মুজনাই
অনলাইন বৈশাখ সংখ্যা ১৪৩১
ক্রোড়পত্র
মা কে নিয়ে চিঠি
আলপনা নাগ সরকার
প্রিয় পার্থ
মা শব্দটা সবার জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ। সবার কাছেই মা অদ্বিতীয়া আমার কাছেও তাই। মায়ের সাথে সন্তানের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক, তারই রেশ টেনে কিছু কথা লিখতে মন চাইল।
আমার মায়ের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে। তাঁর বড়ো হয়ে ওঠা পশ্চিমবঙ্গের এক চা বাগানে। লেখাপড়া খুব বেশিদূর অবধি সম্ভব হয়ে ওঠেনি। খুব অল্প বয়সেই মায়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।
আমার বাবা চা বাগানে কাজ করতেন। ছয়টি ছেলে- মেয়েকে মানুষ করার জন্য মা সব সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে চলে আসেন জলপাইগুড়ি শহরে। অসম্ভব কষ্ট করে মা আমাদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করে তোলেন। তাঁর কাছে শিখেছি কিভাবে নিজের মুখের গ্রাস অপরের মুখে তুলে দিতে হয়। দেখেছি কিভাবে ছেলের বউকে আপন করে নিতে হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনবোধ যে শিক্ষার প্রধান ধাপ সেটাও মা আমাদের শিখিয়েছিলেন।
মা প্রতিনিয়ত উৎসাহিত করে বলতেন, " শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই "। পড়ায় ফাঁকি দিলেই মা আমাদের রান্নাঘরে ডেকে নিতেন। সেই ভয় থেকেই আমরা পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছিল। সব বিষয়েই জ্ঞান রাখতেন। মাঝে মাঝেই ভুল পড়লে মা রান্নাঘর থেকে সংশোধন করে দিতেন। আমরা সবাই অবাক হয়ে যেতাম। কড়া শাসনের আড়ালে মায়ের যে স্নেহরসের ফল্গুধারা বইত তা টের পেতে আমার অনেক সময় লেগেছিল।
সংসার প্রতিপালনের সাথে সাথে নানা সামাজিক কাজে নিজেকে জড়িত রাখতেন। কখনো সময়ের অপব্যবহার করতেন না। অসম্ভব সাহসী ছিলেন। ১৯৬৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় তিস্তার উথাল পাথাল জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিবেশীদের উদ্ধার করেছিলেন। ঘরের বেড়া ভেঙে রিলিফের চাল সংগ্রহ করে ভাত রেঁধে খাইয়েছিলেন, অগণিত মানুষকে।
নিষ্ঠাবতী মা আমার কখনো আদর্শচ্যুত হননি। দৃঢ়তা, একাগ্রতা এবং সহনশীলতা মায়ের সবচেয়ে বড়ো গুণ - যা তাকে অনন্যা করে তুলেছে। তুমি তো জানো পার্থ, মা ই আমার জীবনের আদর্শ।
ইতি
আলপনাদি
৩০/৪/২০২৪
No comments:
Post a Comment