এই সংখ্যায় লিখেছেন যাঁরা-
তৈমুর খান, শ্যামলী সেনগুপ্ত, কুমকুম ঘোষ, রীনা সাহা, সুবীর সরকার, চৈতালি ধরিত্রীকন্যা, সোমনাথ গুহ, পাপড়ি গুহ নিয়োগী, মোনালিসা রেহমান, সুদীপ ব্যানার্জী, মন্দিরা ঘোষ, আনিসুর রহমান, শিবু মন্ডল, সোমা ঘোষ, রাহুল গাঙ্গুলী, কাকলি ভদ্র, মৌসুমী চৌধুরী, কৌশিক চক্রবর্তী, মুনমুন ভৌমিক, নাসির ওয়াদেন, শিপ্রা পাল, বৈশাখী ঘোষ, বিপ্লব সরকার, উদয় সাহা, জয়ন্ত সরকার, আবেদীন জনি, মৃণালিনী ঘোষ, দেবপ্রিয়া সরকার, সুস্মিতা পাল কুন্ডু, শুভাশিস দাস, শান্তশ্রী নিয়োগী বোস, স্বপন গায়েন, গৌতমী ভট্টাচার্য্য, শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী, কৃষ্ণা সাহা, রাখী বসাক, নিশীথ বরণ চৌধুরী, জয়শ্রী চ্যাটার্জী, দীপশিখা চক্রবর্তী, সম্পা দত্ত, জয়শ্রী রায় মৈত্র, শ্রীকল্যাণ, অর্পিতা চক্রবর্তী, সুদীপ সেন, দেবব্রত তাঁতী, সৌরভ প্রামাণিক, বঙ্কিম রায়, পিয়াংকী মুখার্জী, মজনু মিয়া, সুপ্রীতি বর্মন, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, সৌরভ সরকার, মৌমিতা সামন্ত, সাথী মন্ডল, মাম্পি রায়
অঙ্কন- মৌরুসি দত্ত
মৃণালিনী দেবীর ছবি সংগ্রহ- কুমকুম ঘোষ
অন্যান্য ছবি- শৌভিক রায়
সম্পাদনা, অলঙ্করণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায়
সম্পাদকের কথা
নীল আকাশ আর তাতে সাদা মেঘের আনাগোনা। স্তরে স্তরে মেঘ, থরে থরেও। অসামান্য তাদের রূপটান, অনবদ্য তাদের আভা। সূর্যের আলো তাদের কখনো রাঙায়, কখনো উজ্জ্বল ক'র তোলে। গাছের গায়ে, দেওয়ালে, মজা পুকুরে জমে থাকা শ্যাওলার দল আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাবে এখন। মাথা চাড়া দেবে কচুরীপানার অপরূপ পুষ্পদল। ভোররাতে কেমন যেন একটা আমেজ জড়িয়ে থাকবে চারধার। হাওয়ায় ভেসে আসবে আচমকাই ঠান্ডা ঝলক। স্তব্ধ দুপুরে একটানা গান শোনাবে শ্রান্ত পাখির দল। রাতের বেলায় রূপকথারা নামবে চুপচাপ। আকাশের গায়ে অজস্র নক্ষত্রে হারিয়ে যাবার সময় এখন। জ্যোৎস্না রাতে ফুটফুটে চন্দ্রালোকে চিত্রার্পিত হয়ে রইবে সমস্ত চরাচর। কাকভোরে টুপটাপ শিশির, ঝলকাবে সূর্যালোকে আর একটু পরেই।
শরতের গল্পটা এমনই। সবেতেই নতুন নতুন গন্ধ যেন। নব শস্য, নব অন্ন, নব পত্রিকা, নব জন্ম। সব নতুনের ভিড়ে হারিয়ে যায় পুরোন ক্লেদাক্ত সবকিছু। নব শিশু টলমল পায়ে হারিয়ে যায় নতুনের উৎসবে। নব কিশোর নব স্বপ্নে আচ্ছন্ন হাত রাখে নব কিশোরীর হাতে। নব মৃত্তিকায় সেজে ওঠে নব প্রতিমা। নব আনন্দে মুখরিত নব প্রকৃতি।
তবুও কোথায় যেন একটু বিষাদ। হঠাৎই সে টনটন বুকের কোন গভীরে। আসলে নতুনের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে পুরোনোর সম্ভাবনা। অবচেতনে ধরা পড়ে তা। নতুন যা, পুরোন হবে তা। অচিরেই। আর পুরোন মানেই তিলতিল করে এগোন শেষের দিকে, মৃত্যুর দিকে।
আমাদের জীবনও তাই। নব শিশুর জন্মকান্নাতেই লুকিয়ে থাকে মৃত্যুর অমোঘ বাণী। নব আনন্দের মাঝেই লুকিয়ে চির দুঃখের কথা। চিন্ময়ীর মৃণ্ময়ী মূর্তি তাই। অক্ষয় অব্যয়, কিন্তু সমাপনও তার নব আনন্দের পর। একক মানুষ তাই থাকে না, থাকে তার অক্ষয় জীবনধারা। ব্যষ্টির সমাপনেও প্রবাহিত সমষ্টির যাত্রা। একক শেষে সম্মিলন, অব্যয় এই মানবমিছিল।
শরত আসে, শরত যায়। জীবন আসে, জীবন যায়।
কিন্তু শরত থাকে। জীবন থাকে।
কবিপ্রিয়া মৃণালিনী
কবিতা
আশা
এ প্ল্যাটফর্মে একাই দাঁড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ
ভরদুপুরে কেউ নেই
কারো থাকার কথা কি ছিল?
আমার সুদীর্ঘকাল নিয়ে আমি
শূন্যতার মধ্যেই অপেক্ষায়
যান্ত্রিক শহর ছেড়ে নিঝুম এই অবসরের স্টেশনে,
আমার প্রান্তিক ইচ্ছের সাথে হঠাৎ দেখা।
প্রবাসে.... শারদ উৎসবে
দূর্গাপূজো ও নবরাত্রী......
ঘরহারা
শিপ্রা পাল
ঘর হারায় ভাঙে ঘুম
জলে জলে ক্ষেত নদী-নালা
ভেসে ওঠে গবাদির গোয়াল
ফোলাফাঁপা শবের পালা।
গাছে গাছে নিঃস্বতার আঘাত
মাছেরা পোনা ছাড়ে
পোকা-মাকড় কিলবিলয়ে চলে
খেয়া পারাপার বাড়ে।
নিভে যায় মাচার উনুন
ইলশেগুড়ি শ্রাবণী বাতাস
চেয়ে থাকে অপেক্ষার প্রহর
বৃষ্টি থামে আবার বৃষ্টির আকাশ।
ডুবে বসতি মাটিতে ভাঙ্গন
মিলেমিশে সব একাকার
চিল শকুন ডানা ঝাপটায়
আগুন জ্বালা পেটে শুধু হাহাকার।
Militant Rose
গল্প
বই ও বৌ
কবিতা/ ছড়া
কুমকুম ঘোষ
ভাই ছুটি,
ভাই ছুটি,
আজ সকালে এ অঞ্চলের একজন প্রধান গনৎকার আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল।সমস্ত সকালবেলাটা সে আমাকে জ্বালিয়ে গেছে-বেশ গুছিয়ে লিখ্তে বসেছিলুম। বকে বকে আমাকে কিছুতেই লিখ্তে দিলেনা"
কি অনায়াস অনুযোগের প্রতিলিপি ফুটে ওঠাএকটি চিঠি বিশেষ করে সম্বোধনের "ভাই ছুটি" শব্দবন্ধটি কেমন মিস্টিক অন্তরঙ্গতার মধুময় সম্পর্কটির নিবিড় মায়া মেশানো।চিঠির প্রেরক রবীন্দ্রনাথ প্রাপক মৃণালিনী,-কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী।
এযাবৎ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি -দার্শনিক রবীন্দ্রনাথের সহধর্মিণী মৃণালিনী দেবীর কোন সুসংবদ্ধ জীবনকথা নেই।কিছু স্মৃতিচারণ,বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের কিছু গল্প ও কয়েকটি চিঠি ও প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের রবিজীবনীতে উল্লিখিত তথ্য--এর মাধ্যমেই কবিপত্নীর স্বল্পজীবনকালের(২৯বছর মাত্র) পরিচয় পাওয়া যায়।
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অধিকাংশ বউ আসতো যশোর জেলা থেকে কেননা সেসময় যশোর ছিল পিরালী ব্রাহ্মণদের অন্যতম আড্ডা। কিন্তু ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষির কনিষ্ঠ পুত্রের পাত্রী খুঁজতে অভিভাবকরা কেমন হয়রান হয়ে গিয়েছিলেন তার সরস বিবরণ পাওয়া যায় ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীর(মেজদা সত্যেন্দ্রনাথ ও জ্ঞানদানন্দিনীর কন্যা) স্মৃতিকথায়---
ছেলেবেলার সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ ছিল রবিকাকার কনে দেখতে যশোর যাওয়া।কন্যাযাত্রীর মধ্যে(একরকম ঘুরিয়ে আমাদের ঐ নাম দেওয়া যেতে পারে) বড়োরা ছিলেন মা,জ্যোতিকাকামশায় ,নতুন কাকিমা, রবিকাকা ; ছোটদের মধ্যে আমরা দুই ভাইবোন(ইন্দিরা ও সুরেন্দ্র) ফাউ।"
কিন্তু নরেন্দ্রপুর,দক্ষিণডিহি,চেঙ্গু টিয়া প্রভৃতি আশেপাশের গ্রামগুলি খুঁজেও বিবাহযোগ্যা ও বাকি বৌঠাকুরানীদের মত সুন্দরী কন্যা পাওয়া গেলোনা। কৌতুক করে ইন্দিরাদেবী বলেছেন--কিন্তু দুঃখের বিষয় তখন বোধ হয় যশোরের সুন্দরীকুল উজাড় হয়ে গিয়েছিলেন।"
অবশেষে সেই কন্যাকে খুঁজে পাওয়া গেল ঠাকুরবাড়ির চৌহদ্দি মধ্যে । ঠাকুর স্টেটের কর্মচারী বেণীমাধব রায়ের বড়ো মেয়ে "ভবতারিণী" সঙ্গে "শ্রীমান্ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শুভবিবাহ" সুসম্পন্ন হলো ১২৯০ সালের ২৪শে অগ্রহায়ণ রবিবার।
বড়ো ভাসুর ও দার্শনিক দ্বিজেন্দ্রনাথ তাঁকে "অনিন্দিতা স্বর্ণ-মৃণালিনী" হয়ে ওঠার আশিস্ জানিয়েছিলেন।
দক্ষিণডিহির ফুলতলির ১০বছরের ভবতারিনী(জন্ম:১২৮০ সালে) কিভাবে হয়ে উঠলেন মৃণালিনী?কিভাবেই বা গ্রাম্য পাঠশালায় প্রথম বর্গ পর্যন্ত লেখাপড়া করা এক বালিকা,যার কথায় যশুরে টান থাকায় প্রথমদিকে কথাই বলতেন না যিনি--তিনি হয়ে উঠলেন বঙ্গকবিকুলতিলক রবীন্দ্রনাথের "ভাই ছুটি"?
প্রথমেই তাঁকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির আদব-কায়দার শিক্ষা দিলেন বিদূষী নীপময়ী দেবী(হেমেন্দ্রপত্নী)।এরপর একবছর লোরেটো হাউসে ইংরাজী শিখলেন ঠাকুরবাড়ির অন্য কন্যাদের সাথে।পিয়ানো শিখলেন এবং সংস্কৃত শিক্ষা নিলেন হেমচন্দ্র বিদ্যারত্নর কাছে। প্রথম সন্তান বেলা বা মাধুরীলতার জন্মের পর কবির সুলেখিকা দিদি স্বর্ণকুমারী দেবীর সখিসমিতি ও শিল্পমেলার অন্যতম কত্রী হলেন।এই উপলক্ষে কবির লেখা "মায়ার খেলা"য় অভিনয় করেছেন। দ্বিতীয়সন্তান পুত্র রথীন্দ্রর জন্মের পরেও কবির লেখা "রাজা ও রানী" নাটকের প্রথম মঞ্চাভিনয়ে "নারায়ণী"র ভূমিকায় সার্থক অভিনয় করলেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বির্জিতলার বাড়িতে। শিলাইদহে বসবাসের সময় কবির উৎসাহ ও নির্দেশে রামায়ণের সহজ সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করা বা মহাভারত,মনুসংহিতা ও উপনিষদের শ্লোক অনুবাদের মধ্য দিয়ে মৃণালিনীর সু-সংস্কৃত মনটির পরিচয় মেলে।এছাড়া কবির নির্দেশে তিনি বাংলাদেশের রূপকথা সংগ্রহ করেছিলেন।অবনীন্দ্রনাথ তাঁর কাছ থেকেই পেয়েছিলেন "ক্ষীরের পুতুল" গল্পটি।সে কথা তিনি সকৃতজ্ঞচিত্তে বলে গেছেন আত্মকথায়।
কিন্তু মৃণালিনীর আসল পরিচয় ও প্রকৃত রূপের দেখা মেলে মাতৃত্বে স্নেহশীলতায় ও সংসারে।সে অর্থে সুন্দরী ছিলেন না।--" কাকিমা দেখতে ভালো ছিলেন না,কিন্তু খুব মিশুকে ও পরকে আপন করবার ক্ষমতা ছিল"-বলেছেন ইন্দিরা দেবী। হেমলতা ঠাকুর(দ্বিজেন্দ্রনাথ পুত্র দ্বীপেন্দ্র পত্নী) ও লিখেছেন--"বিয়ের সময় কাকিমা ছিলেন খুব রোগা।গ্রামের বালিকা,শহুরে হাবভাব কিছুই জানতেন না।"
কিন্তু মৃণালিনীর আসল পরিচয় ও প্রকৃত রূপের দেখা মেলে মাতৃত্বে স্নেহশীলতায় ও সংসারে।সে অর্থে সুন্দরী ছিলেন না।--" কাকিমা দেখতে ভালো ছিলেন না,কিন্তু খুব মিশুকে ও পরকে আপন করবার ক্ষমতা ছিল"-বলেছেন ইন্দিরা দেবী। হেমলতা ঠাকুর(দ্বিজেন্দ্রনাথ পুত্র দ্বীপেন্দ্র পত্নী) ও লিখেছেন--"বিয়ের সময় কাকিমা ছিলেন খুব রোগা।গ্রামের বালিকা,শহুরে হাবভাব কিছুই জানতেন না।"
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের বোন উর্মিলা দেবী তো প্রথম দেখায় অবাক ই হয়েছিলেন--সেদিনের কথাটি এখনো বেশ মনে আছে।দিদি(অমলা দাশ) যাঁর কাছে আমায় নিয়ে গিয়ে বললেন "কাকিমা,এটি আমার ছোটবোন", যিনি আদর করে আমায় কাছে টেনে নিয়ে বললেন "তোমার নাম কি?" তিনি নিতান্তই সাধাসিধে একখানা শাড়ি পরে বসেছিলেন।গায়ে গয়নাও তেমন দেখলুম না। সাহস করে মুখের দিকে চাইলাম--এই কবিপ্রিয়া! রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী, সেরকম তো ভালো দেখতে নন!" এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একটি গানের কথা যেন মনে আসে।
"আমি রূপে তোমায় ভোলাবনা, ভালোবাসায় ভোলাব"(অরূপরতন:১৯১০)
স্বামী রবীন্দ্রনাথ সহধর্মিণীকে একটি পত্রে লিখেছেন---"আমাকে সুখী করবার জন্য তুমি বেশি কোন চেষ্টা কোরো না--আন্তরিক ভালোবাসাই যথেষ্ট" মৃণালিনী ভালোবেসেছেন সকলকে।পাঁচ সন্তানের মা তিনি।মাতৃত্বের আভা তাঁকে ঘিরে রাখতো সর্বদা।শুধু নিজের ছেলেমেয়ে নয়-আত্মীয়স্বজন দাসী-চাকর সকলকেই আপন করে রেখেছিলেন।তিনি সকলের "কাকিমা","মামিমা"।রান্না করে মানুষকে খাইয়ে বড়ো তৃপ্তি পেতেন।
কন্যা মীরাদেবীর ও পুত্র রথীন্দ্রনাথের স্মৃতিচারণায় সেই ছবি ধরা পড়েছে।
মীরা দেবী লিখছেন--আমার মার রান্নার সুনাম ছিল।বাবা রান্নায় ও শরবতে নানা রকম experiment করতে ভালোবাসতেন ও সেগুলি মাকে দিয়ে করাতেন।একসময় বাবা শিলাইদহে থাকতে আচার্য জগদীশ বসু ও নাটোরের মহারাজ জগদিন্দ্রনাথ রায় প্রায় যেতেন ও পদ্মায় আমাদের বোটে থাকতে খুব ভালোবাসতেন।
জগদীশবাবুরা যখনি যেতেন বাবা মাকে দিয়ে একটা করে নতুন রকমের রান্না করাতে ভালোবাসতেন।পরে বড়ো হয়ে তাঁদের মুখে মায়ের রান্নার প্রশংসা শুনেছি।"
রথীন্দ্রনাথ লিখছেন--বাবার ফরমাশমতো নানারকম নতুন ধরনের মিষ্টি মাকে প্রায়ই তৈরী করতে হতো।সাধারণ গজার একটি নতুন সংস্করণ একবার তৈরী হল,তার নাম দেওয়া হল 'পরিবন্ধ'।কিন্তু একদিন বাবা যখন মাকে মানকচুর জিলিপি করতে বললেন, মা হেসে খুব আপত্তি করলেন, কিন্তু তৈরি করে দেখেন এটাও উৎরে গেল। বাবার এইরকম নিত্য নতুন ফরমাশ চলত, মা-ও উৎসাহের সঙ্গে সেইমত করতে চেষ্টা করতেন।"
"বঙ্গীয় শব্দকোষ" হরিচরণ বন্দোপাধ্যায় ও কবিপত্নীর রন্ধনকুশলতার প্রশংসা করে বলেছেন--"তাঁহার হাতের চিঁড়ের পুলি,দইয়ের মালপো, পাকা আমের মিঠাই যিনি একবার খাইয়াছেন , তাহার স্বাদ তিনি কখনো ভুলিতে পারেন নাই"...আসলে কবি জানতেন সংসারের পনেরো-আনা মানুষই আটপৌরে।যদি তার মধ্যে উদ্বৃত্ত কিছু থাকে সেটাই তাকে অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র করে রাখে। তাই বিদূষী ভাইঝি ইন্দিরা যখন আক্ষেপ করে বলেন--"রবিকাকার মত অমন গুণবান্, রূপবান্ , ধনবান্, খ্যাতিমান্ (ভবিষ্যতের মতো অত না হলেও যথেষ্ট) যুবাপুরুষ, গুরুজনরা যে মেয়েকে হাতে তুলে দিলেন, বিনা বাক্যব্যয়ে নির্বিবাদে কী করে তাকেই বিয়ে করতে রাজি হলেন ও পরে সুখেস্বচ্ছন্দে ঘর করতে লাগলেন, ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়।"
এর উত্তর কবি নিজেই দিয়েছেন--"লোকে ভুলে যায় দাম্পত্যটা একটা আর্ট,প্রতিদিন ওকে নতুন করে সৃষ্টি করা চাই।"(শেষের কবিতা)
কিংবা যখন তিনি বলেন--"ভালোবাসাকে বর্ণনা করা অসম্ভব, এটি একটি অফুরন্ত রহস্য"....তখন গ্রাম্য কিশোরী ভবতারিণীর মৃণালিনী হয়ে "ভাই ছুটি"তে রূপান্তরের প্রাত্যহিক যাপনের রূপকথার সন্ধান পাওয়া যায়।
কবিপত্নী গহনা পরতে একেবারেই ভালোবাসতেন না।একদিন সকলের অনুরোধে কানে দুটি ঝোলানো "বীরবৌলি" পরেছিলেন,হঠাৎ কবি এসে পড়েন ঘরে--লজ্জা পেয়ে দুই কানে দুই হাত চাপা দিলেন(হেমলতা ঠাকুরের লেখায়)।
তিনি কবিকথিত "আন্তরিক ভালোবাসা" কেই তাঁর অলংকার মনে করতেন।হৃদয়ের এই ঐশ্বর্য দিয়েই তিনি জয় করেছিলেন জোড়াসাঁকা ঠাকুরবাড়ির সর্বাধিক খ্যাতিমান মহান "যুবাপুরুষ"টিকে।
তিনি স্বামীর স্বপ্ন ও আদর্শকে ভালোবেসেছিলেন..অনায়াসে গায়ের দামী দামী গহনা কবির হাতে তুলে দিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে একটি আদর্শ বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য।
পুত্র রথীন্দ্রনাথের কথায়--"শেষপর্যন্ত হাতে সামান্য কয়েকগাছা চুড়ি ও গলায় একটি চেন ছাড়া তাঁর কোনো গয়না অবশিষ্ট ছিলনা।মা পেয়েছিলেন প্রচুর,বিবাহের যৌতুক ছাড়াও শাশুড়ির পুরানো আমলের ভারী গয়না ছিল অনেক।শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ের খরচ জোগাতে সব অন্তর্ধান হল।" কবি বহুদিন ধরে শিক্ষার যে আদর্শ মনের মধ্যে কল্পনা করতেন তাকে সাকার করার জন্য এভাবেই মৃণালিনী তাঁকে সহায়তা করলেন। "আমাদের আত্মীয়রা মাকে এইজন্য ভর্ৎসনা করতেন, বাবাকে তো তাঁরা কান্ডজ্ঞানহীন অবিবেচক মনে করতেন। বহুকাল পর্যন্ত বাবাকে, আর মা যতদিন বেঁচে ছিলেন তাঁকে, বাড়ির লোকদের কাছ থেকে বিদ্যালয় সম্পর্কে বিদ্রূপ ও বিরুদ্ধতা সহ্য করতে হয়েছিল"(রথীন্দ্রনাথ)।
শান্তিনিকেতনে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কয়েকমাস পরেই মৃণালিনীর শরীর খারাপ হতে থাকল।রবীন্দ্রনাথ কলকাতা থেকে চিঠি লিখলেন তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসার জন্য।রথীন্দ্রনাথ তখন ১৪বছরের কিশোর, বড়ো ও মেজো মেয়ে বেলা ও রানীর বিবাহ হয়ে গেছ।ছোট মেয়ে মীরা ও কনিষ্ঠ শমীর বয়স নয় ও আট বছর তখন। কলকাতার অ্যালোপ্যাথ ডাক্তাররা অসুখ ধরতে না পারায় রবীন্দ্রনাথ হোমিওপ্যাথ চিকিৎসা করাতে লাগলেন।তখনকার দিনের প্রসিদ্ধ ডাক্তাররা--প্রতাপ মজুমদার, ডি.এন.রায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে এসে কবিপত্নীর চিকিৎসা সম্বন্ধে কবি সঙ্গে পরামর্শ করতেন।কিন্তু সকলের চেষ্টা ও স্বামী রবীন্দ্রনাথের অক্লান্ত সেবা সত্ত্বেও ১৩০৯ সালের ৭ই অগ্রহায়ণ শীতের পদ্মফুলটি ম্লান হয়ে ঝরে গেল মহাকালের বুকে।হারিয়ে গেল কবির "ভাই ছুটি" চিরতরে। "স্মরণ" কাব্যগ্রন্থের ছত্রে ছত্রে কবির সে মনোবেদনা আঁকা থাকলো চিরকালের জন্য।
মুক্ত গদ্য
দুর্গার বাবা যদি ফিরে আসতো!
রীনা সাহা
রেলগাড়ির কাঁচ ঢাকা জানলা দিয়ে স্পষ্ট দেখা যায় ফারাক্কা ব্রীজের একপাশে গান্ধী ঘাট। তার পাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কাশফুলের আড়ি-ভাব খেলা নীল রঙা মেঘেদের সাথে। মাঝে বয়ে চলেছে উথালপাথাল গঙ্গা, বুকে নিয়ে পোড়াকাঠ- বিসর্জনের সাক্ষী হয়ে।
স্ন্যাপশটে ফ্ল্যাশব্যাক- গোবর-নিকোনো উঠোন, দশমীর আগ পর্যন্ত পুজোর ক'টা দিন নিরামিষ খাওয়া, সকাল সকাল চান, চান ক'রে চারদিনের বরাদ্দ একটাই ফ্রক- খুব যত্ন ক'রে নোংরা বাঁচিয়ে পড়ে থাকা। সকাল থেকে সন্ধ্যে বারোয়ারি মন্ডপে হৈ-হুল্লোর, পুজোর খাওয়া বলতে বড় একখানা পাঁপড় ভাজা বা নল পাঁপড়ের একটাকার একটা প্যাকেট- সন্ধ্যে থেকে পড়াশোনা। মাস্টারমশাই ছেলেমেয়েদের কষ্ট করেই বড় করতে চেয়েছিলেন। ছেলেরা চাকরী পেয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তবু তাঁর মন ভরে নি। তাঁর ইচ্ছে একমাত্র মেয়েটা চাকরী পেলে তবেই তাঁর শিক্ষকতা জীবন সার্থক হবে। মেয়েটা চাকরী পেল, বিয়ে হ'ল। চাকরী পাওয়ার পর থেকে মাসে মাসে বাবার ওষুধ খাওয়ার টাকা, মায়ের হাতখরচ আর প্রতি পুজোয় বাবাকে রেহাই দেওয়া নিজের জন্য শাড়ী কিনতে না দিয়ে। রোজ সন্ধ্যেবেলা টেলিফোনে কথা হয় বাবার সাথে- নতুন চাকরী পেয়েছ মা, স্কুলে বেশী কথা বলবে না। বাচ্চাদের মারবে না। "Talking Skull" গল্পটা ছোট থেকে বহু শোনা তবুও আর একবার মনে করিয়ে দেওয়া। জানিস মা আজ বুকের বাঁ দিকটায় খুব জ্বালাপোড়া- গ্যাস হচ্ছে বোধহয়। নিঃশ্বাসেও খুব কষ্ট।
স্ন্যাপশটে ফ্ল্যাশব্যাক- নীচতলা থেকে মাঝবয়সী মেয়ে সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে উঠছে দোতলায়। হাঁফাতে হাঁফাতে আলমারির চাবিটা খুলে বহু বছর পর বাবার দেওয়া সবজে রঙা পুজোর শাড়ীটা বের ক'রে গন্ধ শুঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে মেয়ে (সেই পুজোটাই শেষ পুজো, মেয়ে বুঝতে পারে নি কেন বারবার বারণ করা সত্ত্বেও বাবা শাড়ীটা কিনেছিল)।
স্ন্যাপশটে ফ্ল্যাশব্যাক- ঘুম ভাঙা সকালে আজও যদি টেলিফোন বেজে ওঠে, হাজারটা কাঁচ থালা মাথা থেকে পা অবধি চুরমার ভেঙে পড়ে। শিরা ধমনীতে ফিনকি রক্ত ছোটে, শরীরের বাইরেটা অবিকল সেজে থাকে- গায়ে মেখে সাদা কাশ , নীলাকাশ, শিউলি ভেজা বাতাস। অদ্ভুত ডিলেমায় প'ড়ে যায় মেয়ে। গতকাল দুপুরেই হাত ছুঁয়ে যে লোকটা বলে গেল, (তুই বলেছিস আরও বাঁচতে হবে তোর জন্য, শুধু তোর জন্যই এবার হার্টের অপারেশনটা করে নেবো) পৃথিবীর পরিধি ছাড়াতে তাঁর আহ্নিক গতিটাও লাগলো না!
কোন কোন প্রশ্ন প্রশ্নই থেকে যায়। কেউ কেউ উত্তর না দিয়েই চলে যায়। আজও যদি ঘুম ভাঙা সকালে টেলিফোন বলে ওঠে- "মনটা শক্ত করো, বাবা আর নেই"- আশ্বিন, আগমনী, সবজে রঙা পুজোর শাড়ী ডেকে নিয়ে যায় দোতলায়- ছাদে চল মেয়ে, কার্ণিশে ফুটে থাকা কাশফুল দ্যাখ্, জোরে নিঃশ্বাস নে- শিউলি ফুলের, আকাশ দ্যাখ্- ঝকঝকে শরতের আকাশ.....
কবিতা
মানবী
তৈমুর খান
ঈশ্বর পাথরকে মানবী বানালেন
সেখানেই বসালেন মাতৃগর্ভ, যোনি
তারপর জলে ভেজালেন
জল থেকে তুলে আগুনে পোড়ালেন
তারপর একটু হাসলেন
ঈশ্বর
আমরা মানবীর ব্যাখ্যা চাইলাম
ঈশ্বর বললেন : পাথর জলেও ভেজে না
আগুনেও পোড়ে না….
অথচ পাথর কথা বলে
পাথর কাঁদে
আমরা নতজানু হয়ে পাথরের কাছে
ভিক্ষে চাইলাম
ঈশ্বর হাসলেন
তাঁর হাসিতে পরিহাস মিশে গেল
ভাঙন
শ্যামলী সেনগুপ্ত
অ--টি ভাঙছে
আদিম মূর্চ্ছনায়
ভেসেযাচ্ছে স্বপ্নের ঘোড়া
মাঠের ওপর জ্যোৎস্নার তরঙ্গ
কাদার ওপর ছাপ রেখে
হেঁটে আসছে পদপল্লব
অ--টি ভেঙেআছে
সরীসৃপ বাঁকনে
অসুখ
সুবীর সরকার
গভীর কোন অসুখের দিকে যেতে গিয়েও ঘুরে দাড়াচ্ছ তুমি
লোকাল ট্রেনের জানালায় কেমন আটকে থাকা নিসর্গ
ঝুরিভরতি ফল আসে
নখে হলুদ।আঁকড়ে ধরি
থার্মোমিটার
চৈতালি ধরিত্রী কন্যা
ওদিকে আপাতত না যাওয়াই ভালো
আমি সমস্ত দায়ভার বহন করছি
তোমাকে পোড়াতে চাই নি
আমাকে সহন করতে দাও
গহীনের যত্ন কাকে বোঝাই !
ধীর পদে যে কাছে এসেছে
তার জন্ম মাস আমি জানি
লগ্নের আবহ সময়ও আমার জানা
আমাকে ফিরে যেতে হবে
চোখের ওপর বাস করছে
অন্য মুখ
চলন্ত সিঁড়ি ধরে তবে নেমে আসি
মৃত্তিকার কাছে
আপাত ওদিকে আর যাচ্ছি না ....
স্টেশন
সোমনাথ গুহ
এ প্ল্যাটফর্মে একাই দাঁড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ
ভরদুপুরে কেউ নেই
কারো থাকার কথা কি ছিল?
আমার সুদীর্ঘকাল নিয়ে আমি
শূন্যতার মধ্যেই অপেক্ষায়
যান্ত্রিক শহর ছেড়ে নিঝুম এই অবসরের স্টেশনে,
আমার প্রান্তিক ইচ্ছের সাথে হঠাৎ দেখা।
মাঝে মাঝে এখানে কাকের দল নীচে নেমে আসে
হয়ত সেসব শহুরে কাক
যান্ত্রিকতা লাইন ধরে ব্যস্ত হয়ে খোঁজে জীবন
এখানেই তাদের বৃথা হয় মধ্যাহ্ন
কবেকার এঁটো খাবারের টুকরো
ঘাসের ভেতর থেকে টেনে বের করে
মুখে ওঠে অসমাপ্ত সিগারেট
আর পা আটকে যায় ছেড়া স্যান্ডেলে
হয়ত সেসব শহুরে কাক
যান্ত্রিকতা লাইন ধরে ব্যস্ত হয়ে খোঁজে জীবন
এখানেই তাদের বৃথা হয় মধ্যাহ্ন
কবেকার এঁটো খাবারের টুকরো
ঘাসের ভেতর থেকে টেনে বের করে
মুখে ওঠে অসমাপ্ত সিগারেট
আর পা আটকে যায় ছেড়া স্যান্ডেলে
পুরনো বন্ধুদের মতোই হারিয়েছে এই পথ
এখানেই একদিন কাটিয়েছিলাম দুপুরের শৈশব
তারপর আজ আবার এই নির্জনে
আমার অবসরের স্টেশন
এখানে হাওয়ার জোয়ারে হারিয়েছি সব
আর বোধ হয় কারো থাকার কথা ছিল না
এ স্টেশনে বিরামহীন এই অপেক্ষায়।
এখানেই একদিন কাটিয়েছিলাম দুপুরের শৈশব
তারপর আজ আবার এই নির্জনে
আমার অবসরের স্টেশন
এখানে হাওয়ার জোয়ারে হারিয়েছি সব
আর বোধ হয় কারো থাকার কথা ছিল না
এ স্টেশনে বিরামহীন এই অপেক্ষায়।
বন্ধুবিরতির দিনে
পাপড়ি গুহ নিয়োগী
আজও চুপি চুপি সবার অজান্তে তোমায় ভাবি। হঠাৎ শোকসভায় আবার দেখা। আমার সব ভ্রমণ ছিল তোমায় নিয়ে। তারপর তুমি ছাড়া এক দীর্ঘ হাহাকার...
জানো, বহুদিন আমার ভূগোল অক্সিজেন শুন্য, অসহায়। বেশ কিছু বন্ধু আমাকে রক্তাক্ত করলো। লেখার টেবিলে সাপ উঠলো। আমি আচমকা হোঁচট খেলাম। ঘনিষ্ঠ বন্ধু বোলে যাদের জানতাম তারা আজকাল আমার নামে ছেঁড়া পৃষ্ঠা ওড়ায়। যে বান্ধবীকে দৃঢ় বিশ্বাস কোরে বোন বলেছিলাম, তাকে আমি আর বিশ্বাস করতে পারিনা। দুই একজন প্রিয় বন্ধু টমেটোর লোভে গাছ গাছ খেলতে আসতো...পরে বুঝেছি। তারপর হঠাৎ একদিন আমার ঘরে হুইলচেয়ার এলো, বিছানা বালিশ সঙ্গী হলো। বন্যার জল ঘরে ডুকলো। এসবের পর আমি আত্মহত্যা করতে পারতাম, কিন্তু করিনি... নীরবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দু'চোখের বন্যায় একটু একটু কোরে চিনে নিলাম,
গীতবিতানের মধ্যে বসে থাকা আমার পুরুষটিকে।তারপর হাতা খুন্তি পাঁচফোড়ন সিঁদুরকৌটো শাঁখা পলা শিলনোড়া ন্যাতা ঘিরেই একদিন চিনে নিলাম আগামী জীবন।
এই নৈবদ্য ফুলের
মোনালিসা রেহমান
এই নৈবদ্য ফুলের
ভেজা গায়ে তুলসী তলায়
মিলিজুলি সংসার
পোয়াতি চাঁদের আলোয়
ভালোবাসায় দু'চার কলি
রবীন্দ্রনাথের গান
আর অবসরে নিটোল
প্রেমের কবিতা গল্প
আত্মকথনের শব্দ চয়নে
নিঃশব্দে কান্নারা ক্লান্ত অবসন্ন
দুপুর ভেজায় অলস ক্ষনে
সমর্পনের আগুন
রূপকথা হতে পারতো!!!
সুদীপ ব্যানার্জী
সুদীপ ব্যানার্জী
আয়নার দিকে তাকালেই আমি ফুল হয়ে যাই।অথচ নিজের দিকে তাকালে নিজেকেই দেখছি।না না...দোষ আয়নার নয়।সেই যে একটা গল্প ছিল না... সেই সুন্দরী মেগালোম্যানিয়াক রাণি... আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রোজ বিশ্বসুন্দরী খেতাব ধরে রাখতেন,সেই কথা বলা আয়নাটি পেয়েছি--- এমন চিরাগসম আলাদীন কপাল অন্তত আমার হেডে দেখি নি।
কেসটি তবে কি?
কেসটি তবে কি?
আরেক বার আয়নার দিকে তাকিয়ে কনফার্ম করলাম।ফুলই তো...আলো জ্বালিয়ে, নিভিয়ে, অবস্থান পালটে পালটেও আমি আয়নায় আমাকে পেলাম না...
ধরলাম এখানে আয়না একটা পাতি রূপক।কিসের?ধরলাম সেটা পাব্লিক ওপিনিয়ন...হতে পারে আত্মীয় স্বজনের ছিদ্রহীন ছাঁকনি...বন্ধুবান্ধবের ভালবাসাও হতে পারে...এমন কি আমার মনের সুপ্ত আকাশ হওয়ার সম্ভাবনাও যথেষ্ট।আয়নাটা অ্যান্টি-আমি কি?...
এই যে যতবার আমি আয়নাটা দেখছি আর আয়নাটার অন্য কিছু হয়ে ওঠার প্রবাবিলিটি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে...এই ব্যাপারটাকে থামানো যাচ্ছে না।এ যেন গড়ানে রাস্তা...আর লাউ গড়গড় লাউগড় বুড়ি গড়িয়েই যাচ্ছে।আচ্ছা আমি কি রূপকথা লিখব বলে ফুল হয়ে যাচ্ছি?আয়নার ফুল আর লাউয়ের খোলে লুকিয়ে থাকা বুড়ি --- রূপভেদে কি আমিই!চোখ চলে গেল আয়নায়...দিব্যি ফুলটি বিউটি ছিটিয়ে তাকিয়ে আছে...
গায়ে জ্বালা ধরছে এবার...অসহ্য লাগছে ওটাকে...আলোকবিঞ্জানের সব কটা সুত্রের ওপর বড্ড রাগ হল...এ কোন ব্যতিক্রম রে বাওয়া!
আচ্ছা আয়নায় নিজেকে ফুল ভাবতে ভাল লাগতেই পারে,তা বলে সত্যিই ফুল হয়ে ওঠা...শুনেছি রূপকথা পোয়েটিক জাস্টিস দেয়...এ তো দেখছি ক্রমশ সব স্ট্যাটিস্টিকসকে কলা দেখিয়ে, সায়েন্স ফিক্সনকে বোগলদাবা করে...আমার টোটাল অস্তিত্বই মাদারিখেলার ভেল্কিটোনা করে এনামেলের বাটিতে কয়েনের ঠকাসমার্কা বেওসা ব'নে গেল।
তবে ফুলটা কিন্তু নিজের জন্য ফোটে নি...
নিজের রূপ কি ও দেখতে পায়?।ফুল কি নিজের গন্ধ নিজে পায়?প্রশ্নগুলো যখন চলেই এলো...দেখছি ভাবনার স্পেস বেড়েছে...ডাইমেন্সনও...
থ্রি ডি আয়নায়
তখন ফুল থেকে ফল.ফল...বীজ...মহীরুহ...
ক্লোরোফিল...অক্সিজেন...নিঃশ্বা স...
তখন ফুল থেকে ফল.ফল...বীজ...মহীরুহ...
ক্লোরোফিল...অক্সিজেন...নিঃশ্বা
এই এতোক্ষণে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম...আয়নায় স্লাইড শো...যে যে গাছগুলো থেকে অক্সিজেন ঝেপেছি...সেই সব গাছের ফুলগুলো আয়নায় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে... আয়নায় আমি হবে বলে...
...শালা গাছ লাগাবি না!!!!
...শালা গাছ লাগাবি না!!!!
ছায়া গানের স্বরলিপি
মন্দিরা ঘোষ
প্রতিবাদের রাস্তায় শুধুই পাহাড়ি ধস
ছোট ছোট জলঝোরায় পা ডুবে যায়
লালনের শর্তগুলি বিঘ্ন হচ্ছে কোথাও
লাইনের ওপর পাতা জীবনবোধ
হাওয়া সরিয়ে সরিয়ে মাড়িয়ে চলেছি
বিষ্ঠাময় অন্ধকার খোপজন্ম
কোন বৃষ্টি গানে রাত্রি সাজে না
ধসের ভেতর চাপা পড়ে থাকে মেঘমল্লার
ভেসে আসা খড়কুটো ধরে
নেমে থাকি খাদসিঁড়ির কিনারায়
নামতে নামতে আয়না জলে
ছায়াগানের স্বরলিপি আঁকি
গোলাপী ডানার পাখি
আনিসুর রহমান খান
পাখি উড়ে গেল নিজস্ব ঠিকানায়
রেখে গেল শুধু স্মৃতির দহন
সে কি জানত কতটুকু রেখে গেছে
কতটুকু বাকি!
আজ এই বিচ্ছিন্ন অনুধ্যানে
পাখির ডানার শব্দ ছাড়া অন্য কিছু আসে না ;
অন্য কোনো কিছু।
এই জানালা কপাট
পাতাহীন বৃক্ষের ডাল -
পাখির পায়ের ঘ্রাণ শুকে শুকের
সবটুকু মমতা রেখেছে বুকে।
সে কি আসবে না ; কোনদিন আসবে না?
এই সবুজ শ্যামলীমা হৃদয় প্রান্তরে
অপেক্ষার স্তব্ধ পাথর হয়ে
দিন যায় রাত যায় -
গোলাপী ডানার পাখির আশায়।
প্রবাসে.... শারদ উৎসবে
পুজোর পরবাস
পুজোর ঢাকি ও একটি টিফিন কৌটোঃ
বৃষ্টি তার নিজের পথে বয়ে যাচ্ছে, আমি সেই নদীর ধার ধরে ধরে সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়েছি। নদীর চর ধরে হাঁটাকে সান্ধ্য ভ্রমণ বলা যায় কিনা সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে। তবে আমি হাঁটছি গোধূলির আহ্নিক গতির সাথে পৃথিবীর বার্ষিক গতির মন্থরতায়। এখন বর্ষার শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। হাঁটতে হাঁটতে আমার পথ নদীর কাছে চলে এসেছে নাকি নদী আমার পথের কিনারে এসে পৌঁছেছে সেটা বুঝতে পারছিনা। তবে এটা বুঝতে পারছি যে মাঝে মাঝেই আমি খানা-খন্দ লাফিয়ে এগোচ্ছি। পৃথিবীর বুকে কেঁচোখোঁড়া ব্যথা জেগে উঠেছে। সোঁদা গন্ধ পেয়ে মনের মধ্যে শেওলাকালো সবুজ কিলবিলিয়ে ওঠে। একটা দুটো বর্ষাতি ফুলের গন্ধেও মন মজেনা। কিছুটা পথ পেরলেই দেখা পাবো কাশফুলের দুলুনি। কিছুটা দূরে গেলেই ঢাকের মৃদু আওয়াজ শুনতে পাবো হয়ত। আবার হাওয়ার অন্যমনস্কতায় সেই শব্দ শুনতে নাও পারি।কিন্তু মনে পড়ে এক অদেখা ঢাকির চেহারা- কাঁধে ঝোলানো ঝালর দিয়ে সাজানো ঢাক- সে ঢাকের পিছনে সাদা পালকের সাজ।পুরনো ধুতি পাঞ্জাবি ধুয়ে পরিষ্কার করে পরা, সামনের দিকে একটু ঝুঁকে দুলে দুলে ঢাকের চামড়ায় কাঠির স্পর্শে স্পর্শে এক সুর-তাল পুজোমণ্ডপময় ছড়িয়ে দেয় সে। পথ চলার নেশাতেও মোবাইলের বেজে ওঠার ঝংকার শুনতে পাই। অচেনা নম্বর, হ্যালো বলতেই ওপার থেকে ভেসে আসে গ্রাম্য সরলতা মাখা শব্দগুলি- ‘দাদা আমি মুর্শিদাবাদ থেকে ঢাকি সনাতন দাস বলতেছি, অই গতবার যাওয়ার কথা হয়েছিল আপনাদের ওখানে পুজোতে...।’ থমকে গেলাম। একটা ভৌগলিক দূরত্বের পর ঢাকের আওয়াজ হয়ত শুনতে পাওয়া যায়না, কিন্তু একজন ঢাকির মনের কথা শুনতে পারা যায়। -‘ হ্যাঁ বলুন সনাতন দা। ভালো আছেন তো?’‘ হ্যাঁ, হ্যাঁ আপনারা ভালো আছেন তো ?’‘হ্যাঁ বলুন।’‘বলছিলাম গত বার তো আর যাওয়া হলনা, তাই এবার যদি ডাকেন সেই জন্য আগেই ফোন করলাম।’ গতবারের কথা মনে করে নিজেরই খারাপ লাগল। আমি নিজেই শিলিগুড়ির এক বন্ধুর মারফৎ ফোন নম্বর জোগাড় করে সনাতন দাস কে গতবার যোগাযোগ করেছিলাম।
সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি, ভেল, হরিদ্বার এর কালচারাল কমিটির সদস্য ছিলাম গত দু’বছর। সেই দায়িত্বের সুবাদে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলাম। এখানকার পুজোর একটা বড় বৈশিষ্ট্য হল ষষ্টি থেকে নবমী পর্যন্ত চারদিনই নানারকম সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ। সে কথায় পড়ে আসছি। তবে এখানকার ঢাক নিয়ে আমার একটা খুঁতখুঁতানি ছিল। যে ঢাকি এখানে বহুবছর ধরে বাজায় সে বাঙালি হলেও তার ঢাকের মধ্যে সেই বাঙালি ঢাকের ছোঁয়া পাইনা। তারা আসে উত্তরাখণ্ডেরই রুদ্রপুরজেলা থেকে। সেখানে দেশভাগের সময় বাংলাদেশ থেকে এসে উদ্বাস্তু বাঙালিরাকয়েকগ্রাম জুড়ে বসতি গড়ে তোলে। চাহিদা না থাকার কারণে তারা ঢাকের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেনি। শুধু পুজোর ক’টাদিন একমুঠো টাকার জন্য কোনোভাবে কাজ চালিয়ে দেয়। তাদের ঢাকও আধুনিক সস্তার- স্টিলের ধাঁচার উপরে প্লাস্টিকের কভার। তাদের রেটও কম। দশ থেকে বারো হাজারের মধ্যে পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত বাজিয়ে দেয়। কিন্তু আমার মন মজেনা তাতে। কারোই মজে না, তবে সেটা কেউ গুরুত্ব দিয়ে ভাবেনা। সেবার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মিটিঙে প্রস্তাব দিই পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঢাকি আনার। সবাই রাজী হতেই যোগাযোগ করি সনাতন দার সাথে। কথা হয় দু’জন ঢাকি একজন কাঁসি বাজানোর লোক- এই তিনজন আসবে ওরা, বাজেট মোট পঁচিশ হাজার। কমিটিকে সে কথা জানাতে বাজেটের কথা ভেবে পিছিয়ে যায়।বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট বিশ্বজিৎ দাস শুধু শুধু ঢাকের পিছনে এত বাজেট অনুমোদনের পক্ষপাতী নয়, তবে আর এক গুরুত্বপূর্ণ ও সিনিয়র সদস্য অশোকদা আশা জিইয়ে রেখে বলে- ‘বাজেটটা বর্তমান ঢাকির চেয়ে যথেষ্ট বেশি, আর পনেরর মধ্যে মনে হয়না ওরা আসবে- দেখ একবার কথা বলে।’ আমিও আর জোর দিইনা শুধু বলি ঠিক আছে বলে দেখব।আসলে এরা ঢোলকের আওয়াজ শুনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী সেই সাজানো ঢাক আর তার চড়াম চড়াম আওয়াজ আর তার সাথে ধুনকি চালের নাচ এরা দেখেনি বা দেখলেও দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে স্মৃতি থেকে তা হয়ত মুছে গেছে। তিনটে লোক আসা-যাওয়া আর পুজোর পাঁচদিন মিলে কমকরে আটদিনের হাজিরা, ট্রেনের টিকিট ইত্যাদি মিলে পঁচিশ হাজারের মধ্যেই বা কি তেমন হাতে থাকবে ওদের। আর পনেরো কেন কুড়ির মধ্যেই বা তারা কিভাবে আসতে পারবে এটা যুক্তি দিয়ে বুঝতে পারিনা। সনাতনদাও একইরকম জিজ্ঞাসা সবিনয়ে আমার সামনে রেখেছিল তার কয়েকদিন বাদে। সেদিন মিটিঙের পর বুঝে গেছিলাম যে ঢাকি আর আনা যাবেনা তাই আমিও লজ্জায় আর ফোন করিনি। সেইদিন সনাতনদা-ই ফোন করল। সেদিনও সন্ধ্যায় ভেলের পার্কে আমি হাঁটছিলাম প্রতিদিনের মত। উনার সাথে দরদামের মধ্যে না গিয়ে আমি শুধু কমিটির কথাগুলো বললাম, সে বুঝল ব্যপারটা। তবুও একরকম কাতর হয়েই বলল ‘ দেখেন যদি বাইশও দেয় চলে আসব। আসলে হরিদ্বারে যাবার জন্য মনটা খুব টানছে। সেইজন্যই আর কি!’ একমুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে পড়লাম। ছায়া মাখাএকটা মূর্তি যেন দেখতে পেলাম সামনে। আমি কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছিনা। শুধু বললাম ‘হবে না দাদা।’ তারপরও সে বলল ‘আরেকবার শেষবারের মত আপনাদের প্রেসিডেন্টকে বলে দেখেন যদি রাজী হয়!’
না আমি আর প্রেসিডেন্টকে সরাসরি বলিনি। আমাদের এখানে বাঙালীদের মধ্যে কোম্পানিতে সবচেয়ে উঁচু পদে যারা থাকবে তাদের মধ্যে থেকেই যার প্রভাব বেশি থাকে পদমর্যাদা অনুযায়ী, তাকেই প্রেসিডেন্ট করা হয় পুজা কমিটির। সেক্ষেত্রে টারবাইন ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার বিশ্বজিৎদাকে যদি রাজী করানো যায় তবে আর কেউ সেরকম কিছু আপত্তি করবেনা। সেবছরের পুজো কমিটির সেক্রেটারি তাপস সাহাকে(সেও টারবাইন গ্রুপের ডিজিএম) আর একবার বুঝিয়ে বললাম, এমনকি নিজের রিস্কেই এটাও বললাম যে ‘ দাদা বিশের মধ্যে হলেও ওরা আসতে রাজী। আপনি একবার বিশ্বজিৎ দা’র সাথে আলাদা করে কথা বলে দেখুন।’ তাপসদা কথা বলেছিল কিন্তু ওতেও রাজী হয়নি বিশ্বজিৎ দা। সনাতনদার মন খারাপের কারণটা বুঝতে পেরেছিলাম সেদিন। শুধু টাকার জন্যই নয়, এখানে আমাদের পুজোটার সাথে সাথে হরিদ্বার জায়াগাটাও ঘুরে যাবার সাধ জন্মেছিল তার।
বাংলার ক্লাবের পুজোগুলিতে থিম পুজোর চল অনেকবছর আগেই শুরু হয়েছে। আর একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পুজোর জাঁকজমক ও বাজেট। কিন্তু সেই তুলনায় প্রবাসের পুজোগুলোতে এখনও রয়েছে সাবেকিয়ানার ছাপ। খুবই কম বাজেটের মধ্যেই সমস্ত উৎসব সারতে হয়। সেইজন্য এইসব পুজোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর প্রসাদ বিতরণ এই দুই প্রধান দিকটির প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। তাই ষষ্টি থেকে নবমী প্রতিদিন দুপুরে কোনো বাঙ্গালীর ঘরের উনুনে হাঁড়ি চড়ে না। আমাদের পুজোটি যেখানে হয় সেটি একটি স্কুল পরিসর। জায়গার কোনো অভাব নেই। স্কুলের ছাদেই পাতপেড়ে চলে ভুরিভোজ, কি নেই তাতে- খিচুড়ি, পোলাও ,বেগুন ভাজা, লাবড়া, দই, মিষ্টি। প্রসাদের কোনো অভাব হয়না, বাঙালী থেকে অবাঙ্গালী সবার লাইন পড়ে যায়। ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয় পুজো কমিটির কর্ম-কর্তাদের। একবার হল কি, সেদিন আমিও প্রসাদ বিতরণে শামিল। তো সেই ব্যাচ শেষ হবার পড়ে আরেকটি ব্যাচ বসতে যাচ্ছে এমন সময় আমাদের কোম্পানিরই কোয়ালিটি ডিপার্টমেন্টের একজন স্বল্প পরিচিত বাঙালী খেয়ে উঠে এসে একটি টিফিনবাক্স এনে সামনে ধরল। স্বল্প পরিচিত এই জন্যই দু’তিন বছর হয়েছে এখানে জয়েন করেছে তাই তেমন ভাবে আলাপ হয়ে ওঠেনি। উনার মিসেস আসতে পারেনি তার জন্য ঘরে প্রসাদ নিয়ে যেতে চায়। আর এদিকে কমিটির কড়া নির্দেশ কারও বাড়ির জন্য প্রসাদ দেওয়া চলবে না। সব ব্যাচ শেষ হয়ে যাবার পর দেওয়া যেতে পারে। একজনকে দিলে তার দেখাদেখি অন্যান্যরাও নিয়ে যাবে, সেদিক থেকে দেখলে এটি ভালো নিয়ম।আমি সবিনয়ে তাকে আমার অপারগতার কথা বললাম, সাথে এটাও বললাম এই ব্যাচের পর আর বাইরের ভীড় নেই, তখন এসে নিয়ে যাবেনক্ষণ। তা ভদ্রলোকের হয়ত একটু অপমানজনক লেগেছে কথাটা, যদিও আমার আন্তরিক ভাবে খারাপই লাগছিল না দিতে পেরে। তা রেগে লোকটি তখন কী সব একটা দুটা কথা বলেছিল তা আজ আর খেয়াল নেই, তবে এটা মনে আছে যে- ‘ চাঁদা নেবার বেলায় তো বেসিকের টু পারসেন্ট নিয়ে নেন, আর প্রসাদ চাইতে গেলে খারাপ ব্যবহার করেন। লোকটির শোরগোলে সবাই ভ্যবাচ্যকা খেয়ে গেছিলাম। যতদুর অনুমান করতে পারি উনার মূল বেতনের দুই শতাংশ হারে দেওয়া চাঁদার পরিমাণ হবে খুব বেশি হলে তিনশ টাকা। যাই হোক সেটা কথা নয়, কথা হল এই প্রবাসেও সামান্য একটাই পুজোর জন্য সামান্য চাঁদা নিলেও কিছু কিছু লোক তাকে জুলুম বলে মনে করে।
সনাতনদার হরিদ্বার আসার স্বপ্নটা এবারেও পূরণ হল না। তাকে বললাম-‘ দাদা আমি তো এবারে কমিটিতে নেই। তাই কোনোরকম আশা রাখবেন না।’ তারপরও সে বলল ‘বুঝতে পারছি দাদা,তবু যদি প্রেসিডেন্ট রাজী হন তো জানাবেন।’ ফোন রেখে দিয়ে আবার হাঁটা শুরু করি। হাঁটতে হাঁটতে দিগন্ত বিস্তৃত বালির চড়ায় এসে উঠেছি। বন্যার শেষ জলটুকু নদী ছাপিয়ে বয়ে যাচ্ছে। সেই স্রোতে ভেসে যাচ্ছে একটি টিফিন কৌটো আর একটি উদ্ভ্রান্ত লোক তার পিছু পিছু নদীর পাড় ধরে ছুটছে অনবরত। ওপারেই অদূরে আরেকটি লোক কাশবনে আপনমনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কখনো কখনো কাশফুলের স্পর্শে দুলে উঠছে ,নেচে উঠছে।
পুজো ও একটি সাহিত্য পত্রিকার বীজ বপনঃ-
“ভাবনা না হয় থাক আজ, মুখফুটে কিছু বলতে পারি কিনা দেখি। কোন কথনের প্রাক্কালে ভূমিকা ভীষণ প্রয়োজন আর গুরুত্বপূর্ণ ও বটে। আমার আবার ছোটবেলা থেকেই মুখ বন্ধই থাকে প্রায়। তাই এই মুখবন্ধটি লিখতে গিয়ে হাত কতটা খুলবে তা নিয়ে একটা সন্দেহ অবশ্য আছেই। আসলে যেই বক্তব্য এই পত্রিকাটির মাধ্যমে আমরা প্রকাশ করতে চাইছি তার সূত্রপাত ও পটভূমি আমার চাইতে অনেক অনেক পুরনো। তবুও চেষ্টা করছি (আমার ক্ষুদ্র অনুভূতির দ্বারা ) পত্রিকার বক্তব্য গুলির মধ্যে যে যোগসূত্র তার একটা ভূমিকা দিতে পারি কিনা।
কথায় আছে যে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। তেমনি আমার মনে হয় বাঙ্গালি চাঁদে গেলেও চাঁদা তুলে সেখানে দুর্গাপূজার আয়োজন করবে আর সেখানকার উদাসী হাওয়ায় হালকা ওজনে সাহিত্যচর্চা করতে করতে হৃদয় ভাসাবে।
তাই বাঙ্গালি জীবিকার সূত্রে দেশ-বিদেশের যেখানেই পাড়ি জমাক না কেন সাথে নিয়ে যাবে দুর্গাপূজার সংস্কার আর তার ঐতিহ্যশালী শিল্প-সংস্কৃতি। ঠিক যেমন পঞ্চাশ বছর আগেও কিছু উদ্যমী আর সচেতন বাঙ্গালী এই ভেল উপনগরীতে দুর্গোৎসবের সূচনা করেছিলেন। তারপর থেকে এই দুর্গাপূজা কমিটি ৪৯ টি শরৎকাল পেরিয়ে আজ ৫০-তম মাতৃবন্দনার দোরগোড়ায়।
দেবভূমি উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার সাধারণত উত্তর ভারত তথা হিন্দিবলয়ের অন্তর্গত হলেও একাধিক ভাষা ও জাতির মেলবন্ধনে ভেল উপনগরী যেন ছোট একটি ভারতবর্ষ। তাই এই দুর্গাপূজা সাধারণত বাঙালিদের দ্বারা পরিচালিত হলেও তা আর শুধু ‘বাঙালিদের উৎসব’ এই পরিচিতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। দুর্গাপূজা একসময় প্রাচীন বাংলার ধনী ও সম্পন্ন পরিবারের গণ্ডি পেরিয়ে ধনী দরিদ্র সবার উৎসবে পরিণত হয়ে সার্বজনীন আখ্যা পেয়েছিল। আর আজকের দিনে দুর্গাপূজা প্রবাসী বাঙালিদের হাত ধরে সত্যিকারের অর্থেই সার্বজনীন হয়ে উঠেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। তাতে কিন্তু আমাদের বাঙালিদেরই লাভ হয়েছে। দুর্গোৎসবের মাধ্যমে শুধু মাতৃআরাধনাই নয় বাঙালি তার শিল্প সৃষ্টিকে, তার শিল্প সত্ত্বাকে সমগ্র বিশ্বে মেলে ধরার সুযোগ পেয়েছে।
আর সাহিত্য পত্রিকার সূত্রপাতও হরিদ্বারে এই প্রথম নয়। অতীতেও ভেল উপনগরীর শুভবুদ্ধি সম্পন্ন বাঙালিদের উদ্যমে ত্রিভাষিক ( বাংলা, হিন্দী ও ইংরেজী ) সাহিত্য পত্রিকা ‘প্রবাসী দর্পণ’ শুরু হয়। বেশ কয়েকবছর তা নিয়মিতভাবে প্রকাশিতও হয়েছিল। তারপর কর্পোরেট-কাজের চাপে ও হরিদ্বারে বাংলা ভাষায় ছাপানোর সুব্যবস্থা না থাকার কারণে তার প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেলেও সাহিত্যচর্চার সুপ্ত বাসনা তাদের মনে থেকে যায়। সেই সব শুভবুদ্ধি সম্পন্ন অগ্রজদের উৎসাহ আর সাংস্কৃতিক বিভাগের উদ্যোগে সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির তরফ থেকে শারদোৎসবের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ‘সুবর্ণপত্র’ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এটি কোন নিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা নয়, সুবর্ণ-জয়ন্তী বর্ষের স্মারক পত্রিকা মাত্র।
যাই হোক কালচারাল্ কমিটি তথা সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির এই ক্ষুদ্র অথচ মহৎ প্রচেষ্টায় হরিদ্বারের বাঙালি তথা অন্য ভাষা-ভাষীর সংস্কৃতিমনস্ক মানুষের মধ্যেকার শিল্পী-সত্ত্বাটি প্রকাশিত হবার একটা সুযোগ পাবে আশা করি। এবং সেইসব সুধীজনদের থেকে এটাও আশা রাখছি যে তাদের সেই প্রকাশ শুধুমাত্র ২০১৬ এর ‘সুবর্ণপত্র’-তেই সীমাবদ্ধ না থেকে আরও নতুন ভাবে নতুন দিশায় নদীর মত বয়ে যাবে। আর তার জন্য আলাদা করে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সাহিত্য পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশের চিন্তা ভাবনা করা যেতে পারে।
সর্বোপরি হরিদ্বারের সমস্ত বাঙালিদের কাছ থেকে আশা রাখছি যে তারাও, বর্তমান যুগের ইংরেজী ও হিন্দীর আগ্রাসী (তবে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাধ্যতামূলক ও বটে) মনোভাবের কাছে যাতে আমাদের মায়ের মত প্রীয় ‘বাংলাভাষা’ চাপা পড়ে না যায় – সেইজন্য বিশেষভাবে সজাগ ও সচেষ্ট হয়ে উঠবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে যেন তাদের ‘মাতৃদান’ বাংলাভাষা থেকে বঞ্চিত না করি । জগতের সবচাইতে মিষ্টি ভাষাটিকে হারিয়ে যেতে না দিয়ে তাদের ঠোঁটে যেন তুলে দিতে পারি – সেই পবিত্র চেষ্টাটি অবশ্যই আমাদের করে যাওয়া উচিত। আর তার জন্য এই প্রবাসে বসে বাংলাভাষায় সাহিত্যচর্চার থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে না।”- ঠিক এই দীর্ঘ ভূমিকাটিই লিখেছিলাম গত বছর সুবর্ণপত্র পত্রিকার ভূমিকার জন্য। তবে লেখাটি আর ছাপিনি পত্রিকায়। কারণ প্রথম উদ্যোগ বলেই হয়ত জনে জনে দরবার করেও তেমন মেটেরিয়াল পাইনি। সেই কারণে নিজের লেখালেখির যতটা সম্ভাবনা ছিল তা উজাড় করে দিয়ে কবিতা, গল্প, আর ভ্রমণকাহিনী দিয়ে শুধু পৃষ্ঠা সংখ্যাবাড়ানোর চেষ্টা করেছি। তবে শুধু ওজনে ভারী করাই নয় নিজের সুপ্ত বাসনার অতি উৎসাহও যে ছিল সেটা অকপটে স্বীকার করি। আর নিজের এই বাড়াবাড়িটায় একটা জায়গায় লাগাম পরাতেই পত্রিকার ভূমিকাটি হিমঘরে পাঠিয়ে দিই।
এই পত্রিকার বীজ বপনের কাজটাও যে খুব সহজ ছিল তা নয়। পুজো কমিটির অনেকেই এই ফালতু খরচের পক্ষে ছিল না। তবে অশোক দাস, প্রবাল গাঙ্গুলি মহাশয়দের উৎসাহ ও সহযোগিতায় এগোতে সাহস পাই। আর পাশে পাই এই পত্রিকার আর এক রূপকার অগ্রজপ্রতিম স্বরূপ চক্রবর্তী মহাশয়ের। বাঙ্গালি যে মননে চেতনে শিল্প সাহিত্যকে লালন পালন করে তা সর্বজনবিদিত হলেও কেউ কেউ যে সাহিত্য পত্রিকাকে রদ্দি কাগজ হিসেবে দেখে সেরকম বাঙ্গালিও হরিদ্বারে দেখেছি। কমিটির সিদ্ধান্তেই সুবর্ণপত্রের একটা ন্যূনতম মূল্য রেখেছিলাম ও পুজোর মাঠে স্টল লাগিয়েছিলাম। সেখানে যখন পরিচিত একজনকে পত্রিকাটি কেনার অনুরোধ করি সে তখন বলেছিল-‘ কি হবে এটা নিয়ে, রেখে দাও ওগুলো পরে কেজি দরে কাবাড়িকে বিক্রি করে দিও।’ তা এরকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে স্বরূপদার মত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও কর্মঠ একজন শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষককে পাশে না পেলে পত্রিকা বের করা সম্ভব হত না। তার উদ্যমেই আমরা দিন-রাত এক করে সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলির সুষ্ঠ সম্পাদনার সাথে সাথে সুবর্ণপত্র প্রকাশ করেছি। সাহিত্যপ্রেমী বাঙ্গালিদের পুজো মানে যেমন দেদার আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, তেমনি দুপুরগুলো একান্তে পুজোবার্ষিকী পত্রিকার সাথে কাটানো- ঠিক এই ফ্লেবার টাই আমরা তৈরি করেছিলাম সেবছর। আর সেই থেকে এখানকার সাহিত্যপ্রেমীরা একত্রিত হয়ে সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি ‘অলীকপাতা’ নামের একটি সাহিত্যগোষ্ঠী তথা পত্রিকা প্রকাশনা শুরু করেছে।
এভাবেই বাঙ্গালীর কাছে শিল্প ও সাহিত্যের চর্চাযে পুজো তথা ধর্মাচরণের সমার্থক হয়ে উঠেছে সে নিজবাসেই হোক বা পরবাসেই সে কথা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। আর পুজোর কটাদিন সমগ্র বিশ্বের বাঙ্গালিরা যেন একটি গ্রামেরই বাসিন্দা হয়ে যায় তাদের এই নিজস্ব চেতনার আলো মেখে।
দূর্গাপূজো ও নবরাত্রী......
সোমা ঘোষ
দূর্গাপূজো!! শুনলেই কেমন মনটা আনন্দে নেচে উঠে , তাই না?? দূর্গাপূজো বাঙালীর রক্তে মিশে আছে। বিশেষ করে গ্রামবাংলার বনেদী পূজো ও শহর কলকাতার বারোয়ারী পূজো,সর্বত্র এই উৎসব মানেই সাজো সাজো রব। সেই ছেলেবেলায় প্রথম যেদিন কাঠামোর উপর মাটি লাগত সেদিন থেকেই শুরু হত পূজো। তখন পূজো মানে ছিলো ছুটির আনন্দ। একমাস স্কুল বন্ধ আর বন্ধুদের সাথে বাঁশের প্যানডেলে দোল খাওয়া, মূর্তি বানানো দেখা, পূজোর নতুন জামা, বেড়াতে যাওয়া, ভালোমন্দ খাওয়া আরো কত কি। দূর্গা পূজোয় আজও একইভাবে মেতে উঠি। তবে বিবাহ সূত্রে কিছুবছর যাবত কলকাতা থেকে দূরে গুজরাতের এক ছোট্ট শহরে স্থিত হয়েছি। তাই কলকাতা আর এই ছোট্ট শহরের পূজোর জাঁকজমকের বৈপরীত্য চোখে পড়ে। এখানে যদিও ছোট্ট দুটি পূজো হয় তবু আনন্দের কোনো ঘাটতি নেই। বাঙালীর সংখ্যা কম হওয়ায় প্রায় সকলেই সকলের পরিচিত। সারা বছর দেখা না হলেও পূজোর কটাদিন সবাই যেন এক একান্নবর্তী পরিবার। সবাইমিলে অঞ্জলি দেওয়া থেকে শুরু করে ফল কাটা, ভোগ রান্না, প্রসাদ বিতরণ আবার প্রতিদিন দুবেলা সবাই মিলে একসাথে ভোগ খাওয়া। জাঁকজমকহীন হলেও এ এক প্রাণের মিলন, এক অনাবিল আনন্দ। মাইকের হইচই না থাকলেও সন্ধ্যার সময় যখন ঢাকের তালে ও কাঁসরের আওয়াজে ঢাকীর শরীর দুলে ওঠে তখন ধুনুচি নিয়ে মায়ের আরতিতে মেতে ওঠে সবাই। ধুনুচির ধোঁয়ায় আর ঢাক ও কাঁসরের সুরমূর্চ্ছণায় এক অপরূপ ঐশ্বরীক পরিবেশ গড়ে উঠে। এই একই সময়ে গুজরাটে চলে নবরাত্রী উৎসব। মা দূর্গারই আরেক রূপ অম্বে মাতার পূজন। কলকাতায় যেমন আমরা গলিতে গলিতে পূজো দেখতে পাই ঠিক তেমনই এখানে গলিতে গলিতে এই নয় দিন সুমধুর গুজরাতী সংগীতের সাথে গুজরাতের ঐতিহ্যবাহী পোষাকে সুসজ্জিত পুরুষ ও মহিলা নির্বিশেষে গরবা ও ডান্ডিয়া নাচতে দেখা যায়। অনেক গুজরাটীকে দেখি দূর্গামন্ডপে এসে মাতৃপ্রণাম করে প্রসাদ নিতে। এক ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি কি সন্মাণ জ্ঞাপন । আবার সম উৎসাহে বাঙালীদেরও দেখি গরবা ডান্ডিয়া নাচে ওদের তালে তাল মেলাতে। দুই সংস্কৃতির অপরূপ এক মেলবন্ধন। তাই দূর্গা পূজো এখন ভারতের এক প্রতীক। তা সে দূর্গা পূজোই হোক বা নবরাত্রী উদ্দেশ্য একই......মাতৃবন্দনা॥
গল্প
হোসেন মিয়াঁর প্রবাল-দ্বীপ
রাহুল
"হুই দ্যাক্ ভুষুন্ডীর মাঠ।ওপাশে জানিছ্ বরফে পুকুর ভাসে।লাফালাফি করে সব।ইয়া এত্তো বড়োবড়ো..........।"
মনসা এভাবেই ঝুমঝুমি নাড়িয়ে রাজা-কে ভাত খাওয়ায়।
রাজা - মস্ত্ নাম।চারপেয়ে টেবিলটার মতো - যার একটা পায়াতে আবার আরশোলারা রাত বাড়লেই চাটাচাটির লালা জমায়।আসলে হাড়-হাভাতের দুনিয়ায় সকলের নাম "রাজা" হলে - ডেকেও শান্তি।।
মনসা জানে ও বোঝে - রাজাও একদিন কতো রাজার মতোই বর্ডারের তার চুরি করতে করতে পালিয়ে যাবে ওই টেবিলটা টপকে আরশোলাদের দেশ পেরিয়ে।।
"হুই দ্যাক্ ভুষুন্ডীর মাঠ।ওপাশে জানিছ্ বরফে পুকুর ভাসে।লাফালাফি করে সব।ইয়া এত্তো বড়োবড়ো..........।"
মনসা এভাবেই ঝুমঝুমি নাড়িয়ে রাজা-কে ভাত খাওয়ায়।
রাজা - মস্ত্ নাম।চারপেয়ে টেবিলটার মতো - যার একটা পায়াতে আবার আরশোলারা রাত বাড়লেই চাটাচাটির লালা জমায়।আসলে হাড়-হাভাতের দুনিয়ায় সকলের নাম "রাজা" হলে - ডেকেও শান্তি।।
মনসা জানে ও বোঝে - রাজাও একদিন কতো রাজার মতোই বর্ডারের তার চুরি করতে করতে পালিয়ে যাবে ওই টেবিলটা টপকে আরশোলাদের দেশ পেরিয়ে।।
"হুই দ্যাক্ ভুষুন্ডীর মাঠ।ওপাশে জানিছ্ বরফে পুকুর ভাসে।লাফালাফি
করে সব।ইয়া এত্তো বড়োবড়ো..........।"
রাজাও একদিন এভাবেই খুন করবে নিষিদ্ধ রাজা-কে।পড়ে থাকবে ঝুমঝুমিটার এপিটাফ - ওটা যে রাজা নয়।
....................বয়স বাড়ে না।।
রাজাও একদিন এভাবেই খুন করবে নিষিদ্ধ রাজা-কে।পড়ে থাকবে ঝুমঝুমিটার এপিটাফ - ওটা যে রাজা নয়।
....................বয়স বাড়ে না।।
২
সুমন্ত আজ বহুদিন পর জলপ্রপাত ছুঁল।বাসি পেট বড়ো আনন্দ পায় এসময়।বরফ-গাল।শীতশীত।কাফ-সিরাপ।এগুলে পেরিয়ে দায়বদ্ধ উষ্ণগুলো ডানা ঝাপটায়।এ বুঝি উড়তে শিখলো বাবুই ছানা।।
সুমন্ত আজ বহুদিন পর জলপ্রপাত ছুঁল।বাসি পেট বড়ো আনন্দ পায় এসময়।বরফ-গাল।শীতশীত।কাফ-সিরাপ।এগুলে পেরিয়ে দায়বদ্ধ উষ্ণগুলো ডানা ঝাপটায়।এ বুঝি উড়তে শিখলো বাবুই ছানা।।
সুমন্ত ভাবে - কমলালেবুর মতো লাইফ অথবা স্যাটার্ন অরবিট।একটা কবিতা
হলে বেশ হতো।একটা কাগজের এরোপ্লেনে চড়ে - চুমু খাওয়া যেত প্রজাপতির বিষাক্ত ঠোঁটে।।
যদিও রোদ পুড়লে এসব কিছুই যথেষ্ট নয়।।
যদিও রোদ পুড়লে এসব কিছুই যথেষ্ট নয়।।
সুমন্ত আজ বহুদিন পর জলপ্রপাত ছুঁল।বাসি লিঙ্গ বড়ো আনন্দ পায় এসময়।।
আসলে সুমন্ত-রা চিরকালিই ভেসে যাওয়া কলাগাছের ভেলা।।
সুমন্ত প্রবল আবেগে প্রপাতের ছাদ থেকে ঝাপ দেয়।
............ বৃষ্টিজনিত রূপকগুলো জ্যান্ত হয়ে ওঠে।।
............ বৃষ্টিজনিত রূপকগুলো জ্যান্ত হয়ে ওঠে।।
৩
কি রে নঈমুল্!এ মাসটা ফাঁকি মারলি কেনে রে?
কি রে নঈমুল্!এ মাসটা ফাঁকি মারলি কেনে রে?
আজবার হাটবার নেই।গতকাল ছিল।নঈমুল -
সাহেব বাগান থেকে কিছু আতা আর মৌফুল নিয়ে গেছিল।মাত্র কটাই বা টাকা?কতোই বা?তাও যদি একছটাক পোয়াতি জমি থাকতো নিজের!
তার মাঝেও - রাবিয়ার আঁতুড়ঘর।বৃদ্ধা রাজিয়ার কফ।পঞ্চোত।নরেন মাস্টারের কেলাস্।পার্টি।পার্টিশন্।পার্টিফান্ড কতো কি?
সাহেব বাগান থেকে কিছু আতা আর মৌফুল নিয়ে গেছিল।মাত্র কটাই বা টাকা?কতোই বা?তাও যদি একছটাক পোয়াতি জমি থাকতো নিজের!
তার মাঝেও - রাবিয়ার আঁতুড়ঘর।বৃদ্ধা রাজিয়ার কফ।পঞ্চোত।নরেন মাস্টারের কেলাস্।পার্টি।পার্টিশন্।পার্টিফান্ড কতো কি?
তাও একশো দিনটা যদি ৩৬৭ হতো!কিছু বাঁচতো - কিছু কুড়াতো - কিছু ঝরতো
- আয়ু বাড়তো লকলকিয়ে লাউডাঁটার মতো।।
নঈমুল কখনো ভাবে না।আসলে ভাবতে শেখাটা হয়তো কোনোদিনই পেট-খালাসের
থেকে জরুরি নয়।।
কি রে নঈমুল্!এ মাসটা ফাঁকি মারলি কেনে রে?
নঈমুল শেষবারের মতো পেচ্ছাপ শেষ করে।
এগিয়ে যায় দালাল নঈমুলের দিকে।তাক করা নিম্নাঙ্গ ভাঁজ করে গুছিয়ে রাখে।
এগিয়ে যায় দালাল নঈমুলের দিকে।তাক করা নিম্নাঙ্গ ভাঁজ করে গুছিয়ে রাখে।
কোন এক মুড়ির ঠোঙায় কবে যেন দেখেছিল ময়াল সাপের ছবি।সুন্দরী ও আকর্ষনীয়া।
বাজি রাখে নঈমুল - মাথাটা ঢুকিয়ে দেয় কাগজের বাসি ঠোঙায়।
একটা প্রবল বিস্ফোরণে - অজস্র নঈমুল ছিটকে পড়ে এদিকওদিক।।
একটা প্রবল বিস্ফোরণে - অজস্র নঈমুল ছিটকে পড়ে এদিকওদিক।।
৪
তোরণ।সূর্যঘড়ি।চুল্লু ও আদার চাট।মাত্র এইকটারই স্বপ্ন দেখে গোপাল পাগল।মাঝেমাঝে বিরিয়ানি দেখলে আবার চুলকোয়।চুলকোয় তো সবাই - অফিসে বাথরুমে স্কুলে ঘন্টায়।সবাই।তবে নন্দ ঘোষের মতো যতো দোষ গোপালেরই...........
তোরণ।সূর্যঘড়ি।চুল্লু ও আদার চাট।মাত্র এইকটারই স্বপ্ন দেখে গোপাল পাগল।মাঝেমাঝে বিরিয়ানি দেখলে আবার চুলকোয়।চুলকোয় তো সবাই - অফিসে বাথরুমে স্কুলে ঘন্টায়।সবাই।তবে নন্দ ঘোষের মতো যতো দোষ গোপালেরই...........
যাঃহ - পাগলের নাম আবার গোপাল হয় না কি।হয় গো হয় দিমনী।কালোকুত্তায়
কামড়ালে গোপাল কেন চীনামস্তানও কোনদিন পাগল হয়ে যায়।শুধু কারুকারুর ঢ্যামনাপনা একটু
বেশী আর কি।হাত দিয়ে চন্দ্রবোড়া-কে ছাঁকাতেলে ভাজা!
একি যে সে পারে?
তাহলে আর কি - গোপাল নাড়ু নয়।হাউড্রোজেন বোম।
একি যে সে পারে?
তাহলে আর কি - গোপাল নাড়ু নয়।হাউড্রোজেন বোম।
কখনো কোনো প্রোডাক্টের ব্র্যান্ড নাম গোপাল হলে - তা কোনোদিন পাগলের
জন্য নয়।বা যারা পড়ছেন - গেঞ্জী জাঙ্গিয়া মোজা ব্রেসিয়ার প্যান্টি!তারা কেউই পাগল নন্
অথবা গোপাল।নিদেনপক্ষে আফিমখেকো বটগাছ তো নয়ই।।
তোরণ।সূর্যঘড়ি।চুল্লু ও আদার চাট।মাত্র এইকটারই স্বপ্ন দেখে গোপাল
পাগল।হয়তো কোনোদিন কর্পোরেশনের যে গাড়িটা ভাগাড় পৌঁছয় - তার ব্র্যান্ড নামও গোপাল হবে।।
গোপাল - ভাইরাস।।।
৫
একটি নদীর গপ্পো বা একটি মাঝির গপ্পো - অনেক আছে।বর্ষায় নৌকা সকলে ভাসাতে ভালবাসে।হোসেন মিয়াঁ যদিও এতসব ভাবে না।লুঙ্গির গিট খুলতে থাকলে নাকি থামানো যায় না - অনেকটাই সেই কিশোরী পোয়াতির মতো।হোসেন মিয়াঁ অনেক লাশ কেটেছে জীবনে।লাশ সম্পর্কিত যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে - যে সকল মানুষরা ভয় পায় তাদেরকে মিয়াঁর কিরকম যেন রাগী বিড়ালটার মতো মনে হয়।
এই তো গেল পরশু যে আধপাগলাটে বুড়োটা ঘার টপকে শুতে এলো মর্গে - তার সাথেও তো কত্ত কথা হলো।কই একবারের জন্যও সে ভয় পায় নি।তবে চারটি বিড়ি খসেছিল বই কি।১টা মিয়াঁ - ১টা হোসেন - ১টা মর্গ - ১টা ওদের ধাতব মাকড়শাটা।।
একটি নদীর গপ্পো বা একটি মাঝির গপ্পো - অনেক আছে।বর্ষায় নৌকা সকলে ভাসাতে ভালবাসে।হোসেন মিয়াঁ যদিও এতসব ভাবে না।লুঙ্গির গিট খুলতে থাকলে নাকি থামানো যায় না - অনেকটাই সেই কিশোরী পোয়াতির মতো।হোসেন মিয়াঁ অনেক লাশ কেটেছে জীবনে।লাশ সম্পর্কিত যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে - যে সকল মানুষরা ভয় পায় তাদেরকে মিয়াঁর কিরকম যেন রাগী বিড়ালটার মতো মনে হয়।
এই তো গেল পরশু যে আধপাগলাটে বুড়োটা ঘার টপকে শুতে এলো মর্গে - তার সাথেও তো কত্ত কথা হলো।কই একবারের জন্যও সে ভয় পায় নি।তবে চারটি বিড়ি খসেছিল বই কি।১টা মিয়াঁ - ১টা হোসেন - ১টা মর্গ - ১টা ওদের ধাতব মাকড়শাটা।।
একটি নদীর গপ্পো বা একটি মাঝির গপ্পো - অনেক আছে।বর্ষায় নৌকা সকলে
ভাসাতে ভালবাসে।হোসেন মিয়াঁ যদিও এতসব ভাবে না।ওর চোখে মস্তি মানে লাশের সাথে গপ্পো।নিজেকে
কখনো আয়নায় দেখে নি হোসেন।দেখলে চিনতে পারতো।হয়তো ব্লেডের ধার গলায় চালাবার আগেই............
সেই দেশ......!!!
কাকলি ভদ্র
চোখ বুজলেই ক'দিন ধরে কে যেন কানে কানে ফিসফিসিয়ে ওঠে ...."ওঠো...হাত ধরো...চলো যাই...শব্দহীন নীরবতার দেশে!" প্রথম প্রথম পাত্তা না দিলেও ক্রমশ কথাটা আমাকে চেপে বসেছে।এমনটা হয় নাকি কখনো?সত্যি কি আছে এমন এক দেশ যেখানে শব্দের প্রবেশ নিষেধ!!! দেখতেই হবে।পৌঁছতেই হবে সেই দেশ। তারপর?...
সেই থেকে শুধু হাঁটছি আর হাঁটছি। হাঁটছি...
হাঁটতে হাঁটতে অনেক পথের দিশারীরা হাতছানি দেয়।তবু আমি থামি নি।একসময় হাঁটতে হাঁটতে পথের শেষ প্রান্তে এক রেল স্টেশনে পৌঁছে গেলাম।ঘন কুয়াশায় ঘেরা এই প্ল্যাটফর্মে ঢুকে মন বলছে এই সেই স্টেশন ,যেখানে এসে দাঁড়াবে শব্দহীন নীরবতার দেশে নিয়ে যাবার এক ট্রেন।
শুনসান এত বড় স্টেশনে আমি একেবারেই একা।রেল লাইন,টিকিট ঘর,স্টেশন মাস্টার কিছুই দেখা যাচ্ছে না।হু হু শীতল বাতাস।দেহ মন অবশ।কেমন যেন এক আচ্ছন্ন ভাব।হঠাৎ এক দমকা হাওয়া।উধাও শীত। উধাও ঘুম ঘুম ভাবটাও।ট্রেন থামল।আমি দৌড়ে গিয়ে পাগলের মতো এই জানলা ওই দরজায় ধাক্কা দিলাম।কিন্তু কি আশ্চর্য ! নিজেই নিজের সেই চিৎকার শুনতে পেলাম না।হতাশ হয়ে বসে পড়লাম প্ল্যাটফর্মের মেঝেতেই ।আমার হয়তো আর যাওয়া হবে না সেই শব্দহীনতার দেশে।
হঠাৎ আমার সামনের দরজাটা খুলে গেল ঘটাং করে।সময় নষ্ট না করে আমিও এক লাফে উঠে পড়লাম ট্রেনে।কামরার দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল।
গাঢ় নীল আলো।কিছুই দেখা যাচ্ছে না কামরার ভেতর।শুধু অনুভব করতে পারছি কামরার ভেতরের মানুষগুলো সবাই সাদা চাদরে মুড়ে শুয়ে আছে।একটা খালি বার্থ পেয়ে দেরী না করে আমিও শুয়ে পড়লাম।মনে মনে একটাই প্রশ্ন।সত্যিই কি আমাকে পৌঁছে দেবে আমার কাঙ্খিত দেশে এই ট্রেন?
চোখ বুজলাম ক্লান্তিতে।নানা চিন্তায় ঘুম এল না।সামনের বার্থে শুয়ে থাকা সহযাত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম,এ গাড়ি কখন শব্দহীন নীরবতার দেশে পৌঁছবে বলতে পারেন?
----জানি না।
ওপরের বার্থে ঝুঁকে থাকা লোকটিকে একই প্রশ্ন করলে তিনিও একই উত্তর----জানি না।
আশ্চর্য তো!এ গাড়ির কি কোনোই শিডিউল নেই নাকি?
"আপনারা কি সবাই শব্দহীন নীরবতার দেশে যাবেন?"
সবাই এক সঙ্গে বলে উঠল----হমম্।
পাশের বার্থ থেকে এক প্রৌঢ়া ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললেন..."টেনশন নেবেন না।এ গাড়ি কোথাও থামে না।যার যখন সময় হবে আপনা থেকেই সে নেমে যাবে।ওই ভাঁজ করা সাদা চাদর টা গায়ে দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকুন।"
পায়ের নীচে ভাঁজ করা চাদরটা টেনে শুতে গিয়ে তাকিয়ে দেখি সামনের বার্থের লোকটা নেই।কোথায় গেলেন উনি?একি কাণ্ড!ভয়ে হাত পা অবশ হয়ে এল।প্রৌঢ়া বলে উঠলেন--"চুপচাপ শুয়ে থাকুন।বললামই তো যার যখন সময় হবে সে তখন নেমে যাবে অন্যদের অজান্তেই নেমে যাবে ...আর সেটাই হবে তার অন্তিম ডেস্টিনেশন। এত টেনশন করবেন না।টেনশনমুক্ত হতে হবে।জাগতিক ভাবনা,চিন্তা,লোভ, লালসা, চাওয়া- পাওয়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।শুয়ে পড়ুন চোখ বুজে....আর স্বপ্ন দেখুন....স্বপ্ন....enjoy... enjoy with ur dreams....!!!"আসতে আসতে প্রৌঢ়ার গলার স্বর বাতাসে মিলিয়ে যেতে থাকলো....আমারও দু'চোখ বুজে আসতে লাগল গভীর এক আচ্ছন্নতায়।ঘুমের ঘোরে মনে হল আমি যেন এক মেঘের দেশে....... টুকরো টুকরো মেঘ আমাকে ঘিরে রয়েছে....অসম্ভব এক ভালোলাগা।এক টুকরো মেঘ আমার কানে ফিস ফিস করে বলল....বলো...কি স্বপ্ন দেখতে চাও তুমি? বললাম--"ভালবাসার স্বপ্ন।ভালবাসার স্বপ্ন দেখাও আমাকে।"মেঘগুলো তখন নানারকম আদল গড়ে আমার সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে...চেনা চেনা মুখের সেই আদল....হারিয়ে ফেলা মানুষের সেই আদল।মেঘ বললো ..."দেখ তো.খুঁজে পাও কিনা তোমার ভালবাসা?"
- পাচ্ছি তো। ওই তো...ওই তো আমার প্রিয়জনেরা।হ্যাঁ.... হ্যাঁ...ওরাই তো আমার ভালবাসা।
-খুঁজে পেলে?
-পেয়েছি গো ...পেয়েছি....।আনন্দে আত্মহারা আমার দু'চোখে তখন রিনিঝিনি বর্ষা।হঠাৎ মুখগুলো অদৃশ্য হতেই কোথা থেকে একরাশ বকুল ফুল এসে ঢেকে দিল আমাকে।রাশি রাশি বকুল ফুল।আঃ!!!মিষ্টি মিষ্টি সুবাসে ভরে উঠলো চারধার।ভীষণ এক সুখ ।
-এত বকুল?শীতকালে বকুল ফুল ফোটে মেঘ?
-ফোটে তো।স্বপ্নের কোনো ঋতু থাকে না গো।
অজস্র বকুল ফুলের চাদরে ঢেকে দিল আমার শরীর।কানে বাজছে সুরেলা এক মণ্ত্রোচ্চারণ...
"জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ ।
তস্মাদপরিহার্যেঽর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি ॥"
আবার সেই প্রৌঢ়ার কন্ঠস্বর ...."আপনার মূহুর্ত এসে গেছে...তৈরি হয়ে নিন।পরের স্টেশনেই আপনার গন্তব্য।"
আস্তে আস্তে ট্রেনের স্পিডটাও যেন কমে আসছে।চারিদিক কেমন যেন নিস্তব্ধ....নিঃশব্দ....কোনো আওয়াজই আর শুনতে পাচ্ছি না....সব সাউন্ড যেন মিউট করে রেখেছে কেউ।চারদিক সাদা....সাদা....শুধুই সাদা...শব্দহীন নীরবতার দেশে পৌঁছে গেছি.........
দান
মৌসুমী চৌধুরী
মৌসুমী চৌধুরী
কোর্ট থেকে ফিরে সমর দেখলো আধো
অন্ধকার ব্যালকনিতে চুপচাপ বসে আছে
সুপ্রিয়া। রাস্তার নিয়নের আলো এসে পড়েছে ওর মুখে। মুখের প্রতিটি ভাঁজে গভীর চিন্তাজাল জড়িয়ে। নিঃশব্দে সুপ্রিয়ার পাশে গিয়ে বসলো সমর।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামছে নিঃশব্দে।বাড়ির সামনের একফালি বাগান থেকে বকুল
আর গন্ধরাজ একযোগে গন্ধ ছড়াচ্ছে।আশ্বিনের মাঝামাঝির মরমী কিশোরী সন্ধ্যে একটু একটু করে নারী হয়ে উঠছে। তারা ভরা আকাশটা থেকে ঠিকরে পড়ছে পুজো পুজো গন্ধ। পাশের ঘর থেকে ভেসে আসছে মিলির গান......" ক্যা করে সজনী আয়ে না বালম.... "। অপূর্ব এক সুর মূর্ছনা যেন আলতো পায়ে নেচে নেচে আবেশ ছড়াচ্ছে এই আগমনী সন্ধ্যায়। মিলির গান থামতেই শোনা গেলো আকাশের মাউথ অর্গ্যানের সুর..... "জিন্দেগী ক্যায়সি হ্যায় প্যাহেলী হায়/ক্যভি তো হাসায়ে ক্যভি এ রুলায়ে।" মিলির হাঁটাচলাটা বন্ধ হয়ে যাবার পর ওর গান বাজনার এই সময়টায় প্রায় দিনই আকাশ আসে। আকাশ মিলির ছোট্টবেলার বন্ধু।।এখনও ওরা একই স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। মূলত আকাশের সাহায্যেই মিলি এত অসুস্হ থাকা সত্ত্বেও পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারছিলো।
মিলির যখন সাড়ে তিন বছর বয়স
তখন রোগটি ধরা পড়ে মুম্বাইয়ের "টাটা
মেমোরিয়াল ক্যান্সার সেন্টার"এ ----- হোমো জাইগোসিস লিম্ফো হিস্টোসাইটোসিস (H.L.H)। এতে সাধারণভাবে প্লেটলেট কমে যায়, ঘন ঘন জ্বর আসে। প্লীহা বেড়ে যায়। রোগীকে বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়। মুম্বাইয়ের টাটা সেন্টার থেকে ডাক্তারি পরামর্শে সমর মিলিকে নিয়ে গিয়েছিলো বেঙ্গালুরুর
"নিমহ্যানস" এ। গত দশ বছর মিলি মোটামুটি ভালোই ছিলো। পড়াশুনার পাশাপাশি গানবাজনাও করছিলো পুরো দমে........ মিলি আর আকাশের গান আর মাউথ অর্গ্যানের যুগলবন্দী বেশ জমে উঠেছে। মিলির গান মাদকতা ছড়াচ্ছে.....
"আমায় নহে গো ভালোবাসো শুধু ভালো-
বাসো মোর গান/বনের পাখীরে কে চিনে
রাখে গান হলে অবসান।"........... হঠাৎ সুপ্রিয়া ডুকরে কেঁদে ওঠে।বুকের রক্ত ছলাৎ ছলাৎ করে ওঠে সমরের। সজল চোখে সুপ্রিয়ার পিঠে রাখে সান্ত্বনার হাত। মিলির দিন যে ফুরিয়ে আসছে সমর আর সুপ্রিয়া দুজনেই জানে। মেয়েকে ওরা বুঝতে দেয় না। মেয়েটাও হয়েছে তেমনি
চাপা স্বভাবের। মায়ের মন কালো দেখলেই বলবে, "আজ একটু চিকেন স্যুপ করো না, মা। ক্রিস্পি বাটার টোস্ট দিয়ে খুব খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।" সঙ্গেই সুপ্রিয়া ব্যাস্ত হয়ে যায় মেয়ের আবদার মেটাতে।
সমরের স্মৃতিপটে সেই দিনটি আজও উজ্জ্বল যেদিন মিলি এ পৃথিবীতে আসে। এই পৃথিবীতে শ্বাস নিচ্ছে তার নিজেরই রক্তীয়। এক অপূর্ব আনন্দ যেন ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো সমরকে। প্রথম প্রথম এক সপ্তাহ রাতে খুব কাঁদত মিলি। পালা করে রাত জাগতো সমর আর সুপ্রিয়া। তবে ঠিক সময়েই হাঁটাচলা, কথাবলা শিখে গিয়েছিলো মিলি। অসুস্হতা বা অস্বাভাবিকতার কোন লক্ষণই ছিলো না তার। আর ছোট থেকেই ছিল ওর অপূর্ব গানের গলা।তাই তিন বছর বয়স থেকেই সুপ্রিয়া ওকে গান শেখাতে নিয়ে যেত পাড়ার গানের গানের স্কুল "সুরমঞ্জরী"তে। মিলি যখন খুব ভালো গাইতে লাগল গুরুজী নিজে বাড়িতে এসে গান শেখাতে লাগলেন ওকে। অনেক রাত অবধি চলতো ওঁর তালিম। কোন কোনদিন উঁনি রাতেও এ বাড়িতে থেকে যেতেন। সেজন্য মিলি ক্লাসিক্যাল ও নজরুলগীতিতে অনেক ছোট বয়স থেকেই বেশ পারদর্শী। ওর গলার কাজে গুরুজীও খুব চমৎকৃত হন।গতবার "তারা মিউজিক"এ চিল্ড্রেন ডে স্পেশালের জন্য অডিশান দিয়ে চান্স পেয়েছিলো সে।খুব সুন্দর অনুষ্ঠান করে সবাইকে মাতিয়ে দিয়েছিলো। অসুখের
সাথে লড়াই করেও মিলি ওর সঙ্গীতচর্চা
বন্ধ করেনি। রেওয়াজ করতে বসলে গায়ের ওপর দিয়ে সাপ পেরিয়ে গেলেও মিলি যেন টের পাবে না। চোখ বুজে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা রেওয়াজ করতেই থাকে সে। হঠাৎ আকাশের ডাকে চিন্তাজাল ছিন্ন হয় সমরের।..... "কাকীমা, মিলি তোমাকে ডাকছে ".......দৌড়ে গেল সুপ্রিয়া আর সমর, " কি হয়েছে, মা? কি হল? শরীর
খারাপ লাগছে কি? " হাসি মুখে মিলি
বলে, "ভয় পেয়ো না, কিচ্ছু হয় নি আমার। আজ রাতে একটু ভুনি খিঁচুরি আর ডিমভাজা, আলুবাজা কর না, মা। আজ রাতে আকাশ এখানেই খেয়ে যাক।" তড়িঘড়ি রান্নাঘরে ছোটে সুপ্রিয়া, "এক্ষুনি করছি মা।"........
সেই দিনের পর ঠিক এক মাস বাদে আজ খুব ভোরে উঠেছে সমর। শেষরাতে একটু হালকা ঠান্ডার শিরশিরানির মধ্যে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। আজ মহা সপ্তমী। পাশের বাড়ির বিরাট শিউলির ডালটা ঝুঁকে পড়েছে মিলির জানালায়।মিষ্টি সুবাস নাকে লাগলো।
আজ কদিন হল মিলি খুব অসুস্হ, হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে তাকে। ঘরটা জুড়ে মিলির উপস্হিতি অনুভব করতে লাগলো সমর।।ওর তানপুরা,হামনিয়াম তবলা,বিভিন্ন প্রাইজ, বইপত্র, জামাকাপড়.......দু' দিন আগে মিলির বইপত্রের ভেতরেই সমর পেয়েছিলো সেই ডাইরিটা। পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে হঠাৎ এক জায়গায় চোখ আটকে যায় তার........... মিলি লিখেছে," বাবা ও মা, আমি বাঁচতে চাই, ভীষণ বাঁচতে চাই......আমি জানি,দেহের মৃত্যু ঘটবে আমার। আমার মৃত্যুর পর আমার চোখ সহ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করে দিও। তাহলে এই পৃথিবীর জল হাওয়ায় বেঁচে থাকবে তোমাদের মেয়ে।" গতকালই মিলির দেহ দানের আইনী কাগজপত্র রেডি করেছে সমর। নিজে লইয়ার হওয়ায় এ বিষয়ে কোন অসুবিধে হয় নি। আজই তা নিয়ে যাবে হসপিটালে। মিলির হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে যাবার পরেও হাল ছাড়ে নি সমর আর সুপ্রিয়া। ওর ভালোলাগার জায়গাগুলিতে গাড়িতে করে নিয়ে গিয়েছে মিলিকে।এমন কি "নিমহ্যানস"এ ওর বোনম্যারো প্রতিস্হাপনের কথাবার্তাও চালাচ্ছিলো। কিন্তু গত মাসের শেষ দিকে হঠাৎ শ্রবণ ক্ষমতা চলে যায় মিলির।তারপরই একদিন হঠাৎ লাগাতার শুরু হয় জ্বর। ধূম জ্বর। ধরা পড়ে ডেঙ্গু। কলকাতার নাম করা বেসরকারী হসপিটালে মিলিকে ভর্তি করা হয়েছে আজ নিয়ে পাঁচ দিন হয়ে গেল।
পাঁচ দিনের ধূম জ্বরের মধ্যেও
প্রাণপনে লড়ছিলো মিলির ছোট্ট প্রাণটা।কিন্তু আজ হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেষ্ট হয়ে ছটফট করতে করতে নিথর হয়ে যায় ওর সতের বছরের শরীরটা। বুক দোমড়ানো কষ্টে ভেঙ্গে পড়ল সমর। আই.সি.ইউ এর বাইরে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে পড়ল সুপ্রিয়া। তাকে ঘিরে রয়েছে আকাশ ও আত্মীয় স্বজনেরা। ঠিক সেই মুহূর্তে ডাক্তারদের কাছে মিলির দেহদানের ইচ্ছা প্রকাশ করে সমর। তুলে
দেয় ওদের হাতে আইনী কাগজপত্রও।কিছুক্ষণের মধ্যে কর্ণিয়া গ্রাফটিং-এর জন্য মিলির চোখটি সংগ্রহ করে নিয়ে যায় "রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অবথ্যালমোলজি"র ডাক্তাররা। অার তার বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে মিলির কর্ণিয়া প্রতিস্হাপিত হয়ে যায় তৃণা নামের বাঁকুড়ার পাঁচ বছরের একটি বাচ্চা মেয়ের চোখে। দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায় সে। মিলির শরীর থেকে এক বর্গফুট মতো ত্বক সংগ্রহ করে নিয়ে যায় "এস.এস.কে.এম" এর প্লাস্টিক সার্জারির চিকিৎসকরা। সবশেষে, মিলির দেহটি অ্যানাটমি বিভাগকে দান করে দেয় সমর ও সুপ্রিয়া। এভাবে নিজেদের হাতে মিলির নতুন জন্ম দেন তার বাবা মা। এই পৃথিবীর আকাশে বাতাসে দুর্দম বেঁচে ওঠে মিলি।
সব শেষ করে ফেরার পথে সমর
দেখছিল গাড়ির জালানার বাইরে শরতের
সোনাঝরা রোদ। নব পত্রিকার স্নান শেষে মন্ডপে মন্ডপে শুরু হয়ে গেছে সপ্তমী পুজো। ভেসে আসছে ড্যাম্ কুর্ কুর্ ঢাকের আওয়াজ। যে অসুখের সঙ্গে লড়তে লড়তে মিলির প্রায় বারো বছর চলে গেলো, ওর শরীর নিয়ে চিকিৎসা গবেষণায় যদি সেই রোগ সম্পর্কে আরও কিছু জানা যায়, তাহলে সেই রোগরূপী
অসুরকে নিধন করে তাদের মিলি সত্যিই একদিন হয়ে উঠবে অসুরনাশিনী মা দুর্গা।
সমরদের গাড়িটা ঢুকলো পাড়ার গলিতে।
পাড়ার পুজো প্যান্ডেলের পাশ দিয়ে যেতে
যেতে মা দুর্গার হাসি মুখের আস্তরণ ভেদ
করে সমর হঠাৎ যেন দেখতে পেলো মিলির কচি মুখের স্মিত হাসি। এক বুক কষ্টে চোখদুটো জলে ভরে উঠলো তার।মাইকে তখন ভেসে আসছিলো চন্ডীপাঠ.........
"ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্হিতা........."।
অন্ধকার ব্যালকনিতে চুপচাপ বসে আছে
সুপ্রিয়া। রাস্তার নিয়নের আলো এসে পড়েছে ওর মুখে। মুখের প্রতিটি ভাঁজে গভীর চিন্তাজাল জড়িয়ে। নিঃশব্দে সুপ্রিয়ার পাশে গিয়ে বসলো সমর।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামছে নিঃশব্দে।বাড়ির সামনের একফালি বাগান থেকে বকুল
আর গন্ধরাজ একযোগে গন্ধ ছড়াচ্ছে।আশ্বিনের মাঝামাঝির মরমী কিশোরী সন্ধ্যে একটু একটু করে নারী হয়ে উঠছে। তারা ভরা আকাশটা থেকে ঠিকরে পড়ছে পুজো পুজো গন্ধ। পাশের ঘর থেকে ভেসে আসছে মিলির গান......" ক্যা করে সজনী আয়ে না বালম.... "। অপূর্ব এক সুর মূর্ছনা যেন আলতো পায়ে নেচে নেচে আবেশ ছড়াচ্ছে এই আগমনী সন্ধ্যায়। মিলির গান থামতেই শোনা গেলো আকাশের মাউথ অর্গ্যানের সুর..... "জিন্দেগী ক্যায়সি হ্যায় প্যাহেলী হায়/ক্যভি তো হাসায়ে ক্যভি এ রুলায়ে।" মিলির হাঁটাচলাটা বন্ধ হয়ে যাবার পর ওর গান বাজনার এই সময়টায় প্রায় দিনই আকাশ আসে। আকাশ মিলির ছোট্টবেলার বন্ধু।।এখনও ওরা একই স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। মূলত আকাশের সাহায্যেই মিলি এত অসুস্হ থাকা সত্ত্বেও পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারছিলো।
মিলির যখন সাড়ে তিন বছর বয়স
তখন রোগটি ধরা পড়ে মুম্বাইয়ের "টাটা
মেমোরিয়াল ক্যান্সার সেন্টার"এ ----- হোমো জাইগোসিস লিম্ফো হিস্টোসাইটোসিস (H.L.H)। এতে সাধারণভাবে প্লেটলেট কমে যায়, ঘন ঘন জ্বর আসে। প্লীহা বেড়ে যায়। রোগীকে বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়। মুম্বাইয়ের টাটা সেন্টার থেকে ডাক্তারি পরামর্শে সমর মিলিকে নিয়ে গিয়েছিলো বেঙ্গালুরুর
"নিমহ্যানস" এ। গত দশ বছর মিলি মোটামুটি ভালোই ছিলো। পড়াশুনার পাশাপাশি গানবাজনাও করছিলো পুরো দমে........ মিলি আর আকাশের গান আর মাউথ অর্গ্যানের যুগলবন্দী বেশ জমে উঠেছে। মিলির গান মাদকতা ছড়াচ্ছে.....
"আমায় নহে গো ভালোবাসো শুধু ভালো-
বাসো মোর গান/বনের পাখীরে কে চিনে
রাখে গান হলে অবসান।"........... হঠাৎ সুপ্রিয়া ডুকরে কেঁদে ওঠে।বুকের রক্ত ছলাৎ ছলাৎ করে ওঠে সমরের। সজল চোখে সুপ্রিয়ার পিঠে রাখে সান্ত্বনার হাত। মিলির দিন যে ফুরিয়ে আসছে সমর আর সুপ্রিয়া দুজনেই জানে। মেয়েকে ওরা বুঝতে দেয় না। মেয়েটাও হয়েছে তেমনি
চাপা স্বভাবের। মায়ের মন কালো দেখলেই বলবে, "আজ একটু চিকেন স্যুপ করো না, মা। ক্রিস্পি বাটার টোস্ট দিয়ে খুব খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।" সঙ্গেই সুপ্রিয়া ব্যাস্ত হয়ে যায় মেয়ের আবদার মেটাতে।
সমরের স্মৃতিপটে সেই দিনটি আজও উজ্জ্বল যেদিন মিলি এ পৃথিবীতে আসে। এই পৃথিবীতে শ্বাস নিচ্ছে তার নিজেরই রক্তীয়। এক অপূর্ব আনন্দ যেন ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো সমরকে। প্রথম প্রথম এক সপ্তাহ রাতে খুব কাঁদত মিলি। পালা করে রাত জাগতো সমর আর সুপ্রিয়া। তবে ঠিক সময়েই হাঁটাচলা, কথাবলা শিখে গিয়েছিলো মিলি। অসুস্হতা বা অস্বাভাবিকতার কোন লক্ষণই ছিলো না তার। আর ছোট থেকেই ছিল ওর অপূর্ব গানের গলা।তাই তিন বছর বয়স থেকেই সুপ্রিয়া ওকে গান শেখাতে নিয়ে যেত পাড়ার গানের গানের স্কুল "সুরমঞ্জরী"তে। মিলি যখন খুব ভালো গাইতে লাগল গুরুজী নিজে বাড়িতে এসে গান শেখাতে লাগলেন ওকে। অনেক রাত অবধি চলতো ওঁর তালিম। কোন কোনদিন উঁনি রাতেও এ বাড়িতে থেকে যেতেন। সেজন্য মিলি ক্লাসিক্যাল ও নজরুলগীতিতে অনেক ছোট বয়স থেকেই বেশ পারদর্শী। ওর গলার কাজে গুরুজীও খুব চমৎকৃত হন।গতবার "তারা মিউজিক"এ চিল্ড্রেন ডে স্পেশালের জন্য অডিশান দিয়ে চান্স পেয়েছিলো সে।খুব সুন্দর অনুষ্ঠান করে সবাইকে মাতিয়ে দিয়েছিলো। অসুখের
সাথে লড়াই করেও মিলি ওর সঙ্গীতচর্চা
বন্ধ করেনি। রেওয়াজ করতে বসলে গায়ের ওপর দিয়ে সাপ পেরিয়ে গেলেও মিলি যেন টের পাবে না। চোখ বুজে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা রেওয়াজ করতেই থাকে সে। হঠাৎ আকাশের ডাকে চিন্তাজাল ছিন্ন হয় সমরের।..... "কাকীমা, মিলি তোমাকে ডাকছে ".......দৌড়ে গেল সুপ্রিয়া আর সমর, " কি হয়েছে, মা? কি হল? শরীর
খারাপ লাগছে কি? " হাসি মুখে মিলি
বলে, "ভয় পেয়ো না, কিচ্ছু হয় নি আমার। আজ রাতে একটু ভুনি খিঁচুরি আর ডিমভাজা, আলুবাজা কর না, মা। আজ রাতে আকাশ এখানেই খেয়ে যাক।" তড়িঘড়ি রান্নাঘরে ছোটে সুপ্রিয়া, "এক্ষুনি করছি মা।"........
সেই দিনের পর ঠিক এক মাস বাদে আজ খুব ভোরে উঠেছে সমর। শেষরাতে একটু হালকা ঠান্ডার শিরশিরানির মধ্যে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। আজ মহা সপ্তমী। পাশের বাড়ির বিরাট শিউলির ডালটা ঝুঁকে পড়েছে মিলির জানালায়।মিষ্টি সুবাস নাকে লাগলো।
আজ কদিন হল মিলি খুব অসুস্হ, হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে তাকে। ঘরটা জুড়ে মিলির উপস্হিতি অনুভব করতে লাগলো সমর।।ওর তানপুরা,হামনিয়াম তবলা,বিভিন্ন প্রাইজ, বইপত্র, জামাকাপড়.......দু' দিন আগে মিলির বইপত্রের ভেতরেই সমর পেয়েছিলো সেই ডাইরিটা। পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে হঠাৎ এক জায়গায় চোখ আটকে যায় তার........... মিলি লিখেছে," বাবা ও মা, আমি বাঁচতে চাই, ভীষণ বাঁচতে চাই......আমি জানি,দেহের মৃত্যু ঘটবে আমার। আমার মৃত্যুর পর আমার চোখ সহ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করে দিও। তাহলে এই পৃথিবীর জল হাওয়ায় বেঁচে থাকবে তোমাদের মেয়ে।" গতকালই মিলির দেহ দানের আইনী কাগজপত্র রেডি করেছে সমর। নিজে লইয়ার হওয়ায় এ বিষয়ে কোন অসুবিধে হয় নি। আজই তা নিয়ে যাবে হসপিটালে। মিলির হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে যাবার পরেও হাল ছাড়ে নি সমর আর সুপ্রিয়া। ওর ভালোলাগার জায়গাগুলিতে গাড়িতে করে নিয়ে গিয়েছে মিলিকে।এমন কি "নিমহ্যানস"এ ওর বোনম্যারো প্রতিস্হাপনের কথাবার্তাও চালাচ্ছিলো। কিন্তু গত মাসের শেষ দিকে হঠাৎ শ্রবণ ক্ষমতা চলে যায় মিলির।তারপরই একদিন হঠাৎ লাগাতার শুরু হয় জ্বর। ধূম জ্বর। ধরা পড়ে ডেঙ্গু। কলকাতার নাম করা বেসরকারী হসপিটালে মিলিকে ভর্তি করা হয়েছে আজ নিয়ে পাঁচ দিন হয়ে গেল।
পাঁচ দিনের ধূম জ্বরের মধ্যেও
প্রাণপনে লড়ছিলো মিলির ছোট্ট প্রাণটা।কিন্তু আজ হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেষ্ট হয়ে ছটফট করতে করতে নিথর হয়ে যায় ওর সতের বছরের শরীরটা। বুক দোমড়ানো কষ্টে ভেঙ্গে পড়ল সমর। আই.সি.ইউ এর বাইরে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে পড়ল সুপ্রিয়া। তাকে ঘিরে রয়েছে আকাশ ও আত্মীয় স্বজনেরা। ঠিক সেই মুহূর্তে ডাক্তারদের কাছে মিলির দেহদানের ইচ্ছা প্রকাশ করে সমর। তুলে
দেয় ওদের হাতে আইনী কাগজপত্রও।কিছুক্ষণের মধ্যে কর্ণিয়া গ্রাফটিং-এর জন্য মিলির চোখটি সংগ্রহ করে নিয়ে যায় "রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অবথ্যালমোলজি"র ডাক্তাররা। অার তার বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে মিলির কর্ণিয়া প্রতিস্হাপিত হয়ে যায় তৃণা নামের বাঁকুড়ার পাঁচ বছরের একটি বাচ্চা মেয়ের চোখে। দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায় সে। মিলির শরীর থেকে এক বর্গফুট মতো ত্বক সংগ্রহ করে নিয়ে যায় "এস.এস.কে.এম" এর প্লাস্টিক সার্জারির চিকিৎসকরা। সবশেষে, মিলির দেহটি অ্যানাটমি বিভাগকে দান করে দেয় সমর ও সুপ্রিয়া। এভাবে নিজেদের হাতে মিলির নতুন জন্ম দেন তার বাবা মা। এই পৃথিবীর আকাশে বাতাসে দুর্দম বেঁচে ওঠে মিলি।
সব শেষ করে ফেরার পথে সমর
দেখছিল গাড়ির জালানার বাইরে শরতের
সোনাঝরা রোদ। নব পত্রিকার স্নান শেষে মন্ডপে মন্ডপে শুরু হয়ে গেছে সপ্তমী পুজো। ভেসে আসছে ড্যাম্ কুর্ কুর্ ঢাকের আওয়াজ। যে অসুখের সঙ্গে লড়তে লড়তে মিলির প্রায় বারো বছর চলে গেলো, ওর শরীর নিয়ে চিকিৎসা গবেষণায় যদি সেই রোগ সম্পর্কে আরও কিছু জানা যায়, তাহলে সেই রোগরূপী
অসুরকে নিধন করে তাদের মিলি সত্যিই একদিন হয়ে উঠবে অসুরনাশিনী মা দুর্গা।
সমরদের গাড়িটা ঢুকলো পাড়ার গলিতে।
পাড়ার পুজো প্যান্ডেলের পাশ দিয়ে যেতে
যেতে মা দুর্গার হাসি মুখের আস্তরণ ভেদ
করে সমর হঠাৎ যেন দেখতে পেলো মিলির কচি মুখের স্মিত হাসি। এক বুক কষ্টে চোখদুটো জলে ভরে উঠলো তার।মাইকে তখন ভেসে আসছিলো চন্ডীপাঠ.........
"ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্হিতা........."।
অমাবস্যা
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
আমার ঘর থেকে তুমি নিঃস্বাস পাবে
এমন প্রতিশ্রুতি দিইনি কখনো...
তবু চাইনি কখনো
তোমার পৃথিবী নির্বোধ সাব্যস্ত হোক!
প্রসূতির কোলঘেঁষে যতটা ধর্মের আনন্দ পাওয়া যায় -
আমি তোমায় চেনাবো সেই সরল সত্যতা...
আমি চাই না কখনো নির্লোভ স্থাপত্যে বন্ধকী লাভ,
সেদিনের মতই খুলে রেখো তোমার স্নায়ুপথ!
আমি সব নিঃসঙ্গতা ভুলে লিখে দেবো উড়ালের শ্লোগান
কারণ উড়ন্ত দৃষ্টিরা পৃথিবীর নয়
শুধু উড়ে চলে তার প্রেমবৎসল ফুসফুসের বলে!
সেদিনের মতই তুমি ছুঁয়ে দেখো স্বর্গের মাটি,
যে বন্ধকী রোদ্দুরে রোজ দ্যাখা যায় তোমার শরীরের ছায়া...
তুমি তাতে যতবারই দড়ি আঁকো
আমি তো কথা দিই নি কখনো তোমায় রাখবার...
আমি তো কোনো রাত্রিবাসেই দেখি নি তোমার নিবন্ধিত ছায়া,
কোনো মন্ত্রবলে তবু চাঁদের আলো কে লুকিয়ে রেখেছি -
অমাবস্যার কাছে একটু একটু করে দায়স্বীকার করবো বলে।
আড়াল
আড়াল
মুনমুন ভৌমিক
সবুজ অরণ্যে তোমার ছবি আঁকি নারী
ডুয়ার্স তুমি স্বপ্ন সুন্দরী।
তোমার পাহাড় আবির আঁচলে এক ঝাক কান্না মাখে
তোমার বন সবুজ চাদরে মৃত্যু
তোমার নদীর বুক জুড়ে নোন জল
তোমার বাগান এখন শরীর
কাজল কালী চোখে ডুব দে কুমারী ছাঁচ
সবুজ পাতালে আকাশে রাতপাখি
তুমি নারী হয়ে যায়- সিঁথিতে আঁকো উল্কি
চন্দন, কুমকুম, ধুপ ধোওয়া পরনে আগুন শাড়ী
ডানায় ঘুঙুর পাজরে স্নায়ুতে তত্ত্ব কথার ছাই
মৃত্যু কথা বলো আহুতি দাও দুয়ার খোলো--- উর্বশী।
এক নিষিক্ত প্রেম
নাসির ওয়াদেন
নিষিক্ত বাতাস প্রেম হয়ে উড়ে যায়
অবিরাম আগুনে পুড়ছে ভালবাসা
আমি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখিনি ---
কোন এক অনচ্ছ আলোক এসে
আমাকেও নিষিদ্ধ ফল খাওয়াবে
ভাবিনি ---
হাতিকলগুলো জল খেয়ে জল খেয়ে
রাস্তার অশ্রুজলে সাঁতার কাটে--
তৃষ্ণা নিবারণের সময় এক প্রেরয়িত্রী
যাঁতাকল পেতে রাখে রৌদ্রের বিছানায়•••
এক অন্যমনস্ক প্রেম সম্পৃক্ত নুন আর জলে
নিষ্প্রতিভ প্রদাহ কুঁড়ে কুঁড়ে খায় জীবন
কোন স্বচ্ছ আঁধার আমাকে বাঁচার গান শোনাবে?
মৃত্যুদন্ড + ভালবাসা = ঐকান্তিক বাঁচা
জীবন -- ভরসা × অবিশ্বাস < জড় চেতনা
মুক্তি ঝুলন্ত মাকাল ••••
কেউ ভাল বাসবে --
নাসির ওয়াদেন
নিষিক্ত বাতাস প্রেম হয়ে উড়ে যায়
অবিরাম আগুনে পুড়ছে ভালবাসা
আমি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখিনি ---
কোন এক অনচ্ছ আলোক এসে
আমাকেও নিষিদ্ধ ফল খাওয়াবে
ভাবিনি ---
হাতিকলগুলো জল খেয়ে জল খেয়ে
রাস্তার অশ্রুজলে সাঁতার কাটে--
তৃষ্ণা নিবারণের সময় এক প্রেরয়িত্রী
যাঁতাকল পেতে রাখে রৌদ্রের বিছানায়•••
এক অন্যমনস্ক প্রেম সম্পৃক্ত নুন আর জলে
নিষ্প্রতিভ প্রদাহ কুঁড়ে কুঁড়ে খায় জীবন
কোন স্বচ্ছ আঁধার আমাকে বাঁচার গান শোনাবে?
মৃত্যুদন্ড + ভালবাসা = ঐকান্তিক বাঁচা
জীবন -- ভরসা × অবিশ্বাস < জড় চেতনা
মুক্তি ঝুলন্ত মাকাল ••••
কেউ ভাল বাসবে --
ঘরহারা
শিপ্রা পাল
ঘর হারায় ভাঙে ঘুম
জলে জলে ক্ষেত নদী-নালা
ভেসে ওঠে গবাদির গোয়াল
ফোলাফাঁপা শবের পালা।
গাছে গাছে নিঃস্বতার আঘাত
মাছেরা পোনা ছাড়ে
পোকা-মাকড় কিলবিলয়ে চলে
খেয়া পারাপার বাড়ে।
নিভে যায় মাচার উনুন
ইলশেগুড়ি শ্রাবণী বাতাস
চেয়ে থাকে অপেক্ষার প্রহর
বৃষ্টি থামে আবার বৃষ্টির আকাশ।
ডুবে বসতি মাটিতে ভাঙ্গন
মিলেমিশে সব একাকার
চিল শকুন ডানা ঝাপটায়
আগুন জ্বালা পেটে শুধু হাহাকার।
জলের দাগ
বৈশাখী ঘোষ
বাসনার কাপড়েই আড়াল রাখি
যা কিছু বাবুই গোপনতা ...
দিগন্তে জল থইথই মেঘ
চরাচরে খুঁজে নেয় বালিয়াড়ি দেশ ,
মুহূর্তরা চূড়ান্ত নয় ,তবুও আপেক্ষিক সীমান্ত
পেরোলেই
জলের দাগ ...
মানসাই
বিপ্লব সরকার
১.
আমাদের মানসাই
সুর ধরে আপন ছন্দে
আমাদের মানসাই
সুর ধরে আপন ছন্দে
কত পথিক মূর্তি হয়ে
কিংবা যে পাখিটি তারই পাশে ব্যস্ত খুঁটে...
দাঁড়িয়ে পড়ে
চোখ বুজে মনে মনে শব্দ তোলে 'আহ্..!'
কিংবা যে পাখিটি তারই পাশে ব্যস্ত খুঁটে...
চোখ বুজে মনে মনে শব্দ তোলে 'আহ্..!'
আমার পাথর ভাঙ্গা চিৎকার
ওকে দেখে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়
ওকে দেখে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়
২.
আমাদের মানসাই
আমাদের মানসাই
দেখতে দেখতে কেমন বুড়িয়ে গেল
ঢাল বেয়ে নেমে গেল
ভূগোলের শত সিলেবাস...
ঢাল বেয়ে নেমে গেল
ভূগোলের শত সিলেবাস...
ওর ভেজা চুলে দেখি,
এখনও ঝিলিক তোলে--
এখনও ঝিলিক তোলে--
কত বদলে যাওয়া মানচিত্রের
দা...গ !
Uday Saha
Bathed;Rukmini wore 'sindoor'
Even today--
It's been ten years since marriage
She is left with his white shirt
The brown crisp petals
A diary with warmth written...
When together he used to shower
Words of praise on her afterbath beauty--
Wet and tangled hair
Sound of her bangles
Water droplets
Ringing of her anklet
Bathed;Rukmini wore 'sindoor'
Her beau adorns the upperwall of the dressing table
Even today...
আমার সময়
জয়ন্ত সরকার
ডাইরীর ভাজে শুকনো গোলাপের মত আমার ব্যস্ত চশমা পড়া
জীবনের কোথায় যেন লুকিয়ে থাকে এক টুকরো পূর্ব বাংলা।
খেজুর রসের শীতের সকালে শিশিরের শব্দে জেগে উঠা,
কিংবা বাঁশের সাঁকোর রেলিং ধরে জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়া
আমার ছেলেবেলা উকি মারে পূর্ব বাংলার বুকে।
দুনিয়া নিংড়ে দেখা কালো ডানা দুটিতে ভর করে উড়ে বেড়ানো--
'সানসিল্ক' শ্যাম্পুর প্যাকেট থেকে ছিঁড়ে আনা আমার কৈশোর
সেই থেকে 'অদ্ভুত বিভাজনের কেন্দ্রস্থল'-- তারাদের দিকে চেয়ে--
ঘরবাড়ি আর হলনা আমার, কেবলই বাসাবদল
মন থেকে খসে গেল কত মানুষের হাত, নিভে গেল কত বিশ্বাস,
বিপ্লব আর লটারীর মাঝে দাঁড়িয়ে আমার হাবাগোবা বিকেল।
ভুলভ্রান্তিতে ভরা ভাঙাচোরা অস্থির একঘেয়ে একটা প্রিথিবী
রেখে যাচ্ছি আমাদের জন্য, পিছিয়ে পড়া স্বভাবের পুরনো
এই ঘড়িটা হয়তো পালটে নেবার চেষ্টা করবে আমার ছেলে,
হয়তো বদলে নেবে ক্ষয়ে যাওয়া এই নেমপ্লেটটাও।
টুকরো টুকরো কিছু স্মৃতি আর সংস্কার সেই ফুলদানিটির জন্য
সবাই যেখানে রেখে যায় ভবিষ্যতের রজনীগন্ধা।
খাঁচা বানাতে শিখিনি আমি, তাই আমার খাঁচার কাটাতারের
আগাছার ভেতর যেখানে লুকিয়ে ছিল একটা উদ্ভট জগত
সেখান থেকে উড়ে যাবে গ্রাম্য পাখিটি, হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে--
নতুন বাসার খোঁজে, হয়তো কোনো অজানা গ্রামের দিকে,
আর পড়ে থাকা সেই শূন্য খাঁচায়, যেখানে ছিল সেই উদ্ভট জগতটা
সেখানে কখন নি:শব্দে বড় হয়ে উঠবে একটা গোলাপ গাছ।
তার প্রথম ফুলটি তুমি সময় করে একবার দেখে যেও।।
কাব্যশ্রমিক
আবেদীন জনী
আবেদীন জনী
দিনরাত ঠুক ঠুক করে সেকেলে নিয়ম ভাঙে কাব্যশ্রমিক
ভেঙে ভেঙে বিনির্মাণ করে মানবিক বোধ, প্রগতির সাঁকো
ছন্দ ভেঙে ভেঙে রোজ নতুন ছন্দমাধুর্যে তুলে আনে সভ্যতার কণ্ঠস্বর
তুলে আনে পরিশুদ্ধ আলো, পৃথিবীর পুনর্জীবন
ভেঙে ভেঙে বিনির্মাণ করে মানবিক বোধ, প্রগতির সাঁকো
ছন্দ ভেঙে ভেঙে রোজ নতুন ছন্দমাধুর্যে তুলে আনে সভ্যতার কণ্ঠস্বর
তুলে আনে পরিশুদ্ধ আলো, পৃথিবীর পুনর্জীবন
কাব্যশ্রমিক- যাঁর হাত আগুনের ছ্যাঁক খেতে খেতে হাতুড়ির মতো সুকঠিন ইস্পাত
যাঁর আঙুলের টোকা লেগে ভেঙে যায় আলোর সড়ক রুদ্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকা ইটের দেয়াল
যাঁর আঙুলের টোকা লেগে ভেঙে যায় আলোর সড়ক রুদ্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকা ইটের দেয়াল
কেউ বোঝে না কখনো তাঁর নিঃসঙ্গতা, নিঃশব্দ রক্তক্ষরণ
বড়বেশি বীভৎস মনে করে তাঁর ঝলসানো দেহের তামাটে রঙ
বড়বেশি বীভৎস মনে করে তাঁর ঝলসানো দেহের তামাটে রঙ
ফেলে ফেলে গতরের ঘাম অবিরাম ভেঙে চলে দুর্ভেদ্য আঁধার
পুরাণ ও প্রকৃতির পাতা ঘেঁটেঘুঁটে অজস্র শব্দ কুড়ায়, শস্যবীজের মতো শুকায় হৃদয়জ রোদে
তারপর স্বতঃসিদ্ধ শব্দগুলোর যথার্থ বিন্যাসে গড়ে তোলে কাব্যের শরীর
দু'পয়সা শ্রমের মজুরি পেল কি পেল না-এইসব ভাববার সময় তো নেই
কাব্যশ্রমিক ভালোবাসে বদলে দেবার খেলা
পুরাণ ও প্রকৃতির পাতা ঘেঁটেঘুঁটে অজস্র শব্দ কুড়ায়, শস্যবীজের মতো শুকায় হৃদয়জ রোদে
তারপর স্বতঃসিদ্ধ শব্দগুলোর যথার্থ বিন্যাসে গড়ে তোলে কাব্যের শরীর
দু'পয়সা শ্রমের মজুরি পেল কি পেল না-এইসব ভাববার সময় তো নেই
কাব্যশ্রমিক ভালোবাসে বদলে দেবার খেলা
ফুরিয়ে ফুরিয়ে হৃদয়ের সমস্ত নির্যাস
পুড়িয়ে পুড়িয়ে জীবনপলিতা
পৃথিবীর পথে পথে জ্বেলে যায় আলো, গেয়ে যায় জীবনের গান।
পুড়িয়ে পুড়িয়ে জীবনপলিতা
পৃথিবীর পথে পথে জ্বেলে যায় আলো, গেয়ে যায় জীবনের গান।
গল্প
বই ও বৌ
মৃণালিনী ঘোষ
রাস্তায় দিয়ে যাবার সময় প্রায়ই ম্যানিকুইনে পড়িয়ে রাখা শাড়িগুলো বিদ্যুতের ঝলকানির মতোই চোখ থেকে মাথা ও শরীরের সব জায়গায় স্পর্শ করে হিপ্টোনিজমের মতই সমস্ত বোধ শক্তিকে অসাড় করে অর্জুনের চোখের মতোই লক্ষ্য স্হির করে তোলে অঙ্কিতার। এর আগে অনেকবার তার হ্যালুসিয়েশনে রূপোলি পর্দা চোখের সামনে ভেসে ওঠে, মাঝে মধ্যে তো পর্দার চোখ ধাঁধানো আলো কিছুক্ষণের জন্যে তাকে পর্দার ভেসে ওঠা অসংখ্য মানুষের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে অতীতের চাঞ্চল্য বিস্মিত সৌন্দর্যের দিকে হাতছানি দিয়ে যায় আর প্রবল নেশাগ্রস্থর বশীভূত অঙ্কিতার সব সময়ই টাকা জমানো অর্থে যা বোঝায় ঠিক তার সূত্রপাত হবার আগেই গিয়ে জমা পড়ে শাড়ির দোকানের ক্যাসবাক্সের ছোট্ট ড্রয়ারে আর অঙ্কিতার আলমারীতে বোঝাই হয় অদ্ভুত সব নামযুক্ত নানা রঙের শাড়ি। একসময় খুব উৎসাহের সঙ্গে শাড়িগুলো পড়ে বাইরে বের হত, এক কথায় সুন্দরী ও উচ্চতাও বেশ তাই খুব সহজেই নজর কেড়ে নিত পুরুষের, মহিলাদের যে গাত্রদহন হতো তা বলাই বাহুল্য। অনেক কষ্ট করেও এমন কি অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে তাদের চেহারার মধ্যে তাপের প্রতিফলন লক্ষ করা না গেলেও কথার আঁচে বেরিয়ে আসত খন্ড খন্ড অসমাপ্ত বাক্য, যা খুব সহজেই পোষাকী ভদ্রতার মুখোশ খুলে দিত।
জীবন কখনই একই সরলরেখা চলে না- অঙ্কের মতোই মাঝে মাঝে সিঁড়ি ভেঙে নীচে কখনও ওপরের দিকে উঠে যেতে হয় যদিও অঙ্কের সমাধান সূত্র পাওয়া যায় কিন্তু জীবন নামক অঙ্কের সমাধান প্রায়ই জটিল এবং প্রায়ই অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিজ্ঞান ছেড়ে দর্শনের দারস্থ হওয়া ছাড়া আর অন্য কোন উপায় থাকে না। কিন্তু সবাই তো দর্শনের পেছনে ছুটতে আগ্রহী নয় তাই অঙ্কিতার মনের পরিববর্তন এবং কাজকর্ম আলোচনার মুখ্য বিষয় বস্তু হয়ে উঠলে অফিসের এক কলিগ অতি উৎসাহী সমিতা প্রেপসোডেন্ট কনফিডেন্সের সঙ্গে জিজ্ঞেস করল কী ব্যাপার আজকাল এতো বই পড়ো?
পাশেই তার 'ইন রিলেশন সিপ' বুড়ো শেয়াল নিজেরও কৌতূহল মেটাবার রাস্তা পেয়ে জিজ্ঞেস করল- কী লিখছ?
বই থেকে মুখ তুলে অবাক বিস্ময় মাখা সুরে উত্তর দিল- আমি? এই তো একটি গল্পের বই পড়ছিলাম আর শিয়ালের দিকে তাকিয়ে বলল, না আমি কয়েকটা বইয়ের লিস্ট করছি।
কয়েকদিন পর একটি পত্রিকায় অঙ্কিতার লেখা পড়ে সমালোচনার সুর কখনও মধ্যম কখনও পঞ্চম সুরে অফিসের আনাচে-কানাচে অনুরণিত হতে লাগল। ফোনাফোনিতে যে রোজই অঙ্কিতার গুষ্টুির তুলোধুনা হতে লাগল তাতে অবাক হবার কিছুই নতুন কিছুই নেই কারণ মোবাইল রেট অনেক কমে গিয়েছে এবং কিছু কিছু কোম্পানি তো ফ্রী-তেই ভালো পরিষেবা দিচ্ছে।
পকেটের পয়সা খরচ করে বক্তিতা দেবার মতো লোক নবরূপ নয় তা সর্বজনস্বীকৃত। ফ্রী-তে অন্যের বৌ-দের বিশেষ করে দুজন, একজনকে বগলে রেখে আর একজনকে সামনে রেখে সার্বিক কল্যাণে ব্যস্ত থাকার সার্থক অভিনয়ে প্রায় হাফ নেতা হয়ে উঠল।
এসব মহোৎসবের দিনগুলোতে উদাসীন অঙ্কিতা শাড়ির মতোই বইয়ের প্রতি নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ল এবং নেশা লেখাতে গিয়ে পৌঁছলে বিষয়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন বইয়ের প্রয়োজন হতে লাগল। সমিতার কাছে একটি বই চাইলে সে বলল- হ্যাঁ আছে খুঁজে দেখতে হবে।
দুদিন পরে আবার অঙ্কিতা জিজ্ঞেস করল তুমি খুঁজে পেলে?
না আমি সময় পায়নি বলে সমিতা অন্য আর একজনের নাম উল্লেখ করে নিজে পরিত্রান পেল। উপায় না পেয়ে ছুটে গেল সেই মহিলার কাছে, তিনি বললেন বইটি একজন নিয়ে গিয়েছে কিন্তু ফেরত দিয়ে যায়নি। অঙ্কিতা হতাশ হয়ে বর্ধমান শহরের সমস্ত বইয়ের দোকান খুঁজেও একটিও বই পেল না।
পরের দিন অফিসের টিফিনের সময় দেখা গেল বর্তমান মহিলাটিকে একটু এড়িয়ে পুরোনো প্রেমিকা সমিতার মরচে ধরা সমস্যার সমাধানে চেষ্টায় অভিরূপের সেই হারানো গদগদ দরদ ও সস্তা প্রেম ওথলে উঠে টেবিলের ওপর- নীচ সবদিক দিয়ে গড়িয়ে সবার কানে স্রোতের মৃদু মৃদু ধ্বনি শুনিয়ে দিয়ে গেল আর সেই সঙ্গে বই না দেবার রহস্য অঙ্কিতার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। পুরনো বইয়ের দাম কম হলেও তার মূল্য এবং চাহিদা যেমন কম হয় না তেমনি 'পুরনো মদের নেশা বেশি' শুধু এই লোক প্রবাদটির সঙ্গে তার কানে ভেসে এল অভিরূপের বলা সেই কথাটি যা একদিন সে সমিতাকে বলেছিল-- "বৌ আর বই একবার অন্যের ঘরে গেলে আর কোনদিন ফিরে আসে না।"
কথাটা সেদিন ইয়ারকীর সুরে বলা হলেও সমিতার ক্ষেত্রে কতটা যুক্তিযুক্ত তার প্রমান পেয়ে অভিরূপের বর্তমান বিবাহিতা প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে নিজেই যেন মনে মনে প্রশ্ন করল- তুমি কত পুরনো বই?
সমর্পিতা
দেবপ্রিয়া সরকার
সারাদিন ডাক্তারের চেম্বার, হোলসেলার, রিটেইলারের শপ ঘুরে মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ আর্য যখন বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালো তখন লাস্টবাস দাঁড়িয়ে আছে। আর্য পেছনের দিকে জানালার পাশে একটা সিটে আরাম করে বসতেই একটি অল্পবয়সী মেয়ে হাফাতে হাফাতে এসে জিজ্ঞেস করল, "এই সিটটা কি ফাঁকা? বসতে পারি?" আর্যর সম্মতিসূচক মাথা নাড়ানো দেখে মেয়েটি বসে পড়লো। মেয়েটির সাজপোশাক কেমন অদ্ভুত লাগলো আর্যর। জামাকাপড় সাদামাটা কিন্তু মুখে উগ্র মেকআপ, লিপস্টিক, কাজল! বাস চলতে লাগলো।
বাসস্ট্যান্ডে নেমে অভ্যাসবশে আর্য একটা সিগারেট ধরিয়ে রাস্তায় পা দিতেই দেখে মেয়েটি মুখ ধুচ্ছে । তাকে দেখে হাসিমুখে রুমালে মুখ মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, "আপনি কোন দিকে যাবেন? " আর্য বললো, "পোস্টঅফিসের দিকে। " মেয়েটি বললো, "আমি ডাকবাংলোর দিকে যাব। একই রাস্তায়। যদি আপনার আপত্তি না থাকে তবে আপনার সাথে যেতে চাই। অনেকটা রাত হয়ে গেছে। " আর্য সম্মতি জানালে তারা হাঁটতে লাগলো।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর মেয়েটি বললো, "আমাকে দেখে অবাক হয়েছেন না? আমি একটা বারে সন্ধ্যার শিফটে গান গাই। আমার বাবা জুটমিলের কর্মী ছিলেন। কারখানা লকাউট হওয়ার পর বাবা পাগলের মত কাজ খুঁজতেন। সব সঞ্চয় ফুরালো। আত্মীয়রাও মুখ ফিরিয়ে নিল। একদিন বাবার ঠাঁই হল হাসপাতালের মানসিক বিভাগে। এইসব চিন্তায় মায়ের ধরলো হার্টের অসুখ। আমি তখন কলেজে পড়ি। পড়া ছেড়ে চাকরি খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু একজন গরীব, অল্পবয়েসী, স্বল্পশিক্ষিতা মেয়ের সম্মানজনক চাকরি পাওয়া কত কঠিন জানেন তো? এক পরিচিত কাকুর সূত্রে এই চাকরিটা পেলাম। ছোটবেলায় গান শিখতাম তাই। মাকে বলেছি কলসেন্টারে কাজ করি। এই অদ্ভুত সাজ দেখলে প্রশ্ন করবে তাই মুখের চুনকালি গুলো ধুচ্ছিলাম। "
আর্য বিহ্বলের মত হাঁটছিল। সে মনে করতো তার জীবনের লড়াইটাই সবথেকে কঠিন কিন্তু এই মেয়েটির কথাগুলো শুনে তার মন কষ্টে ভরে গেল। মেয়েটি দাঁড়িয়ে বললো, "আমার বাড়ির গলি এসেগিয়েছে , চলি "। আর্য একটা ভিজিটিং কার্ড এগিয়ে বললো, "আমি আর্য চৌধুরী। দরকার হলে ফোন করবেন, পাশে থাকব।" কার্ডটি নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়েটি গলির দিকে পা বাড়ালো। আর্য বললো, " কিন্তু আপনার নামটা ......"। মেয়েটি পেছন ফিরে উত্তর দিল, "আমি সমর্পিতা। " তারপর অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।
খুকুর শরৎ
সুস্মিতা পাল কুন্ডু
ছোট্ট মেয়ে ফুল তুলছে
শিউলি তলায় গিয়ে ,
ঝুপ ঝুপ ফুল পড়ছে দেখো
গাছের ডাল নুয়ে ;
শিশির কণা ঘাসের আগায়
আলতো ভেজা পা ,
খুকুমণি হাসিমুখে
বিস্ময়ে বাক্ হারা ;
নীল আকাশের ছুটির ডাক ,
সাদা মেঘের ভেলা ,
রবির কিরণ গাছের পাতায় ; ঝিলের জলে
অপরূপ , মায়াবী আলোর খেলা ;
মাছরাঙা আর বক বসেছে
গাছের নীচু ডালে ,
মাঝে মাঝে ঠোঁট ডুবিয়ে
জল থেকে মাছ তোলে ;
দিঘির পরে পদ্ম ফোটে
কাশ ফুলেরই মেলা ,
ডাগর চোখে অবাক খুকু
হারায় সকালবেলা ;
ফুল তুলেছে ,সাজি ভরেছে
সবাই বলে বাঃ ! " শরৎ এলে
শিউলি গুলো একলা ঝরে
কি কারণে ! মা ? "
ছোট্ট মেয়ের প্রশ্ন শুনে , মনে অপার আশা !
বাবা হাসেন শব্দ করে, মুচকি হাসেন মা ||
পুজোর দিনে
শুভাশিস দাশ
সবুজঘেরা চায়ের বাগান
রূপের বাহার সেই
আসছে পুজো কী হবে যে
মনের খুশি নেই !
ডুয়ার্স কাঁদে একলা বসে
কেউ শোনে না আজ ,
অনেক বাগান বন্ধ হলো
শ্রমিক হারায় কাজ !
আসছে পুজো সাজবে সবাই
দেখবে ওরা চেয়ে ,
কেমন তোমার বিচার মাগো
রূপের বাহার সেই
আসছে পুজো কী হবে যে
মনের খুশি নেই !
ডুয়ার্স কাঁদে একলা বসে
কেউ শোনে না আজ ,
অনেক বাগান বন্ধ হলো
শ্রমিক হারায় কাজ !
আসছে পুজো সাজবে সবাই
দেখবে ওরা চেয়ে ,
কেমন তোমার বিচার মাগো
দক্ষরাজের মেয়ে ?
রোজ নামচা
শান্তশ্রী নিয়োগী বোস
টিকটিক টিকটিক,
চলছে সময় ছন্দে
মনের যত আঁকি-বুকি সব
ফলাও করি কাব্যে।
চলছে সময় ছন্দে
মনের যত আঁকি-বুকি সব
ফলাও করি কাব্যে।
ঘরকন্না গিন্নিপনায়
দিনরাত খুব ব্যস্ত
অবসরে তাই কাগজে কলমে
সামান্য প্রয়াস মাত্র।
দিনরাত খুব ব্যস্ত
অবসরে তাই কাগজে কলমে
সামান্য প্রয়াস মাত্র।
লিখতে বসেই যত লঙ্কাকান্ড
রান্না যায় পুড়ে
ডালে নুন কম, মাছে তেল কম
সব কিছু লন্ড ভন্ড।
রান্না যায় পুড়ে
ডালে নুন কম, মাছে তেল কম
সব কিছু লন্ড ভন্ড।
কর্তা আমার খাদ্য রসিক,
এক কথা তে পেটুক,
মানাতে তাকে হাঁপিয়ে উঠি
কাব্য মাথায় থাকুক।
এক কথা তে পেটুক,
মানাতে তাকে হাঁপিয়ে উঠি
কাব্য মাথায় থাকুক।
ঠাট্টা করে কর্তা বলে,
শোনো কান খুলে
ও পাড়ার রায় গিন্নি
হাই ইস্কুলের দিদিমনি
কর্তা কে হারান চোখে
যত্নে ,সোহাগে আদুরে গলায়
রোজ ডার্লিং বলে ডাকে।
শোনো কান খুলে
ও পাড়ার রায় গিন্নি
হাই ইস্কুলের দিদিমনি
কর্তা কে হারান চোখে
যত্নে ,সোহাগে আদুরে গলায়
রোজ ডার্লিং বলে ডাকে।
ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ এ
নেই তার প্রয়োজন
দিন রাত এক করে শুধু
সংসারেতেই মন।
নেই তার প্রয়োজন
দিন রাত এক করে শুধু
সংসারেতেই মন।
শুনেই আমি লাফিয়ে উঠি,
যুক্তি করি খাঁড়া
তর্ক যুদ্ধে প্রেমের ফানুশ
এক নিমিষেই হাওয়া।
যুক্তি করি খাঁড়া
তর্ক যুদ্ধে প্রেমের ফানুশ
এক নিমিষেই হাওয়া।
যুক্তি তর্ক ,ঘরকন্যা,
এবার একটু থাকনা
মুজনাই কে তাই আকাশ ভেবে,
মেলেছি আমি পাখনা।।
এবার একটু থাকনা
মুজনাই কে তাই আকাশ ভেবে,
মেলেছি আমি পাখনা।।
কেউ কথা রাখেনি
স্বপন গায়েন
মানুষের লাশ
থরে থরে সাজানো
শেয়াল শকুন ফিরেও তাকায় না
মানব সভ্যতা চেয়ে মানুষের দিকে।
শেয়াল শকুন ফিরেও তাকায় না
মানব সভ্যতা চেয়ে মানুষের দিকে।
সীমান্তে
গোলা বারুদের গন্ধ
মানুষের লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ...
আকাশের নীচে কুৎসিত পৃথিবী।
মানুষের লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ...
আকাশের নীচে কুৎসিত পৃথিবী।
গন্ধ ছড়ায়
মানুষ পচা লাশের
বিকৃত মুখ এখনো ভোলেনি পরিবার
সাহায্য দেবে বলেছিল সরকার।
বিকৃত মুখ এখনো ভোলেনি পরিবার
সাহায্য দেবে বলেছিল সরকার।
যুদ্ধ ফেরত
লাশ কফিন বন্দি
কেউ কথা রাখেনি, রাখে না
ছেলের কফিনে এক মুঠো মাটি।
কেউ কথা রাখেনি, রাখে না
ছেলের কফিনে এক মুঠো মাটি।
চোখের জল
শুকিয়ে মরুভূমি
একবিংশ শতাব্দী হাসছে ...
কেউ কথা রাখেনি, রাখে না।
একবিংশ শতাব্দী হাসছে ...
কেউ কথা রাখেনি, রাখে না।
ছুটি
গৌতমী ভট্টাচার্য্য
আজ কী খুশির দিন ওরে ভাই
আজকে মোদের ছুটি
আজ বাঁধন ছেড়ে খেলব মোরা
একসাথে সব জুটি ।
আজ নদীর তীরে কাশের বনে
শরৎ মাখা সুখ
ওইখানেতে দেখি আমার
দুগ্গা মায়ের মুখ ।
আজ নীল আকাশে পেঁজা তুলোর
মেঘের লুটোপুটি
ওই আকাশ জুড়ে স্বপ্ন আমার
সকল নিল লুটি ।
আজ শিশির ধোওয়া মাঠে মাঠে
সবুজ ঘাসের বুকে
গঙ্গা ফড়িং লাফিয়ে বেড়ায়
উল্লাসে -উৎসুকে ।
আজ রোদ্দুরে দেখ পাকা ধানে
হাওয়ার মাতন লেগে
ওরা খেলছে যেন লুকোচুরি
মাটির ’পরে জেগে ।
আজ বাঁধন ছেড়া মুক্ত পাখি
বেড়ায় আকাশ জুড়ে
তার কন্ঠে শুনি ছুটির বাঁশি
বাজছে নতুন সুরে ।
আজ দু হাত ভরে শিউলি ফুলের
পরাগ মেখে গায়
পুজোর ছুটির বার্তা দেব
ধরার আঙিনায় ।
অশনি - সংকেত
শর্মিষ্ঠা রায়চৌধুরী
হঠাৎ এক দমকা হাওয়ার দাপটে____
নিভে গেল সাঝবাতিটা,,,,,
অগোছালো মনের হিসাব কে রাখে ?
অজানা আশঙ্কায় দুরুদুরু বুকের স্পন্দন !
আলুথালু চিন্তারা অস্থিরতায় প্রহর গোনে__
বাতাস ভারী হয়ে আসে অকারনেই,
ঝড়ের গতিকে হার মানায়____
নিঃশ্বাসের অবিরত ওঠা -পড়া ,
আষ্ঠেপৃষ্ঠে ঘিরে ধরে বিষাক্ত বায়ু ।
অকল্যানের ঘেরাটোপে জীবনের নাভিঃশ্বাস
কালসর্প দোষের গ্রাসাচ্ছাদনে নিভন্ত সলতে ,
রাহু-কেতুর গ্রাসে,আগ্রাসী মন _____
গ্রহ-নক্ষত্রের ফের কাটাতে জ্যোতিষীর বিধান,কিংবা ফকির বাবার তাবিজ কবজ,
অরাজকতার কালো থাবয় ধ্বংসের নাচন__
জিয়নকাঠির ছোঁয়ায় কে কোরবে প্রাণপ্রতিষ্ঠা ?
তবু কি হলো শেষরক্ষা ? কালের অতল গভীরে,,,
সবকিছু মিথ্যা করে, এ কিশের অশনি-সংকেত ????
একান্ত চাওয়া
কৃষ্ণা সাহা
মূহুর্তেরা ছুঁতে চায়
মহাশূন্যতাকে।
কল্পনার নকশি কাঁথা ছুঁতে চায়
কবিতার পাতা।
স্রোতস্বিনী নদী চায়
কূলের আলতো পরশ।
তাই তো উত্তাল ঢেউ হয়ে
আছড়ে পড়ে পাড়ে।
ভোরের পাখিরা চায়
নরম দুটো ডানায়
সুনীল আকাশ ছুঁতে।
গভীর ভালোবাসা চায়
হৃদয় ছুঁতে, শরীরী আলিঙ্গনে
উষ্ণ চুম্বনের আলতো ছোঁয়ায়।
আবেগঘন চাওয়ারা আছে বলেই
সুন্দর এই জীবনের মানচিত্র।
পাওয়া না -পাওয়ার সন্ধিক্ষণের
একান্ত গোপন কোণে
স্বযত্নে লালিত।
মূহুর্তেরা ছুঁতে চায়
মহাশূন্যতাকে।
কল্পনার নকশি কাঁথা ছুঁতে চায়
কবিতার পাতা।
স্রোতস্বিনী নদী চায়
কূলের আলতো পরশ।
তাই তো উত্তাল ঢেউ হয়ে
আছড়ে পড়ে পাড়ে।
ভোরের পাখিরা চায়
নরম দুটো ডানায়
সুনীল আকাশ ছুঁতে।
গভীর ভালোবাসা চায়
হৃদয় ছুঁতে, শরীরী আলিঙ্গনে
উষ্ণ চুম্বনের আলতো ছোঁয়ায়।
আবেগঘন চাওয়ারা আছে বলেই
সুন্দর এই জীবনের মানচিত্র।
পাওয়া না -পাওয়ার সন্ধিক্ষণের
একান্ত গোপন কোণে
স্বযত্নে লালিত।
চোরাস্রোত
রাখী বসাক
উওরের হাওয়ার স্রোত বইছে,
এপার থেকে ওপারে।
ঝড় ঝাপটায় হলুদ পাতাগুলি ঝড়ে পড়লো মাটির বুকে,,,,,
ভিজে গেলো চঞ্চল,ছটফটে মনের আঙ্গিনা,,,,ছুঁয়ে,ছুঁয়ে গেলো কতো বেগ,আবেগ
জেগে উঠলো,দুলে উঠলো সাতসাগরের স্রোতের দোলায়,,,,
একটু বাদেই ক্ষণিকের ঝড়ের গুঞ্জন কলরব গেলো থেমে,,,,,
চোরা স্রোত শান্ত হলো।
মনের ইচ্ছেগুলি পরে রইলো রঙিন রোদ্দুরে ছায়াহীন ভাবে,,,,
চেনা রাস্তাগুলি দেখতে লাগলো আড়াল থেকে,,,
হাতড়ে বেড়ালো ছিন্ন,ভিন্ন মুহূর্ত গুলিকে,,,,
একটি কোনে পরে রইলো ক্লান্ত,স্তব্দ মন উবু হয়ে,,,,,,
এপার থেকে ওপারে।
ঝড় ঝাপটায় হলুদ পাতাগুলি ঝড়ে পড়লো মাটির বুকে,,,,,
ভিজে গেলো চঞ্চল,ছটফটে মনের আঙ্গিনা,,,,ছুঁয়ে,ছুঁয়ে গেলো কতো বেগ,আবেগ
জেগে উঠলো,দুলে উঠলো সাতসাগরের স্রোতের দোলায়,,,,
একটু বাদেই ক্ষণিকের ঝড়ের গুঞ্জন কলরব গেলো থেমে,,,,,
চোরা স্রোত শান্ত হলো।
মনের ইচ্ছেগুলি পরে রইলো রঙিন রোদ্দুরে ছায়াহীন ভাবে,,,,
চেনা রাস্তাগুলি দেখতে লাগলো আড়াল থেকে,,,
হাতড়ে বেড়ালো ছিন্ন,ভিন্ন মুহূর্ত গুলিকে,,,,
একটি কোনে পরে রইলো ক্লান্ত,স্তব্দ মন উবু হয়ে,,,,,,
কাশফুল
নিশীথ বরণ চৌধুরী
আমার দুর্গা বান ভাসি
প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে
ঝঞ্ঝা ক্ষুব্ধ ধরণী তলে,
শরৎ কুয়াশায় মাঠে ঘাটে ,পল্লীর প্রান্তরে।
শুভ্রতার চাদর জড়িয়ে--
কল্লোলিত যৌবনে আবির্ভূত কাশফুল,
জাগালো উৎসবের শিহরণ।
বানভাসি নিরন্ন মানুষের হাহাকার ও আর্তনাদ,
সমাহিত করেছে অজস্র বিস্ময়
বাঁচা জরুরি জেনে ও ভুলে সব
আসন্ন মৃত্যুর অনুভব।
অবশেষে তুমি এলে,
মাটির ঘ্রাণ প্রাণ ভরে নিয়ে হাওয়াই দুলিয়ে মাথা।
শিউলির সুরভি মাখা বাতাসে,
শোনালে শারদীয়ার আগমনী গান।
সে গান শুনে মনে মনে নেচে ওঠে উষসী আকাশ।মধুর হাসে।
কাশবনে সানাইয়ের মূর্ছনার সুর মাতিয়ে দিক,
মানুষের মন শারদোচ্ছ্বাস ও আনন্দে।
আজব দুনিয়া
এবার হবে আবার পুরাতনী
বাজিবে সংগীত চির সনাতনী।।
এসো হে চির শ্বাশত ফাগুন
জ্বালো মম প্রিয়া মনে প্রেমের আগুন।।
প্রেমানল গ্রাস করুক কলহ সকল
প্রেম ত্যাজী এ জগতে সকলই বিফল।।
করো আজ বাসি পচা পর্ণমোচন
এ বসন্তে হোক তব আসল বোধন।।
মেহগিনির আজ যেমন কচি সবুজ পাতা
তব মনে তেমন প্রেমপুষ্প করো প্রস্ফুটিতা।।
তব মনে জাগ্রত হোক নব কিশলয়
পুনরুজ্জিবীত করো মম মলিন হৃদয়।।
আজ উদাসী বসে আছি দ্বার হেরিয়া
কখন আসিবে তুমি মধু হাসিয়া।।
এসো হে প্রবীন হইয়া নবীন
আঁকছি তোমায়, ভুলে রাত্রি ও দিন।।
তব সুধা মাখি ইরা হয় সুবাসিত
সৌরভেরে আজ তুমি করো সৌরভিত।।
জয়শ্রী চ্যাটার্জি
দুর্গা আসে দুর্গা যায়
বদলায় না ভাগ্য হায় !
জ্যান্ত দুর্গার ম্যান যায়
মাটির দুর্গা পূজা পায়।
মানবীকে নগ্ন করে -
পাশবিকতার চিহ্ন এঁকে
ভাসান হচ্ছে গঙ্গার জলে
মাটির দুর্গা মখমলে মুড়ে
উৎসব প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে !
পনের দায়ে গৃহলক্ষ্মী
হচ্ছে বলি, সবাই সাক্ষী
দিচ্ছে প্রাণ জ্যান্ত লক্ষ্মী
পূজা পাচ্ছে মাটির মূর্তি।
আজব এই দুনিয়া ভাই
কোটি মানুষ অনাহারে
উৎসব চলে আহারে বাহারে !!
আগমনীর প্রেমগাঁথা
দীপশিখা চক্রবর্তী
দীপশিখা চক্রবর্তী
নীল আকাশের কোলে আঁকা রঙিন যত নকশা,
কাশফুলের ঐ হালকা দোলায় দুজনের কাছে আসা।
শরীর প্রাণে লাগল বাতাস,লাজে ভরা মুখ,
তোর ছোঁয়ায় কাজলা নয়ান পেল নতুন রূপ।
এলো চুলের বাঁধনখানা দিলি যে তুই খুলে;
হৃদমাঝারে ঢেউয়ের জোয়ার,হাতে হাত মেলে।
আজও যখন খোলাচুলে,আলতা রাঙা পায়ে,
ভিজিয়ে তোর উষ্ণ শরীর সুগন্ধিমাখা গায়ে;
বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে করলি আদর কত!
শরীরে আজ বয়ে গেল সুরের তরঙ্গ যত।
সিঁথির সিঁদুর লেপটে দিয়ে আলতো গালের পরশে,
শরীর মন ভরিয়ে তোলে ভালোবাসার হরষে।
শহরতলি ভাসছে যখন আগমনীর গানে,
দুটি শরীর মিলিয়ে গেল পিয়ানোর তানে।
কাশফুলের ঐ হালকা দোলায় দুজনের কাছে আসা।
শরীর প্রাণে লাগল বাতাস,লাজে ভরা মুখ,
তোর ছোঁয়ায় কাজলা নয়ান পেল নতুন রূপ।
এলো চুলের বাঁধনখানা দিলি যে তুই খুলে;
হৃদমাঝারে ঢেউয়ের জোয়ার,হাতে হাত মেলে।
আজও যখন খোলাচুলে,আলতা রাঙা পায়ে,
ভিজিয়ে তোর উষ্ণ শরীর সুগন্ধিমাখা গায়ে;
বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে করলি আদর কত!
শরীরে আজ বয়ে গেল সুরের তরঙ্গ যত।
সিঁথির সিঁদুর লেপটে দিয়ে আলতো গালের পরশে,
শরীর মন ভরিয়ে তোলে ভালোবাসার হরষে।
শহরতলি ভাসছে যখন আগমনীর গানে,
দুটি শরীর মিলিয়ে গেল পিয়ানোর তানে।
নিরুত্তর চিঠিখানি
সম্পা দত্ত
ভালবাসার ছোঁয়া মাখা যে চিঠিখানি
তোমাকে পাঠিয়ে ছিলাম।
চেয়েছিলাম অস্তিত্বের প্রাপ্তি।
আজ নিরুত্তর থেকে গেলো সবকথা।
তোমার ভালবাসার ঐশী অনুরণন,
প্রতিমূহুর্তে কেঁপে কেঁপে ওঠে--শরীরের শিহরণ।
যে চিঠিতে লিখেছিলাম -----
মনের সাজানো ভালবাসা-অ্যালবাম কথা।
মন-গ্যালারীর একজিবিশনে বারবার
রিভিউ হয় তুমুল ভালবাসা-ক্যানভাস ছবি।
গ্রীষ্ম বর্ষা শেষে শরৎ পেড়িয়ে হেমন্ত
শীত বসন্ত এসে গেলেও তোমার ভাষা'রা থাকল নিরুত্তর সাদা কাপড়ের থান হয়ে।
সব ঋতু আজ ছদ্মবেশী, বড্ড অচেনা লাগে।
হিজলগাছের ছায়ায় কত অবুঝ খুনসুটি
হিজলের ছায়া পড়ে আছে,ফুলগুলো ঝুলে ঝুলে দুলে দুলে জানান দিচ্ছে তোমার স্মৃতির ব্যথাতুর সঙ্গসময় বালুঘড়ি হয়ে, শুধু তুমি নেই।
ওয়েটিং রুম আজও তোমারি প্রতীক্ষায়।
প্রযুক্তি এগিয়ে আন্তর্জাল গুগুল ট্যুইটার ইন্স্ট্রাগ্রামের ইনবক্স আজ ফাঁকা শূন্যতা, জানালার দৃশ্যপট অন্তর্ঘাতের সমাপ্তি সংগীত গেয়ে চলে।
দুর্গোৎসবের মহা সমারোহে মূহুর্তের পিছুটানে তোমারি পথ চেয়ে আছি।
যা হারিয়ে যায় নিজের নয় তা' অজান্তে আগলে বসে কি লাভ।
তবু তুমি নিরুত্তর'ই থেকে গেলে
আজ ও নিরুত্তর থেকে গেলো তোমার
উত্তর দেবার চিঠিখানি!!!!!
তোমাকে পাঠিয়ে ছিলাম।
চেয়েছিলাম অস্তিত্বের প্রাপ্তি।
আজ নিরুত্তর থেকে গেলো সবকথা।
তোমার ভালবাসার ঐশী অনুরণন,
প্রতিমূহুর্তে কেঁপে কেঁপে ওঠে--শরীরের শিহরণ।
যে চিঠিতে লিখেছিলাম -----
মনের সাজানো ভালবাসা-অ্যালবাম কথা।
মন-গ্যালারীর একজিবিশনে বারবার
রিভিউ হয় তুমুল ভালবাসা-ক্যানভাস ছবি।
গ্রীষ্ম বর্ষা শেষে শরৎ পেড়িয়ে হেমন্ত
শীত বসন্ত এসে গেলেও তোমার ভাষা'রা থাকল নিরুত্তর সাদা কাপড়ের থান হয়ে।
সব ঋতু আজ ছদ্মবেশী, বড্ড অচেনা লাগে।
হিজলগাছের ছায়ায় কত অবুঝ খুনসুটি
হিজলের ছায়া পড়ে আছে,ফুলগুলো ঝুলে ঝুলে দুলে দুলে জানান দিচ্ছে তোমার স্মৃতির ব্যথাতুর সঙ্গসময় বালুঘড়ি হয়ে, শুধু তুমি নেই।
ওয়েটিং রুম আজও তোমারি প্রতীক্ষায়।
প্রযুক্তি এগিয়ে আন্তর্জাল গুগুল ট্যুইটার ইন্স্ট্রাগ্রামের ইনবক্স আজ ফাঁকা শূন্যতা, জানালার দৃশ্যপট অন্তর্ঘাতের সমাপ্তি সংগীত গেয়ে চলে।
দুর্গোৎসবের মহা সমারোহে মূহুর্তের পিছুটানে তোমারি পথ চেয়ে আছি।
যা হারিয়ে যায় নিজের নয় তা' অজান্তে আগলে বসে কি লাভ।
তবু তুমি নিরুত্তর'ই থেকে গেলে
আজ ও নিরুত্তর থেকে গেলো তোমার
উত্তর দেবার চিঠিখানি!!!!!
মেঘমল্লারের তানে
জয়শ্রী রায় মৈত্র
আকাশের বুকে বাজে
মেঘমল্লারের সুর,
ওরে ও কালো মেঘ
তোর প্রেমে ঘর ছাড়া মন,
উদাসী বাতাস বড় চঞ্চলা
তার টানে ছুটে চলি
ঘর ছেড়ে অনেক দূরে,
ডমরুর তালে নাচবো আজ
মাতাল হয়ে কোন বারণ
মানতে নারাজ,
আয়না পাশে জড়িয়ে তোর ওড়নি
মেঘমল্লারের তানে
প্রেমে ভাসি তোর সাথে উড়ে ।।
কৌশনে উচ্চস্বরে, শাসনের নামে শোষণ
আত্মগ্লানিঃ
দেবব্রত তাঁতী
।। ক ।।
মুহূর্তরা ফিরে ফিরে আসে ভাবনায় । কথা গুলো অপ্রতিফলিত থাকে দেওয়ালে । দিনের আলো ঝলসে দেয় চোখ । রাতে উল্কা পড়ে হটাত । স্বপ্ন স্বপ্নই আর বাস্তব বাস্তবেই থেকে যায় । দুঃখ নিজের জন্য আর বিশেষ মানুষটার জন্য । অঝর নয়নে কাঁদতে পারিনা যে তাই কষ্ট রা ভেতরে পুরুষত্ব কুড়ে কুড়ে খায় । আকাশ মেঘলা হলে বৃষ্টি নামে । কখন ফাঁকা মাঠে আকাশ দেখে কাঁদি । কখন বাথরুমের টপটপ জলের শব্দ । দিনের ভয়ে রাত কাঁদে আমি কাঁদি । জেগে থাকা তারা আর বিছানা সমব্যাথী । হাত বুকে , মাথা গুঁজে কাঁদতে থাকি মনের সুখে । লোক দেখানো হাসি । মনের ভেতর মেঘলা ও বৃষ্টি । আমি তো সেই ঈশ্বরের হাতের খেলনা । দেখি জীবন খাতার মোট ফল শূন্য । ভাবি আদপে কি চেয়েছি কাকে ভালবেসে ছিলাম আর কি কুক্ষণে যে ভালবেসে ছিলাম ! এগুলো না পাওয়া থাক । এই টুকু শিখেছি যতই ঝড় বাদল আসুক জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে জীবন কে ভালবেসেই , যে কোন শর্তেই ।
।। খ ।।
খেলাটা এখন নিত্যদিনের চলে এসেছে আমার কাছে । পূর্বে তোমাদের তরফ থেকে ছিল সাথে আমাকে জড়িয়ে । ধীরে ধীরে উল্টো পথে হাঁটছি । খারাপের পথ । বিপদের পথ । হিংসার পথ । নাকি আমি স্বার্থপর হয়ে গেছি ! - ওরা বলছে । বলতে দাও । না জেনে অনেকে অনেক কথা বলে । আমি কি বা কেমন তা তো আমি জানি । তোমরা যা দিয়েছ মাথা পেতে নিয়েছি । আর বিদ্রোহ বা ঝগড়া করিনি । শুধু কথা বলা বন্ধ হয়ে আসছে । নিজেকে তিলে তিলে মেরে পাষাণ হয়ে উঠছি । কষ্ট টা আমি নিজেই ভোগ করছি আনন্দের সাথে । কাউকে বুঝতে দিই নি । তোমাদের মুখোশ চিনি । বাইরের টা যতটা কঠোর ভেতরের টা ততটা নরম । পিতামাতারা সন্তানের ভালো চাই সবসময় । তা বলে নিজেদের ইচ্ছা জোর করে চাপিয়ে দিলে এমনভাবে... । অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিয়ে নিলাম আশীর্বাদ স্বরূপ । পূর্বে যে জেদ , ভালোবাসা ছিল কেন জানি না এখন তা হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে । সেই অনুভূতি আর পাইনা । তবে তোমাদের ভালোবাসি এটাই সত্যি । যে পথ ফেলে চলে এসেছি সেই পথ ভুলতে পারছি না । মনের মধ্যে দ্বিসত্তা জাগ্রত হয়ে দ্বন্দ্ব করে অনেকটা সময় নিয়ে । সমাধান পেয়েও মাঝে মাঝে ভুলে গিয়ে নতুন আলোর দিশার পেছনে ছুটি । আর সেই ভুল করব না বোধ হয় । মেনে নিচ্ছি সব দোষ আমার । তবে পূর্বের মতো হাসি আর মন খোলা আমাকে আর তোমরা পাচ্ছ না জানি । দুঃখ এটাই । কেন যে বদলে গেলাম । অনেকে বলে সময়ের সাথে বদলে গেলে নাকি ভালো । কিন্তু কথাটা মিথ্যে । পুরোপুরি সত্যি নয় । দুঃখ টা বোধ হয় দুদিক থেকে দুঃখের । দুঃখ টা হোক জীবন আর সুখ টা বরফের চাঁই এ লুকিয়ে রাখো ।
কালরাত্রি
শ্রী কল্যাণ
হাত আগে না পা আগে প্রকাশ
বিপরীতে বহিঃপ্রকাশ যেন ধারাপাত।
উদ্ভট ধারণার খপ্পরে সব
শেষ মনে হয়, মনে পরে কল্পবৃক্ষের কথা
ভ্রমরেরও ভ্রম হয়, আপত্তিকর ঘনিষ্ঠতায়
কালরাত্রি শুরু ও শেষ হয়।
আমার ছেলেবেলা ফিরিয়ে দাও
অর্পিতা চক্রবর্তী
ছোট্ট ছোট্ট শিশু, যারা কিশলয়ের কুঁড়ি,
যাদের স্বপ্নের খেলাঘর ভেঙে শৈশব করা হচ্ছে চুরি,
যারা বলতে পারেনা মনের কথা, বুক ভরা ব্যথা কতশত,
অভিভাবকদের আকাশচুম্বী চাহিদার কাছে মাথা করে থাকে নত-
তাদের জন্য আমার লেখা ভারাক্রান্ত মন
শৈশবকে শৈশবের মতো বাড়তে দিলে, গড়ে ওঠে সুন্দর সুস্থ জীবন.
টিভি চ্যানেলে ছড়ানো আছে নানান প্রলোভন,
নানারকম প্রতিযোগিতা, এ এক বিরাট প্রহসন.
অভিভাবকরা এ সুযোগ ছাড়তে রাজি নয়,
একবার যদি বিড়ালের ভাগ্যে শিকেয় ছিড়ে যায়
নাম-যশ-অর্থ-খ্যাতি-ভবিষ্যত সবই উজ্জ্বল,
সন্তান হবে সেলিব্রেটি চল এগিয়ে চল.
তিন বছরের শিশুদের বোধ জন্মায়কি কিছু?
দুর্বার গতিতে ছুটে চলেছে তারা অভিভাবকদের পিছু পিছু.
প্রতিযোগিতার দৌড়ে তাড়াহুড়োয় হোঁচট খেতে খেতে,
ছেলেবেলাটাই হারিয়ে যাচ্ছে চোরাপথের বাঁকে.
শিশুদের কানে এখন একটাই মন্ত্র,
হতে হবে পাঁচজনের একজন, হতে হবে কম্পিউটার যন্ত্র.
অভিভাবকরা জানেন না, সন্তানের কি হচ্ছে ক্ষতি,
নিজেরাই অজান্তে এঁকে চলেছেন, ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের ছবি.
বিচারকের পদ অলংকৃত করেন শিল্পী নামী-দামী,
তাঁরা কিন্তু ঠুঁটো জগন্নাথ, জনগণের এস.এম.এস-ই দামী.
শেষ কথাটি বলি ধরে কথার রেশ,
সত্যি সেলুকাস ! কি বিচিত্র এই দেশ.
কন্যা তুমি
সুদীপ সেন
শহরতলীর মেয়ে পূর্ণিমা
এখন নবম শ্রেণীতে
খোলা আকাশে পিচের রাস্তায়
সাইকেল চুটিয়ে বিদ্যালয়ে যায়।
প্রিয়ার লাইনে প্রথম সারিতে
দাঁড়িয়ে প্রেরণা গে জয় হে জয় হে
জয় জয় জয় হয় হে।
সুনীতি মন্ডল এখন বইয়ের পাতায়
নিজেকে স্পষ্ট দেখতে পায়
সূর্যের সম্মুখে দাঁড়িয়ে গায়
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।
পূর্ণিমা, প্রেরণা, সুনীতি কন্যা
জন অরণ্যে শ্রীর মর্যাদা পেয়ে
আজ অনন্য।
তোমার তুলিতে ভোর করে
কন্যা এখন ভরসা
স্বপ্নের কন্যাশ্রী।
গদ্য
আত্মগ্লানিঃ
দেবব্রত তাঁতী
।। ক ।।
মুহূর্তরা ফিরে ফিরে আসে ভাবনায় । কথা গুলো অপ্রতিফলিত থাকে দেওয়ালে । দিনের আলো ঝলসে দেয় চোখ । রাতে উল্কা পড়ে হটাত । স্বপ্ন স্বপ্নই আর বাস্তব বাস্তবেই থেকে যায় । দুঃখ নিজের জন্য আর বিশেষ মানুষটার জন্য । অঝর নয়নে কাঁদতে পারিনা যে তাই কষ্ট রা ভেতরে পুরুষত্ব কুড়ে কুড়ে খায় । আকাশ মেঘলা হলে বৃষ্টি নামে । কখন ফাঁকা মাঠে আকাশ দেখে কাঁদি । কখন বাথরুমের টপটপ জলের শব্দ । দিনের ভয়ে রাত কাঁদে আমি কাঁদি । জেগে থাকা তারা আর বিছানা সমব্যাথী । হাত বুকে , মাথা গুঁজে কাঁদতে থাকি মনের সুখে । লোক দেখানো হাসি । মনের ভেতর মেঘলা ও বৃষ্টি । আমি তো সেই ঈশ্বরের হাতের খেলনা । দেখি জীবন খাতার মোট ফল শূন্য । ভাবি আদপে কি চেয়েছি কাকে ভালবেসে ছিলাম আর কি কুক্ষণে যে ভালবেসে ছিলাম ! এগুলো না পাওয়া থাক । এই টুকু শিখেছি যতই ঝড় বাদল আসুক জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে জীবন কে ভালবেসেই , যে কোন শর্তেই ।
।। খ ।।
খেলাটা এখন নিত্যদিনের চলে এসেছে আমার কাছে । পূর্বে তোমাদের তরফ থেকে ছিল সাথে আমাকে জড়িয়ে । ধীরে ধীরে উল্টো পথে হাঁটছি । খারাপের পথ । বিপদের পথ । হিংসার পথ । নাকি আমি স্বার্থপর হয়ে গেছি ! - ওরা বলছে । বলতে দাও । না জেনে অনেকে অনেক কথা বলে । আমি কি বা কেমন তা তো আমি জানি । তোমরা যা দিয়েছ মাথা পেতে নিয়েছি । আর বিদ্রোহ বা ঝগড়া করিনি । শুধু কথা বলা বন্ধ হয়ে আসছে । নিজেকে তিলে তিলে মেরে পাষাণ হয়ে উঠছি । কষ্ট টা আমি নিজেই ভোগ করছি আনন্দের সাথে । কাউকে বুঝতে দিই নি । তোমাদের মুখোশ চিনি । বাইরের টা যতটা কঠোর ভেতরের টা ততটা নরম । পিতামাতারা সন্তানের ভালো চাই সবসময় । তা বলে নিজেদের ইচ্ছা জোর করে চাপিয়ে দিলে এমনভাবে... । অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিয়ে নিলাম আশীর্বাদ স্বরূপ । পূর্বে যে জেদ , ভালোবাসা ছিল কেন জানি না এখন তা হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে । সেই অনুভূতি আর পাইনা । তবে তোমাদের ভালোবাসি এটাই সত্যি । যে পথ ফেলে চলে এসেছি সেই পথ ভুলতে পারছি না । মনের মধ্যে দ্বিসত্তা জাগ্রত হয়ে দ্বন্দ্ব করে অনেকটা সময় নিয়ে । সমাধান পেয়েও মাঝে মাঝে ভুলে গিয়ে নতুন আলোর দিশার পেছনে ছুটি । আর সেই ভুল করব না বোধ হয় । মেনে নিচ্ছি সব দোষ আমার । তবে পূর্বের মতো হাসি আর মন খোলা আমাকে আর তোমরা পাচ্ছ না জানি । দুঃখ এটাই । কেন যে বদলে গেলাম । অনেকে বলে সময়ের সাথে বদলে গেলে নাকি ভালো । কিন্তু কথাটা মিথ্যে । পুরোপুরি সত্যি নয় । দুঃখ টা বোধ হয় দুদিক থেকে দুঃখের । দুঃখ টা হোক জীবন আর সুখ টা বরফের চাঁই এ লুকিয়ে রাখো ।
তোমার প্রতি
সৌরভ প্রামাণিক
এবার হবে আবার পুরাতনী
বাজিবে সংগীত চির সনাতনী।।
এসো হে চির শ্বাশত ফাগুন
জ্বালো মম প্রিয়া মনে প্রেমের আগুন।।
প্রেমানল গ্রাস করুক কলহ সকল
প্রেম ত্যাজী এ জগতে সকলই বিফল।।
করো আজ বাসি পচা পর্ণমোচন
এ বসন্তে হোক তব আসল বোধন।।
মেহগিনির আজ যেমন কচি সবুজ পাতা
তব মনে তেমন প্রেমপুষ্প করো প্রস্ফুটিতা।।
তব মনে জাগ্রত হোক নব কিশলয়
পুনরুজ্জিবীত করো মম মলিন হৃদয়।।
আজ উদাসী বসে আছি দ্বার হেরিয়া
কখন আসিবে তুমি মধু হাসিয়া।।
এসো হে প্রবীন হইয়া নবীন
আঁকছি তোমায়, ভুলে রাত্রি ও দিন।।
তব সুধা মাখি ইরা হয় সুবাসিত
সৌরভেরে আজ তুমি করো সৌরভিত।।
দূরত্ব
বঙ্কিম রায়
তুমি থাকো নদীর ওপার
আমি থাকি উল্টো দিকে
তোমার মা বাংলা বলে, আর
আমার মা সে বাংলা শিখে।
আমি থাকি উল্টো দিকে
তোমার মা বাংলা বলে, আর
আমার মা সে বাংলা শিখে।
তুমি মাপো ফিতে দিয়ে
দূরত্ব কার কত বেশি,
জাতের ছেলে করবে বিয়ে
হোক না কেন অন্য দেশী।
দূরত্ব কার কত বেশি,
জাতের ছেলে করবে বিয়ে
হোক না কেন অন্য দেশী।
আমার কাছে পুরুষ বিভাগ
আমরা থেকে তুমি হলে
আমার কাছে মনেই সোহাগ
তবেই তাকে রিস্তা বলে।
আমরা থেকে তুমি হলে
আমার কাছে মনেই সোহাগ
তবেই তাকে রিস্তা বলে।
দূরত্ব শুধু পথের নয়
দূরত্ব আরো অনেক হয়।
সদয় হও
দূরত্ব আরো অনেক হয়।
ফিকে-গাঢ় র খেলায় প্রেমের নবজন্ম
পিয়াংকী মুখার্জী
পড়ন্ত বিকেলের মিস্টি সূর্যাভ লাল ,
তোমায় আমি মাখলাম দু হাতে ,
তার সাথে মেশালাম আমাদের অভিমানে জড়ানো কয়েকফোঁটা চোখের জল...
গোধূলি তুমি দেখলে ?
লাল রঙটা একটু হালকা ফিকে হয়ে ,
স্মিত হাসি হেসে ,
আমার সিঁথির গাঢ় কমলা রঙটাকেই অনুকরণ করলো !!!
গুটি গুটি পায়ে নিঃশব্দে এলো নিশি রাত ।
বাঁকা চাঁদ , আমার জানলার কাঁচে ক্ষত - বিক্ষত হয়ে আছড়ে পড়ল...
আমার নিজের হাতে সযত্নে সাজানো বিছানার গোলাপী চাদরের বুকের ওপর !
রাত তুমি কী দেখলে ?
জ্যোত্স্নার কোল আলো মাখা চাঁদের লালচে আভা ,
গোলাপীর সাথে আদরে আর আবদারের প্রেমে জন্ম দিলো সিঁদুর রাঙ্গা টকটকে লাল !!!
আগুনপাখি হয়ে এলে তুমি জলসিঁড়ির সীমান্ত টপকে ,
এসেই দুহাতের পেশী দিয়ে আমাকে করলে বদ্ধ ,
জাপটে ধরে সিঁদুর মাখালে আমার সিঁথি থেকে নেওয়া সিঁদুর দিয়ে...
সিঁথিতে আর দুগালে ॥
আচ্ছা রাত , তোমায় জিজ্ঞাসা করছি ,,,
আজ কী পূর্ণিমা ?
না,তবুও আজ এই লাস্যময়ী রাতে আমি আস্ত একটা চাঁদ হলাম !!!
আজ আমার মন প্রতিফলক ,
তুমি সেটা ভেদ করে প্রবেশ করলে আমার গহীনে - গভীরে - অন্তরালের আবডালে ॥
অবসান হোলো দৈর্ঘ্য - প্রস্থে বিস্তৃত দীর্ঘ একটা অপেক্ষার রাতের !!!
সিগারেট টানা তোমার কালচে দুটো ঠোঁট অকারন আকর্ষিত হোলো আমার সিঁদুর মাখানো গালে ,,,
ঘুমের চাদর জড়ানো ভোরে...
কি রঙ উঁকি দিলো ?
আধো আলোয় আমরা দুজনই অস্পষ্ট ॥
আমি ভাঙ্গতে শুরু করলাম আমার বুকের অলিন্দ নিলয়ে জমে থাকা কিছু কথার পাহাড় ভোর সকালে....
"শব্দহীনতাকে তুলে দিয়েছি তোর হাতে ,
দুগাল ঠাসা চুমুর নেশার কাব্যিক অজুহাতে !
যখন নিঃশব্দে গড়ছিস তুই মাথার ঠোঙ্গায় পাটিগণিতের উঠোন...
তখনই তোর অঙ্কের কচুপাতায় ,
ভন্ডুল হোলো ,আমার স্নানে ভেজা জলের টুপটাপ নাচন !!!
ভৌত ঘনত্ব আজ প্রেমদ্বীপের ঝুল বারান্দায় অকারন গাইছে গান ,
দুই অবাধ্য প্রেমের গায়ের গন্ধ...
কামনার জলসিঁড়ি তে করছে স্নান !!!"
আদরের চাদরে মোড়ানো ভোর সকাল ,তুমি কী দেখলে ?
কালচে ঠোঁট লালচে সিঁদুরকে সঙ্গী করে...
আদুরে আদুরে ঢঙে ফোটালো আগুন রাঙ্গা...
টকটকে লাল পলাশ !!!
ফিকে ছিলাম , আজ নতুন ভোরে হলাম গাঢ় - ঘন ,,,
এভাবেই পূর্ণ হলে তুমি , আমায় করলে পরিপূর্ণ ॥
সদয় হও
মজনু মিয়া( বাউল মজনু)
কাজের মেয়ে ফেললে কিছু হাত থেকে,
মারধুঁর করো বঁকা ঝঁকা মুখ বেঁকে।
এমন কাজ কি ইচ্ছে করে করে সে?
তবে কেন, ঝুঁট ঝামেলা পাবে সে?
আপনা কেহ এমন কাজ করলে পর,
তার উপরে সদয় হও যে জনম ভর।
ভাবো আগে কাজের লোকও মানুষ সে;
ভুল চুঁকে যে গড়া মানুষ মানো সে।
অন্তর্জলী যাত্রা
সুপ্রীতি বর্মন
অথৈ জলে ভাসমান এলায়িত বক্ষ,
স্বপ্নমেদুর আঁখির সহাস্য অবরুদ্ধ ধারাপাত,
স্তব্ধ বাঙ্ময় দৃষ্টির নিথর অভিযোগের চাহনি, নিঃশব্দ প্রতিকার কেন শুধু আমার সাথে? এলায়িত সর্পিল কেশরাশি স্নিগ্ধ,
অজন্তা ইলোরার দিগন্ত বিস্তৃত নদীবক্ষে,
প্রতিমা দর্শনে অন্তর্জলী যাত্রা।।
সিঁথি ভরা সিঁদুরে স্বামীর ছোঁয়া,
জলে ভাসিয়ে অবহেলার সাক্ষর সোহাগ, কপালের উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে মুক্তির প্রত্যাশায় এলোমেলো,
লাল শাড়ির আঁচল শতাধিক তিরস্কার লাঞ্ছনায় লজ্জাবরনে অপারগ হস্তে,
দীঘির জলে খাবি খায়,
আলতা চরন কান্ডারী বিনা বৈতরিনীর গর্ভগৃহে ভরাডুবি হাতড়ায় সোহাগ।।
আজ মেতেছে মনের অজানা আশঙ্কায়, পরকীয়ায় হয়ত নিঃশ্বাসে জড়ায়ে,
নববধূর সোঁদা চুলের ঘ্রান,
পরম সোহাগের সিঁদুর কপাল চন্দনে লুটায়ে, দিশাহারা আমি শঙ্খচিল উচ্চনিনাদী এক রা কেন কর্কশ স্বরে আটচালার ভূকম্পন?
তবুও ওখানে সুখ চিরস্থায়ী অন্ধ প্রত্যাশায়, গুমোট আস্ফালন প্রতীক্ষমান তোমার স্বীকৃতি।। শুধু তুমি আমার,
নাভিমূলে আগমনী শারদীয়ার শতদল গেল ছুঁয়ে, পরশে যেন বলে উঠে ওগো সখী,
আর কবে স্বামীর হাত ধরে উমার পায়ে ১০৮ পদ্মের আলাপনে দেবে অষ্টমীর অঞ্জলী।।
হবে চিত্রপট ভ্রমন আলাপচারিতা মায়ের মুখ দেখা,
এলায়িত স্পন্দনহীন জীবিত মৃতা,
কাশফুলে সালাংকারা উমা এলো বাপের ঘরে।। মেয়ে তুমি যাচ্ছো কোথায় স্বামী সংসার ফেলে? উল্টোগমন কৈলাশ ছেড়ে লক্ষ্মীর আলতা চরন। দুশ্চরিত্রার অপেক্ষমান অপবাদের ঝোলায়, হাঁড়িকাঠে আত্মবিসর্জন।।
আজ আমি অলক্ষ্মী,
বিশ্বাস ব্যতিরেকে সুখস্বপ্ন ভালোবাসা বিকলাঙ্গ, অধরা ওষ্ঠ ফুটে উঠো শিউলী বলো,
মা এসেছে বছর ঘুরে ঢাকের বাদ্যি বাজছে বহুদূরে।।
শশীকন্যে কেন তোমার অন্তর্দহন অমাবস্যা।
ছুঁয়ে যায় দীঘির জল ওষ্ঠে শোকাতুর জমাট বরফ,
পিপাসায় আকন্ঠ বিষ পানে নীলকন্ঠ,
মা মা ডাকে ছুটে উর্ধ্বগতি স্বামীর কোলে নেব মাথা,
পরম মাতৃসোহাগে করবো স্তনদানে অমৃতপানে স্বামীর দহন মুক্তি,
বক্ষে জড়ায়ে দিবারাত্র সন্দেহের বিষ সর্পের ফোঁস ফোঁস দীর্ঘশ্বাস আমি কুলটা,
অর্ধচন্দ্রে কাটারির ঘা পূর্ণছবি দর্শনে।।
একরাশ ধিক্কার আটপৌরে বাক্সবন্দী শাড়ি, মেতেছে গোপনে কালো ভ্রমর নতুন প্রস্ফুটিত কমলে,
আঙুল তুলে পঙ্কিল পদ তোলে আমার বক্ষে।। বলে আত্মঅহংকার আমি শুচি,
আমার কপাল পুড়ে শীতলতার প্রত্যাশায় দীঘির বুকে নিঃশব্দ আত্মগোপন,
সলিল সমাধি নগ্ন দেহ শুদ্ধতম সার,
কাশফুলে দীঘির জলের অর্চনা উমার।।
শরীরে অগ্নিদগ্ধ স্রোত হৃদয়ে দীর্ঘকাল সঞ্চিত ক্রোধ,
দীঘির জল অপারগ লাভার অগ্ন্যুৎপাতে আধার হতে,
মন ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এয়োস্ত্রী হয়ে,
স্বামীর আগেই যেতে চায়।।
সোহাগের বীজ নরম মাটিতে প্রোথিত,
পায় না অবসর সাক্ষর হতে পিতৃপরিচয়,
অবৈধ প্রনয়ের দুগ্ধশস্য।।
গভীর লাঞ্ছনায় মিথ্যা অপবাদের পাপস্খলন দায়,
ভারবহনে দীঘির স্রোত কর্মক্লান্ত,
অতলে পাঠিয়ে নিশ্চিত শ্বাস শতাধিক হেঁয়ালি।। সোহাগের প্রলাপ মাখা দুঃস্বপ্নে চোখের পাতা ভারী ।।
স্বামী সঙ্গ গভীর ঘুম, পরের জন্মে হই যেন সতী,
শিব সঙ্গপানে কৈলাশ গমন।।
মুখোশ -মুখ
অনিন্দিতা চক্রবর্তী
ছোট বেলার সেই রথের মেলায়
বাবা, মুখোশ কিনে দেয়নি বলে
কত কেঁদে ভাসাতাম।
আজ চারিদিকে শধুই....
মুখোশ দাপিয়ে বেড়ায় ,
লাল কালে লম্বা মোটা সব রকম,
কোন টার চোখ চকচকে,
কোনটার টিকালো নাক,
কোন মুখোশের নিটল স্মিত হাসি
ভরিয়ে দেয় মন .....!
কোন্ টা কিনব আজ -
অস্হিরতা নেমে আসে রোদ-বৃষ্টি মুখে।
একটা মুখোশ চাই আড়ালের।।
লুকোন চোখ থেকে ঠিকরানো....
হিংস্র লোলুপ দৃষ্টি ... ঢাকা পড়ে-
ভন্ডামি আর নির্লজ্জতায় ,
সমাজ-শাসন-ধর্ম লুকোন আজ মুখোশে ।
মুখ যেখানে মনের আয়না,,
কলুষিত মুখটা আজ ঢেকে রাখার চেষ্টা,
আজ একটা মুখ কিনতে চাই....
বলতে পারো কোন মেলায় যাব ...
সেটা কিনতে আজ ,,
সহজ সরল অথচ দৃঢ় একটা মুখ-মুখোশ।।
কুড়িটি বছর পেরিয়ে
সৌরভ সরকার
কুড়িটি বছর পেরিয়ে গেলে তার হয়নি দেখা!
খেলার মাঠে-- সবুজের দেশেতে--
শহরের পথে পথে ফাল্গুনী রাতে।
পেরিয়ে গেছে কত বসন্ত সন্ধ্যার আঁধারে
লুকিয়ে গেছে দিনগুলো লুটোপুটি খেলে।
হয়তো ভোরের কোকিল কিম্বা শালিকের ডাকে
ঘুম ভেঙ্গে যায় কন্ঠস্বরে
হাঁসেরা জলে খেলা করে,
নীল আকাশে মেঘের আড়ালে পাখিরা যায় উড়ে
খড় আনে,ঘর বাঁধে এভাবে যায় দিন চলে।
খুঁজে বেড়াই কুড়িটি বছর পেরিয়ে যাবার পরে-
যদি সাক্ষাৎ পাই পথের বাঁকে একাকী তারে।
কুড়িটি বছর পেরিয়ে গেলে তবুও হয়নি দেখা!
আমের বনে-- জামের বনে--
রাত্রি নিধানে মুখ পড়ে মনে।
অকূল হতে তার শব্দ-- ভেসে ভেসে শিশিরে
ভিজে,শীতের রাতে হাতছানি দিয়ে এসেছিলে।
মনে পড়ে বাল্যস্মৃতি মাটিতে হামাগুড়ির কথা
ঘরের গলিতে ঘুরে বেড়ানো
চুপিচুপি শিকারির মতন।
ভূলে গেছে বিপন্ন বন্দি খাঁচায় মৃত্যুর যন্ত্রনা ছিঁড়ে
হয়তো মুক্তির তরে মৃত্যুর পথে উড়ে গেছে ডানা মেলে।
খুঁজে বেড়াই কুড়িটি বছর পেরিয়ে চলার পরে
যদি আবার দেখিতে পারি জনতার ভিরে তারে।
কবিতা
কবিতা
মৌমিতা সামন্ত
শুকতারা হয়ে ,প্রতি নিশি শেষ প্রহরে
হাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করেছি||
দিবসের ঝকঝকে আলোয় ম্রিয়মান
আমার আলোক স্তুপ;
রাতের সপ্তর্ষি ও কালপুরুষের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা নেই..
তোমার অন্ধকারে অবহেলার ভাষা-
আমার প্রতি রাতের ঘুম চোর|
অভিমানের মেঘে বৃ্ষ্টি ঘনায় ,
তবুও শাণিত নয়ন,
সারা আকাশ জুড়ে শুধু তার প্রতীক্ষা,
সুখের অভিনয়ে সে শ্রেষ্ঠ দাবিদার:
এক সন্ধ্যায় অচেনার মতো,
এক আকাশ পূর্নিমার সাথে
হাঁটা মনে আছে..
সেদিনের অজানা পশ্রয় মনে আছে,
পাশাপাশি সেদিনের হাঁটা পথ
কখন যে রাজপথের দাগ
কেটেছিল---কে জানে!!
সভ্যতার অহংকারে নয়,
সৌজন্যতাই এক সুতোয় মালা পিরোয়িছে||
বসন্তের পাতা খসানোর পরে,
একটা একটা করে সবুজ পাতা বুনেছে:
সেদিনের প্রশয় আজ নতুন
আবিষ্কার,
তবুও আকাশ শূন্য,
জোতিষ্কের আলো বহু আলোকবর্ষ দূরে||
বালুচরে তাসের ঘর
সাথী মন্ডল...
ঝিকিমিকি করে বালি
চকচকে জল
ঢেউগুলি খেলে পাড়ে
করে কোলাহল|
দুই ধারে দুই মাঝি
নদী তোলপাড়
নায় খায় গান গায়
করে খেয়াপার|
জল বালি দিয়ে ঘর
যতবার গড়ি
ঢেউ এসে ধুয়ে যায়
কাকে বকিমারি?
বৃথা চেষ্টা বারেবারে
মন ছুটে যায়
বালুচরে নাম লিখি
ঢেউ মুছে ধায়...
ভালোবাসা নীলখাম
বাতাসেতে পত্র
উড়ে গেলো পরপাড়ে
হাতে নেয়া মাত্র|
জোঁয়ারের জল বুকে
ডুবে গেলো চর
ভেসে গেলো হাতে গড়া
চোরাবালি ঘর|
শারদপ্রাতে উমা তুমি এস
মাম্পি রায়
শারদপ্রাতে,
হিমেল পবন বইছে মধুর
শরৎ গহনে,,,
উছলে পড়া হর্ষ ছড়ায়
উমার আবাহনে।......
ভোরের ডালা সাজ দিয়েছে
শিউলি গহনায়,,,,
ভানুমতী দিচ্ছে পাড়ি
কাশ_কাননের পাড়ায়।
শুক্লপক্ষষষ্ঠী কালে
হবে সু_বোধন,
বরণডালা সাজিয়ে
মাকে করি আমন্ত্রণ, ......
সপ্তমীতে সবে মিলি
পাড়ার মন্ডপে,
সকাল হতে মাঝরাত্তির
পূজোর সাজে সেজে,
দেদার আড্ডা আর কি চাই;
হালকা মেজাজে,,ঃ.....
অষ্টমীতে মতুন শাড়ী,
গয়নাগাটি হালকা_ভারী,,
শরৎ_পদ্ম পুষ্পাভরণ
মায়ের চরণে।......
নবমীতে আরাধনা
সন্ধ্যারতি সেরে,
হই_হুল্লোড়, খাওয়া_দাওয়া
পাড়ার গলি, মোড়ে;......
দশমীতে ধুনুচি নাচ,
ঢাকুরিয়ার তালে,
"আরতি চলছে কেমন..?
বেশ! বেশ!
রোটবে পলে পলে।....
বিজয়াতে মায়ের বিদায় ;
পান,মিষ্টি, সিঁদুর খেলায়,,
মায়ের এবার যাবার বেলায়
শোকের ছায়া নামল ধরায়;
মা_কাকিমা, সবার হাসি
ধীরেধীরে মিলিন,
বিসর্জনের অশ্রুধারায়
ভাসবে এ ভুবন।।...... I
অঙ্কন- মৌরুসি দত্ত
No comments:
Post a Comment