বাংলাদেশকে সব দিক থেকে বয়কট করুক ভারত
বটু কৃষ্ণ হালদার
১৯৫২ সালের বাঙালির রক্ত ক্ষয়ী একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পূর্ব বঙ্গে বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়। পূর্ববঙ্গের গ্রাম শহর বিদ্যালয় মহাবিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। পহেলা বৈশাখ, বর্ষবরণ উৎসব, নবান্ন, পৌষ পার্বণ, বসন্ত উৎসবে বাঙালি সংস্কৃতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দেশাত্মবোধক সংগীত, নাটক, যাত্রাপালা গ্রাম গঞ্জের স্কুল-কলেজগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে যার প্রভাব ছিল ছাত্র-শিক্ষকদের বৃন্দদের অবদান। বাঙালি জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রভাবে শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ থেকে "মুসলমান" শব্দ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামক ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল হিসেবে অচিরেই ইসলামী পাকিস্তানের রাজনীতিতে আলোড়ন ও প্রভাব সৃষ্টি করে। এর ফলে পাকিস্তানী শাসকরা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীদের উপর অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। যার কারণ হিসাবে পূর্ববঙ্গের বাঙ্গালীদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন অবজ্ঞা ও বৈষম্য দিনদিন চরম আকার ধারণ করতে শুরু করে। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আপামর বাঙালি ছাত্র যুব সমাজ সঙ্ঘবদ্ধ হয় এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ধারা ক্রমাগত সারা পূর্ববঙ্গ ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তান জিহাদী মুসলমানদের হিন্দুদের উপর হিংস্র বাঘের মত লেলিয়ে দেয়,শুরু হয় চরম হিন্দু নিধনের খেলা।হিন্দুদের বিষয় সম্পত্তি লুট অগ্নিসংযোগ হিন্দু গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কারারুদ্ধ করা হত্যা করা ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি সরকারি চাকরির সময় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা শত্রু সম্পত্তি আইন করে হিন্দুদের সম্পত্তি ছিনিয়ে নেয়া পূর্ববঙ্গের ছাড়তে বাধ্য করা পাকিস্তানি শাসক দলের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়।এমত অবস্থায় ১৯৬৯ সালের গণভোটের দাবিতে গণঅভ্যুত্থানের ফলস্বরুপ ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম গণভোট অনুষ্ঠিত হয়।১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে সাত কোটি। যার মধ্যে হিন্দুরা ছিল ২৭ শতাংশ। ভোট ছিল প্রায় ৩ কোটি,ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় দুই কোটি।একশ শতাংশ ভোট পেয়ে শেখ মুজিবর আওয়ামী লীগ ১৬০ টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হতে সক্ষম হয়েছিল। আর এটাই ছিল হিন্দুদেের প্রতি পাকিস্তানের অন্যতম গাত্রদাহের কারণ।হিসাব অনুযায়ী বাঙালি হিন্দু পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ক্ষমতায়নে ক্যাটালিস্ট হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে পূর্ব পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেন।বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক জনসভায় বাংলাদেশের দাবিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেয়। যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ হিসাবে রূপ নেয়। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম কে স্তব্ধ করতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী হিন্দু বাঙালিদের ওপর লেলিয়ে দেয়, পুনরায় শুরু করে অগ্নিসংযোগ,ধ্বংসযজ্ঞ গণহত্যা। এই গণহত্যা য় রাজনীতিবিদ,বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক,ডাক্তার সাংবাদিক ব্যবসায়ী সমাজসেবী ছাত্র-যুব,শিশু,নারী পুরুষ কেউ রেহাই পেল না।পাকিস্তান পন্থী জামাত মুসলিম লীগের মত ইসলামী দলগুলি বাংলাভাষী মুসলমান ছাত্রশিবির ও যুবসমাজ শহর-গ্রামে রাজাকার,আলবদর,ও আলশামের নামক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলে।এই বাহিনীর কাজ ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী ছাত্র যুবাদের খুঁজে বের করে নিশংস ভাবে হত্যা করা। হিন্দুদের বিষয় সম্পত্তি লুটপাট অগ্নিসংযোগ,হিন্দু নারী অপহরণ ও ধর্ষণ করা এর ফলে হিন্দুরা জীবন বাঁচানোর তাগিদে ও নারীদের সম্ভ্রম রক্ষার্থে ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতে থাকে। মাইলের পর মাইল একনাগাড়ে পায়ে হেঁটে কঠিন বিপদসংকুল পথ অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নেয়। পালাবার পথে অসংখ্য শরণার্থীদের উপর পাক সেনা ও রাজাকাররা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছিল। হিন্দু যুবতী ও নারী,যুবক,সমাজসেবী,বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল যারা আর ফিরে আসেনি। জীবন বাঁচানোর তাগিদে নিজেদের পরিবারবর্গকে ফেলে পালিয়ে এসেছিল অনেকেই।প্রায় এক কোটি নির্যাতিত বিতাড়িত হিন্দু শরণার্থী ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের আশ্রয় শিবিরগুলোতে দীর্ঘ ১০ মাস শোচনীয় অবস্থার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করেছিল।এই সমস্ত শরনার্থীরা ভারত সরকারের মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছিল।ভারতের অর্থনীতির উপর চরম আঘাত হেনেছিল।
আমেরিকায় প্রকাশিত একটি বই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বড়সড় বিতর্কের ঝড় তোলে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যলয়ের রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক গ্যারি জে বাস তার প্রকাশিত “ দি ব্ল্যাড টেলিগ্রাম : নিক্সন কিসিঞ্জার অ্যান্ড এ ফরগটন জেনোসাইড ” বইতে লিখেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রায় এক লাখ হিন্দুকে নির্বিচারে খুন করেছিল।তৎকলীন পূর্ব পাকিস্তানে আক্ষরিক অর্থে চালানো হয়েছিল গণহত্যা। অসহায় ভাবে তখন খুন হয় বিপুল সংখ্যক হিন্দু। নিজেদের স্বার্থের জন্য তখন ভারত ও মার্কিন সরকার চোখ বন্ধ করেছিল বলেও ঐ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।বাংলদেশে যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার কাজ চলে তখনই গ্যারি জে বাসের এই বই তুমুল আলোচনা-সমালোচনার সাইক্লোন বইয়ে দেয় আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে।আমেরিকায় এ সপ্তাহের শুরুতে বইটি প্রকাশিত হয়। বইটি বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে ৪০ বছর আগের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং তাকে ঘিরে একাধিক অস্বস্তিকর প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। খবর বর্তমান , পিটিআই ও ওয়াশিংটনের।জে বাস তার বইতে লিখেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আক্ষরিক অর্থেই গণহত্যা চালিয়েছিল। আর সর্বত্রই টার্গেট করা হয়েছিল হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত বাঙালীদের । যুদ্ধের শুরুতেই অসহায় অবস্থায় খুন হয়েছিলেন প্রায় ১ লাখ হিন্দু অথচ আশ্চার্যজনকভাবে বিষয়টিকে ছোট করে দেখিয়েছিল সেই সময়ে ভারতের ক্ষমতায় থাকা ইন্দ্রিরা গান্ধির কংগ্রেস সরকার। শুধু তাই নয়, অদ্ভুতভাবে চোখ বন্ধ করে রেখেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ তম প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। এই নিরবতা কেন ? এমন প্রশ্ন তুলেছেন জে বাস তার বইতে।
শুধু মার্কিন প্রশাসন নয়, তখনকার ভারত সরকারের তীব্র সমলোচনা করেছেন লেখক জে বাস। তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশে যখন প্রত্যেকদিন নিয়ম করে হিন্দু নিধন চলছিল তখন ভারত সরকার বিষয়টির আসল গুরুত্ব প্রকাশে রাজি ছিলনা। কারণ, ইন্দিরা গান্ধি সরকার চায়নি তখনকার বিরোধী দল জনসংঘ তথা আজকের বিজেপি এই নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ পাক।
পাক সেনারা যখন নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে তখন ভারতের সংসদ সদস্যরা গোলাবারুদ দিয়ে হিন্দুদের সাহায্য করেনি। কারণ সেই একটাই, যদি গোলাবারুদ দেওয়া হয় , তাহলে গোটা গণহত্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসবে। আর তা নিয়ে রাজনীতি করবে জনসংঘ বা বিজেপি।বইয়ে তিনি আরো লিখেছেন, তখন পাকিস্তানী জেনরেল ইয়াহিয়ার হিন্দু নিধনের পক্ষে যুক্তি ছিল যে, পূর্ব পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ বাঙালি হিন্দু। এরা ইসলাম বিরোধী। এরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় তারা পরাজিত হয়েছেন।ভবিষ্যতে শাসন কায়েম রাখতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে থাকা হিন্দু বাঙালিদের স্রেফ ছেঁটে ফেলা দরকার” বলে মন্তব্য করেন ইয়াহিয়া।
বইতে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযনে নেতৃত্ব দেওয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানের যুক্তি ছিল যে, “পূর্ব পাকিস্তান ভারতের দাসত্ব করছে। বহু ত্যাগের পর যে স্বাধীনতা এসেছে তাকে এবং দেশটাকেই আওয়ামীলীগ ধ্বংস করে দেবে।”তখন পাক সেনারা একে অপরের সঙ্গে মজা করে বলত,“আজ কত হিন্দু মেরেছ ?”জে বাস লিখেছেন, সশস্ত্র পাক সেনাদের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় এক কোটি নিরস্ত্র হিন্দুর অসম লড়াই হয়েছিল। ভারতের সহযোগিতার কলঙ্ক এবং নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য সাধনের অভিযোগের তকমা লাগানো হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের গায়ে। যে কারণে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী হিন্দুদের ওপর চালিয়েছিল মর্মান্তিক গণহত্যা।বাংলাদেশের হিন্দু সংগঠনগুলোর হিসেব মতে, মুক্তিযুদ্ধে ২২ লাখের বেশি হিন্দু শহীদ হয়েছেন। এছাড়া ওই সময় প্রায় ১ কোটি বাঙালি আশ্রয় নিয়েছিল ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোতে।দি ব্ল্যাড টেলিগ্রাম : নিক্সন কিসিঞ্জার অ্যান্ড এ ফরগটন জেনোসাইড বইতে গ্যারি জে বাস আরো লিখেছেন, ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্চার বড ভেবেছিলেন, হিন্দুদের নিধন বা তাড়নো নিয়ে বেশি হইচই করার প্রয়োজন নেই।
বইতে সে সময় ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যও স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি এক বৈঠকে রিচার্ড নিক্সনকে স্বয়ং জানিয়েছিলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালাচ্ছে। আতঙ্কে প্রতিদিন প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে।অবশ্য এক সময় কিসিঞ্জার নাকি বলেছিলেন, ইয়াহিয়া খান আবার একটা মূর্খের মতো ভুল করলো হিন্দুদের তাড়িয়ে। যদিও সেই বৈঠকে রাষ্ট্রদূতের কথার কোন উত্তর দেননি কিসিঞ্জার।জবাব মেলেনি নিক্সনের পক্ষ থেকেও।ভারত এবং আমেরিকার নিজস্ব স্বার্থ এবং নিরবতার কারণেই বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরস্ত্র হিন্দুদের নির্বিচারে খুন করতে উৎসাহ পেয়েছিল বলে মনে করেন জে বাস। এত বছর পর সেই ইতিহাস জীবন্ত নিদর্শন হয়ে রয়ে গেছে।
বাঙালি জাতির পিঠস্থান হল বাংলা। জাত ধর্ম নির্বিশেষে যারা বাংলা ভাষায় কথা বলেন তারা হলেন বাঙালি। সেই বাঙালি সত্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে,একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় অনুপ্রেরণা জোগানো স্লোগান "জয় বাংলাকে" বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করেছেন শেখ হাসিনা সরকার।আবেদনকারী সংবিধানের ৩ ও৪ নম্বর অনুচ্ছেদের ধারাবাহিকতায় জাতীয় স্লোগান হিসেবে জয় বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন।একই সঙ্গে জাতীয় অনুষ্ঠান সভা-সমাবেশে প্রত্যেকের বক্তব্যের শেষে "জয় বাংলা" বলার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।এটা খুব গর্বের বিষয় কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যে, বাঙালি হিন্দুরা নিঃস্বার্থভাবে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছিল উদ্বাস্তু কেন হয়ে গেল? বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করামত পর শুধুমাত্র বাঙালি হিন্দুদেরই বা কেন দেশ ছাড়তে হয়েছিল?সেই ইতিহাস টা আমাদের একটু জেনে রাখা দরকার। তবে বাংলা দেশে বর্তমান সময়ে চলছে হিন্দুদের প্রতি অমানবিক অত্যাচার।হিন্দুদের মন্দির,মূর্তি,বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।আর তাতে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশের হিন্দুরা ভারতবর্ষের কাছে সাহায্য চাইছে। বাংলাদেশের হিন্দুদের কে এই অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পেতে জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম নেতা অধীর চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ জানান। শেখ হাসিনার সময়ে হিন্দু নিধনের প্রয়াস,এক চরম লজ্জা নিদর্শন।শেখ হাসিনা সরকার এক কথায় জাত পাত,ধর্ম নির্বিশেষে নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থ হচ্ছেন।জিহাদিদের লেলিয়ে দিচ্ছেন হিন্দু শূন্য করার জন্য।এইভাবে একসময় ইরাক-ইরান আফগানিস্থান,মিশর সহ বহু দেশে হিন্দু শূন্য হয়ে গেছে। বর্তমানে সেই পথে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে হাঁটছে। এসব দেখেও তাদের সরকাররা নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ।এটা খুব দুঃখজনক। তাই ভারতের উচিত, বাংলাদেশের হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানো। ভারত যদি তাদের পাশে না দাঁড়ায় তবে তারা কোথায় যাবে? প্রশ্ন এ পৃথিবী কি তবে হিন্দুদের জন্য নয়? নাকি জিহাদিদের চোখে হিন্দু হয়ে জন্মনো অপরাধ?
এখানে বলার আছে যে ইন্দিরা গান্ধী ভারতের জন্যে কি করেছে তা বলতে পারব না,কিন্তু বাংলাদেশের জন্যে তিনি যা করেছেন তাতে বাংলাদেশের সমস্ত দেশ বাসির উচিত সর্ব জায়গায় তাঁর মূর্তি স্থাপন করে পুজো করা। যে দেশের সহযোগিতা ছাড়া ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের জয় ছিল প্রায় অসম্ভব, সে দেশটি হচ্ছে প্রতিবেশী ভারত। ভারতের জনগণ, সেসময়ের সরকার ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আমাদের স্বাধীনতার জন্য যে অবদান রেখেছেন তার কোনো তুলনা হয় না।
পাকিস্তান সামরিক জান্তার গণহত্যার মুখে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনাকারী মুজিবনগর সরকার ভারতে থেকেই কার্যক্রম চালিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভারত শুধু আশ্রয় দেয়নি, প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্রও দিয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেসময় ভারতে অবস্থানকালে সে দেশের জনগণের সহযোগিতা ও সহমর্মিতার কথা শ্রদ্ধাভরে, কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। ভারতের দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী নেহরুকন্যা ইন্দিরা গান্ধী বাঙালিদের তার দেশে আশ্রয় ও আহার দিয়েছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য এবং শত্রুর হাতে বন্দি বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষার জন্য বিশ্বের বহু রাষ্ট্র সফর করেছেন।
বাংলাদেশকে সমর্থনের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেসময়ের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন সেদেশ সফরকালে ইন্দিরা গান্ধীকে অসম্মান করে এবং হতচ্ছাড়া মেয়েলোক হিসেবে উল্লেখ করে বলে, ‘তাকে আমি দেখে নেব।’ তাছাড়া ক্রুদ্ধ নিক্সন মিসেস গান্ধীকে ‘বিচ’ (কুত্তি) ও বাস্টার্ড (বেজন্মা) বলেও গালি দেয়।
ইন্দিরা জানতেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঠেকিয়ে রাখতে নিক্সন-কিসিঞ্জার জুটি যা যা দরকার, তা-ই করবে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র-চীনকে মোকাবিলা করার জন্যই ১৯৭১-এর আগস্টে অন্যতম পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ২৫ বছরের মৈত্রীচুক্তি স্বাক্ষর করে ইন্দিরার ভারত। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরু করলে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
ভারত ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতের পর আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি সামিল হয়।৪ ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় মিত্রবাহিনী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মাটিতে যুদ্ধ করে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১,৬৬১ জন ভারতীয় সেনাসদস্য শহীদ হন।যারা ইন্দিরা গান্ধীকে "আয়রন লেডি" বলে ডাকেন,তাদের জানা উচিত বলে মনে করি তিনি বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন,আজ সেই বাংলাদেশ ভারত বয়কট এর ডাক দিচ্ছে,তাহলে ভারতের কি করা উচিত?
কয়েকজন পাইলটের নাম এখানে দেওয়া হল;_
উইং কমান্ডার হরশরণ সিং ডান্ডোস,
স্কোয়াড্রন লিডার মহিন্দর জৈন,
স্কোয়াড্রন লিডার জেএম মিস্ত্রি,
স্কোয়াড্রন লিডার জেডি কুমার,
স্কোয়াড্রন লিডার দেব প্রসাদ চ্যাটার্জি,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সুধীর গোস্বামী,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ভিভি তাম্বে,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাগস্বামী শঙ্কর,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রাম এম আদভানি,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মনোহর পুরোহিত,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তন্ময় সিং ডান্ডোস,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট বাবুল গুহ,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সুরেশচন্দ্র স্যান্ডেল,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হরবিন্দর সিং,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এল এম সাসুন,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কে পি এস নন্দা,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট অশোক ধাওয়ালে,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শ্রীকান্ত মহাজন,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট গুরদেব সিং রাই,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রমেশ কদম,
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট প্রদীপ ভি আপ্তে,
ফ্লাইং অফিসার কৃষ্ণা মালকানি,
ফ্লাইং অফিসার কে পি মুরালীধরন,
ফ্লাইং অফিসার সুধীর ত্যাগী,
ফ্লাইং অফিসার তেজিন্দর শেঠি,
এরা ছিলেন ভারতীয় বিমান বাহিনীর যোদ্ধা, যারা১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানে যুদ্ধবন্দী হয়েছিলেন এবং আর ফিরে আসেননি।
কংগ্রেস সরকার এ বিষয়ে কোনো তদন্ত করেনি বা পাকিস্তানের ওপর কোনো চাপও দেয়নি।
ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের সাথে চুক্তিতে ৯৩,000 পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীকে মুক্তি দিয়েছিলেন, কিন্তু তার সৈন্যদের ফেরত চাওয়ার কথা "মনে রাখেনি" - এমনকি সাহসও জোগাড় করতে পারেননি।
নিখোঁজ ভারতীয় যোদ্ধাদের খবর দেশের মানুষের কাছ থেকে গোপন।আর কী, খবরের কাগজেও ছবি ছাপা হয়নি।পাকিস্তানের কারাগারে তাদের মরার জন্য রেখে দেওয়া হয়েছিল, আর আমাদের এই সৈন্যরা অজ্ঞাতনামা মৃত্যুবরণ করেছে।এই ধূর্ত, ডাকাত, ক্ষমতার ক্ষুধার্ত নেহেরু-গান্ধী পরিবারের ভারতের প্রতি এই সত্য।
এখানে শেষ নয় স্বাধীনতার পর ভারতের বিখ্যাত গায়িকা লতা মঙ্গেশকর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।দরজা খুললেন লতা মঙ্গেশকর স্বয়ং। মুখে সেই চিরপরিচিত মিষ্টি হাসি। রিনিঝিনি কিন্নর কন্ঠে শুধালেন, “ভালো আছো? কেন এসেছো?” “আমরা বাংলাদেশের জন্য ফান্ড কালেক্ট করছি। শরনার্থী এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হবে এই ফান্ড থেকে। আপনারও সাহায্য চাই দিদি।”মৃন্ময়ীকে বসিয়ে রেখে ভেতরে চলে গেলেন লতা মঙ্গেশকর। বেরিয়ে আসলেন চেক বই হাতে। গুটিগুটি হাতে চেক লিখে এগিয়ে ধরলেন। অংকের ঘরে চোখ পড়তে কিছুটা চমকেই উঠলেন মৃন্ময়ী বোস। এক লক্ষ রুপি। ১৯৭১ সালে এক লক্ষ রুপি মানে কম টাকা ছিল না।
কিন্তু আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছে মৃন্ময়ী বোসের জন্য। নিজের গাওয়া কিছু বিখ্যাত গানের রয়ালিটি লতা মঙ্গেশকর সেদিন লিখে দিয়েছিলেন ফান্ডের নামে। যতদিন মুক্তিযুদ্ধ চলবে ততদিন এই সব গান থেকে প্রাপ্ত অর্থ জমা হবে ফান্ডে। বাংলাদেশের ফান্ডে।
এখানেও শেষ নয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপনেও অর্থ সাহায্য করেছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে অজন্তা শিল্পীগোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্লেনে চেপে বিভিন্ন স্থানে গান পরিবেশন করে বাঙালি রিফিউজিদের জন্য তহবিলও সংগ্রহ করেছিলেন এই কিংবদন্তী। পাশাপাশি গড়ে তুলেছিলেন বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাপী গনসচেতনতা। ২০১৯ সালে করা এক টুইট বার্তায় এ কথা স্মরন করেছিলেন।
যাঁরা বাংলাদেশকে স্বাধীন মানচিত্রের রূপরেখা তৈরি করতে জীবন দিয়েছিলেন দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের সম্মান জ্ঞাপন করতে লেগে গেল বহু বছর।এরপরেও সেই বাংলাদেশের এক শ্রেণীর জনগণ বছরের পর বছর ভারত বিরোধী চক্রান্ত করে আসছে। সনাতনী হিন্দু ধর্মের উপর চরম আঘাত হানছে।হিন্দু শূন্য করার নকশা তৈরি করে ফেলেছে। উগ্র মৌলবাদীরা সংখ্যালঘুদের উপরে যে চরম অত্যাচার করছে তাতে বিশ্বের সবথেকে শান্তিপ্রিয় সনাতন ধর্মের মানুষ আজ তার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। যা আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি সেটাই বাংলাদেশের হিন্দুরা করে দেখিয়েছে। আরো দুর্ভাগ্যজনক হল শান্তিপ্রিয় সনাতন ধর্মের মানুষদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিশ্বের বহু দেশের জনগণ প্ল্যাকার্ড হাতে হাতে রাস্তায় নেমেছে। সবথেকে লজ্জাজনক হলো বিশ্বের মানুষ রাস্তার নামলেও পশ্চিমবাংলার হিন্দুরা আজও শীতঘুমে ব্যস্ত। এসব দেখেও তাদের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়নি যে আগামী ভবিষ্যতে এই পশ্চিমবাংলায় হিন্দুদের উপর কি কি আঘাত হানতে পারে। ভেঙে ফেলা হচ্ছে প্রাচীন স্মৃতি,সৌধ,মন্দির,চার্চ। গণভবন থেকে সমস্ত জিনিসপত্র লুটপাট করা হয়েছে। বিশ্বের প্রথম গণ আন্দোলন যা চরম তম লজ্জার নিদর্শন হল বিপ্লবের শেষে গণভবন থেকে মালপত্র লুটপাট ও চুরি করে নিয়ে যাওয়া। ভেঙে ফেলা হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মদাতা পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি, বাদ যায়নি সমগ্র বিশ্বের কাছে মানবতার মূর্ত প্রতীক বিশ্বকবি রবি ঠাকুরের মূর্তি।এতে থেমে নেই এবার তারা ভারতের পণ্য বয়কট এর ডাক দিয়েছে।যে দেশের জনগণভারতের হাসপাতাল আর দৈনন্দিন জিনিস অর্থাৎ লবণ,আলু,পেঁয়াজ সহ নানান জিনিসপত্র ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ না খেতে পেয়ে মরবে,সেই বাংলাদেশের ধর্মীয় শিক্ষালয়,বাজার,রাস্তায় ভারতীয় পণ্য বয়কট এর শিক্ষা দিচ্ছে। শুধু পণ্য বয়কট নয় ভারতীয় বাজারজাত পণ্যগুলোকে গুদামে নষ্ট করা চলছে। অথচ সেই পণ্য অত্যাধিক চড়া মূল্যে ভারতের বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।
ভারতের বাজারে পাঠানো হচ্ছে বিষাক্ত ফরমালিন ব্যবহার যুক্ত ইলিশ মাছকে। লজ্জার আরও চরমতম নিদর্শন হলো সমাজের মেরুদন্ড হলো শিক্ষকরা সেই শিক্ষকরা আজ ছাত্রলীগের কাছে অসহায়। জোর করে শিক্ষকদের পদত্যাগ পত্রে সই করানোর কাজ চলছে পুরো দমে। যে ছাত্রদের শিক্ষকরা সমাজের উপযুক্ত তৈরি করেছিল সেই ছাত্রদের হাতে মার খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। শিক্ষকরা আজ বন্দুকের কাছে নয় নিজের হাতে গড়া উপযুক্ত সোনার বাংলার ছাত্রদের কাছে অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ করছে। এ চিত্র সস্তা মিডিয়ার দৌলতে সমগ্র বিশ্বের মানুষ দেখছে।
ভারতীয়দের উচিত সমগ্র বাংলাদেশকে বয়কট করা।ভারত সরকারের উচিত এই মুহূর্তে বাংলাদেশে মালপত্র পাঠানো বন্ধ করা। বাংলাদেশের পণ্য সম্পূর্ণরূপে বয়কট করা। বাংলাদেশীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দেওয়া। বাংলাদেশের সঙ্গে ক্রিকেট খেলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত। ফরমালিন যুক্ত বিষক্রিয়া প্রয়োগে ইলিশ মাছ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হওয়া উচিত। মনে রাখবেন বাংলাদেশের ইলিশ কিনে খাওয়া মানে আপনার সন্তানের মুখে বিষ তুলে দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে ওই ইলিশ মাছের গায়ে লেগে আছে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে চাওয়া হিন্দুদের রক্ত। সম্পূর্ণ বাংলাদেশকে বয়কট করে ভারতীয়দের বুঝিয়ে দেওয়া উচিত যে ভারত যেমন সম্প্রীতি রক্ষা করতে জানে তেমনি প্রয়োজনে ঘৃণা করতে পিছপা হবেন না।
(মতামত ব্যক্তিগত)
No comments:
Post a Comment