Thursday, May 2, 2024


 

মুনা 

অনলাইন বৈশাখ সংখ্যা ১৪৩১



জীবন নদীর কাব‍্য 

উৎপলেন্দু পাল 


জীবনটা ঠিক আগের মতো আর নেই 
বর্ষার ভরা নদীর মতো সেই উচ্ছল উদ্দাম বেগ 
ছলছল কলকল কুলকুল দুকুল ছাপানো প্রেম 
এখন অনেকটাই যেন রুদ্ধ স্তিমিত 
কোথাও কোথাও জেগে উঠেছে মস্ত সব চড়া 
যেমনটা পক্ককেশ মাথায় চন্দ্রাকৃতি টাক 
তার আশপাশে কোথাও কোথাও 
জল একেবারেই থ হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে 
ভাঁজ পড়ে যাওয়া গালের চামড়ার মতোই 
আগেকার স্রোতে ভেসে আসা বালি পলি কাদা 
এখন কোথায় জানি থিতিয়ে গেছে 
থিতিয়ে গেছে কত সুখ দুঃখের স্মৃতির জোয়ার 
প্রেম ঘৃণা বিশ্বাস অবিশ্বাসের টানাপোড়েন 
সেখানে হয়তো এখন শরতে কাশবন গজিয়ে ওঠে 
চোখের নিচের নির্ঘুম নির্মম কালির ছাপে  
আবার কোথাও কোথাও জলের আবডালে 
সবুজ শ‍্যাওলার দল রোজ আগ্ৰাসী মিছিলে হাঁটে 
বালিশের ওপর মাথা রাখতেই যেমনটা ভেসে ওঠে 
ফেলে আসা যৌবনের নিরবিচ্ছিন্ন ছায়াছবি 
যে স্রোতে বাঘা বাঘা মাঝিদের কালঘাম ছুটে যেত 
সেখানে গাঁয়ের ন‍্যাংটো পল্লী বালকেরা 
সকাল বিকেল গামছা নিয়ে মাছ ধরতে নামে 
ছিপ ফেলে কেউবা বসে থাকে বড়ো শিকারের আশায় 
জীবনের দুকুল জুড়ে এখন শক্ত কংক্রিটের বাঁধ 
তার বুক চিরে চলে যাওয়া সেতুগুলো থেকে 
রোজ উড়ে আসে পথ চলতি মানুষের উচ্ছিষ্ট খাবার 
পাঁজরের হাড়ে যেন মড়মড় করে ওঠে 
নতুন প্রজন্মের উন্নাসিক যন্ত্রদানবের নির্দয় পেষণ 
শহরের জঞ্জালে জঞ্জাল ভরে উঠেছে শরীর 
শিরা ওঠা দুর্বল হাত পায়ে বুকের কঙ্কালের ফাঁকে 
বুড়িয়ে যেতে যেতে এখন হারিয়ে গেছে সে স্রোতধার 
মেরুদন্ড জুড়ে এখন এক নিষ্ঠুর ক্ষয় রোগ 
রোজ কুড়ে কুড়ে খায় ঘুণপোকাদের আদিম অভ‍্যাসে 
তাই এখন জীবনটা আর আগের মতো নেই 
তবুও বয়ে চলেছি একটা নতুন জোয়ারের অপেক্ষায় 
কান পেতে আছি আর একটিবার শুনবো বলে 
কোনো এক প্রলয়ংকর অনামী বন‍্যার পদধ্বনী 
শেষবারের মতো মোহনায় মিশে যাবার আগে 
বেঁচে আছি আবার একদিন ঠিক আগের মতোই 
পবিত্র উপত‍্যকায় কুলকুল করে বয়ে যাবো বলে । 

No comments:

Post a Comment