Saturday, January 2, 2021


 






সুপর্ণা চৌধুরী 
আলো


           পার্কস্ট্রিটের রাস্তা ধরে হাঁটছিল মন্দিরা। ২৪শে ডিসেম্বরের সন্ধ্যা, পার্কস্ট্রিট আলোয় আলোময়! আর কয়েক ঘন্টা পর বড়দিনের সেলিব্রেশান শুরু হবে। বান্ধবী শাওন ফুরফুরে মেজাজে পাশে হাঁটছে। কিন্তু  মন্দিরার আজ যেন বড় বেশি  ভারাক্রান্ত লাগছে নিজেকে। স্মৃতি তাকে কুরেকুরে খাচ্ছে। বাইরের এত আলোময়তার মধ্যেও  তার মনের কোণে জমাট বেঁধেছে অন্ধকার। 
            কিছুক্ষণ আগে মন্দিরা  আনন্দে ভাসতে ভাসতে শাওনের কাছে আসছিল আলোকময় রাস্তা ধরে। শাওন থাকে  পার্কস্ট্রীটের কাছেই। গোটা রাস্তাটা ভিড়ে থিক  থিক করছে। হঠাৎ সামনে একজন  এসে পথ আটকে ধরে। ভীড়ের মধ্যে রুমালে আড়াল করে অস্ত্র তুলে ধরে ভয় দেখিয়ে টাকা চায়। আতঙ্কে মন্দিরার মুখে কথা সরে না। কাছেই ওয়াকিটকি হাতে কলকাতা পুলিশের কিছু অফিসাদের জটলা। মন্দিরা তাঁদের ডাকবে কিনা চিন্তা করছিল। কিন্তু গলা যেন শুকিয়ে কাঠ! সহসা মন্দিরা পিস্তলবাজ ছেলেটিকে চিনতে পারে...এ যে তার ছোটবেলার সহপাঠী শৈবাল!  মন্দিরার মুখ থেকে আর্তনাদ বেরিয়ে আসে, 'শৈবাল তুই! " 
             রুক্ষ  গলায় শৈবাল বলে
- "অভাবে আলো নিভ গেছে জীবনের। বন্ধু চিনিনা, টাকাই চিনি।" জোর করে বেশ কিছু টাকা নিয়ে ভীড়ের মধ্যে মিশে গেল  শৈবাল। 
           মোটামুটি ভালো ছাত্র শৈবালের বিভিন্ন  স্মৃতি ভেসে  উঠছিল মন্দিরার মনে। পড়ার ব্যাপারে সানন্দে  সকল সহপাঠীকে সাহায্য করত সে। তার আজ এই পরিণতি!!! 
             দূর থেকে রাস্তায় মলিন পোষাকপরা এক বৃদ্ধাকে দেখা গেল। বৃদ্ধার পরনের পোষাক এই উৎসব আবহে বেশ জীর্ণ। উনি রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। একটু কাছে যেতে মন্দিরা হঠাৎ লক্ষ্য করে ওনার হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দিচ্ছে শৈবাল! মাত্র ঘন্টা খানেক আগে যে অতবড় একটা কান্ড করেছে, তার লেশমাত্র চিহ্ন নেই শৈবালের মুখে। বৃদ্ধা আন্তরিক গলায় বললেন,
-- "তুমি আমাকে এই ভীরে খুব  হেল্প করলে, বাবা। তুমি আমার ছিনতাই হওয়া ব্যাগটাও ফিরিয়ে এনে দিলে! মে গড ব্লেস ইউ। এখনও আলো আছে মানুষের মনে, এখনও ভালো মানুষ আছে।"
           বৃদ্ধার আন্তরিক কথায় হঠাৎ আলোয় ঝলমল করে উঠল মন্দিরার ভিতরটা। এখনও পুরোনো শৈবাল তাহলে বেঁচে আছে! 


@মুজনাই অনলাইন পৌষ সংখ্যা ১৪২৭

No comments:

Post a Comment