ভ্রমণ
তুঙ্গভদ্রা সব জানে
 কবিতা বণিক
বসে আছি তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে। এখানেই বিজয় নগর সাম্রাজ্য ছিল। যার খ্যাতি সারা ভারতবর্ষ জুড়েই ছিল। সে তো হাজার বছর আগের কথা। তারও কয়েক হাজার বছর আগে ছিল কিষ্কিন্ধ্যা রাজ্য। সেই পাহাড় , গুহা আজও প্রমান হিসেবে পাওয়াযায়। আজও প্রচুর কপি সেনারা চারিদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। শুনলাম দুটো নদী মিলে হয়েছে তুঙ্গভদ্রা। উন্নত কোন কল্যাণকর জলধারা যার অর্থ তুঙ্গভদ্রা। সত্যিই কি “ হা সীতে! হা সীতে!” রবের দুই অশ্রু নদী বয়ে এসেছিল? সৃষ্টি হয়েছিল এই উন্নত কল্যাণকর জলধারার? এই জলধারার পাশেই অর্থাৎ তুঙ্গভদ্রা নদীর পাশেই খ্যাতির শীর্ষে থাকা বিজয়নগর সাম্রাজ্য ছিল। এখন তার ধ্বংশাবশেষ আছে। সেই জলধারা কলকল শব্দে আজও রামায়ন গাইছে। মন দিয়ে শুনছি। শ্রীরাম কাঁদছেন আর বৃক্ষ, লতা ,পাহাড় সবাইকে জিজ্ঞেস করছেন “ দেখেছ আমার সীতাকে। “ বড় রাস্তা থেকে পনের কিমি দূরে আনিকুণ্ডি গ্রামে পম্পা সরোবর। মা দুর্গার এক নাম পম্পা। এই সরোবর শোনা যায় ব্রহ্মার সৃষ্ট পাঁচটি সরোবরের একটি। পম্পা সরোবরের পাশেই মার্কণ্ডেয় মুনির আশ্রম। শবরীর গুহা। প্রতিদিনের প্রতীক্ষায় শবরী থাকে উন্মুখ হয়ে। “ রাম আয়েগা।” “ রাম! আয়েগা।” এখানে কপি সেনারা সেনা বাহিনীর মতোই আজও পাহারাদার। মন্দিরের ভিতরে কখনও প্রবেশ করে না তারা।এখানেই শবরীর সাথে শ্রীরামের দেখা হওয়ার পর হনুমানের সাথে দেখা হলে হনুমান শ্রীরাম লক্ষণকে দুই কাঁধে নিয়ে কিছু দূরে ওই ঋষ্যমূক পাহাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে সুগ্রীব, জাম্বুবানের সাথে শ্রীরাম লক্ষণের দেখা হয়। এখানেই সীতা মায়ের অলংকারাদি পেয়েছিল তারা। রাম সেসব অলংকার দেখে অন্তরে তাঁর বুকফাটা আর্তনাদ। অশ্রু বারি বুক ভিজিয়ে শান্ত করছে শ্রীরামকে।এই সে গুহা যেখানে সুগ্রীব লুকিয়ে ছিল। এটাই ঋষ্যমূক পর্বত। এই পাহাড়ে বালির ওঠা বারণ ছিল। এক ঋষির অভিশাপ ছিল। ঋষ্যমূক পাহাড়ে চড়লে সে মারা যাবে। বালি সুগ্রীবকে তার রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দিলে সে এই পাহাড়ের গুহায় থাকত। এখানেই ঐ তো অঞ্জনাদ্রি পাহাড়। হনুমানের জন্মস্হল। ৫৫০ সিঁড়ি পার করতে হয়। অখণ্ড চালীসা পাঠ আজও চলছে। কত বছর ধরে ! কখনও থামে না। আশ্চর্য মানুষের ধৈর্য। ও ভক্তি। সুগ্রীবের সাথে বন্ধুত্ব করে বালিকে শ্রীরাম বধ করেন ও সুগ্রীবের অভিষেক করে তাকে সিংহাসনে বসিয়ে কিষ্কিন্ধ্যার রাজা ঘোষণা করেন। তারপর সীতা কে খোঁজার জন্য চারিদিকে সেনা পাঠান। হনুমান দক্ষিন দিকে যান। রাম নামে সাগর পার হয়ে শ্রী লঙ্কায় হনুমান অশোক বাটিকায় সীতার খোঁজ পান। ঋষ্যমূক পাহাড়ের গুহায় চলে রাম, লক্ষণ, সুগ্রীব, জাম্বুবান, হনুমানের সীতা উদ্ধারের নানান ছক। এবারে তুঙ্গভদ্রা বলে “ সে তো গোপন আলোচনা। সে বলতে পারব না। “ বৃষ্টির ফোঁটায় সম্বিত ফিরল। ধন্য তুমি তুঙ্গভদ্রা! “ যেন পেরিয়ে এলাম অন্ত বিহীন পথ!”
         “যে ফুলে রচে নি পূজার অর্ঘ্য , রাখেনি ও রাঙা চরণে,
         সে ফুল ফোটার আসে সমাচার, জনহীন ভাঙা ভবনে।।”

No comments:
Post a Comment