মুক্তি
শুভেন্দু নন্দী
বিদেশ থেকে স্বদেশে স্বগৃহে ফিরছে অমিতেশ। অমিতেশ গাঙ্গুলী। উচ্চ শিক্ষার্থে গিয়েছিলো বিলেতে। শিক্ষা শেষে অধ্যাপনাও করেছিলো বিদেশে কিছুকাল। ওখানকার শিক্ষা-দীক্ষা, সংস্কৃতি,রুচি,ভাবধারার সাথে মিশে গিয়েছিলো এক্কেবারে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিউজিয়াম,লাইব্রেরী, রিক্রিয়েশন ক্লাব, হোটেল, রেস্তোরাঁতে ছিলো তার অবাধ যাতায়াত। সেই সুবাদে তার ঘটেছিলো অনেক জ্ঞানীগুনীজনের সান্নিধ্যলাভ।
তা প্রায় বছর পনেরো তো হোলো। ফ্লাইটে ল্যানডিং,তারপর ভাড়া করা ট্যাক্সি এবং শেষে অটোতে নারায়ণগঞ্জ গ্রামের মুখে পদার্পন । এখান থেকে খোশ মেজাজে, আভিজাত্যে ও বুদ্ধি দীপ্তিতে
ভরা অমিত হোলো অগ্রসর চারিদিক দেখতে দেখতে। -" আহাঃ- ঐ যে ছায়াসুনিবিড় বিরাট বটগাছ,টলটলে দীঘি - সুনীল আকাশ! কি চওড়া রাস্তা। সাবেকী বাড়িগুলোও আর নেই। বেশ কিছু দালান বাড়িও তো যাচ্ছে দেখা" - আনন্দের আতিশয্যে কথাগুলো বলতে থাকে। চোখে-মুখে বেশ চওড়া হাসি ওঠে জেগে। একটা হাটের মধ্য দিয়ে চলতে লাগলো অমিত। লক্ষ্য করলো ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বেশ হাসিখুশী ভাব। জিনিষপত্র কেনা-বেচার মধ্যে পারস্পরিক কথাবার্তার আদান প্রদান"-কি সুন্দর স্বাধীনভাবে ব্যবসা চালাচ্ছেন এঁরা। আর অবাধ কথাবার্তা। অথচ এই দেশ প্রায় দুশো বছর ব্রিটিশ শাসনাধীনে পিঞ্জরাবদ্ধ পাখির ন্যায় করতো ছটফট । পরাধীনতার গ্লানি মাথায় নিয়ে অনেক অপমান,লাঞ্ছনা,গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছিলো। মুক্তিকামী ও পরাধীনতায় জর্জরিত মানুষ অনেক সংগ্রাম,আন্দোলনের পর ব্রিটিশকে উৎখাত করতে পেরেছিলেন। ভারতমাতা মুক্তির স্বাদ লাভ করেছিলেন।" সে ভাবতে লাগলো যে বিদেশে এতকাল কাটিয়ে এসেছে - তার পূর্বসুরীদের অমানুষিক
আচরনের কথা আর তার মন ঘৃণা আর অবজ্ঞায় রি রি করে উঠলো।......দিনের আলো ক্রমশঃ নিভে এলো। অগ্রসর হোতে হোতে এক জায়গায় এসে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। দেখলো একজন পাখি বিক্রেতা অনেক গুলো খাঁচা নিয়ে বিক্রির আশায় আছে বসে। সাগ্রহে সে বলে ওঠে," বাবু ! পাখি কিনবেন? অনেক প্রজাতির পাখি আছে আমার স্টকে ? কি ভেবে অমিত বলে ওঠে, হ্যাঁ হ্যাঁ, ..."
এই বলে পাখিওয়ালাকে রীতিমতন অবাক করে খাঁচা সমেত সব পাখি কিনে ফেললো। আর তার প্রাপ্যেরও বেশী টাকা তাকে প্রদান করলো। সে হতবাক হয়ে গেলো। আশাতীত লাভে তার চোখ কৃতজ্ঞতায় চিকচিক করে উঠলো।
তারপর .......
অমিতেশ সবগুলো খাঁচাবন্দী পাখিগুলোকে মুক্ত করে একের পর এক আকাশে উড়িয়ে দিতে থাকলো মহানন্দে। বলে উঠলো " যা ! তোদের আজ মুক্তি দিলাম।"
ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে পাখিগুলো ক্রমশঃ সুদূর নীলিমায় বিলীন হয়ে গেলো । আর সেই অপরূপ দৃশ্য একমনে দেখতে থাকলো অমিতেশ। সন্ধ্যা গাঢ় হোলো। প্রকাশ পেলো আকাশের বুকে একফালি চাঁদের আলো। দু-একটা তারাও উঁকিঝুঁকি দিতে লাগলো। লঘুপদে এগিয়ে চলে অমিতেশ গৃহের পানে।
No comments:
Post a Comment