Friday, May 3, 2024


 

মুনা 

অনলাইন বৈশাখ সংখ্যা ১৪৩১

ক্রোড়পত্র 




মা 

বেলা দে 

"মা"  শব্দ উচ্চারণে অন্তস্থল ছুঁয়ে ওঠে নির্ভীক প্রাণময়তা, সান্ত্বনার এক দৃঢ়তম অঙ্গীকার। যে দিতে পারে সমস্ত জাগতিক ঝড়ঝাপটা সরিয়ে এক পরিষ্কার আকাশ।  আজ যে মায়েরা ঝান্ডা উড়িয়ে স্লোগানে স্লোগানে রাজপথ উত্তাল ক'রে হেঁটে চলে গর্ভধারিণীরা গ্রাম শহর, একদিন তারা এমনটা ছিল না। লালপেড়ে শাড়িতে একমাথা সিঁদুর রাঙিয়ে পর্দানসীন গৃহবধু, কাকভোরে নিত্যকার পূজাপাটের
পর পা রেখেছে হেঁশেলঘরে। হেঁশেল থেকে আতুরঘর তার পরিধিবিস্তার, আমার গর্ভধারিণী  ছিলেন ঠিক এমনই, সপ্তম সন্তানের কনিষ্ঠা হয়েআমি যা দেখেছি দাদা-দিদিরা দেখেছে অনেক বেশি। ধানউঠান জুড়ে থেকেছে শালপাট, ত্রিপলঝাঁটা, আর কাকতাড়ানো লাঠি। ধানসেদ্ধ শুকনো  থেকে ধান ভাঙা সব মায়ের নিত্যকর্মের মধ্যে। দাদা-দিদিরা হাত বেটেছে বড় হয়ে। সেই লালভোরে ঘুম ভেঙেই ছরাঝাট আর কাঠের উনুনে গরম গরম মুড়ি ভাজা, কি স্বাদেই না খেয়েছি কাঠাভরা টাটকা  মুড়ি, রকমারী বিস্কুটে স্বাদবদল সেকালে কোথায়!  ছিল তৃপ্তি বেকারির জিরে বিস্কুট আর পাউরুটি।  সুতরাং সকাল সন্ধের জলখাবারে ভরসা মায়ের শিল্পী হাতের গরম গরম ভাজা স্বাদেলা  মুড়ি। অথচ একসময় মা ছিল বিক্রমপুরের ডাকসাইটে  জজবাড়ির মেয়ে,  যৌথ পরিবারে জ্যাঠামশাই  জজ, কাকা লন্ডনে বসত করা ডাক্তার, মেম বিয়ে করে সেখানে থাকলেও সপরিবারে যাতায়াত করেছেন এদেশে। মায়ের বাবা ঢাকা থানার বড় দারোগা। মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে হলে প্রথম গ্রামদর্শন বাবার হাত ধরে। কুলো ব্যবহার করা  জানতো না বলে ঠাকুমা বলে বসেছে ১২ বছরের  মেয়েকে " বয়স তো পাহাড়ের সমান কাজের বেলায় ঠনঠন। গ্রামে একমাত্র কুয়ো বাবার বাড়িতে, মুসলিম রমনীরা জল নিতে এলে কুয়ো ছুঁতে দেয়নি, দিনভর কলস কলস জল মাকেই তুলে দিতে হয়েছে দিন মাস বছর। সব সয়েছে মা নীরবে নি:শব্দে, জন্ম থেকেই মাতৃহীন আমার মা কে ঈশ্বরই বোধকরি সহনশীলতায় মজবুত করে দিয়েছে, আজীবন এভাবেই কেটেছে তাঁর পুরুষসিংহ বাবার সাথে।উঠোনে পাটকাঠির আতুর ঘরে বসে সন্তানদের রান্না করে খাইয়ে দিয়েছে কোনো দায়ভার ছিল না বাবার। ধরিত্রীর মতন  সহনশীল মা আমার শেষকালে ভেঙে পড়েছে  রোগযন্ত্রণায় ভুগে ভুগে, প্রায়শই বলতো মা আক্ষেপের সুরে" জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো, ঘর বা ঘরের মানুষটার কোনো দোষ নেই রে সব আমার কর্মফল। এক মা কতটা শক্তি ধারণ  করতে পারে সে নিজেও জানে না,  মা না হওয়া ইস্তক নারীও বোঝে না ময়দানের অবস্থান। 

আজ অনুভব করি শুধু নিয়েই গেলাম মায়ের কাছ থেকে।  কিছুই দেওয়া হল না। আবার পরজন্মে মা হয়ে এসো আমার জড়িয়ে রেখো বুকের ওমে।

No comments:

Post a Comment