Sunday, November 3, 2019





সম্পাদকের কথা

দীর্ঘ উৎসব শেষে আবার ফেরা নিত্য জীবনে। আসলে স্থায়ী নয় কিছুই জীবন প্রবাহ ছাড়া। তাই আবারও শুরু দৈনন্দিনতা। 
উৎসবের আবহে যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য দেখেছি তা যদি সারা বছর ধরে পারি, তবে নিজেরাই লাভবান হব। 
খারাপ লাগে এই আনন্দঘন মুহূর্তেও পরিবেশ নিয়ে আমাদের উদাসীনতা। দেশের রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত দূষণের সম্মুখীন। জানিনা কবে আমাদের বোধ জাগবে, কবে আমরা বুঝতে শিখব। 
তবু হেমন্তের এই সময়ে, নবান্নের এই দেশে একটিই আশা যে, একদিন সুদিন আসবে।     


 মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন কার্তিক সংখ্যা ১৪২৬


মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা 
হসপিটাল রোড 
কোচবিহার 
ইমেল  ঠিকানা- mujnaisahityopotrika@gmail.com
প্রকাশক- রীনা সাহা 


সম্পাদনা, অলংকরণ ও বিন্যাস- শৌভিক রায় 



 কোনো এক কার্তিকের নবান্নের দেশে...


 ঋতুবদলের পালাকার
     কুমকুম ঘোষ

- ঈষৎ হাস্য করে , কনে দেখা আলোর  মোহ ঝেরে ফেল, দেখা-না- দেখার বিপন্নতা দূরে সরিয়ে রেখে;  টলমল পায়ে  আঁধার নেমে এলো নিমতলা স্ট্রিটে র কোণাকুণি। রাস্তাটা সোজা চলে যাচ্ছে শ্মশানে র দিকে। এখানেই একদিন শ্রাবণের বাইশে' বৃষ্টি থমকে দাঁড়িয়েছিল, নতজানু মেঘ প্রসারিত ডানায় উদ্বিগ্ন ও ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল যাবতীয় বিস্ময় ঝেরে ফেলে। 

সে কোন বিগত শতকের কথকতা: সে সব ই ভুলে গেছে এ শহর।
ঋতুবদলের কাহিনী এখানে গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে ফুটপাতে, নিত্য পসারিনীর সস্তা লিপস্টিকে আর ঝিকিমিকি শাড়িতে।

এখন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে  সন্ধ্যে নামে যেন থিয়েটারের সামনের কার্টেন টা পড়ার মত; দর্শকদের হাততালি আরো কিছুটা সময় তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখতে চায় যেন কুশীলবরা; অভিনন্দন গ্রহণ কোরে, পর্দা নামার ঠিক আগে। তেমনি ভাবে নদীর ওপারে তখন ফিরোজা- লাল আকাশ দিনের সব মোহ ত্যজ্য করে  আলোর পর্দা নামিয়ে ফেলে ধীরগতিতে।

এবার নামলো বুঝি আঁধার, হৃদয়ে অথবা গোপনে।

রাস্তাটা মোড় নেয় ডানদিকে।ঢোড়া সাপের মত এলিয়ে পড়ে থাকা ট্রামরাস্তায় কচিৎ ঘটর ঘটর আওয়াজ শোনা যায়।  অযথা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সময়, পেছন ফিরে চলে যায়।
পাতা ঝরার সময় এখন। শহরের পেটে রুজির ধান্দায় ঢুকে পরার পর দৈবাৎ কেউ মুখ তুলে তাকায় ফুটপাতের কদম গাছটার দিকে। বাতাস তবু শিরশিরিয়ে উঠে কাঁপন ধরায় পাতায় পাতায়।

এ শহরে প্রকৃতির উদ্ঘাটন উদযাপিত হয় না নাগরিক হৃদয়ে, শুধু দু একটা বেয়ারা ছোকরা কখনও রঙ তুলি গিটারে ঝরে পড়া পাতার বেদনাকে সময়ের হাতে সঁপে দেয় কচ্চিৎ কদাচিৎ রবীন্দ্র সদনে অথবা নন্দনে।

সে এক সময় ছিল, দাবি ছিল হৃদয়ের কোণে কয়েকটি তরুণের; বাসনার কপোতাক্ষ নদে ডিঙা বেয়ে পাড়ি দেবে উজানে;  ক্ষয়াটে চাঁদের জ্যোৎস্না দিয়ে ভাত মেখে খাবে তারা:  সাধ ছিল ফুটপাতের পাথর স্বর্গের সুধা দিয়ে ধুয়ে দেবে বলে ;  কৃত্তিকা নক্ষত্রের আলো দু মুঠোয় ধরে জোনাকি ওড়ানোর বাসনা ছিল আমরণ।তারা জেনেছিল ফুটপাতের অন্দরে  হাইড্রেন্টের যাবতীয় কার্যকলাপের বাইরেও একটা শহরের রূপকথা  আটকে ছিল কয়েক শতাব্দী ধরে। কথা ও রূপের স্রোতে ভেসে যেতে যেতে প্রতিদিন ভোরে কুয়াশার সর মেখে ফিরে যেত তারা ধান‌ বোনার আশ্বাস বুকে নিয়ে, ফিরে যেত যে যার নিশ্চিত ঘেরাটোপে।

শুধু, অনিশ্চিত যাপনের ওম গায়ে মেখে  সেদিনের যাবতীয় বাসনার কুয়াশা ছেঁড়া কমলা রোদ‌ শুষে নিয়ে এক প্রৌঢ় আজো নিশ্চিন্তে হেঁটে যায়, মৃত সব নক্ষত্রের সাথে।

আজও ধানের গল্প নবান্নের আশ্বাস বুকে জেগে থাকে।


মুজনাই সাহিত্য পত্রিকা অনলাইন কার্তিক সংখ্যা ১৪২৬

No comments:

Post a Comment