নির্জন দুপুরের গল্প
অলকানন্দা দে
আমার অভিমানকে সমর্থন জানালো দূর কালোজামের ডালে বসা চোখ-গেল পাখি।সমব্যথিতায় বললে, চলো হে আমার ধূসরমনা বন্ধুনী, আমরা একসাথে সুখের ভেতর নামি।
আজ যা কিছু দেবার আছে সব দেব তোমাকেই।
দুপুর-দুপুর দ্বীপান্তরী হই সম্ভাবনার আকাশ ঠেলে।
নিয়ে যাই তোমার স্পর্শকাতর মনকে কোন বেলাঞ্চলে যেখানে প্রকৃতিময় চলছে শৈশবের কার্নিভাল।
ফিরে তো আসতেই হবে ভাই এই গার্হস্থ্যের বাস্তব নিবাসের উপকূলে।
তোমার এই গ্রিলভরা বারান্দার কোণে বসে যে গ্লানির ভার মাপো তা তোমার চেতনায় জ্বর ছড়ায়।
আগলে রাখা আবেগ পুড়ে হয় ছাই।
খসে পড়া তারার মতো তোমার বিপর্যস্ত চেহারা দেখে লোক হাসে।
সংসার বড় পাথরমনা গো সই!!
সেখানে আমিত্ববিহীন কোন ছবি নেই।স্বার্থের ত্যারচা রোদে জ্বল জ্বল করে বিস্মৃতির প্রান্তর।
আবেগ প্রতিরোধের টিকা নিয়েছে মানুষ।
ধূলোপায়ে তোমার মন মাড়িয়ে এগিয়ে যাবে যে-যার গন্তব্যে।
তাই একটা সরল পথ চিনে নিয়ে এগিয়ে চলি চলো কোন মফঃস্বলের বিকেলভর্তি মাঠের বুকে।
প্রশংসা করি তার সবুজ ডেরায় লাল নীল শিশুর দাঁড়ি কমা না মেনে উচ্ছ্বাসের ছন্দমিল দৌরাত্মের।
হাওয়ার পাপড়ি ছুঁয়ে যায় বিন্দু বিন্দু ঘামের শরীর দেখি ততক্ষণ যতক্ষণ না সন্ধ্যা ঘনিষ্ঠ হয়।
যদি হিসেবে না ভুল হয় তবে হে অনিদ্র মানুষ
এই যে জিওল মাছের মতো ছটফট করছ অভিমানের হু হু জাহ্নবী তীরে গলে যাবে তা তাতানো মোমের মতো।
আমার কথাটি শুনে একটিবার পরখ করে দেখই না।
আমি বলি, তার দরকার হবে না গো পাখি!!
এ আমার অস্থায়ী স্বভাব। এই তরী আসা যাওয়া করে আমার নির্জন দুপুরের বুকে দাঁড় টেনে প্রায়শই।
ফিরে যায় আবার সন্ধ্যাতারার পিছু পিছু।
আমি অভ্যাস করেছি এই রূঢ় অব্যয় মাটিতে নিজেকে সইয়ে নিতে।
বড় বেশি ভরসা করেছিলাম আত্মীয়-সভার প্রতি, সুখী ভাবনার বাতায়নের প্রতি, সামান্য আশার পরিশীলিত আগামীর প্রতি।
মামুলি হয়েছে তা বাছা বাছা কথার অঘটনে।
তাই আর হাত পাতা নয়, চাই না এক টুকরো পাখির ডানা মনকে উড়িয়ে নিতে।
নিসর্গের লাল ফুলের সাথে দেখা করে আমি কি করব।
স্বপ্নপ্রসবী আলোর ডাকে আর দিই না সাড়া।
অপঘাতে মৃত্যু হয়েছে যে মনের
তাকে সমাধিস্থ করতে চাই চতুর কথার চত্বরে।
অপেক্ষায় আছি অভিমান বিবর্ণ হওয়ার।
ততদিন লিখে যাব অবহেলার এই ধ্বস্ত ইতিহাস, একমনে।
স্থান পেয়ে যাব জানি একদিন নিস্তেজ নিরাসক্ত আবেগের গ্রন্থাগারে,স্থায়ীরূপে!!
No comments:
Post a Comment