মুজনাই সাপ্তাহিক
নদী সংখ্যা
আমার সুটুঙ্গা
রীতা মোদক
নদী তো নদীই হয় ।কখনো স্বচ্ছ জলের নিচে চিকচিকে বালির উপর ছোট ছোট মাছেদের খেলা, কখনো ঘোলা জলে কুন্ডলী পাকানো স্রোতস্বিনী । তবু একটি নদী আমাকে খুব টানে। বুঝি জন্ম জন্মান্তরের সম্পর্ক তার সাথে। মাথাভাঙ্গা শহরের মাঝ বরাবর আপন বেগে বয়ে চলছে সুটুঙ্গা ।বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে প্রতিদিন দেখা হতো তার সাথে। শহরে ঢুকার পথে আগে এই নদীর উপর ছিল কাঠের ব্রীজ। প্রতিটি কাঠের মাথায় ধরে ধরে ব্রীজ পাড় হতাম । ব্রীজের নিচে ঘাটে বাঁধা থাকতো ছোট ছোট নৌকো।জেলেরা জাল দিয়ে মাছ ধরতো । পানকৌড়ির টুপটুপ জলে ডুব দেওয়া দেখলে মুখ থেকে বেরিয়ে আসতো -- "পানকৌড়ি তোর বর মরছে " । সুটুঙ্গার একটা বড় আকর্ষণ--- দশমীর ঘাট। এখানে বহু বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে ভাসানী উৎসব । দূর্গা পূজার শেষে দশমীর বিকেলে গ্রাম শহরের সব দূর্গা নৌকায় তোলা হয় ।অনেকেই নৌকাবিহারে অংশ গ্রহন করে।তখন ভরা নদীর দুই পাড়ে উপছে পরা ভিড়। সন্ধ্যায় বিসর্জন শেষে সকলে বাড়ি ফেরে।
দিনটা সম্ভবত ২০০৭ । প্রবল বর্ষণে জলের স্রোতে কাঠের ব্রিজটা ভেঙ্গে যায় । তখন নদীতে নামে বড় বড় দুটি নৌকো।সাইকেল মানুষ সব নৌকাতেই পারাপার হয়।এর পর ধীরে ধীরে তৈরী হয় পাকা ব্রীজ।ব্রীজের পাশে বয়স্কদের সময় কাটানোর জন্য ছোট্ট পার্ক ।
সুটুঙ্গা আবার আলোক সজ্জায় সেজে ওঠে ছট পুজোর রাতে। নদীর এক পাড়ে মহা শ্মশানের নিরবতা ,আরেক পাড়ে সূর্যের আরাধনায় মগ্ন মানুষের উপছে পরা ভিড়।এটাই সুটুঙ্গার সৌন্দর্য।
শীতে ওএই নদী পুরো শুকায় না। সকালের প্রথম সূর্য স্পর্শে সুটুঙ্গার জল সোনালী হয়ে উঠে। আবার ভরা বর্ষায় ছোট্ট নদীটা ভয়ঙ্করী হয়ে উঠে। তীরে গজিয়ে উঠা ফুটপাতি জীবন ভেসে যায় স্রোতের টানে। শহরের বর্জ্য আবর্জনা ধুয়ে নিয়ে আবার পবিত্র হয় আমার সুটুঙ্গা।
ছবি- লেখক
No comments:
Post a Comment