Wednesday, September 3, 2025


 
শারদীয়া 

অন্য দুর্গা
অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী

হাতছানি দেয় আলোর শহর
বাঁচার তীব্র আর্তনাদ, 
জীবন জানে মানিয়ে নিতে
হোক বা সে এক মারণফাঁদ.. 

চড়া প্রলেপ রঙিন সাজে
নিত্য বিকোয় বিবেক বোধ, 
পেটের জ্বালা সর্বগ্রাসী
তার কাছে তাই কন্ঠরোধ.. 

শয্যাশায়ী মা জানে মেয়ে
আয়ার কাজে রাত কাটায়, 
বাড়িতে হা পাঁচটি মুখের
কষ্ট করে ভাত জোটায়.. 

এই ছুতোতেই বস্তি থেকে
আনল টেনে এক মাসি, 
আয়ার কাজের নামটি করে
জীবন হলো বানভাসি.. 

বস্তি থেকে বাসা বদল
ভাড়া বাড়ির এক কোণে, 
বারো ঘর তার এক উঠোনে
হাজার অসুখ কর গোণে.. 

আঁকড়ে ধরে খড়কুটো তাও
পালিয়ে যাবার উপায় নাই, 
তিনটে ছোট ভাইবোন,মা
দুখের ঘরের আপন ঠাঁই.. 

দিনের বেলার শ্রান্ত শরীর
নির্ঘুম চোখ আরাম চায়, 
ঘরকন্নার চাহিদারা
থাকে অটল প্রতীক্ষায়.. 

পরের বোনটা বাঁকা হাসে
কান্না ভেজায় সব আবেগ, 
মনমরা এক ছবি আঁকে
ভবিষ্যতের কালো মেঘ.. 

নতুন জামা,নতুন জুতো
দিদির কাছে বায়না রোজ, 
একলা আয়ের অভাবী ঘর
নতুন গন্ধে পুজোর খোঁজ.. 

সস্তা সুগন্ধি ছাপিয়ে হঠাৎ
উমার ঘ্রাণে শিউলি বাস, 
পথের আলোছায়ায় খোঁজে
বাবার আদর,স্নেহপাশ.. 

পুজোর ছুটি নেই এ কাজে
 ওভারটাইমে চড়িয়ে দাম, 
কত অসুর দগ্ধ করে
'যৌনকর্মী' পোশাকী নাম.. 

দুর্গা মায়ের মুখটি দেখার
অধিকার নেই হুমকি জোর, 
নষ্ট মেয়ের তকমা দিয়ে
একজোট সব পাড়ার মোড়.. 

মুখ না দেখেও দশভূজার
চোখের তারায় মায়ের স্থান, 
শক্তি চেয়ে লড়াই করার
ক্ষত বুকে অভিমান.. 

প্রতিদিনের বিসর্জনে
ঘরের উমার রিক্ত রাত, 
মিথ্যে আলোর প্রহর গোনে
কলঙ্কের ওই নষ্ট চাঁদ....

No comments:

Post a Comment