এ কেমন নববর্ষ
জয়তী ব্যানার্জী
প্রিয় বন্ধু
চারিদিকে অশান্ত বাতাবরণ ,অস্থির পরিবেশ মনটাও বড্ড খারাপ। এই জন্যই তো কালি কলম এক করে বসলাম, রবি ঠাকুর তোমায় একটা চিঠি লিখব বলে।
তুমি বলেছিলে ,
"ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই
ছোট সে তরী "
কিন্তু সত্যিই কি কবিগুরু আর ঠাঁই হলো না। আমরা কি এতটাই বোঝা হয়ে গেলাম ? কিছুই যে বুঝতে পারি না গো। মনটা বড় অস্থির কিন্তু প্রকৃতি তো বসে থাকে না। কোকিলের কুহুতানে আকাশ বাতাস ধ্বনিত হয়, বাসন্তিক দুর্গোৎসবের বাজনা দূর হতে দূরে মিলিয়ে যায়। যেখানে অঞ্জনা নদী তীরে খঞ্জনী হাতে নিয়ে পথ চেয়ে বৃদ্ধা বসে থাকে । কবি তুমি তো পারো, কালবৈশাখীর উড়ো হাওয়ায় সবকিছুকে উলটপালট করে দিতে। বাউল বাতাসরুপী ঝড় কে আলিঙ্গন করে তোমার স্নিগ্ধ লালায়িত কলমের আঁচড়ে বেঁধে দিতে। তাহলেই বোধ হয় সাতমহলার স্বপ্নপুরীর হাজার বাতি নিভে যাবে, চারিদিক আলোর রোশনাইতে ভরে যাবে।
মুক্তকণ্ঠে যদি আরও একবার গেয়ে ওঠো,
'আমার মুক্তি আলোয় আলোয়'......
তবে তো বন্ধু পৃথিবী বোধহয় শান্ত হবে ।প্রকৃতির নিয়মে আমরা যে পথযাত্রায় শামিল হই, সেখানে তো বারো মাসে তেরো পার্বণের ভিড়ে ঠাই পাওয়া ভার। চরক শেষে ছেলের দলের ঢাক- ঢোল নিয়ে নগর সংকীর্তন আজও যেন কানে আসে,
আহা কি আনন্দ
আকাশে বাতাসে
শাখে শাখে পাখি ডাকে
কত শোভা চারিপাশে
কিন্তু সেই মহানন্দের দিনে আমরা কি আনন্দে শামিল হতে পারছি ?পারছিনা ।কবি আজ আমরা দ্বিধাগ্রস্ত ।পায়ের তলার শক্ত মাটি ও বোধহয় নড়বড়ে ।
কিন্তু ,
কিন্তু কেন ,এমন দৈন্যদশা? বাসন্তিক কুহুতান কে বিদায় দেওয়ার আগেই প্রকৃতি যেন তৈরি হয়েছিল নববর্ষকে বরণ করবার জন্য। কিন্তু সে বোধ হয় প্রস্তুত নয় ।
কিন্তু বন্ধু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না ।যে মাটিতে জন্ম নেয় সীতা ,সাবিত্রী ;
যে মাটি ধন্য মাতঙ্গিনী, প্রীতিলতার রক্তে;
যে মাটিতে অন্যায় সমাজের বিরুদ্ধে রাজনন্দিনী জেহাদ ঘোষণা করে ;
সেই মাটিতেই তো শরৎ বাবু র সাবিত্রী চৌকাঠের ওপারে থেকেও নিজের অস্তিত্বকে জানান দেয়। কেন তোমার সন্দীপ ;তোমার গোড়া ----এরা কি পারে না অসির বদলে মসী হয়ে সমাজকে রক্ষা করতে? মাকে রক্ষা করতে তোমার বীরপুরুষ ছেলে যেমন ঘোড়া ছুটিয়ে যায়, ঠিক তেমনি মিনিও তো খুঁজে পায় আরেক পিতৃস্নেহ সেই ঊষর মরুপ্রান্তরের কাবুলিওয়ালার মধ্যে। তাহলে কবি ____
তুমি ই বলো, তুমি বলে দাও---- আমরা কি হারিয়ে যাব? নাকি হেরে যাব এই নৃশংস অত্যাচারিত সমাজের কাছে। তা তো হতে পারে না। তুমিই তো শিখিয়েছো জীবনের জয় গান গাইতে। তোমার হাত ধরেই তো শিখেছি,
"সংকটেরও বিহ্বলতায় হয়ো না ম্রিয়মাণ"
সত্যিই কবি আজ তুমি বহুদূরে ।আমাদের নাগালের বাইরে ,কিন্তু তুমি আজও আছো। তুমি আছো বলেই তো পোস্টমাস্টারের নৌকো পালে বাতাস লাগিয়ে পৎ পৎ করে বয়ে যায় ।আর রতন নদী পাড়ে বসে ভাবে," পালে যখন বাতাস লাগিল মনে হইল এই পৃথিবীতে কে কাহার "...কিন্তু আমাদের ছোট্ট রবির সাথে আজও কিন্তু নতুন বছরের স্বপ্ন দেখি আমরা। আর বলি বা দুলে দুলে পড়িও, 'জল পড়ে পাতা নড়ে'।
মনটা বড় ভারাক্রান্ত ..তাই আজ লিখতে বসে অনেক কথা লিখে ফেললাম। আমি জানি, তুমি যে আমাদেরই লোক, তাই তুমি শুনবে ।শিলং পাহাড়ে আজও যে বন্যা বসে আছে তোমার পথ চেয়ে ।তুমি কি কেবলই ছবি ____না তাতো হতে পারে না। এই কলঙ্কিত সমাজের চাবিকাঠি আমরা তোমার কাছেই ফিরে পাব কবি ।তুমি ফিরে এসো ।তোমার জৈবিক সত্ত্বাই আবার জানান দেবে ,
"ওই মহামানব আসে
দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে"..
তবেই তো আমরাও শান্ত হব ।নতুন কিশলয় নতুন বছরকে করবে আলিঙ্গন ।দেখা হবে তোমায় আমায় ওই মিলনের পারে।
ভালো থেকো কবি ।আর ভালো রেখো আমাদেরকেও।
No comments:
Post a Comment