Sunday, June 2, 2024


 


মুক্ত গদ্য 


বাবার কথা
অলকানন্দা দে


নিঃশব্দে ঝরে পড়া নিষ্ঠা যখন সংসারকে মায়া ভালোবাসা কর্তব্যের অদৃশ্য ডোরে বাঁধে, নিজেকে আবিষ্কার করা যায় যখন প্রগাঢ় মজবুত ছাউনির তলে, ভাবনারা যখন নিরাপদের নামগান করে, গোটা গোটা অক্ষর যেখানে সুখে অসুখে জীবনভর বলে যায় “আমি আছি তো” তখনই আমার আহামরি সৌভাগ্য এতবড় নিখিলে আস্কারা পেয়ে যায় অহংকারের। মনে করে বিশ্ববিজয়ের প্রেরণা তো আমারই দখলে। “বাবা” এই নির্বিঘ্নের আশ্রয়টিকে নিয়ে নতুন কি বলি! তাঁর দায়িত্বপালনের কথা তাঁর ত্যাগের কথা উপলব্ধি করি চেতনার সবটুকু দিয়ে। যিনি বিরুদ্ধ বাতাসেও ভরসা যোগানোর মতন সত্যের সাধক। আমাদের শৈশব থেকেই আত্মবিশ্বাসী করে তোলেন সেই পুণ্যটুকু দিয়েই। এই জোরেই আমরা জীবন সাজাতে পারি হয়তো আশানুরূপ সাজে। এই আত্মবিশ্বাস আমাদের স্বপ্ন ও বাস্তবের মধ্যে সেতুবন্ধন করে। তাঁর দৃঢ় প্রত্যয়ের শরণ্যে একটি সংসার সুনাম কুড়োয়। অপত্যরা একটু একটু করে ফুটে ওঠে শুক্লা প্রতিপদের চাঁদের মতো। সকলের স্বাচ্ছন্দ্যের সম্পূর্ণ আয়োজন করতে গিয়ে তাঁর যে যুদ্ধ চলে সময়ের সাথে, পরিস্থিতির সাথে সেই আলেখ্য আড়ালেই রাখেন তিনি। এটাই তাঁর চিরপরিচিত রূপ। আমরা টের পাই না তাঁর মগজে আছড়ানো শত ঝড়ঝাপটার তান্ডব। ধুয়ে মুছে দিয়ে যায় না-জানি কত সততা, পরিশ্রমকে। তবুও তিনি আঁকড়ে থাকেন মাটি তাঁর মায়া ও দায়িত্বের সুনীল সংসারের জন্যে। খিদের থালায় অন্ন, বোধের দেরাজে শিক্ষা এবং বিনোদনের রেকাবিতে আনন্দের যোগাড় দিতে গিয়ে যিনি ক্লান্তিকে জব্দ করেন তিনিই পিতা। আমরা অনেক সময়ই এই পাওনাগুলোকে বড় অনায়াস ভেবে ফেলি। আসলে খুব সুক্ষ্মভাবে বলতে গেলে তিনিই স্বেচ্ছায় এই বোধের জন্ম দেন আমাদের মননে। সকলের এই তৃপ্তি এবং দ্বিধাহীন আবদারের নরম সুরই তাঁর কাজের প্রেরণা হয়তো। এই বিশ্বাসের ভূমিতেই তাঁর আজীবন চলাচল।

সংসার তাঁকে বিশ্রামের তেমন সূযোগ দেয় না। তাতে তাঁর মেহনতে ভাঁটা পড়ে না তিলমাত্র। মায়াবী চাদর হয়ে লেপটে থাকে সাংসারিক টানাপোড়েনের রাত্রিদিনগুলো। তবে কি পরিবার থেকে তাঁর কিছুই অভিলাষ থাকে না! নিশ্চই থাকে। আশায় আশায় পোড়া দুচোখ সন্তানকে দেখতে চায় মজবুত ভূমিতে নিয়তি গড়তে। একদিন সন্ততির পরিচয়ে পরিচিত হওয়াটাই এই গোটা জীবনের মহার্ঘ পারিশ্রমিক হয়ে ওঠে তাঁর কাছে। কর্মে, স্বভাবে, মানসিকতায় একজন কৃতী সন্তানই পিতার মনে স্বস্তি রচনা করে অসীম বিস্তারে। জীবন গোধূলিতে দাঁড়িয়ে তাঁকে ভাসায় ধ্রুব অভিমানের নম্র আলোর জোয়ারে।


No comments:

Post a Comment