আজকের নারী
সোমা দে
বিভেদটা সেযুগেও ছিল আজও আছে তবে তুলনামূলকভাবে কম হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। সমাজ যেখানে পুরুষতান্ত্রিক সেখানে নারীদের খানিকটা লড়াই করেই যে সাফল্যের শিখরে পৌঁছতে হবে সেটা স্বাভাবিক। শুধু ঘরের কোণে ভয়ে , লজ্জায় লুকিয়ে থাকার অন্তর্মুখী প্রবণতাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে আজকের নারীরা বহির্মুখী হয়েছে। শারীরিক কিংবা মানসিক দিক থেকে পুরুষের তুলনায় দূর্বল বলে পিছিয়ে রাখা যায় না আজ আর কোনকিছুতেই। যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে অর্থাৎ ঘরে বাইরে নারীরা সমান তালে সামলে নিচ্ছে সবটা। মহাকাশ থেকে মহাসাগরের গভীরে নারীরা নিজেদের বিচরণের পথ প্রশস্ত করে চলেছে ক্রমাগত।
সবচেয়ে বড়ো কথা লিখতে ও পড়তে শিখে গেলে জীবনই আমাদের অনেকটা সামনের দিকে এগিয়ে দেয়। যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের শক্তি দেয় শিক্ষা। নারীদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এখন সরকারিভাবেও যথেষ্ট পরিমাণে সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অক্ষর জ্ঞানের সাথে সাথে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কর্মশালার আয়োজন করে নারীদের নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যবস্থা এখন রয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নারীদের সুরক্ষা দিতে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে যাতে স্বাবলম্বী হবার পথে কোন বাঁধা না এসে দাঁড়াতে পারে , এই সাপোর্টটা কয়েক বছর আগেও নারীদের ছিল না।
ভারতবর্ষে প্রায় সকল পেশাতেই আজকাল নারীরা কর্ম কুশলতা প্রমাণের সুযোগ পান। রাজনৈতিক , প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন আজকের নারীরা।কিন্তু কিছু কিছু দেশে নারীদের ওপর অহেতুক ফতোয়া জারি করে তাদের প্রাপ্য অধিকার ও সম্মান থেকে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে কূটনৈতিক চক্রান্ত করে।
তা সত্ত্বেও আজকের তারিখেও যে নারীদের ওপর অকথ্য স্বৈরাচারী আচরণ আমাদের সমাজে একদম হচ্ছে না তা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রতিদিনের খবরের কাগজে নারীদের ওপর ঘরোয়া হিংসার প্রতিবেদন চোখে পড়ে। আসলে নারীরাও পুরুষের ন্যায় মানুষ তাদের প্রতি শ্রদ্ধা , ভালোবাসা ও সম্মানের বীজটা হয়তো পুরুষের মনে শিশু অবস্থাতেই পুঁতে দিতে হয় আর এই কাজ একমাত্র সম্ভব পিতা-মাতা ও পরিবারের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। শৈশবে মা সহ পরিবারের অন্যান্য নারী সদস্যদের প্রতি অসম্মান দেখে বড়ো হতে থাকলে তারা ভবিষ্যতে অন্য নারীদেরও যথাযথ সম্মান করে উঠতে পারে না এবং তাদের হিংস্র ও আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশ পায়। অতএব গোঁড়াতেই যদি সঠিক পরিমাণে জল দেয়া যায় তবেই সুস্থ সমাজ নামক মহীরুহের শাখা প্রশাখা বিস্তার করবে দিক দিগন্তে। যেখানে নারী পুরুষ উভয়ে সমানভাবে এগিয়ে যাবে। আরো একটি মূল কথা তারা যে উভয়েই একে অপরের পরিপূরক , একজন ছাড়া অন্যজনের সৃষ্টিই অসম্ভব।
শুধুমাত্র নারী কিংবা পুরুষ তা হয়না কখনোই তাই নারীরা যাতে পুরুষদের তুলনায় পিছিয়ে না পরে সেদিকে লক্ষ্য রাখা সামাজিক জীব হিসেবে সকলেরই কর্তব্য। সম্মানের বহিঃপ্রকাশ শুধু নারী দিবস উদযাপনের মঞ্চে করলে হবে না এর শুরুটা হতে হবে আমার আপনার ঘর থেকেই।
No comments:
Post a Comment