রক্তাক্ত কৃষ্ণচূড়া
অঙ্কিতা সেন
আজ যেন বড়ই স্তব্ধ চারিদিক কিন্তু এত স্তব্ধতা কীসের! চারিদিকে তাকালে অবশ্য মনে হবে শরতের ভোর।শহরবাসী সারারাত গরমে কষ্ট পেলেও শান্তি খুঁজে পেয়েছে এই ভোররাত্রের তন্দ্রাচ্ছন্নতায়। শহরের বুকে গড়ে ওঠা অসংখ্য বড় বড় অট্টালিকা আর কলকারখানার ধোঁয়ায় এই বিষাক্ত শহরের মাঝে কষ্ট করে বেঁচে আছে এক কৃষ্ণচূড়ার বন।সে যেন দাঁড়িয়ে আছে নবযুগের দূত হয়ে তবুও বেঁচে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়।সেই তরতাজা গাছগুলোর দেহ থেকে ধীরে ধীরে সব জল গ্রাস করে নিচ্ছে এই শহর।বিষাক্ত শহরে বেঁচে থাকা তার কাছে সংগ্রাম হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত।
শহরের স্তব্ধতা ধীরে ধীরে কোলাহলে পরিণত হতে থাকে।সবজি-ফল-ফুল ইত্যাদি নানান প্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা ছুটছে লোকাল ট্রেনে বাজারের উদ্দেশ্যে।চাকরিজীবী লোকেরা বাসে ঝুলতে ঝুলতে যাচ্ছে অফিসের পথে।শহরের নানান বাড়ির পরিচারিকারা রাস্তায় লাইন বেয়ে হেঁটে যাচ্ছে কাজে–এমনই নানান দৃশ্য।
এই বিষাক্ত শহর কয়দিন যাবৎ কালিমালিপ্ত।নানান দেশ,শহর তাকে নিয়ে চর্চা করছে,হাসি-মজা করছে।তাকে বাঁচাতে গর্জে উঠছে কত বিবেচক মানুষ তবু তারা ব্যর্থ হচ্ছে বারবার।
আবারও আজ শহরের গায়ে আঘাত লাগলো। আবারও এই শহর হারালো তার আরেক সন্তানকে। এবারও এই শহর বিচার চাইছে তার এই সন্তানের জন্য, সে বেরিয়ে আসতে চাইছে এই কালো সময় থেকে। কিন্তু এখানে আজ সে নিরুপায়। তার আরেক সন্তানের জন্য হাজার মানুষ পথে নামলেও তার এই সন্তানের জন্য তারা লড়াই করতে রাজি নয়।কেননা তাকে তো তারা সমাজের অন্তর্ভুক্তই করেনি কোনোদিন। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হলো, সে যে একজন নারী সেটাই যেন হাসির বিষয়।আজ এই মেয়েটিকে মরতে হয়েছে কষ্টে,যন্ত্রণায়। হয়তো রূপান্তরিত হওয়ার সেই বেদনাদায়ক চিকিৎসার চেয়েও আরো দ্বিগুণ যন্ত্রণায়।
হ্যাঁ ,সে একজন রূপান্তরিত নারী। যে ছোটো থেকে লড়াই করে বড়ো হয়েছে। নিজের অস্তিত্বকে বারংবার বোঝাতে যখন সে ব্যর্থ হয়েছে, তখন নিজেকে ভালো রাখতে সমাজের, পরিবারের সাথে লড়াই করেছে সে। অথচ তার সেই পছন্দের দেহটিকেই বেছে নিয়েছে শিকারীরা।আজ সারাদিন তাকে নিয়ে খবর হয়নি বরং সেই ঘটনার স্বল্প আভাস দিয়ে বসেছে শারদীয়ার বৈঠক।আজ সবার প্রতিবাদের স্বর রুদ্ধ।
যেই কৃষ্ণচূড়া বন এত বছর ধরে জলের পিপাসায় উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলো আজ সে রক্ত পেয়েছে, তাজা মানবীর রক্ত, যা সে কোনোদিন চায়নি।
No comments:
Post a Comment