Wednesday, September 3, 2025


 

গল্প 


নীল নগরী
 সুকল্যাণ দে 

 সমুদ্রের তীরে অবস্থিত ছোট্ট একটি জনপদ ইহানিয়া। পৃথিবীর একেবারে পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত একটি দ্বীপ। পূর্ব থেকে পশ্চিম উওর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই সূর্যদেব পেশি ফুলিয়ে ক্রমশ উত্তাপ ছড়ায় , দিনকে আলোকিত করে। কিন্তু ইহানিয়াতে কোনো সূর্যের আলো এসে পৌঁছায় না। দিন বা রাতের অস্তিত্ব এখানে অধরা।অস্তমিত সূর্যতেই এখানে প্রতিটি দিবসের শুভারম্ভ। সমস্ত জনপদটি সবসময় এক আবেশের নীল আলোতে ছেঁয়ে থাকে। এই নীলাভ আলোয় আলোকিত দ্বীপটির একটি কর্মঠ ছেলে সামেন আর একটি মিষ্টি মেয়ে শয়াচাভি। জীবিকা বলতে প্রায় সমস্ত লোকই এখানে কাঠুরে। এলাকার সকল 
ছেলেমেয়ে জঙ্গলের কাঠ কেটে পার্শ্ববর্তী দ্বীপের জনপদগুলিতে চালানি করে। এমনই একদিন সামেন,শয়াচাভি আরও গ্রামের অন্যান্য লোকজনেরা মিলে দ্বীপের একেবারে পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত আলহামীর জঙ্গলে কাঠ কাটতে গিয়েছে। সবার থেকে একটু দূরে নিরালায় সামেন আর শয়াচাভি কুড়ালের আঘাতে কাঠ খোদাই করছে। এমন সময় সামেন বলে উঠল,
_____ হ্যাঁ রে শয়াচাভি,তুই আমাকে পছন্দ করিস?
____কেনো রে ?তুই কি আমাকে নিয়ে ঘর বাঁধবি?
------ বুঝিস যখন তখন আর জিজ্ঞেস করিস কেনো? আমরা একে অপরের সঙ্গে খুব ভালো থাকবো দেখিস।
শয়াচাভি কাঠের কুড়ালটা ফেলে সামেনকে জড়িয়ে ধরে। আর বলে,
___ হ্যাঁ আমি থাকতে চাই তোর সঙ্গে।
___ কিন্তু তোর ওই মাতাল .....
___ হ্যাঁ আমি বিবাহিতা। কিন্তু ওই মাতাল স্বামীকে আমি মানতে পারি না। প্রতিনিয়ত ওর অত্যাচার আমার জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। হয়তোবা এ আমার নিয়মবিরুদ্ধ অন্যায় বাসনা কিন্তু আমার ইচ্ছে হয় তোর সঙ্গে এই নীল নগরীতেই একসঙ্গে ঘর বেঁধে আমার জীবনে একটি নতুন আলোর পথ খুঁজি।
_____ হ্যাঁ শয়াচাভি হ্যাঁ,আমি দেখাবো তোকে নতুন পথ।
অশ্রুসিক্ত নয়নে শয়াচাভিকে জড়িয়ে ধরে সামেন। কিন্তু সুখের সাগরে নজর পড়ে এক প্রতিবেশীর। শয়াচাভির স্বামীকে গিয়ে কানভরে সে। সেদিন রাতে শয়াচাভিকে অনেক মারধর করে তাঁর মাতাল স্বামী।
_____ তুই আমি থাকতে অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্ক করিস। তোর এতো বড় সাহস।
 কোনক্রমে সেদিন রাতে পালিয়ে প্রাণে বাঁচে শয়াচাভি।
এরপর একদিন শয়াচাভি নীলাভ আলো আঁধারিতে চুপি চুপি  সামেনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে। 
সামেনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হঠাৎ দেখে কালো চাদরে মুখ ঢাকা একটি লোক পেছন থেকে কুড়াল তুলে সামেনের মাথায় কোপ বসাতে যাচ্ছে। শয়াচাভি চিৎকার করে ওঠে। সামেন পেছন ফিরে সেই আপাদমস্তক ঢাকা লোকটির হাত শক্ত করে ধরে এক মোচড় দিতেই কুড়ালের সেই ধারালো কোপটি গিয়ে পরে সেই লোকটির বুকের মধ্যে। রক্তাক্ত অবস্থায় সেই অজানা লোকটি তীব্র আর্তনাদে চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে সাথে সাথে মৃত্যুকে ছুঁয়ে নেয়। চাদর সরিয়ে নীলনগরীর নীলাম্বরের নীলাভ আলোয় শয়াচাভি দেখে এ যে তাঁরই স্বামী। আসলে ওর মাতাল স্বামী চুপি চুপি ওর পিছু নিয়েছিল যা শয়াচাভি ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি।
ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে এক অজানা অচেনা ছন্দের অশ্রুধারায় ভেসে যাচ্ছে শয়াচাভির চোখ। এ কি আজ খাঁচাবন্দী পাখা ঝাপটানো পাখির মুক্তি নাকি স্বজন হারানোর ব্যাকুল বেদনায় জীবনের সূর্য আজ অস্তমিত। নীল জোছনায় সামেন আর শয়াচাভি জীবনের এক মৃত অধ্যায়ের পাশে বাকরুদ্ধ। নীল আলোয় সেই অধ্যায়ের হয়তোবা আজ অন্য প্রতিফলন। সূর্যের আলো সত্যিই পৌঁছয় না ইহানিয়াতে। এ এক নীল নগরীর নতুন উদয়ের হাতছানি।




শিল্পী- সুকল্যাণ দে 

No comments:

Post a Comment