Monday, December 2, 2024


 

সোনাইয়ের ভূতের ভয়
        মিষ্টু সরকার 

এ গল্প আজকের নয়, এ গল্প তখনকার যেই সময়ে ছাত্রদের ওপর বেতের কড়া অনুশানন প্রকট, অথবা বলা যেতে পারে, অদূর ভবিষ্যতে বেত থাকবেনা এরকম কিছু আশা করাও সেই সময় মানুষের চিন্তা ভাবনায়  ঠাঁই পায় নি।  তখনও ইলেকট্রিক সাপ্লাই গ্রামে গঞ্জে এতো ছড়িয়ে পড়েনি, সেই পিদিমের আলোয় ধরা এক গল্পই আজ শোনাবো ।
   
ভূতের ভয় কার ই বা থাকেনা  ! আর কিশোর বেলার সোনাই তো একটু আধটু ভয় পেতেই পারে তাই না!!

সন্ধ্যার অন্ধকারে লণ্ঠনের ঘষা আলোয় যতবারই সোজা দাগ কাটতে যায়, দাগ ওপরে ওঠে আঁকশি হয়ে নয়তো গড়িয়ে নিচে নেমে যায় । কোন ভূতের পাল্লায় পড়লাম রে বাবা , নাকি মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আমার সাথে উল্টো কাজ করছে , সোনাই নিশ্চিত ভেবে নেয় ভূত বিদ্যমান, কিন্তু সে বাবার লাঠির ভয় আর পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের কথা চিন্তা করে, বারবার চোখ বুজলেই অঙ্ক স্যারের মুখটা মনে পড়ে । তাই সে অন্ধকারের ভয়ে চোখ বুজেও থাকতে পারেনা। অগত্যা বাবার চোখ এড়িয়ে অতি সন্তর্পনে টর্চ নিয়ে এসে অনেক সাহসে ভর করে ভূতের উৎস খোঁজা শুরু করে। একটি টিকটিকি দেয়ালের খুঁটির ওপরে ওর অজান্তেই কখন ঠিকঠিক ডেকে উঠে পরিস্থিতির সত্যতা নিশ্চিত করে। সোনাই ভাবে মায়ের কোলে গিয়ে সিঁধিয়ে যায়, দু-একবার মায়ের কাছে ঘুরঘুর ও করে । মা ভাবগতিক বুঝে বলে কিরে সোনাই এমন অস্থির  অস্হির করছিস কেনো। সোনাই মায়ের কাছে এক গ্লাস জল চেয়ে খেয়ে, কিছুটা সাহস অর্জন করে । আবার বাবার বেত আর অঙ্ক স্যারের মুখটা মনে পড়ে যায় । সোনাই এবার  ভূত আমার পেত, পেত্নী আমার ঝি, রাম লক্ষণ সাথে আছে  ...... বলতে বলতে দেয়ালের রাম সীতার ক্যালেন্ডার টা'র  কাছে গিয়ে পা ও ছুঁয়ে আসে, এক নিঃশ্বাসে বলে  " করবে আমায় কি  ?? "
        একপ্রকার মরিয়া হয়ে আসে লণ্ঠনের কাছে, হাতে রাখা টর্চ জ্বেলে রাখে, তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকে, শেষমেষ তার পেন্সিল টা দেখতে গিয়ে দেখে একটা লম্বা চুল বেশ করে পেন্সিলটা কে পেঁচিয়ে থাকায় পেন্সিল টা ঠিক কাজ করছে না, আটকে যাচ্ছে । উৎসের সন্ধান পাওয়া মাত্র সব ভয় কেটে যায় তার, ছটফটানি কমে মনটা শান্ত হয়ে যায় । কিন্তু পরক্ষণেই মায়ের ওপর রাগ গিয়ে পড়ে। কারণ চুলটা ছিল অনেকটা লম্বা। বাড়িতে ছোট্ট বুনু, মা -বাবা আর সে। অতবড় চুল আর কার মাথার হবে। কিন্তু সে নিজেকে সমঝে নিজের সাথে আপোষ করে নেয়। কারণ সে তো বড় হয়েছে ; ভূতে ভয় পেয়েছে!  শুনলে তাকে পাছে ঠাঠ্ঠার মুখে পড়তে হয়, আর ওদিকে সে একটু আগেই তো ভূতের ভয়ে মায়ের কোলে আশ্রয় নিতে যাচ্ছিল।  সব সময় মা'ময় জীবন তার। মায়ের হাতের ডিমের ঝোলের গন্ধে তখন বাড়ি ভুরভুর করছে, একা মনখারাপ করে থাকাই দায়। দৌড়ে গিয়ে সে পেছন থেকে দুহাত দিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরলো।

No comments:

Post a Comment