Monday, December 2, 2024


 


মধ্যপ্রদেশে মধ্যদিনে 

বিপ্লব তালুকদার






মহাকালেশ্বর মন্দির 


এই বছরের ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা ঠিক হয়েছিল মাত্র ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে। কথা ছিল উত্তরাখণ্ড যাওয়ার, কিন্তু আলোচনার সময় ঘুরে গন্তব্য স্থির হল ভারতবর্ষের অন্যতম প্রাচীন শহর, ইতিহাসের পাতায় লেখা সেই বিখ্যাত অবন্তীর রাজধানী উজ্জয়িনী! 

প্রধান ইচ্ছে, মহাকালেশ্বর দর্শন, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম। তারপর হাতের সময় বুঝে যতদূর যেখানে যেখানে যাওয়া যায়, ততদূরের ভ্রমণ। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের আয়তন যেমন, যেমন তার বিভিন্ন দিকে বিভিন্ন রূপ— তাতে কোন কোন অঞ্চল যাওয়া যেতে পারে এ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম বটে। অতঃপর ঠিক হল, জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শনের পর উজ্জয়িনী নগরী ঘুরে পৌঁছব আরেক ঐতিহাসিক শহর ইন্দোরে। ইতিহাসকে চাক্ষুষ দেখার আগ্রহ বড় সাংঘাতিক! ক্লান্তি আসেনা, বরং মনে হয় চলতেই থাকি, চলতেই থাকি। কিন্তু সময়ের অভাব! যাইহোক, নির্দিষ্ট দিনে ট্রেন ধরে গন্তব্য উজ্জয়িনী রেখেই যাত্রা শুরু হল। কিন্তু বিপদ-বাধা-সর্বনাশ কখন কোত্থেকে আসবে, তার জানলে জীবন তো জটিলতা থেকে বহুদিকেই মুক্তি পেত। ট্রেনেই চুরি গেল আমাদের লাগেজপত্তর, যাবতীয় জামাকাপড়,জুতো। যাত্রার শুরুতেই এমন দুর্ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই মন দুর্বল হয়ে পড়ল আমাদের। হাতে টুকিটাকি জিনিষপত্র নেওয়ার দুটো ছোট ব্যাগসমেত রাত দশটায় নামলাম উজ্জয়িনী স্টেশনে। হোটেলে যাওয়ার আগেও প্রথম কাজ পরার জন্য অন্তত কিছু জামাকাপড় আজকে কিনে রাখা। বাকি এক এক করে কেনা যাবে। একবার ভাবলাম ফিরে যাব? কিন্তু মহাকালই বুঝি বা মনের জোর দিলেন! তবে জামাকাপড়ের দাম কিন্তু এখানে বেশ সস্তা এবং জিনিস সুন্দর। আমাদের হোটেল ঠিক করা ছিল না, এ ব্যাপারে আমরা একটু খুব একটা প্ল্যান কোনোদিনই করিনা। তাই একটু সময় লাগলই। ততক্ষণে পেটে ছুঁচোর দৌড় শুরু হয়েছে। অগত্যা আগে ডাল, চাওল, রোটি অর্থাৎ….. উজ্জ্যনিতে। রুদ্র সাগর হ্রদের ধারে মহাকলেশ্বর মন্দির। যা স্বয়ম্ভু এবং অন্যতম জ্যোতির্লিং। বাকী জ্যোতির লিঙ্গ পূব মুখী হলেও এটি দক্ষিণমুখী। এনাকে দর্শনের আগে দর্শন করতে হবে কাল ভৈরবকে, কারন ইনি আবার এখানকার দ্বার রক্ষক। মহকালেশ্বর মন্দির খুবই সুন্দর এবং এর করিডোর রাতের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে যা আরো মায়াবী মনে হয়। এছাড়াও আছে হরসিদ্ধি মন্দির যা পুরান মতে শিবের শ্বশুর বাড়ি, এখানেই শিব পার্বতীকে বিয়ে করতে আসেন । এখানে আছে একান্ন পিঠের এক পিঠ গডকালিকা মন্দির। তাছাড়াও অনেক মন্দির আছে এখানে। থাকার জন্য মন্দির সংলগ্ন এলাকায় অনেক হোটেল আছে এবং ভোজনালয় আছে। সারারাত দর্শনার্থী সমাগমে এলাকাটি সরগরম থাকে। অটো এবং i রিক্সা আছে ঘুরবার জন্য। তবে হ্যাঁ খাদ্য পূর্ণ নিরামিষ, কোনো রকম আমিষ খাবার পাবেন না। 





হোলকার প্যালেস 





  • এরপর আমরা আসি ইন্দোর শহরে,যা ক্লীন সিটি নামে পরিচিত। সেটা অবশ্য নিজে দেখেছি। এখানেও নিরামিষ খাবার, যাতায়াত এর জন্য ভালো উবার অটো। এখানেও অনেক হোটেল আছে। এখান থেকে একদিন গেলাম খান্ডওয়া, নর্মদা নদীর তীরে আরেক জ্যোতিরলিংগ ওঙ্কারেশ্বর দর্শন করতে। সুন্দর ব্যবস্থা কোনো রকম হুজ্জতি নেই। নৌকো করে নর্মদা নদী বিহার এক আলাদা অনুভুতি। পুরো ইন্দোরে অনেক কিছু দেখার আছে। রাজয়ারা প্যালেস, হোলকার প্যালেস, শিসমহল সহ অনেক। আছে বিখ্যাত সারাফা বাজার। রাত 9টায় শুরু হয়ে শেষ হয় রাত 3টা নাগাদ। শুধুই খাবারের দোকান। কি খাবার পাওয়া যায় না তবে সবই নিরামিষ। এরপর গেলাম মানডু এবং মহেশ্বর ঘুরতে। তবে সময়ের অভাবে পুরো ঘুরে উঠতে পারিনি। মানডুতে বাজ বাহাদুর শাহ নির্মিত রানী রূপমতির জন্য জাহাজ মহল। যা দুটো ঝিলের মাঝে অবস্থিত। রূপমতি এবং বাহাদুর শাহ কে নিয়ে এক প্রেম কাহিনী আছে। এছাড়া আছে রূপমহল, শোনা যায় রূপমতী যাতে এখান থেকে নর্মদা নদী দেখতে পান তাই এই মহল অনেক উঁচুতে। সন্ধ্যার পর এখানে কাউকে থাকার অনুমতি দেয়া হয় না, কারণ এখনো রাতের বেলা নূপুর এবং গান ভেসে আসে এখান থেকে। এরপর এখান থেকে গেলাম দ্বিতীয় কাশী মহেশ্বর ঘুরতে। মিস করেছি অহল্যা বাইয়ের মহল। যা দর্শনীয়। তবে হ্যাঁ দেখলাম বাবা মহেশ্বর। এখানে আছে রাজরাজেশ্বর মন্দির, কথিত আছে ইনি রাবণকে ছয় মাস বন্দী করে রেখেছিলেন এখানে। এখানেই তৈরী হয় বিখ্যাত মহেশ্বরি সিল্ক। 





রানি রূপমতি মহল 


  • দীর্ঘ আট দিনের সফরের মধ্য দিয়ে শেষ হলো আমাদের মধ্যপ্রদেশ সফর। 


No comments:

Post a Comment