আষাঢ়ের সেই রাত...
নবনীতা সরকার
আষাঢ় এলেই মনের ভেতরটা হু হু করে ওঠে বীথির৷আজ এতগুলো বছর পরেও সেই দিনটা একভাবেই কাঁদায় তাকে ৷অনেক চেষ্টা করেছে ,কিন্তু আষাঢ়ের একটানা বৃষ্টির রাতগুলো তাকে ভুলতে দেয় না কিছু ৷ চোখের সামনে সব কালকে ঘটে যাওয়া ঘটনার মতো পরিষ্কার ভেসে ওঠে...৷
সেবার টানা বৃষ্টি হচ্ছিল ক'দিন ধরে ৷ চারিদিকে জল ,কাদা ৷ বীথি বরাবর ভীষণ আতুকী ৷জল কাদা দেখলে বিছানা ছেড়ে নামত না সহজে ৷ তাকে প্রচ্ছন্ন মদত দিত তার দাদা ৷ ছোটো থেকে বাবাকে হারিয়ে দাদাই ছিল ওদের সংসারের সব ৷ সেদিন লোডশেডিং ছিল ৷ তার মা সন্ধ্যের জলখাবার করতে বসে, একটু কেরোসিন তেল ভাঁড়ার ঘর থেকে আনতে বলেছিল বিথীকে ৷ ভাঁড়ার ঘরে যেতে হলে উঠোন পেরিয়ে যেতে হত,তাই যথারীতি গরিমসী করছিল বীথি ৷ মায়ের কথা না শোনার ভান করে চুপচাপ ছিল সে৷ বোন যাতে বকুনি না খায় তাই কেরোসিন তেল এনে দিয়েছিল দাদা ৷এভাবে কতবার জীবনে দাদা যে তাকে মায়ের বকুনি আর মারের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল....!
তেল এনে চা খেয়েছিল দাদা ৷ তারপর হঠাৎই শুয়ে পড়েছিল ৷শরীর খুব খারাপ লাগছে বলছিল ৷ তারা ,মা-মেয়ে, দুজনেই অবাক ৷হঠাৎ এমন কি হল ...! বীথির প্রথম মনে হয়েছিল যেন, দাদার মুখটা কেমন নীল হয়ে আসছে ৷ কথা জড়িয়ে যাচ্ছে ৷ ঝড় জলের রাত উপেক্ষা করে ,পাড়ার কবিরাজ কাকুকে ডেকে এনেছিল সে ৷ কাকু এসে দেখেই ,চমকে উঠেছিল..
-আরে এতো বিষধর সাপে কামড়েছে বিশ্বকে ! বুঝিসনি তোরা ?সর্বনাশ !
এ কথা শুনে বীথি আর তার মায়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল ৷ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল দুজনেই ৷ কবিরাজ কাকু না জানি কোথা থেকে একটা ঠেলা গাড়ি জোগাড় করে এনে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল দাদাকে ৷ বীথি গিয়েছিল পেছন পেছন ৷ বিথীর মা বিছানায় বসেছিল পাথরের মতো ৷ হসপিটালের ডাক্তার বলেছিল আর কিছু করার নেই ৷ দেরি হয়ে গেছে অনেক ৷ সেদিন রাতটা বীথির জীবনের অভিশপ্ত রাত... ৷আজ আবার তেমন আষাঢ় এসেছে আকাশ ছেয়ে ৷ মন খারাপ করা বৃষ্টিতে নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হয় বীথির ৷ দাদার মৃত্যুর জন্য নিজেকে আজও দায়ী ভাবে সে ৷ কেন যে সেদিন তেলটা আনতে ভাঁড়ারে গেল না সে !!
(মুজনাই অনলাইন আষাঢ় সংখ্যা)
No comments:
Post a Comment