বসন্তের ছোঁয়া
সুব্রত দত্ত
কলেজ জীবন বছর পেরিয়ে গেল পাপড়ির। তবুও আবীরকে দেখলে কেমন যেন হয়ে যায়। দেখতে ইচ্ছে করে, কিন্তু তাকাতে লজ্জ্বা করে। একসঙ্গে ছেলেমেয়েদের আড্ডা হয়। কিন্তু সেখানে আবীর থাকলে পাপড়ি সিঁটিয়ে থাকে। আবীর চলে গেলে পাপড়ির মুখে বুলি ফোটে। এই নিয়ে বন্ধুরা হাসাহাসি করে। মধুশ্রী একদিন বলে,
--- "আবীরকে তুই অ্যাভয়েড করিস কেন? খারাপ কিছু করেছে?"
পাপড়ি জিভ কেটে বলে,
--- "না না, তা কেন? কিছু করে নি তো?"
দেবিকা হেসে বলে,
--- "ও কলেজের কত মেয়ের ক্রাশ জানিস? জিনিয়াস ছেলে একটা। আমি হ্যাংলার মত লেগে রয়েছি, তবুও পাত্তা দেয় না।"
পাপড়ি দায়সারা ভাবে "হুঁ, চলি রে" বলে উঠে যায়।
রোজ আবীরকে দেখলেই পাপড়ির গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, আর চোখ নামিয়ে নেয়। এভাবেই কেটে যায় কিছু দিন।
পরের দিন দোলের জন্য কলেজ ছুটি। তাই আগের দিনেই হোলি উৎসব শুরু হয়ে যায় কলেজে। পাপড়ি কলেজের গেটের ভেতরে যেতেই সামনে এসে দাঁড়ায় আবীর। পাপড়ি কি করবে তা ভেবে উঠতে পারে না। শুধু বলে,
--- "কি হলো?"
আবীর বলে,
--- "দেবো?"
পাপড়ির অজানা আতঙ্কে তাকিয়ে বলে,
--- "কি"?
-- "শুধু কপালে একটা টিপ দিতে পারি?"
চমকে ডাগর দু'টি চোখ নামিয়ে নেয় পাপড়ি। পড়ন্ত শীতেও তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটে ওঠে। সে যেন অথৈ জলে পড়েছে! থার্মোমিটারে মাপলে নির্ঘাত জ্বর উঠবে 105 ডিগ্রি!
--- "কি হল, উত্তর নেই যে?"
আবিরের প্রশ্নে পাপড়ি মাথা নীচু করেই থাকে। তার ঠোঁট দু'টো কেঁপে ওঠে শুধু।
--- "ও, ইচ্ছে নেই তাহলে! ঠিক আছে, যাও। আমি জোর করবো না।" মনক্ষুণ্ণ হয়ে আবীর বলে।
--- "না!" পাপড়ি আঁতকে উঠে বলে, "তা নয়! ঠি-ঠিক আছে। দা - দিন।"
আবীর জোরে হেসে বলে,
--- "দিন আবার কি? দাও বলতে পারো না?
--- "না, মানে - হ্যাঁ" মাথা নেড়ে বলে পাপড়ি।
আবীর তার নতুন প্যাকেট খুলে লাল আবীরের টিপ পরিয়ে দেয় পাপড়ির কপালে। পাপড়ি চোখ বন্ধ করে এক অচেনা শিহরণ অনুভব করে। আচমকা বহুকাঙ্খিত এক মনের মানুষের স্পর্শ! আবেশ জড়ানো কন্ঠে বলে, "হয়েছে?"
--- "না, হয় নি।"
পাপড়ি বড় বড় চোখে তাকিয়ে বলে,
--- "তার মানে? আবার কি?"
আবীর তার মুখটা পাপড়ির মুখের সামনে নামিয়ে এনে বলে,
--- "তুমি দেবে না আমায়?"
--- "আ-আমি যে আনি নি!"
--- "কি আনো নি?"
--- "আবীর!" বলেই পাপড়ি জিভ কাটে। এবার মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে যাবে। কানে শোঁ শোঁ শব্দ শুধু শোনে সে।
--- "এই যে, আবীর!"
পাপড়ি দেখে, তার দিকে এগিয়ে দেয়া আবীরের হাতে সদ্য খোলা আবীরের প্যাকেট। পাপড়ি মন্ত্রমুগ্ধের মত সেই প্যাকেটের দিকে ধীরে ধীরে হাত বাড়ায়। কিছুটা আবীর নিয়ে মাখিয়ে দেয় আলতো করে আবীরের কপালে, গালে। পাপড়ি রীতিমত কাঁপছে। এই প্রথম কোনও পুরুষকে স্পর্শের অনুভূতি পেলো সে। পুলকে যেন এক পরম সুখের শিহরণ বয়ে যায় তার শরীরে। আর আবীর পাপড়ির নরম হাতের ছোঁয়ায় বিবশ হয়ে বলে,
--- "এবার তো চোখ খোলো।"
আবীরের কথায় সম্বিত ফিরে পেয়ে পাপড়ি ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায় সরাসরি আবীরের চোখে। কিছু একটা বলতে যেতেই, হাততালি আর কলরবে হতচকিত হয়ে ওরা দেখে, সব বন্ধু বান্ধবীরা ওদের ঘিরে রয়েছে। সারাটা দিন বেশ আনন্দেই কাটে। বসন্তোৎসবের প্রাক মুহূর্তে প্রথম স্পর্শে ওদের দু'জনের জীবনের প্রথম বসন্তের রঙে রঙিন প্রজাপতি ডানা মেলে।
মুজনাই সাপ্তাহিক বিশেষ সংখ্যা
'আনন্দ বসন্ত সমাগমে....`
No comments:
Post a Comment