশ টাকা) বইটির অপর বৈশিষ্ট্য।
সবশেষে, একটি ভাল বই উপহার দেবার জন্য বইতরণীকে ধন্যবাদ ও কবি বর্ণালী সেন ভট্টাচার্য্যকে অভিনন্দন। তাঁর কলমের আরোহণ ও উত্তোরণ কামনা করছি।
No comments:
Post a Comment