Wednesday, September 3, 2025


 

শতবর্ষ 

"এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি..."

গৌতমেন্দু নন্দী

কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্মশতবর্ষের আলোকে  আলোকিত তাঁর  "ছাড়পত্র" কবিতার উপরোক্ত লাইন আজকের এই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে হয়ে উঠুক আমাদেরও " অঙ্গীকার"--------


            শিশু মনের মনোযন্ত্রণা আমরা কি উপলব্ধি  করতে পারি, না উপলব্ধি করতে চাই?  সদ্য হাঁটতে শেখা " হাঁটি হাঁটি পা পা" করে ঘরের  চারদেয়ালের মধ্যে শিশুর ঘুরে বেড়ানোর সময়টুকুও কেড়ে নিয়ে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিদ্যালয়ের  গন্ডিতে। খাঁচায় বন্দী পাখির মতো ইচ্ছে ডানা মেলে কল্পনার আকাশে উড়তে পারছে কি?!
         
 "ছোট খোকা বলে অ--আ--শেখেনি সে কথা  কওয়া...." কথা বলতে না শিখলেও তাদের যেন বন্দি করে রাখা হচ্ছে"বিদ্যালয়" নামক যান্ত্রিক এক চৌহদ্দির গন্ডিতে। মুখের ভাষা স্পষ্ট হওয়ার আগেই তাদের ব্যাকরণের জটিল তত্ত্ব শেখানো হচ্ছে। বাঁধ দিয়ে যেমন আটকানো হয় নদীর জলের স্বাভাবিক প্রবাহ তেমনি শিশু মনের স্বাভাবিক  বিকাশকেও জোর করে চাপা দেয় নিয়ম-শৃঙ্খলের পাথর। যে পাথরের চাপে কচি মনের সবুজ ঘাসগুলি  ক্রমশই নিরাপত্তাহীনতার বিবর্ন,মলিন ঘাসে পরিণত হতে থাকে।  সামাজিক এই অনুশাসনের ফলে, নিয়মের কঠোর বেড়াজালে তারা পরিণত হচ্ছে  "বনসাই"-এ। ছেটে ফেলা হচ্ছে তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি--বিকাশের শিকড় গুলি। পরিপূর্ণ "মানুষ" হয়ে ওঠার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বাসযোগ্য পরিসর তারা পাচ্ছে কি?!

              "এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব..." না, এ কবির কোন রোমান্টিক উচ্চারণ নয়, তাঁর  কন্ঠ নিঃসৃত অঙ্গীকার ----এক মন্ত্রোচ্চারণ! এই শপথবানী, এই হৃদয়মন্দ্রিত ধ্বনি আকাশ বাতাস কে যখন মথিত করেছিল তখন ঘটে গেছে  সাম্রাজ্যবাদের পতন আর অভ্যুত্থান ঘটতে চলেছে তখন সমাজতন্ত্রের। জনসমাজের সেই প্রতিভু, নবজীবনের সেই ঋত্বিকের সেই মন্ত্র যখন উচ্চারিত  হল তখন শান্তির আকাশে জমছে সন্ত্রাসের ঘন  কালো মেঘ, বাতাসে বারুদের গন্ধ। 

       রাজনীতি আর ধর্ম যখন একাকার, ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে আর্থিক সংকট, যুবসমাজের সামনে হতাশার অন্ধকার, নির্বিবাদে  চলছে সবুজের বিলোপ সাধন, মাঠে ঘাটে জলাভূমি  সাফ হয়ে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে বহুতল, বই পাঠের অভ্যাস কমে মুঠোফোন নির্ভরতা বেড়েই 
চলেছে, সমাজ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে খুন,ধর্ষনের  ক্রমবর্ধমান সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, শিক্ষায় দুর্নীতির
আগ্রাসনে দিশেহারা ছাত্র সমাজ,  ক্ষমতা সর্বস্ব হিংস্র রাজনৈতিক দলাদলিতে অতিষ্ঠ সমাজজীবন তখন যে শিশুটি ভুমিষ্ঠ হয়ে প্রথম দেখবে পৃথিবীর আলো  তার কাছে কোন্ দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করব?  সেই সদ্যজাতর নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ মনের পবিত্রতা  রক্ষা করতে পারব?  ক্রোধ, হিংসা, সন্ত্রাসের আবহ থেকে  মুক্ত করে তাকে পাপ, দূষণমুক্ত এক উন্নত সমাজের আলোয় আলোকিত করতে পারব তো? 

     পৃথিবীর বুকের সমস্ত জঞ্জাল সরিয়ে ঐক্য, সম্প্রীতির দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টাই  সার্থক করে তুলতে পারবে কবির "অঙ্গীকার" কে-------এই শপথ, এই প্রতিজ্ঞা আমাদের উচ্চারিত মন্ত্র থেকে হয়ে  উঠুক আমাদের আর্তি----আমাদের জাতীয় আর্তি, আমাদেরও  অঙ্গীকার।

No comments:

Post a Comment